ধর্ষণকারীর অধিকার দিতে হবে, এই দাবি দেশ ও জাতির জন্য লজ্জাজনক

আশরাফুল আলম খোকন


ধর্ষণকারীর অধিকার দিতে হবে…। ধর্ষকের সহযোগীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে…। এই দাবিতে আন্দোলন দেশ ও জাতির জন্য শোভন না, খুব লজ্জাজনক। আর অনেকটা এইরকম আন্দোলনই করছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের কিছু শিক্ষার্থী। কিছুদিন আগেও ধর্ষণ বিরোধী একটি আন্দোলন হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজধানীর জোয়ার সাহারা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি ছাত্রী ধর্ষিত হয়েছিল। তখন এই আন্দোলনকারীরাও ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়েছিল।

কিন্তু আজ তারাই আবার ধর্ষণের পক্ষে আন্দোলন করছে। অভিযোগকারিণী আবার তাদের সংগঠনেরই নারী কর্মী। সে সুর্নিদিষ্টভাবে দিন তারিখ উল্লেখ করে ডাকসুর সাবেক ভিপিসহ তার ৫ সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সত্য মিথ্যা প্রমান সাপেক্ষ বিষয়। প্রমানের আগেই আসিফ নজরুল সাহেবরা বলে দিলেন অভিযুক্তরা এই কাজ করতেই পারেন না।

তিনি নাকি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক। আসিফ নজরুল সাহেব কি করে নিশ্চিন্ত বলেন অভিযুক্তদের ধর্ষণকারী হবার সক্ষমতা নেই? এইরকম শিক্ষক যেখানে আছে, সেখানে ধর্ষণের পক্ষে কিছু শিক্ষার্থী থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

ধর্ষণকারী সংগঠনটির নারী কর্মীটি তার মামলায় সুর্নিদিষ্ট অভিযোগে বলছেন, কোথায় কবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। অসুস্থ হবার পর কবে, কে কে, কখন, কোন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছে। কবে, কোথায় তাকে ডেকে নিয়ে কে মুখ না খোলার হুমকি দিয়েছে। কোন কোন অনলাইন কর্মীকে দিয়ে মেয়েটির চরিত্র হনন করার হুমকি দেয়া হয়েছে।

ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অধিকাংশ অভিযোগেরই সত্য মিথ্যা নিশ্চিত করা সম্ভব। কারণ ঢাকা মেডিকেলেও সিসি ক্যামেরা আছে। পুরান ঢাকার যে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিশ্চয়ই ওই বাসার আসে পাশেও কোথাও সিসি ক্যামেরা আছে।

আমি এখানে ধর্ষিতা কিংবা ধর্ষণকারী কারো নামই উল্লেখ করিনি। কারণ কোনোটাই প্রমাণিত নয়। কিন্তু সত্য-মিথ্যা প্রমাণের আগেই অভিযুক্ত ধর্ষণকারীদের পক্ষে আন্দোলন করা প্রমাণ করে… ‘ডাল মে কুচ কালা হে।’

লেখক: উপপ্রেস সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

(ফেসবুক থেকে নেওয়া)

বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় গোড়ায় গলদ: নেই কারো মাথা ব্যথা

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় এর কতটুকু যথোপযুক্ত শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশা করা যায়? পিএসসি পরীক্ষার নামে প্রাথমিক শিক্ষায় চলছে জিপিএ পাওয়ার প্রতিযোগিতা। তাদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ডজনখানেক বই।

অথচ মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে, এই বয়সে এতগুলো বই সম্পর্কে ওরা বোঝে কি? তাদের মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টির গুণগুলো জোর করে চাপা দেয়া হচ্ছে। মূল্যবোধ ও নৈতিকতার বিপরীতে চর্চা করা হচ্ছে পাঠ্যপুস্তকের পড়া। প্রতিদিন ভোরবেলা দেখা যায়, ছোট ছেলেমেয়েরা কাঁধে বইয়ের ব্যাগ ঝুলিয়ে কোচিংয়ে যাচ্ছে।

তবে মজার বিষয় হলো, বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রস্তুতির পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে ওদের মা-বাবা অভিভাবকেরাও। প্রতিযোগিতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের চেয়ে মায়েদের ‘পড়ালেখার প্রস্তুতি’ই বেশি। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক শিক্ষায় রূপান্তরিত হলেও সেটার ভার সহ্য করার মতো ক্ষমতা যে কোমলমতি শিশুদের নেই, এ কথা সরকারি মহলের কেউ ভাবেন বলে মনে হয় না।

ওই মহলের চিন্তা কিভাবে শিক্ষাটাকে আপডেট করা যায়। শিক্ষার্থীদের শিষ্টাচার ব্যবস্থা ও মূল্যবোধ সৃষ্টিতে বর্তমান শিক্ষা কতটুকু যুগোপযোগী ভূমিকা পালন করছে পারিপার্শ্বিক অবস্থার দিকে নজর দিলেই এ ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যায়।

প্রাথমিক স্কুলগুলোতে চলছে ম্যানেজিং কমিটির অনিয়ম। রাজনৈতিক দলগুলোর আধিপত্যের বিস্তার ঘটাতে ঘটাতে ইউনিয়ন থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে ওয়ার্ড, এমনকি তৃণমূলপর্যায়ে রাজনীতিটা এমনভাবে প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, তার প্রভাব থেকে প্রাথমিক স্কুলগুলোও বাদ যাচ্ছে না। ম্যানেজিং কমিটিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী অভিভাবকেরা লড়ছেন রাস্তাতে আর তাদের ছেলেমেয়েরা এরই কুফল ভোগ করছে স্কুলে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে সঙ্ঘাত ও দ্বন্দ্ব।

বাড়ি থেকে শিখিয়ে দেয়া হয়, অমুকের ছেলে কিংবা মেয়ের সাথে মিশতে পারবে না। ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষাটা স্কুল থেকেই তার সহপাঠীকে কথিত দুশমনে পরিণত করে দিচ্ছে। এর ফল ভবিষ্যতে মনুষ্যত্ব বিকাশে অনুকূল হবে না।

বেশির ভাগ স্কুলে ম্যানেজিং কমিটির সমস্যা নিয়ে উপজেলা-জেলাকর্তা ব্যক্তিরা রয়েছেন মহাবিপাকে। সরকারি কারিকুলামের চাপিয়ে দেয়া শিক্ষা প্রদানের বিভিন্ন পদ্ধতি স্কুলে প্রয়োগের ফলে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর ম্যানেজিং কমিটি গঠনে হানাহানি রেষারেষি ইত্যাদি থেকেও বর্বরতার শিক্ষা পাচ্ছে এই ছোট ছেলেমেয়েরা। ফলে তাদের মূল্যবোধ সৃষ্টির বদলে জায়গা করে নিচ্ছে হিংসার বিষয়টি।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দেখা যাচ্ছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো থেকে তৈরি করে দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের বিষয়টি। এ পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থী নিজের সম্পর্কে কতটুকুই বা ধারণা নিতে পারে? সবেমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে না হতেই ওদের নিতে হচ্ছে ছাত্র সংসদের মতো নেতৃত্বের ভার।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা শুধু শিক্ষাঙ্গনেই পাওয়া যায় না। শিক্ষাঙ্গন হচ্ছে মূল্যবোধ সৃষ্টির চর্চাকেন্দ্র। এই শিক্ষাঙ্গনে সঠিক মূল্যবোধ পেতে দরকার শিক্ষকদের যথাযথ ভূমিকা।

পরিবেশ থেকে সৃষ্ট যেসব অনৈতিকতা শিশুকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, আজ সেই অনৈতিক প্রভাব যদি কোনো শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করে তাহলে সেই শিক্ষাঙ্গনে প্রদত্ত নৈতিকতা শিক্ষার্থীকে কখনো খুব ভালো উপহার দিতে পারে না।

ইউনিসেফ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেদারল্যান্ডসে প্রাথমিক স্কুলে শিশুদের কোনো বাড়ির কাজ দেয়া হয় না; হলেও খুব কম। লেখাপড়া করতে শিশুদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয় না। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের গুরুগম্ভীর কোনো পরীক্ষায় বসতে হয় না। দেশটির শিশুরা সবচেয়ে বেশি সুখী জীবন কাটায়।

শিশুদের জন্যে এই সুখী জীবন নিশ্চিত করাটাই সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রোজকার হোমওয়ার্ক নিয়ে মাথা ব্যথা নেই ফিনল্যান্ডের শিক্ষার্থীদের। ষোল বছর বয়সে গিয়ে তাদের মাত্র একটি বাধ্যতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। আর আমরা প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কী করছি? বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে।

ফ্রান্স যেমন স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি যোগ্য শিক্ষক বাছাই, শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করতে মনোযোগী। জাপানে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও বাছাই করার ক্ষেত্রে দেয়া হয় বিশেষ গুরুত্ব। ভুটান থেকে শুরু করে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে শতভাগ প্রশিক্ষিত শিক্ষক।

এ রাষ্ট্রগুলো দায়িত্ব নিয়ে তাদের শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করেছে। অথচ এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান অনেক দূরে। ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, মিয়ানমারে যেখানে ৮০-৯০ শতাংশেরও বেশি প্রশিক্ষিত শিক্ষক রয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশে এ হার মাত্র ৫০।

একটি বিষয় স্পষ্ট, একটি জাতি ধ্বংস হওয়ার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার গলদই যথেষ্ট। শিক্ষা ব্যবস্থা তখনই ভালো হবে যখন দেশের নীতি নির্ধারকের সন্তান থেকে শুরু করে দিন মজুরের সন্তান সরকারি স্কুল, সরকারি কলেজ ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ব্যবস্থায় পড়বে।

আর এখন এই ব্যবস্থার প্রতি কেউ সিরিয়াস না হলে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো ভঙ্গুর হয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু বেকার গ্রাজুয়েট তৈরি করবে।


লেখকঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশ্লেষক ও ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ ।

আমরা দুঃখিত এবং লজ্জিত! ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার

আবু জাফর আহমেদ মুকুল

মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম


একটি গল্প বলা যাক। জার্মানির বার্লিনে একটি দেয়াল টপকানোর প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হল। বিশ্বের প্রত্যেক দেশের ৪ জন নাগরিক আমন্ত্রণ পেল। ঐ প্রতিযোগিতায় ৪জন বাঙালিও উপস্থিত হলো। প্রতিযোগিতা শুরু হল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকগণ একজন আর একজনকে সহযোগিতার মাধ্যমে দেয়াল অতিক্রম করে ফেলল। রয়ে গেল ৪ জন বাঙালি।

কারণ বুঝতে পারলাম, একজন বাঙালি যখন অতিক্রম করছিল অন্য আর একজন বাঙালি পিছন থেকে তার পা টেনে ধরেছিল যাতে সে অতিক্রম করতে না পারে। সুতরাং বাঙালির স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যের কারনে বাঙালিরা এগিয়ে যেতে পারে না ।

গতকাল সোস্যাল মিডিয়া ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারলাম যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার নিয়ে বাংলাদেশে তুমুল আলচনা।
বাংলাদেশে করোনার শুরুর আগ থেকে এতোদিন ইউটিউব এর মাধ্যমে অসাধারণ উপস্থাপনার মাধ্যমে ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার এর করোনার বিভিন্ন বিষয়ে আমাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করতেন।

এখন উনি ফ্যামিলির সকল মেম্বার রেখে বাংলাদেশে চিকিৎসা দিতে আসছেন। সে এমন কোনো অন্যায়,অপরাধ করিনি। সে দেশের মন্ত্রী এমপি কিংবা উচ্চপদে আসীন হতে চাননি। সে কোভিড-১৯ নিয়ে গত তিনমাস যুক্তরাষ্ট্রে অমানুষিক পরিশ্রম করেছে। দেশেও এসেছে দেশের মানুষের কোনো কাজে নিজেকে লাগানো যায় কিনা সেই উদ্দেশ্য নিয়ে। এই দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সে ডাক্তার হয়েছে। দায়িত্ববোধ থেকেই বার বার বাংলাদেশে মানুষের জন্য কাজ করে। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে সে কখনোই আসে নাই। তাকে দেশের সবাই অভিনন্দন জানানো উচিত ছিল ।

কিন্তু এই যে, বাঙালির স্বভাব নিজে কাজটি না করতে পারলেও অন্য মানুষের পা টেনে ধরে নামাতে খুব পটু। আমরা দুঃখিত এবং লজ্জিত ডাঃ ফেরদৌসের কাছে। ডাক্তার হিসেবে তাকে আমরা প্রাপ্য সম্মান দিতে পারলাম না। কিন্তু উনি যদি ঠিকই বিদেশি ডাক্তার হতেন ঠিকই অনেকে পা চেটে বিমান বন্দর থেকে ফুলের মালা গলায় দিয়ে আসতেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিকই বলেছেন, “যদি সমাজের কাজ করতে চাও, তবে গায়ের চামড়াকে এতখানি পুরু করিয়া লইতে হইবে যেন ঝড়-ঝঞ্ঝা, নিন্দা গ্লানি, বজ্র-বিদ্যুৎ সকলই প্রতিহত হইয়া ফিরিয়া আসে”।

এর আগেও দেখেছি নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও ডাঃ জাফর উল্লাহ অবদান নিয়ে টানাটানি করতে যা দুর্ভাগ্যজনক। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কি বাংলাদেশে সকল মানুষ মারা যাবার পর কী ডাঃ জাফর উল্লাহ এর করোনা কিট অনুমোদন দিবে?এর কার্যকারীতা পরীক্ষার জন্য এতো কাল ক্ষেপণ কেনো করছে? একজন ডাক্তারকে যদি রাজনৈতিক পরিচয় দিতে হয় তা দেশ ও জাতির জন্য দুঃখজনক। এই ক্রান্তিলগ্নে করোনার প্রথম সারির যোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।

ডাক্তারদের পেশাজীবি সংগঠনগুলো অতিরিক্ত রাজনীতিকরনের জন্য বাংলাদেশে ডাক্তারগণ মর্যাদা পাচ্ছে না। করোনাকালে দেখলাম আর কোন ক্যাডারের চাকুরি না গেলেও ২ জন ডাক্তারদের চাকুরি গেল। এই সব দেখেও ডাক্তারদের পেশাজীবি সংগঠনগুলো নীরব ভূমিকা পালন করছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় জানলাম, তার নামের সাথে খন্দকার থাকায় বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোস্তাক খন্দকার মোশতাকের ভাতিজা উপাধি দেয়া হয়েছে। আরেক খুনি রশিদের খালাতো ভাই বানানো হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, তিনি নাকি পলাতক তারেক রহমানকে নিয়মিত টাকা পয়সা দেয়। যা শুনে আমি নিজেও ব্যথিত হয়েছি। বাংলাদেশে লাখ লাখ খন্দকার আছে তাই বলে কি লাখ লাখ খন্দকার টাইটেলধারী মানুষ কী বঙ্গবন্ধুর খুনি? পরিহাসের একটি মাত্রা থাকা উচিত। একটা স্বনামধন্য ডাক্তারকে তার পরিবার নিয়েও আমরা টানাটানি করি।

একটি বিষয় সকলের মনে রাখা উচিত ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার ১৯৯১ সালে বিএনপি এর আমলে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্র থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছাত্র লীগের সৈনিক ছিলেন। ১৯৯১ সালের পর চট্টগ্রাম মেডিকেলে শিবির ছাত্রদলের তোপের মুখে ছাত্রলীগের শ্লোগান দিয়েছে। শিবিরের মা’র খেয়ে ক্যাম্পাসও তাকে ছাড়তে হয়েছিল । সে শিবিরের সাথে যুদ্ধ করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে পুর্নপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই বিষয়ে তথ্য দেওয়া খুব সহজ। আপনারা চাইলেই খবর নিয়ে দেখতে পারেন। তাঁর সাথে যদি আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী এরকম আচরন করেন তাহলে সাধারন মানুষ যাবে কোথায়?

গত পরশু যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ ফ্লাইটে থেকে দেশে ফেরা ১২৮ জনের মধ্যে ডা. ফেরদৌস খন্দকারের করোনা নেগেটিভ সনদ থাকলেও তাকে ছাড়া সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। উনি আসছিলেন বাংলাদেশে বিশেষত ঢাকা ও তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় করোনা রোগিদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য। অথচ সবাইকে ছেড়ে দিয়ে উনাকে পাঠানো হলো প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। সাধারন মানুষকে বাসায় যেতে বলে একজন ডাক্তারকে আটকিয়ে কী লাভ জাতির? বরংচ উনাকে সাহায্য করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

ডা. ফেরদৌস বাংলাদেশে পৌঁছলেও তার ৮ টি স্যুটকেস এয়ারপোর্টে আটকে দেওয়া হয়েছে। করোনার মহামারীতে সে স্যুটকেস গুলোতে রয়েছে মাস্ক, গ্লাভস ও পিপিই। এসব তিনি এনেছিলেন করোনার সম্মুখ যোদ্ধাদের দিতে। দুঃখজনক হলো এয়ারপোর্টে কর্তৃপক্ষ বলেছেন, এসবের জন্য ট্যাক্স দিতে হবে, না হলে ছাড়া হবে না।” আহারে মাস্ক, গ্লাভস ও পিপিই এর জন্য মানুষ বাঁচে না আবার ট্যাক্স।

পরে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তার বক্তব্য থেকে জানতে পারলাম তা তুলে ধরলামঃ
ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। তাদের পূর্ব পুরুষেরাও এখানকার স্থানীয়।

১. ডা.ফেরদৌস এর মামা মোস্তাক এটা সঠিক।তবে খন্দকার মোস্তাক নয়,তার মামা এখনো জীবিত, তিনি বোস্টনে ফার্মাসিস্ট হিসেবে কর্মরত!উনি ডাঃ ফেরদৌস এর ৪র্থ মামা।উনার নানার ৭ সন্তান (৬ ছেলে আর এক মেয়ে),যার প্রথম জন মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন আর একমাত্র মেয়ে ডাঃ ফেরদৌস এর মা!

২.তার নামের সাথে খন্দকার আছে,এই যা!

৩. উনি দেবীদ্বার উপজেলার বাকসার গ্রামের বিমান বাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার অব: ফয়েজ খন্দকারের পুত্র।নানার বাড়ি মুরাদনগর কৃষ্ণপুর গ্রামের খান বাড়ি।নানার নাম আব্দুল আলী খান।

৪.আর,খন্দকার মোস্তাকের বাড়ি কুমিল্লা না।খন্দকার মোস্তাকের বাবা ছিলেন ফেরী ওয়ালা। তিনি কানের দুল , চুরি , ফিতা ইত্যাদি ফেরি করে বিক্রি করতেন ।এই লোকের বাড়ী ছিল ঝিনাইদহ । তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে মালামাল কিনে আসে পাশের উপজেলায় বিক্রি করতেন ।ফেরী করা কালিন দাউদকান্দি এসে মুস্তাকের মাকে বিয়ে করে ঘর জামাই থেকে যান ! তাই মোস্তাকের বাবার পক্ষের আত্মীয় কুমিল্লায় পাওয়া যায় না।
যে সমস্ত প্রভাবশালীরা এমন নোংরামির খেলায় মেতে উঠেছেন মনে রাখবেন ইতিহাস ক্ষমা করবেনা আপনাদের ।

রবি ঠাকুরের কথা দিয়েই শেষ করি-“রেখেছো বাঙ্গালী করে মানুষ করো নি”।

১৯৯১ সালে বিএনপি এর আমলে ছাত্র লীগ করা লোক ডাঃ ফেরদৌস। স্রোতের প্রতিকূলে রাজনীতি করা এতো সহজ নয়। আশা করি, গোয়েন্দা সংস্থা যাদের আটকানো উচিত সেই সিকদার সাহেবের দুই পুত্র তাদের খবর নেই। একজন নিরহ ও মানবতাবাদী ডাক্তারকে হয়রানী করা অত্যন্ত লজ্জাজনক। ডাঃ ফেরদৌস লজ্জিত আমরা, দেশে আমরা ডাক্তারদের সম্মান করতে পারি না।


লেখকবৃন্দঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক , বিশ্লেষক এবং ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ।

শিক্ষার মান: উচ্চ শিক্ষায় মানের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব আবশ্যক (পর্ব-১)

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার একটি অঙ্গীকার এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) একটি লক্ষ্য হলো-সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা। উচ্চ শিক্ষার মান নির্ধারন করতে পারে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পদ্ধতি এবং কোন দেশি বা বিদেশি সংস্থা। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকা জরুরি।

মান সম্মত উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ব্যক্তিক পর্যায়ে আয় বৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। তবে উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে গেলে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করাটাও জরুরি। তাদেরকে বাদ রেখে উচ্চ শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা কখনোই সম্ভব নয়।

আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা ও তার মান নিয়ে সবসময়ই পক্ষে ও বিপক্ষে আলোচনা ও সমালোচনা চলে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর দেশের মানুষ আশা করেছিল সুন্দর একটি শিক্ষানীতির মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি হবে, শিক্ষার মান বাড়বে। কিন্তু সঠিক শিক্ষানীতির অভাব ও রাজনীতির পালা বদলের মাধ্যমে বার বার নীতি পরিবর্তনের ফলে সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

উচ্চ শিক্ষার নামে আমাদের দেশে প্রচলিত যে শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে তা আসলে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার উদ্দেশে নয়, পেশাগত কাজের উপযোগী হওয়াটাই এক্ষেত্রে মুখ্য বিবেচিত হচ্ছে। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন নিয়েও আমাদের ভাবনা নেই। পাসের হার বাড়ানোই এখন গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। এ কারণে ভালো শিক্ষকও তৈরি হচ্ছে না। তাই মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা এখন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যে শিক্ষা দিচ্ছি সেটিকে উচ্চশিক্ষা বলা যাবে না।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাক্ষেত্রে নেতৃত্ব বড় ও প্রথম বিষয়। ভালো নেতৃত্ব থাকলে ছোট পরিসরে অনেক বড় কাজ করা সম্ভব। সত্যিই বলকে কী আমাদের নেতৃত্বের অভাব। আমরা ভালো গবেষক, ভালো শিক্ষক পাচ্ছি, তবে সবক্ষেত্রে সবাই যে ভালো নেতৃত্ব দেবে এমন নয়। আবার তারাই ভালো নেতা হতে পারেন যদি যথাযথ সমন্বয় হয়।

জবাবদিহিতার অভাব আরেকটি বিষয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এগুলোকেই আমি চ্যালেঞ্জ বলবো। যদি এগুলো কাটিয়ে ওঠা যায় তবে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব।

উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা কোনও ভিশন বা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারিনি। ভিশন যখন নেই, তখন মিশনও থাকছে না। তাই নীতি নির্ধারণী কোনও লক্ষ্যও নেই। আমরা চাকরির মার্কেট ও বিদেশে উচ্চ শিক্ষা যাচাই করে কাউকে শিক্ষা দিই না। একই সঙ্গে ছাত্র ও শিক্ষকদের শেখার আগ্রহ কমেছে। এটিও মানতে হবে। এসব নানাবিধ কারণে নেতৃত্বও আসেনি। যারা সত্যিকারার্থে যোগ্য তারা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে। এটি ভাবার বিষয়।

ইউজিসির দায়িত্ব হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিশ্চিত করা। অসঙ্গতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা। এই কাজে ইউজিসির যে অবকাঠামো দরকার তাতে ঘাটতি রয়েছে। মঞ্জুরি কমিশনের প্রধান জটিলতা শুরু হয় সদস্য নির্ধারণ নিয়ে। এখানে কোনও সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। আর এই কমিশনকে পারিপার্শ্বিক চাপ সামলাতে হয় অনেক বেশি।

এছাড়া আমাদের ইউজিসির লোকবলের অভাব। আবার যথাযথ লোক নিয়োগের ক্ষেত্রেও চাপের সম্মুখীন হতে হয়। এই হচ্ছে সার্বিক অবস্থা। এক্ষেত্রে ইউজিসির কাজ করা খুব কঠিন।

শিক্ষার প্রতি আমাদের গণমাধ্যমের আছে উদাসীনতা। আমাদের গণমাধ্যম ব্যস্ত থাকে রাজনীতি নিয়ে, শিক্ষাক্ষেত্রের জটিলতাগুলো আড়ালেই থেকে যায়। এগুলো সামনে আসা উচিত। উচ্চশিক্ষা ও উচ্চতর শিক্ষার পার্থক্য নির্ধারণ করতে হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীকে পেশাগত দিকে সফল হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছি, যাতে করে সে কাজ করে যেতে পারে। কিন্তু ব্যক্তি বিকাশ ভিন্ন। ব্যক্তি বিকাশ কোনও যন্ত্র দিয়ে হয় না।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যার গড় করলে আমরা দুটো সমস্যা খুঁজে পাই। একটি হচ্ছে সঠিক পরিচালনা সংকট, আরেকটি হচ্ছে শিক্ষকদের মান। শিক্ষাব্যবস্থা ও মান নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সরকারি কর্তৃপক্ষ। ফলে শিক্ষায় একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়েছে। ’৪৭-এর পর এটি আরও বেড়েছে। আলো ছড়ানো শিক্ষকদের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। উচ্চতর শিক্ষায় একজন ছাত্র নিজের জীবিকা নিয়েই ভাবছে। অন্যের জীবিকা দেওয়ার মতো প্রসারিত শিক্ষাজীবন তাকে আমরা দিতে পারছি না। উচ্চতর শিক্ষায় এই জায়গাটায় পৌঁছানোর ওপর জোর দিতে হবে।

এটিকে আমি কারিগরি শিক্ষা বলতে চাই। আমরা যে এমবিবিএস বা প্রকৌশল শিক্ষা দিচ্ছি এগুলো কারিগরি শিক্ষা। বাজার ধরার জন্য এইসব শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। যাতে শিক্ষার্থীরা পেশাগত স্থানে কাজ করে যেতে পারে। তবে এগুলো কোনওটাই উচ্চশিক্ষা নয়। কারণ উচ্চশিক্ষা হচ্ছে নির্মোহ শিক্ষা; কোনও চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে শিক্ষা দেওয়া।

সামাজিকভাবে আমরা জানি, শিক্ষা মানেই হচ্ছে অধিকার। কতটুকু অধিকার সেটি আগে আমাদের নির্ধারণ করতে হবে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ অধিকার, নাকি দশম শ্রেণি পর্যন্ত অধিকার। কার কতটুকু অধিকার সেটি জানতে হবে। জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকারেও উচ্চশিক্ষা অধিকার হিসেবে উল্লিখিত হয়নি। এখানে সাধারণ শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে বলা হয়েছে। সেটাও আবার দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উপর নির্ভর করবে। আমাদের সামাজিক গতিশীলতার কারণেই শিক্ষিত হচ্ছি। শিক্ষার কাজ গোটা জাতির জন্য যোগ্য লোক তৈরি করে তোলা। এখন মানুষ হিসেবে আমি দেশ ও জাতির সম্পদ। আমার পেছনে দেশ খরচ করে আর আমি বিদেশে চলে যাই।

বাংলাদেশে প্রতিবছর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ৯-১০ লাখ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর সবাইকে উচ্চশিক্ষা দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই, কিন্তু আবার উচ্চশিক্ষাকে অস্বীকার করার উপায়ও আমাদের নেই।

অনেক সময় মনে হয়, যারা বের হয়েছে তাদের সবার উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি আমরা সামাজিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করি, তাহলে আমাদের সবাইকে নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ এখন ডিজিটালাইজেশনের যুগ। আমরা যদি মনে করি, পঞ্চম শ্রেণি পাস করে কেউ এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে তা কিন্তু নয়। যদি আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই, উচ্চশিক্ষার পথ ধরে হাঁটতেই হবে।

উচ্চ মাধ্যমিকে ১০ লাখ পাস করা শিক্ষার্থীর মধ্যে যে এক লাখ উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে তারাই বা কী পাচ্ছে? আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোটাই তো মুখস্ত-নির্ভর। এগুলোর দিকে মনোযোগী হতে হবে আমাদের। উচ্চশিক্ষার মান যদি উচ্চতর না হয়, তবে আমরা সমাজের জন্য বোঝা তৈরি করছি বলেই মনে হয়। উচ্চশিক্ষার মান বা কোয়ালিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আশার জায়গাগুলোতে আশান্বিত হওয়ার কোনও কারণ আমি দেখি না। কেননা সবকিছুই শুধুমাত্র কাগজে-কলমে হচ্ছে। কিন্তু আসলে আমাদের যেটি প্রয়োজন, একজন ভালো শিক্ষক, সেটি কি কাগজে-কলমে মূল্যায়ন করে তৈরি করা সম্ভব? সম্ভব না। আমরা প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক সব স্তরেই ৯৯ শতাংশ পাস করাতে গিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করছি তাতে আপনি কাকে ভালো শিক্ষক হিসেবে তৈরি করবেন?

অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলতে চাই, বর্তমানে উচ্চ শিক্ষায় রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিমূলক নেতৃত্ব নির্বাচনে যে পদ্ধতি চলছে তা নিয়ে উচ্চ শিক্ষা মান উন্নয়নতো দূরের কথা, দেশে কোন স্তরে মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শিক্ষার মানোন্নয়নে ও শিক্ষা বিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে সরকার ও আমাদের সকলের কাজ করতে হবে।

তথ্যের উৎসঃ বিভিন্ন শিক্ষা বিষয়ক আলোচনা সভা।

লেখকঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশ্লেষক ও ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ ।

গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা ওষুধ বিজ্ঞানী, টেকনোলজিস্ট নয়

তানভীর আহমেদ রাসেল


প্রতি বছর প্রায় তের থেকে চোদ্দ লক্ষ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নে বিভোর থাকে। এর মধ্যে মাত্র ৬৪ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি যুদ্ধে সফল হয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যেই প্রথম সারির র‍্যাংকিংয়ে থাকা বেশিরভাগ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্রথম চয়েজ থাকে ফার্মেসী বিভাগ।

আবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নেওয়া শিক্ষার্থীদেরও অন্য বিভাগের চেয়ে অনেক মোটা অংকের টিউশন ফি দেওয়ার পাশাপাশি মেধার জানান দিয়ে জায়গা করে নিতে হয় ফার্মেসী বিভাগে ।

তাহলে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় ফার্মেসী বিভাগই কেন? কারণ ফার্মেসী স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা। ফার্মেসীতে চার কিংবা পাঁচ বছর মেয়াদি কোর্স করা গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের বলা হয় ওষুধ বিজ্ঞানী।

শুধু ওষুধ বিশেষজ্ঞই নয়, ফার্মাসিস্টদের কাজের মধ্যে রয়েছে ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা প্রেসক্রিপশন পুনঃপরীক্ষণ, ওষুধ কোন রোগের জন্য, কী কী উপাদান কী পরিমাণে মিশিয়ে ওষুধ উৎপাদন ও সংরক্ষণ, ওষুধ সম্পর্কে সঠিক তথ্য বিতরণ এবং এর সঠিক ব্যবহার ও প্রভাব নিশ্চিতকরণ, চিকিৎসাগত প্রয়োগ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও রোগীকে পরামর্শ প্রদান।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মতে, উন্নত স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করার জন্য ফার্মাসিস্টদের ৫৫ শতাংশ কমিউনিটি ফার্মেসি, ৩০ শতাংশ হসপিটাল ফার্মেসি, ৫ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং, ৫ শতাংশ সরকারি সংস্থায় এবং ৫ শতাংশ অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে ফার্মাসিস্টদের কাজের পরিধি অত্যন্ত সীমিত। কমিউনিটি কিংবা হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের কাজের ক্ষেত্র এখনো তৈরী হয়ে উঠেনি।

ফলে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও চলমান করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতেও হিমশিলা খাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমতবস্থায় দেশের সবমহল থেকে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের জোর দাবি উঠেছে।

সম্প্রতি একটি টকশোতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ প্রসঙ্গে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ফার্মাসিস্টরা ফার্মেসীতে কাজ করে এবং তাঁরা মেডিকেল টেকনোলজিস্টের মতই। মাননীয় মন্ত্রীর ফার্মাসিস্টদের প্রতি এমন দৃষ্টিভঙ্গিতে ফুঁসে উঠেছে ফার্মেসী বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থী, নিবন্ধিত গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট ও দেশের সচেতন জনসাধারণ। তীব্র প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকের দেশের অন্যতম মেধাবী সন্তান গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের মেধা, প্রজ্ঞা ও সক্ষমতাকে গভীর ভাবে অনুধাবন করে অতি দ্রুত হাসপাতাল ও প্রশাসনিক কাজে নিয়োগের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে সাজানো এখন সময়ের দাবি। তা নিশ্চিত করতে পারলেই হাতের নাগালে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চয়তা পাবে দেশের জনসাধারণ। নতুন সূর্য উদিত হবে স্বাস্থ্যখাতে।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

পথশিশুদের শিক্ষায় আমাদের করণীয়

ইসরাত জাহান ইতি


শিশু পথে জন্মানোর কারনে সে পথশিশু হয় না বরং এ সমাজ তাদেরকে পথশিশু বানায়। পথশিশু হল সেইসব শিশু যারা দারিদ্র্য বা গৃহহীনতার কারণে শহর, নগর বা গ্রামের রাস্তায় বসবাস করে। তাছাড়া বাবা মায়ের বিচ্ছেদ, বাবা মা মারা যাওয়ায়, গ্রামে দরিদ্রতা বেড়ে যাওয়া, গ্রাম থেকে শহরে চলে আসা কাজের খোঁজে বা বাবা মায়ের অসচেতনতার কারনে অনেক শিশু ঢাকায় এসে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এদিকে অর্থ লোভী কিছু মাদক ব্যবসায়ীর কারনেও এখন কিছু শিশুরা পথে দিন কাটায়। বাংলাদেশে লাখ লাখ পথশিশুদের নিরাপদ থাকার স্থানের যেমন অভাব রয়েছে তেমনি রয়েছে অপরাধে জড়িয়ে পরার ব্যাপক সম্ভাবনা।

জাতিসংঘ শিশু সনদে বর্ণিত ঘোষণা অনুযায়ী ১৮ বয়সের কম বয়সী সকলকেই শিশু বলে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৫ ভাগই শিশু। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার পথশিশু রয়েছে।

রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, অফিস চত্বর, পার্ক ও খোলা আকাশের নিচে তাদের বাস। এই পথশিশুদের বড় অংশই রয়েছে রাজধানী ঢাকায় ৷ এদের বয়স ৬ থেকে ১৮ বছরের নীচে ৷ বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জরিপ নেই৷ কেউ বলেন ২০ লাখ৷ আবার কেউ বলেন ২৫ লাখ৷ ঢাকা শহরে আছে কমপক্ষে ৬-৭ লাখ ৷ তবে এদের মধ্যে ৫০ হাজার শিশু আক্ষরিক অর্থেই রাস্তায় থাকে৷

সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ) নামের একটি সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০ শতাংশ শিশু গোসল করতে পারে না, ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই এবং ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থ হলে ডাক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না৷

ঢাকা শহরের দুইটি জায়গায় পথশিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী, কাওরান বাজার ও কমলাপুর । কার্যক্রম পরিচালক ড. আবুল হোসেন একটি প্রেজেন্টেশনে বলেন কমলাপুরের পথশিশুদের প্রায় ৫৩ শতাংশ ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী এবং প্রায় ৮৩ শতাংশ পথশিশু তারা তাদের খাবার নিজেরাই সংগ্রহ করে। তাদের ৬০ শতাংশ মাদক নেয় এবং প্রায় ৮০ শতাংশ পথশিশু যথাযথভাবে টয়লেট ব্যবস্থা নেয় না। তার ওপর শারীরিক, অর্থনৈতিক, যৌন নির্যাতন, মাদক এবং নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে শিশুদের জাড়ানো হচ্ছে ৷ ফলে সার্বিকভাবেই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে পথশিশুরা ।

সম্প্রতি আরো এক গবেষণায় দেখা যায়- দেশে প্রায় ৮০ লাখের বেশি পথশিশু রয়েছে। এদের মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে ১০ লাখেরও বেশি। শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, পথশিশুদের ৮৫ ভাগই কোনো না কোনো মাদক সেবন করে। বিবিএস এর তথ্য মতে শিশুরা বড়দের মত কাজ করে ৮৫ শতাংশ , স্কুলে যায় না ২৪ লাখ শিশু, মজুরি পায় না ১৬ লাখ শিশু, পরিবারকে সহায়তা দিতে কাজ করে ৩০ শতাংশ শিশু, কৃষি ও কল কারখানায় কাজ করে ৬৫ শতাংশ শিশু।

শিক্ষা সবার জন্মগত মৌলিক অধিকার । অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের অনেক ছিন্নমূল শিশুরা । একটি শিশুকে স্কুলে আসতে গেলে তাকে তো পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে ও পেট ভরে খেয়ে আসতে হবে ৷ বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষায় পথশিশুদের অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না, যদি না তাদের অন্যান্য চাহিদাগুলো পূরণ করা যায় ৷ শিশুর ভিতরে স্বপ্নের বীজ বুনে দিতে হবে ৷ তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য একটি ভালো জায়গায় তৈরি করতে হবে । প্রতিটি শিশুর মধ্যে রয়েছে সুপ্ত প্রতিভা।

তেমনিভাবে সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশুদের ভেতরও রয়েছে আলাদা একটি জগৎ। তাদের চিন্তাধারাও আলাদা আলাদা। একটু সহযোগিতা, সহানুভূতি আর একটু ভালোবাসায় বদলে দিতে পারে তাদের জীবন। এই শিশুদের মধ্যেই রয়েছে ভবিষ্যতের কত কবি, শিল্পী, বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক ইত্যাদি ।

শিশুদেরকে আমরা কাজে না এনে স্কুলে দিতে পারি ৷ আলোকিত বাংলাদেশ গড়তে অবশ্যই পথশিশুদের মৌলিক অধিকার সুযোগ গুলো পূরণ করতে হবে। শিক্ষার আলোয় পথশিশুরা আলোকিত হলেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে। কেবল শিক্ষাই পারে দেশকে দারিদ্র মুক্ত করতে। শিক্ষাই জাতীয় ও সামাজিক সমস্যা গুলোর স্থায়ী সমাধান করতে পারে।

পথশিশুদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আমাদের দেশের বেশীর ভাগ লোকই দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। বেঁচে থাকার আহার টুকু কখনো রোজগার করতে না পারলে ওরাই পেটের জ্বালায় বেছে নেয় চুরি, ডাকাতিসহ নানা সামাজিক অপরাধমূলক কাজ। অনেক কঠিন ও ঝুকিপূর্ণ কাজে কারখানার মালিকেরা শিশুদের অল্প টাকার বিনিময়ে কাজ করায়। এতে অকালেই অনেক শিশুরা ঝরে পড়ে।

এসব শিশুরা যদি শিক্ষার সুযোগ পায় তাহলে তারা ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে অবগত থাকবে। তাই এসব ছিন্নমূল টোকাই-পিচ্চিদের সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে ওদের মেধা ও শ্রমের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটিয়ে দেশের সম্পদে পরিণত করতে হবে।

এসব অধিকার বঞ্চিত শিশুকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান করে তুলতে চাই উপযুক্ত শিক্ষা ও পরিবেশ। ভিক্ষা নয়, দেশের উৎপাদনের বড় একটি অংশের যোগান দেয়া যেতে পারে ওদের দ্বারাই। উন্নত দেশে দেখা যায় যে, শিশুর সমস্ত দায়িত্ব রাষ্ট্র বহন করে। তেমনি আমাদের দেশের অবহেলিত শিশুদের সমস্ত দায়িত্ব রাষ্ট্র নিলে সমাজে আর কোন অরাজকতার সৃস্টি হবে না।

শিক্ষা বঞ্চিত সমাজ সভ্যতা তিমিরে নিমজ্জিত । শিক্ষা, বিনোদনসহ এবং সকলের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সমাজ ও রাষ্ট্র দায়িত্ব । দেশের এসব সমস্যার প্রেক্ষিতে তাদেরকে হাতের কাজ শিখানো, কারিগরী শিক্ষা এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিকল্প নেই। শিশুদের নৈতিকতা শিক্ষাও দিতে হবে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ না থাকলে মানুষের জীবন বিপথে পরিচালিত হয়।

উপযুক্ত শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তারা যেন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। বিভন্ন সরকারী সুযোগ সুবিধা তাদেরকে করে দিতে হবে। তাদের জন্য বিনা বেতনে শিক্ষা ও শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি গ্রহন করতে হবে। শিশুদেরকে শিক্ষা দানের জন্য ‍বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ পথ শিশুকে বাদ দিয়ে জাতি বা দেশ কখনো নিরক্ষরতা, উন্নতি, এবং আধুনিকায়নে স্বাক্ষর রাখতে পারবে না ।

অসহায় পথশিশু যাদের ক্ষুধার জন নেই একমুঠো খাবার, মায়ের হাতের পিঠাপুলি সেতো স্বপ্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নেই দেহ ঢাকার এক টুকরো কাপড়, তার কাছে শীত মানেই বিভীষিকা । বাসস্থান হলো খোলা আকাশ, রাত মানেই তার কাছে দুঃস্বপ্ন । শিক্ষাতো তাদের কাছে শুধুই বিলাসিতা । আর চিকিৎসা সেতো সরকারি হাসপাতালের অবহেলা।


ক্ষুধা যেন আজ সুকান্ত ভট্টাচার্য এর কবিতার মত

“ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়:
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি ।”


লেখকঃ শিশু সাহিত্যিক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার

প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা

উপ-উপাচার্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার গড়ে ওঠে রাজশাহী কলেজ হোস্টেলে। ২১ ফেব্রুয়ারির ১৯৫২ সন্ধ্যাতে আন্দোলনকারীরা তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে গড়ে তোলেন ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নামে দেশের প্রথম শহীদ মিনার।

প্রাণের আবেগ দিয়ে গড়া এই শহীদ মিনার পরদিন ২২শে ফেব্রুয়ারি সকালে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সেটি ভেঙ্গে ফেলে পাকিস্তান সরকারের পুলিশ।

২৩শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররাও ভাষা শহীদের স্মরণে এক রাতের শ্রমে নির্মাণ করেন ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’, যেটি ঢাকার প্রথম শহীদ মিনার। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সহসভাপতি গোলাম মাওলা ও সাধারণ সম্পাদক শরফুদ্দিনের অনুরোধে ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নামের এই শহীদ মিনারের নকশা করেছিলেন ডা. বদরুল আলম।

২৪শে ফেব্রুয়ারি এই স্মৃতিস্তম্ভ প্রথম উদ্বোধন করেন ভাষাশহীদ শফিউর রহমানের বাবা মাহবুবুর রহমান। ২৬শে ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন একুশের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আইন পরিষদ থেকে পদত্যাগকারী প্রথম সদস্য ‘আজাদ’ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন। কিন্তু ভীত পাকিস্তান সরকার সেদিনই পুলিশ দিয়ে রাজশাহীতে নির্মিত পূর্ব বাংলার প্রথমটির মতো ঢাকার প্রথম শহীদ মিনারও ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়।

১৯৬৭ সালে রাকসুর উদ্যোগে শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনে নির্মিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ মিনার ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিস্ফোরকের মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দেয়।

১৯৭৫ সালের ২৩শে এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এম. মনসুর আলী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার দেশের অন্যান্য শহীদ মিনারের গড়নের দিক থেকে আলাদা। এ মিনারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এর ম্যুরাল চিত্র, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, উন্মুক্ত মঞ্চ, সুবিস্তৃত খোলা প্রান্তর ও ফুলের বাগান- এসব কিছুর সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে শহীদ মিনার চত্বর।

শহীদ মিনারটি কৃত্রিমভাবে তৈরি মাটির টিলার উপর অবস্থিত। অনেকগুলি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় মিনারের ভিত্তিমূলে। মিনারের পশ্চাতে রয়েছে দীর্ঘ একটি ম্যুরাল চিত্র। ‘অক্ষয়বট’ শীর্ষক ম্যুরালটি নানা বর্ণের পোড়া ইট, পাথর ইত্যাদি নানা অক্ষয় মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। এ চিত্রটিতে রূপ দেওয়া হয়েছে এক স্নেহময়ী মা ও তাঁর বীর সন্তানদের অবয়ব।

ম্যুরালটিতে সূর্যের উপস্থিতিতে শহীদ সন্তানদের বীরত্ব ও তেজস্বিতাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে মায়ের অঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসার বিষয়টিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গঠনশৈলী ও উপাদানের বৈচিত্র্যে অনন্য এ ম্যুরালটি নির্মাণ করেন শিল্পী মুর্তজা বশীর।

শহীদ মিনারের পাদদেশে পূর্বদিকে যেদিক থেকে উদিহ হয় নতুন দিনের সূর্য, সেদিকে রয়েছে একটি শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা। এ সংগ্রহশালার ডিজাইন করেন স্থপতি মাহবুবুল হক। এই সংগ্রহশালায় রয়েছে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের নানা রাজনৈতিক ঘটনাবলির আলোকচিত্র, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নানা শিল্পকর্ম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের আলোকচিত্র, তাঁদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, পাকিস্তানিদের ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্নসহ অনেক কিছু। মোটকথা বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ করে আছে এ সংগ্রহশালা- শুধু ধারণ নয় মুক্তিসংগ্রামের চেতনাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে।

১৯৮৯ সালের ২১শে মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার প্রদর্শনী কক্ষের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রফেসর আমানূল্লাহ আহমদ, মাননীয় উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
সংগ্রহশালার কোল ঘেঁষে রয়েছে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ। এর পিছনের দেয়ালে রয়েছে গ্রাম বাংলার আবহমান দৃশ্য যা রিলিফ ওয়ার্কে নানা রঙের মাধ্যমে রূপ দেওয়া হয়েছে। এটি নির্মাণ করেন শিল্পী ফণীন্দ্রনাথ রায়। এ মঞ্চে মঞ্চস্থ হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান- যার মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণের ধারা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের নকশা করেন স্থপতি খায়রুল এনাম। ১৯৭২ সালের ৯ই মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এই শহীদ মিনারে রয়েছে চারটি বাহু যা উল্লম্বভাবে উঠে গেছে উপরের দিকে। বাহু চারটি উপরের দিকে বন্ধনী দ্বারা আবদ্ধ। এখানে চারটি বাহু দ্বারা ১৯৭২ সালের সংবিধানের চারটি মূলনীতি- জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। সুউচ্চ এ শহীদ মিনার চত্বর বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার সঞ্চার করে সর্বপ্রাণে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরটি বর্তমানে সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত। এ মুহূর্তে তেমন কোলাহল নেই। নীলাভ সবুজ ঘাসকে কেউ পদদলিত করছে না। অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন আসবে আত্মার আত্মীয়। বন্ধুরা যখনই ফিরে আসবে তোমাদের নিজস্ব মতিহার ক্যাম্পাসে- ভুল করবে না একবার শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রদর্শন করতে। নতুনভাবে স্থাপন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’। বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত প্রায় ৯৫০ খানা বই সংগ্রহ করা হয়েছে। শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রদর্শন করলে নিঃসন্দেহে ভালো লাগবে।

সূত্র:
১. মো. বনি আদম, ‘বাংলাদেশের চারুশিল্পে মুক্তিসংগ্রাম ও বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রতিফলন’ পি-এইচ.ডি. অভিসন্দর্ভ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৫।
২. দৈনিক পত্রিকা সমকাল, ২০২০।

শিশুর বিকাশ এবং আমাদের শিক্ষা

ইসরাত জাহান ইতি


শিশুরাই জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। শিশুদের ভবিষ্যত ভাল করতে হলে তাদের শিক্ষিত ও সুখি মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তারাই হবে দেশের সমাজপতি, রাষ্ট্রনায়ক, বিশ্ব নিয়ন্ত্রতা ও আদর্শবান মহাপুরুষ। ভবিষ্যত জাতি গঠনে তারাই গ্রহণ করবে কঠিন কঠিন চ্যালেঞ্চ।

এই সম্ভাবনাকে অবশ্যম্ভাবী করার জন্য একান্ত প্রয়োজন শিশুর সঠিক বিকাশ ও প্রয়োজন শিশুবান্ধব শিক্ষা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক বৃদ্ধি হলো শারীরিক বিকাশ। আর মানসিক বিকাশ হলো আচার-ব্যবহার, চিন্তা-চেতনা, কথা বলা, অনুভূতি ও ভাবের আদান-প্রদানের ক্ষমতা অর্জন।

শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ছাড়া শিশু তথা মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ কখনই সম্ভব নয়।

শিশুর মনের আনন্দই তার দেহ ও মনের শক্তির মূল উৎস। আনন্দ ও শিশু বান্ধব পরিবেশ ছাড়া তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ কোন মতেই সম্ভব নয়। যে কোন শিক্ষাব্যবস্থা চারটি প্রধান স্তম্ভ নির্দেশ করে। যেমন জানতে শেখা, করতে শেখা, বাঁচতে শেখা ও মিলেমিশে বাস করতে শেখা। শিশুর গ্রহণ উপযোগী আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা দানই হলো তার প্রকৃত শিক্ষা।

প্রখ্যাত ফরাসী দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাঁক রুশো বলেছেন, “Education is the child’s development from with in ” অর্থাৎ শিক্ষা হলো শিশুর স্বতঃস্ফুর্ত আত্মবিকাশ।

পরিবার হলো শিশুর প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একজন শিশুর শারীরিক , মানসিক , প্রক্ষোভিক, সামাজিক প্রভৃতি বিকাশগুলো ঘটতে শুরু করে পরিবারের মধ্যেই। শিশুরা তার মা-বাবা, পরিবার, পরিজন, সমাজ ইত্যাদি লক্ষ্য করে । তাদের কথা শুনে শুনে শিখতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখেন মা। কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ, সাজ-পোশাক, চিন্তা-চেতনা, ভাবনাগুলো পর্যন্ত শিশু মায়ের কাছ থেকে শেখে।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, “তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো ”।

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে “One father is more than a hundred schoolmasters”।

বাবার সংস্পর্শে সন্তানের মস্তিষ্কে যৌক্তিক আচরণ, সামাজিক বিকাশ শেখার দক্ষতা তৈরি হয়। ফলে যে কোনো শিক্ষাদানে বাবা অনেক দ্রুত শিশুর আস্থা তৈরি করতে পারেন। বাবারা ছোটবেলা থেকেই বাইরের পরিবেশের সঙ্গে ভালোভাবে সম্পৃক্ত। তাই সন্তানের কোন কোন বিষয় ইতিবাচক ও নেতিবাচক সে সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে পারেন।

আবার পারিবারিক কলহের চাপে অনেক শিশুর স্বাভাবিক জীবনই অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনা শিশুদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেসব শিশু মা-বাবার মনোমালিন্য দেখতে দেখতে বড় হয়, তারা হতাশ, অসামাজিক ও সহিংস হয়ে বেড়ে ওঠে। তারা নানা অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকে। তাদের মনের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। ফলে মনঃসংযোগের ঘাটতি ,মানসিক রোগ ও ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিকতা ঘটতে পারে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১২ শীর্ষক এক জরিপে দেখা যায়, দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের ১৮.৩৫ শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত। এমন ঘটনা আবার মেয়ে শিশুর তুলনায় ছেলে শিশুর মধ্যে বেশি। মেয়ে শিশুর ১৭.৪৭ শতাংশের পাশাপাশি ১৯.২১ শতাংশ ছেলে শিশু মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

দেশের অধিকাংশ পরিবারের অভিভাবক সব সময় শিশুকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু কখনো বিবেচনা করে না একজন ভাল মানুষ হওয়া সমাজের জন্য তথা রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শিশু শিক্ষা ও আনন্দ একে অপরের সাথে গভীরভাবে জড়িত। আনন্দ ছাড়া কোমলমতি শিশুরা শিক্ষা লাভে উৎসাহ পায় না ।

শিশুরা শিখবে আনন্দের মাধ্যমে, নিজেদের ইচ্ছামতো, ঘুরে-ফিরে, কল্পনার ফানুস উড়িয়ে,খেলাধূলার মাধ্যমে, তাদের নিজেদের মনের অজান্তেই। এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ থমসন বলেন, শিক্ষা হলো শিশুর ওপর পরিবেশের প্রভাব, যে প্রভাবের দ্বারা শিশুর বাহ্যিক আচরণ, চিন্তাধারা এবং দৃষ্টিভঙ্গির স্থায়ী পরিবর্তন হয়।

একজন শিক্ষক সুশিক্ষিত জাতি গড়ার কারিগর। শিক্ষক হচ্ছেন শিশু শিক্ষার একজন সুনিপুন মিস্ত্রি, যিনি গঠন করবেন শিশুর মানবাত্মা। শিশুরা মা-বাবা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পেলেও, প্রাতিষ্ঠানিক সকল শিক্ষা, আদব-কায়দা, আচার-আচরণ, রীতিনীতি সবকিছুই একজন ভালো শিক্ষক থেকে শেখে। একটি শিশুর জীবনের প্রথম চার /পাঁচ বছরের মধ্যেই মোটামুটি তার ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র গঠিত হয়ে থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে একটি শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়।

শিশু যখন বেড়ে ওঠে, তখন তার মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য এবং উন্নত ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার জন্য তার সামনে ইতিবাচক আবেগ, অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরা আমাদের সবার কর্তব্য। উন্নত দেশগুলোতে এই কাজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই করে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সেটি তেমন করা হয় না। আমাদের দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শেখানোর চেয়ে পাঠ্যপুস্তকের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় । ফলে শিশুর ব্যক্তিত্বও ঠিকমতো গড়ে ওঠে না।

এই শিশুরা যখন বড় হয়, তখন তাদের মাঝে আদর্শ, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মতো বিষয়গুলো তৈরি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে সরকারিভাবে প্রাক প্রাথমিকে শিক্ষার স্তর একটি হলেও কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, সেগুলোতে নার্সারী, প্লে, কেজি ওয়ান, কেজি টু’সহ তিন থেকে চার বছর ধরে পড়ানো হয় শিশুদের। আবার এ সময় শিশুদের খেলায় খেলায় মাতৃভাষা, অক্ষর ও সংখ্যার ধারণা দেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে স্কুলগুলোতে শিশুদের গ্রামার এমনকি বিজ্ঞানও পড়ানো হয়, যা আসলেই কাম্য নয় ।

শিশুরাই আগামীর স্বপ্ন। তাই তাদেরকে ছোট থেকে ভাল মানুষ হিসেবে তৈরি করা স্কুল, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সর্বোপরি আমাদের সকলের দায়িত্ব। সুস্থ ও সুন্দর সামাজিক পরিবেশ শিশুর মেধা এবং মননশীলতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। শিশুকে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে বড় হয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে তারা অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে।

শিশুর বিদ্যালয়ে যাতায়াতসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদেরই। আসুন আমরা আমাদের শিশুদেরকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানোর পূর্বে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করি।


লেখকঃ তরুণ নারী উদ্যোক্তা।

মালিকদের বাস ভাড়া বৃদ্ধির চাপে তাপে কেন গলে BRTA?

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


আজ বাসা থেকে বের হয়ে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট বাজার করার জন্য যাচ্ছিলাম। রিকশা চালক ছিলেন বাবুল মিয়া। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়। লক ডাউনে অসুস্থতার কারণে তাঁর বাড়ি যাওয়া হয়নি এবং ধার দেনা করে ঢাকায় থেকেছেন।

গত ৭ দিন যাবৎ আবার রিকশা চালাচ্ছেন। কিছু দিন ঢাকায় কাজ করে বাড়িতে যেয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে আম বাগানে কাজ করবেন বলে পরিকল্পনা করেছিলেন। সে গতকাল শুনছে ১লা জুন থেকে অর্ধেক সিট খালি রাখার শর্তে বাস-মিনিবাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভাড়া নির্ধারণ কমিটি।

আমাকে বললো, স্যার আমার পক্ষে ধার দেনা পরিশোধ করে প্রায় ডাবল টাকা বাস ভাড়া দিয়ে বাড়িতে যাওয়া কী সম্ভব? বাস সার্ভিস চালু হলে ঢাকা থেকে লাখ লাখ দিন মজুর ঢাকা ছাড়বে এবং গ্রাম থেকে ঢাকা আসবে।

সত্যিই আজ পরিবহন মালিকদের প্রভাবে বিআরটিএর মতো দুনীর্তিবাজ প্রতিষ্ঠান বাবুল মিয়ার মতো দিনমজুরের কথা ভুলে যাবে এটাই স্বাভাবিক।

বিআরটিএ কী ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রতিষ্ঠান হলে বাস ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা যাত্রীদের উপর চাপিয়ে মালিকদের ভাড়ার নেওয়ার লাইসেন্স দেয়? এমনকি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ভাড়া কমবে—এইটার নিশ্চয়তা দেয়নি বিআরটিএ। বাস ভাড়া একবার বাড়ালে দেশের ইতিহাসের কমানোর কোন নজির আমি দেখি নাই। সুতরাং কোন রকম পর্যবেক্ষন ছাড়া কতিপয় প্রভাবশালী পরিবহন মালিকদের চাপে শুরুতেই বাস ভাড়া বাড়িয়ে বিআরটিএ প্রমান করলো। সাধারন যাত্রীদের কথা ভুলে তারাও ভাড়া বৃদ্ধির চাপে ও তাপে গলে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংকটের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে গণপরিবহন চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে সরকার। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক আদেশে সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়। এরপরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন পরিচালনা নিয়ে গতকাল শুক্রবার বাস ও লঞ্চ মালিকদের নিয়ে আলাদা বৈঠক করে বিআরটিএ ও বিআইডব্লিউটিএ। তবে বিআইডব্লিউটিএ ও রেলপথ মন্ত্রণালয় বিশেষভাবে ধন্যবাদ পাবার যোগ্য যে, তারা যাত্রীদের কোন ভাড়া বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়নি।

খবরে কাগজে পড়লাম বিআইডব্লিউটিএ বলছে, লঞ্চমালিকেরা কম যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চালাচ্ছেন, তাঁরা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিনিয়োগ করছেন—এটা নিশ্চিত হওয়ার পরই ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি আসে। হুট করে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হলো আর তাঁরা গাদাগাদি করে যাত্রী তুললে তো কোনো উদ্দেশ্যই পূরণ হবে না। এই সিদ্ধান্তটি বিআরটিএ নিতে পারতো। মালিকেরা তা মানছেন কি না, সেটা দেখে ভাড়া বাড়ানো যেত কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) এ বিষয়ে কবির মতো নীরব ছিলেন বলে সংবাদ মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি।

বিআরটিএ যে, হিসাব করে ভাড়ার খসড়া নির্ধারণ করেছে, তাতে বিদ্যমান বাস-মিনিবাসের ৫০ শতাংশ ফাঁকা রাখলেও লোকসান হওয়ার কথা নয়। এ ছাড়া ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে পরিবহন মালিকেরা ‘সিটিং সার্ভিস সহ নানা নামে আগে থেকেই শতভাগ বা এরও বেশি ভাড়া আদায় করে আসছেন।

রসিক যাত্রীরা ‘সিটিং সার্ভিসকে বলেন ‘চিটিং সার্ভিস। নতুন করে ৮০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া সেই আগের বাড়তি ভাড়ার সঙ্গেই যুক্ত করে আদায় করবেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা।

অন্যদিকে দূরপাল্লার বাসের মধ্যে সরকার শুধু শীতাতপ নিয়ন্ত্রণবিহীন (নন-এসি) বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে। বিলাসবহুল ও এসি বাসের ভাড়া মালিকেরা নিজেরাই ঠিক করে থাকেন। অর্থাৎ বাজারে চাহিদা-জোগানের ওপর ভাড়া নির্ভরশীল। এসব বাসের ভাড়া আগে থেকেই এত বেশি যে কখনো কখনো ২০-৩০ শতাংশ আসন ফাঁকা থাকলেও তাঁদের লোকসান গুনতে হয় না। সবার জন্য ৮০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া অযৌক্তিক। এ ছাড়া দূরপাল্লার পথের নন-এসি বাসগুলোও সব সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায় করে থাকে। ফলে এখন ৮০ শতাংশ বাড়তি মানে হচ্ছে আগের বাড়তি ভাড়ার ওপর আরও ভাড়া বাড়ানো।

বিআরটিএ সূত্রে আমি যতটুকু জানি, বাস-মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাস ক্রয়, ব্যাংক ঋণ, জ্বালানি খরচসহ ২০ ধরনের ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়। কোনো একটা উপকরণের ব্যয় বাড়লেই ভাড়া বাড়ানোর প্রশ্ন আসে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ডিজেলসহ কোনো কিছুর ব্যয় বাড়েনি বরংচ কমেছে। এ ছাড়া বাসের ভাড়া বাড়ানোর আগে ব্যয় বিশ্লেষণ করার রীতি আছে। সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করলে ভাড়া কম বাড়িয়ে যাত্রীদের ওপর চাপ কমানো যেত।

পরিবহন মালিকদের কাছে মনিটরিং থাকায় এখন যে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, সেটার চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হতে পারে। এমনকি বাসে বাড়তি যাত্রী পরিবহন করা হতে পারে। কারণ, অতীতেও তা-ই হয়েছে। জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার আগেই বাসের ভাড়া বেড়ে যায়। কিন্তু তেলের দাম কমলে বাসের ভাড়া কমে না। ফলে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে শুধু যাত্রী কম বহনের আশ্বাসের ভিত্তিতে সেটির কোন ভিত্তি নেই বললেই চলে।

করোনাকালে যুক্তরাজ্য ও ভারতসহ অনেক দেশে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। করোনাকালে লন্ডনে বাস সেবা চালু রয়েছে। অথচ সেখানেও বাস চালকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার খরচ বেড়েছে কিন্তু বাস ভাড়া বাড়ানো হয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাড়া মওকুফ করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমানো হয়েছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবহন সেক্টরে বেসরকারি সংস্থার ওপর ভরসা করেই জনসাধারণকে চলাচল করতে হয়। বেসরকারি খাতের অধীনে চললেও গণপরিবহন হওয়ার কথা কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের আওতায়।

কিন্তু এখন তা ব্যক্তিপর্যায়ে চলে যাওয়ায় রয়েছে অসংখ্য মালিক-শ্রমিক। গঠন হচ্ছে নানা সংগঠন। এর ফলে রাজনৈতিক ছত্রছায়া, পেশি-শক্তি ও অবৈধ লেনদেনের পথ তৈরি হয়েছে। এই বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মালিক বেশির ভাগই প্রভাবশালী নেতা। কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আত্মীয়। তাঁরা খুব কম সংখ্যক বাস নামিয়ে কোম্পানির সর্বেসর্বা হয়ে যান। এরপর সাধারণ মালিকেরা তাঁদের অধীনে বাস চালাতে দেন। বিনিময়ে কোম্পানিকে দৈনিক ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এটাকে জিপি বা গেট পাস বলা হয়। এভাবে পরিবহন খাতে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় হয়। চাঁদাবাজি বন্ধ না করা গেলে ভাড়া বাড়িয়ে লাভ হবে না। কারণ, লাভের টাকা থাকে চাঁদাবাজদের পকেটে। চাঁদাবাজি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ভাড়া না বাড়িয়ে লাভ করা সম্ভব ।

গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলার জন্য মূলত দায়ী সরকারি কর্তৃপক্ষ। পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছে নতজানু নীতির কারণে পরিস্থিতি এখন সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণে নেই। ফলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা যে কোনো অন্যায় দাবি আদায় করে আন্দোলনের মাধ্যমে। এ পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। গণপরিবহন এখন গণ-মালিক। এটি বড় সমস্যা। সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি যাত্রী চাহিদা পূরণে অপ্রতুলতা একটি অন্যতম কারণ। এক সময় রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা ডাবল ডেকার ছিল সাধারণ যাত্রীদের প্রথম পছন্দের যান।

অভিযোগ রয়েছে, পরিবহন মালিকদের প্ররোচনায় বা প্রভাবে অনেক রুটে বিআরটিসির বাস বন্ধ করা হয়েছে। আন্ত:জেলা রুটে বিআরটিসির কিছু বাস চলাচল করলেও সেগুলোতে সরকারের লাভের চেয়ে ক্ষতির অংকই বেশি। সরকার করোনা পরিস্থিতিতে ভাড়া না বাড়িয়ে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে দিতে পারে। এখন যে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে, তা আর কোনো দিন কমানো যাবে না। এছাড়া পরিবহন সেক্টর নিয়ন্ত্রণের সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা তথা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পেশাদারিত্ব, অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। রেগুলেটরি কমিটিতে যারা আছেন, তাদের অনেকেরই এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বা ধারণা নেই। এসব কারণেই পরিবহন খাতকে গ্রাস করছে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম।

অনেক আগে থেকেই সড়ক পরিবহন খাতের প্রভাবশালী নেতারা যা দাবি করেন সরকারকে তাই মেনে নিতে দেখে আসছি। পরিবহন সেক্টরের কথা আসলেই মনে পড়ে যায় কবি শামসুর রাহমানের কবিতার লাইনের মতো ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’। রাজনৈতিক বেশধারী পরিবহন মালিকরা নিজেদেরকে মনে করছেন তারা সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। এবার যেন এটি না হয়ে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবশ্যই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। আর এবারও করোনার মহামারিতে যদি মালিকরা নিজেরাই বাস ভাড়া নির্ধারন করে। তাহলে যাতে ফসলের দাম নির্ধারন করার জন্য কৃষকদেরকেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

স্কুল জীবনে পড়েছিলাম পদার্থের সংজ্ঞা- যার আকার আছে, আয়তন আছে, স্থান দখল করে এবং বল প্রয়োগ করে বাধার সৃষ্টি করে।

আজকে তাই মনে হয়েছে পরিবহন মালিকদের রাজনৈতিক পরিচয় নামের আকার ও আয়তন আছে, সরকারি সংস্থাকে চাপ দিতে পারে ও বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং পরিবহন সেক্টরে স্থান দখল করে আছে তারাই আজ সমাজের পদার্থ। আমরা সাধারন জনগন পদার্থের সংজ্ঞা ও ধরন পড়ে আজ নিজেরাই বায়বীয় পদার্থ। জনগন বিচ্ছিন্ন থাকে সর্বদা যাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে কোন ধরনের অবস্থান নেই। এক্ষেত্রে কেউ আমাদের অপদার্থ বললেও মাইন্ড করবো না।

আরেকটি বিজ্ঞানের কথা মনে আছে, পদার্থ ও শক্তি একটি অন্যটিতে রূপান্তরযোগ্য, সুতরাং এগুলি একই সত্তার দুই ভিন্ন রূপ। বর্তমানে বাস মালিকগণ পদার্থ হিসেবে রাজনৈতিক পরিচয়ে সর্বোচ্চ শক্তিতে রুপান্তরিত হয়েছে। নিউটনের গতিসংক্রান্ত বিধি অনুযায়ী, জড়তা হল পদার্থের সেই ধর্ম যার কারণে বাইরে থেকে এর স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করলে পদার্থটি তৎক্ষণাৎ অবস্থা পরিবর্তন করে না। আর সেটি হলো আমরা সাধারন জনগন। যারা চিৎকার করতে পারি দূর থেকে কিন্তু পরিবহন সেক্টরের অরাজকতা পরিবর্তন করতে পারি না।

পদার্থের আর বিষয় হলোঃ বায়ু মন্ডলে তাপ ও চাপ বৃদ্ধি পেলে নির্দিষ্ট একটি পদার্থ গলে যায়। সেই পদার্থের সাথে অন্য উপাদান মেলালে এর গলনাংক কমানো-বাড়ানো যায়। সুতরাং আজকেও দেখছি মালিক পক্ষের অপরাজনীতির চাপ ও তাপে বিআরটিএ গলে দিয়ে অস্বাভাবিকভাবে হারে বাস ভাড়া বৃদ্ধির সুপারিশ করে যাত্রীদের উপর চাপানোর চেষ্টা করছে।

কিন্তু এভাবে বাস ভাড়া বৃদ্ধি করে আর কতদিন যাত্রীদের জিম্মি করবে মালিক ও কর্তৃপক্ষ?


লেখকঃ পিএইচডি গবেষক, বিশ্লেষক ও ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের ভূমিকা

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


একটি দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে উদ্যোক্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)-২০১৯ উপাত্ত অনুযায়ী, ১৬ কোটি ৫৭ লাখ, মোট জনগোষ্ঠীর ২১.৪% শহরে বাস করে, বাকি ৭৮.৬% গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন। জাতীয় বিকাশের পাশাপাশি সামাজিক বিকাশের জন্য গ্রামীণ উদ্যোক্তা বিকাশ প্রয়োজনীয়।

একজন উদ্যোক্তা মূলধন গঠনের প্রচার করে এবং সমাজে সম্পদ তৈরি করে এবং প্রক্রিয়াটিতে বেকারত্ব এবং দারিদ্র্য হ্রাস করে। গ্রামীণ উদ্যোগকে গ্রাম পর্যায়ে উদীয়মান উদ্যোক্তা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যা বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা যেমন শিল্প, শিল্প, কৃষিকাজ এবং অর্থনৈতিক বিকাশের শক্তিশালী উপাদান হিসাবে কাজ করতে পারে। তারা দেশীয় সম্পদ ব্যবহার করে যা স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এবং স্থানীয় জীবনযাত্রাকে উন্নত করে।

এটি সাধারণত গ্রাম পর্যায়ে উদ্ভূত উদ্যোক্তা হিসাবে সংজ্ঞায়িত হয় যা বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা যেমন শিল্প, শিল্প, কৃষির মতো উদ্যোগ এবং অর্থনৈতিক বিকাশের শক্তিশালী উপাদান হিসাবে কাজ করতে পারে। গ্রামীণ অঞ্চলের বিকাশকে পূর্বের তুলনায় আরও বেশি উদ্যোগের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। ব্যক্তি, পরিবার এবং সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নত করার জন্য এবং একটি স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি ও পরিবেশ বজায় রাখার জন্য উদ্যোক্তা একটি বাহন হিসাবে দাঁড়িয়েছে।

গ্রামীণ উদ্যোক্তা কৃষি, কৃষির সাথে সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপ, ক্ষুদ্র শিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসায়, গ্রামীণ কারিগর এবং অন্যান্যগুলিতে বজায় রাখে। তবে, সচেতনতা, উত্সাহ এবং প্রশিক্ষণের অভাবে গ্রামীণ উদ্যোক্তা সুপ্ত পর্যায়ে রয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দেশজ মোট উৎপাদনে (জিডিপি) অবদান ২৫ ভাগ, সেখানে সব শিল্প খাতের রয়েছে ৩৫ শতাংশ। বর্তমানে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ৭৮ লাখ উদ্যোক্তাই জিডিপিতে এ অবদান রাখছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়লেই দেশের অর্থনীতির পরিধি বড় হবে এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ ও ব্যবস্থাপনা দরকার ।

গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান বাড়ছে নারী উদ্যোক্তাদের। শহরের পাশাপাশি এখন গ্রামেও বাড়ছে নারী উদ্যোক্তা। গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ, গ্রামীণ পরিবহন ও যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হওয়ায় স্বল্প আকারে হলেও বাড়ছে নারী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ। এ ক্ষেত্রে গ্রামীণ পরিবারগুলোর আয় ও কর্মসংস্থান বাড়াতে অকৃষি খাতের অবদানও বাড়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

গ্রামীন সেবা খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বিউটি পার্লার, বিকাশ, নাগাদ, এজেন্ট ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য ও ফার্মেসী সেবা, ফটো স্টুডিও, সার্ভিসিং ভিত্তিক কার্যক্রম পাম্প মেরামত ও সার্ভিসিং সহ জ্বালানী ইঞ্জিন পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত , মোবাইল, রেফ্রিজারেটর যানবাহন মেরামত, খুচরা বা পাইকারের দোকানে সরবরাহকৃত পরিষেবা, মুদ্রণ, হোটেল এবং রেস্তোঁরা, চা স্টল, সার, কীটনাশক এবং বীজ বিক্রির দোকান, সাপ্তাহিক টুপি, মাছের ব্যবসা , টেক্সটাইল ভিত্তিক কাজগুলির মধ্যে বুনন, কাটা, এবং টেইলারিং এবং মেরামত এর অন্তর্ভুক্ত।

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বয়স এখন ৪৯ বছর। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আর এই এগিয়ে যাবার পেছনে অন্যতম প্রধান শক্তি হচ্ছে-তরুণ সমাজ। জাতীয় যুব নীতি অনুসারে বাংলাদেশের ১৮-৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্টিকে যুব হিসেবে সংঞ্জায়িত করা হয়েছে। এ বয়সসীমার জনসংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, যা আনুমানিক ৫ কোটি। তরুণরাই দেশের সম্পদ। পৃথিবীর ইতিহাসে পরিবর্তনের সকল ধারায় তরুণদের ভুমিকা অনস্বীকার্য। এমনকি বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেবার জন্য তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।

তরুণরাই পারে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে। আর দেশের উন্নতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য তরুণ উদ্যোক্তা বাড়াতে হবে। তরুণদের উজ্জীবিত করার মাধ্যমে ঈর্ষণীয় এই অগ্রগতির মূলমন্ত্র শিখিয়ে গেছেন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বারবার বলে গিয়েছিলেন, আজ আমরা সেই মুক্তি অর্জনের পথে।

বঙ্গবন্ধু প্রায় বক্তব্যে বলতেন, ‘দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে বেকার সমস্যা দূর করতে হবে। একটি দেশের সমস্যা এবং সম্ভাবনা দুটিই তরুণ সমাজের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। তরুণরা বেকার থাকলে তারা বিপদগ্রস্ত হয়, দেশের জন্য ক্ষতিকর বোঝায় পরিণত হয়। আর কোনো দেশের তরুণ সমাজ যদি কর্মঠ হয় এবং কাজের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পায়, তাহলে ওই দেশের দ্রুত উন্নতি কেউ আটকাতে পারে না। তরুণদের দীপ্ত মেধা এবং সতেজ জ্ঞানের গতি এই সবুজ-শ্যামল বাংলাকে প্রকৃত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে পারে।’

২০০৮ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়নের জন্য তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে প্রফেসর ড. আতিউর রহমান স্যারকে নিয়োগ প্রদান করেন। ড. আতিউর রহমান স্যার গভর্নর থাকাকালীন বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক স্বয়ংক্রিয়তা ও ডিজিটাইজেশন এনেছিলেন এবং তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য ১ লাখ কোটি টাকা লোন দিয়ে এসএমই খাতকে পুর্নবিন্যাস, কৃষককে ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুযোগ, স্কুল ব্যাংকিং, গ্রিন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ও সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, উন্নয়ন ও মানবিক ব্যাংকিং ধারনা প্রবর্তন, পদ্মাসেতুর অর্থায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছিলেন ও
সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসাসহ নানাবিধ কাজে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন । এর সুবিধা আজকে ভোগ করছেন গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠি।

গত অর্থ বছরের বাজেটে প্রথমবারের মত নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য ১শ’ কোটি টাকা ‘স্টার্ট আপ ফান্ড’ বা ‘নতুন উদ্যোক্তা তহবিল’ গঠন করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণ যুবসমাজ:‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’কথা তুলে ধরেছেন। তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে এবং স্বাবলম্বী তরুণ সমাজ গঠন করতে ২০২১ সালের মধ্যে ‘তরুণ উদ্যোক্তা নীতি’, একটি দক্ষ ও কর্মঠ যুবসমাজ তৈরি করতে ২০২৩ সালের মধ্যে ‘কর্মঠ প্রকল্প’ এবং প্রতি উপজেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে স্বল্প ও অদক্ষ তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নেয় সরকার।

যে সোনার বাংলার স্বপ্ন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন, যে অর্থনৈতিক মুক্তি চেয়েছিলেন মানুষের, যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন সবার জন্য, তাঁরই সুযোগ্য কন্যা সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সে পথেই তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

এসডিজির প্রথম লক্ষ্যটি নিয়েই যদি বলি, তাহলে দারিদ্র্য দূরীকরণের মোক্ষম উপায় হচ্ছে মানুষের আয় বৃদ্ধি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৬ লাখ তরুণ বেকারত্বের খাতায় নাম লেখাচ্ছেন, সেখানে প্রথম লক্ষ্য পূরণই কি বাংলাদেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ নয়? উত্তরটি হচ্ছে ‘না’। এসডিজির লক্ষ্য ৯-এ বলা আছে শিল্প, উদ্ভাবন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা। এ উন্নয়ন কাদের হাত ধরে হবে? এ দায়িত্বের ভার নেওয়ার জন্য সবচেয়ে যোগ্য তো তরুণেরাই।

একজন উদ্যোক্তা তাঁর উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে সমস্যা সমাধানের নতুন নতুন উপায়ের জানান দেন, যা সমাজকে একটি ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যায়। তাহলে এই যে শিল্প বা কৃষি খাত কিংবা রাষ্ট্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন—এই প্রতিটার জন্যই এমন মানসিকতার মানুষ লাগবে, যাঁরা উদ্যোগী। এসডিজির প্রথম লক্ষ্যটি শহর ও মানুষের বসবাসকে একীভূত, নিরাপদ, প্রাণবন্ত এবং টেকসই করা সম্ভব কেবলমাত্র গ্রামীন উদ্যোক্তাদের অর্থনীতিতে অর্ন্তভুক্ত করে।

জাতিসংঘের দেওয়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন তরুণ উদ্যোক্তারা। সামাজিক উদ্যোক্তা আন্দোলন থেকে শুরু করে লাভজনক বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় তরুণ উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে সম্মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে হলে তরুণ উদ্যোক্তাদের যথাযথ ভূমিকাই তাই প্রত্যাশিত।

এসএমই ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) পরিচালিত ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে নারী উদ্যোক্তা : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত ২০১৭’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ২০০৯ সালে শিক্ষিত ২০ শতাংশ নারী ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০১৭ সালে তা বেড়ে ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দেশের ৮৬ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাই বিবাহিত। তাদের ৬৫ শতাংশেরই আবার পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। ৭৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার বয়স ৩১ থেকে ৫০ বছর। তরুণ নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা মাত্র ১৩ শতাংশ (২১ থেকে ৩০ বছর)। শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর। ঋণ প্রাপ্তি, সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিবন্ধকতায় অবিবাহিত নারীরা এখনো উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি হতে পারছেন না।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের ইশতেহারে নির্বাচনী অঙ্গীকার হিসেবে গ্রামকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রাম হবে শহর। আমার গ্রাম-আমার শহর’ : প্রতি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধার সম্প্রসারণ- এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে তিনি গ্রাম উন্নয়নের পথ-নকশাও উপস্থাপন করেছেন। তারপর থেকে এ বিষয়টি আমাদের উন্নয়ন আলোচনায় বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে।

অতঃপর সংবিধানের ১৬নং অনুচ্ছেদে নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতায়নের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রের এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করার জন্য গ্রহণ করা দরকার সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি। এর জন্য প্রয়োজন গ্রামীণ অর্থনীতির রূপান্তর।

এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্বাধীনতার পর থেকেই নিরন্তর কাজ চলছে- বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১০ বছরের শাসনামলে এ কার্যক্রম অনেক বেশি বেগবান হয়েছে।


লেখকঃ উদ্যোক্তা গবেষক ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ; এবং সহকারী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট এন্ড ফাইন্যান্স বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়