মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম
গত কয়েকদিন ভারত-চীন চলমান অস্থিরতা থেকে উদ্ভুত ভারতীয় মিডিয়াগুলোর অসৌজন্যমূলক (খয়রাতি) শিরোনামে অস্থির হবার বিষয়টি সাড়া ফেলেছে!
আমি বিষয়টিতে আশ্চর্য হয়নি মোটেও। গত এক দশকে আমাদের দেশের ভারত বিদ্বেষ অবস্থা প্রকট হয়েছে,তাতে ভারত বরাবরই আবার ঘি ঢালে,এটাও এমন একটা ঘটনা।এই সব ঘটনাই কিন্তু ভারত বিরোধী মনোভাবটা আরো প্রকট হয়।
সীমান্তে মানুষ হত্যা,ক্রিকেট রাজনীতি, ভারতীয় মিডিয়ার অশোভন প্রকাশভঙ্গী, ভারতীয় মুসলিমদের উপর অত্যাচার, ভারতের দাদাগিরি মনোভাবসহ অনেক কারন আছে বাংলাদেশে ভারত বিরোধী মনোভাবের। তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে ভারতের মানুষও একইভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে ‘ফকির/কাঙ্গালী’ মনোভাবও বেড়েছে।তাছাড়া ভারতে ধর্মীয় উগ্র পন্থানুসরণ করা রাজনীতির প্রভাব সেদেশের কূটনীতিক আচরণেও পড়েছে।প্রতিবেশী কোন দেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক এখন ভালো না।
আমার কাছে ভারতের বর্তমান অবস্থা একেবারেই নড়বড়ে। তারা যতটা না দেখায় তাদের তৎপরতায়,তাদের প্রকৃত সামর্থ্য কিন্তু এতটা না।তাছাড়া মোদী ক্ষমতায় আসার পর তেমন দূরদর্শিতা দেখায় নাই,এটাও ভারতের আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার একটা কারন।
যারা ইতিহাস মনে রাখে না, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির দায় তাদেরই’—স্প্যানিশ দার্শনিক হোর্হে সান্তাইয়ানার এই বাণী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চীন নীতির ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের সময় তাঁর দেশ যে ভুল করেছিল, তা মনে রাখার বিষয়ে তিনি উদাসীন।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু যেভাবে চীন ইস্যুতে তাঁর অতি রাশিয়া নির্ভর হয়ে ভুল করেছিলেন, মোদিও সেই একই ভুল করছেন। মোদিও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন এবং আগামাথা না ভেবেই ধরে নিয়েছেন ভারতের কৌশলগত স্বার্থ উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বড় বান্ধব তার আর হবে না। কিন্তু ১৯৬২ সালে ভারত যেভাবে রাশিয়াকে পাশে পায়নি, এখন একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রকেও পাচ্ছে না।আর, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের অতি মেকি সম্পর্কও চীন ভালো ভাবে নিচ্ছে না।
পক্ষান্তরে,চীন ভারতের মত এত মোটা মাথার চিন্তা করে না।তারা যুদ্ধেও তাদের বানিজ্যিক কৌশল দিয়েই প্রতিবেশী ও ভারতের সাথে সম্পর্কিত দেশ সমূহকে কাছে টানার চেষ্টা করছে,তারই অংশ হিসেবে চীন বাংলাদেশকে ৯৭ শতাংশ রপ্তানিতে শুল্ক মুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে।
আবার এটা ওপেন সিক্রেট বিশ্বব্যাংক অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা প্রভাবিত, এখন ভারত হয়তো তার মিত্রের প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের একটা আর্থিক বরাদ্দ পাইয়ে বাংলাদেশকে কাছে টানতে চাচ্ছে।
তবে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খুব চৌকস ও কৌশলী।উনি সহজে কারো(ভারত বা চীন) ঘেঁষা কোন আচরণ প্রকাশ করবে না বলে বোধ করি।
আর, বাংলাদেশের সরকার এবং মানুষেরও উচিত ভারতের এমন উস্কানিমূলক শিরোনামে অতি উৎসাহী না হওয়া,এটা ওরা অনেকটা লিটমাস পেপারের মত ব্যবহার করে,যাতে আমাদের মনোভাব উঠে আসে।আমাদের সাবধানী হওয়া উচিৎ বলে মনে করি।
লেখক: শিক্ষাবিদ, গবেষক , বিশ্লেষক এবং ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ।