জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ

মো. মজনুর রশিদ


আজ (২৪ অক্টোবর) জাতিসংঘ দিবস। ১৯৪৫ সালের এই দিনে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংস স্তূপের বিপরীতে শান্তি ও নিরাপত্তার মূল বার্তা নিয়ে গঠিত হয় জাতিসংঘ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯২০ সালে গঠিত লীগ অব নেশনস মূলত ১৯৩৯ সালে বিশ্ব শান্তি রক্ষার্থে ব্যর্থ হয়। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নামে পৃথিবী পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে।

যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৪৫ সালে। এই যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ হতবাক হয়ে পড়েন এবং বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার নতুন ভাবনায় তৎকালীন বিশ্ব নেতাদেরকে ভাবিয়ে তোলে।

সে ভাবনা সৃষ্টি করে ধ্বংসের পাথরের উপর দাঁড়িয়ে পৃথিবীর বুকে শান্তি, নিরাপত্তা, সৌহার্দ, স্বাধীনতা ও প্রগতির অঙ্গীকার নিয়ে আজকের জাতিসংঘ। জাতিসংঘ গঠনের সময় জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র ছিলো ৫১টি। বর্তমানে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ১৯৩টি। স্বাধীন জাতিসমূহের সর্ববৃহৎ সংগঠন হলও জাতিসংঘ। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট জাতিসংঘের নামকরণের প্রস্তাব করেন। ২৪ অক্টোবর ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ সনদ কার্যকর হয়। সেই থেকে প্রতি বছর বিশ্বের জাতি রাষ্ট্রসমূহ ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ দিবস পালন করে থাকে।

জাতিসংঘ প্রধান ৬টি অঙ্গসংগঠনের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং এর ১৬টি বিশেষায়িত সংস্থা রয়েছে। জাতিসংঘের অফিসিয়াল বা দাপ্তরিক ভাষা ৬টি। বর্তমানে বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৯৯ সালে বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

জাতিসংঘের প্রধান অঙ্গসংগঠনগুলো হলো-
১. সাধারণ পরিষদ
২. নিরাপত্তা পরিষদ
৩. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ
৪. অছি পরিষদ
৫. আন্তর্জাতিক আদালত
৬. সচিবালয়।

জাতিসংঘ সদস্যভুক্ত সকল দেশ সাধারণ পরিষদের সদস্য। সাধারণ পরিষদে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর একটি করে ভোটের ক্ষমতা রয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র ১৫টি। যার মধ্যে স্থায়ী সদস্য ৫টি রাষ্ট্র (যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীন)। এদের সাংবিধানিক অধিকার ভেটো প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে। ঠবঃড় অর্থ- ‘আমি মানি না’ এবং অস্থায়ী ১০টি রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত নিরাপত্তা পরিষদ। জাতিসংঘে কোনো প্রস্তাব পাশ বা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থায়ী ৫ টি দেশ এবং অস্থায়ী ৪ দেশসহ মোট ৯টি দেশের সমর্থনের প্রয়োজন পড়ে। তবে স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের কেউ ভেটো দিলে সেই প্রস্তাব পাস বা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। অছি পরিষদের- মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে নাউরু, নিউগিনি, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, ক্যামেরুন, পালাউ, অছি পরিষদভুক্ত একমাত্র অঞ্চল আইসল্যান্ড।

১৯৯৪ সালের পর থেকে সংস্থাটি স্থগিত রয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালত ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ অপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধের শাস্তি এই আদালতের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হয়েছে। এই আদালতের বিচারের মাধ্যমে অনেক যুদ্ধ অপরাধীর বিচার শেষে ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছে। জাতিসংঘ সচিবালয় হলো জাতিসংঘের সকল কর্মকাণ্ডের মূল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এর সদর দপ্তর অবস্থিত। ইউরোপীয় সচিবালয় অবস্থিত জেনেভায়। জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব ট্রিগভেলী, নরওয়ে এবং বর্তমান মহাসচিব হলেন আন্তোনিও গুতেরেস, পর্তুগাল। জাতিসংঘের স্থায়ী পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র দুইটি – ফিলিস্তিন এবং ভ্যাটিকান সিটি।

জাতিসংঘের অন্য অঙ্গসংগঠনগুলো সদস্য রাষ্ট্র ছাড়াও অন্যান্য দেশে নিজেদের সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নানারকম সমস্যার সমাধান, সুবিধা বৃদ্ধি, উন্নত জীবনমান গঠন এবং নিরাপত্তা দানে এ প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে থাকে। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘ মানব কল্যাণমূলক কর্মসূচি- ডব্লিউএফপি (প্রধান কার্যালয়- রোম, ইতালি) এ বছর (২০২০ সাল) শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করে। যুদ্ধবিগ্রহ, সংঘাত, খরা, ও অনাহারে থাকা মানুষদের জন্য খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মানের নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করে এই সংস্থাটি। এছাড়াও ইউএনএইচসিআর- ১৯৫৪ ও ১৯৮১ সালে, ইউনেস্কো- ১৯৬৫ সালে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী- ১৯৮৮ সালে, মহাসচিব কফি আনান (ঘানা) ও জাতিসংঘ ২০০১ সালে ও আপিসিসি- ২০০৭ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করে।

জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের একটা গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। ১৯৭৪ সালে ১৩৬তম রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে বাংলাদেশ। যদিও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ প্রথম সদস্য পদ লাভ করে ১৯৭২ সালে কমনওয়েলথ-এর। জাতিসংঘের মাধ্যমে মায়ানমারের সাথে বঙ্গোপসাগর বিজয় ছিল বাংলাদেশের বড় অর্জন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্ব থেকেই জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের সম্পর্ক তৈরি হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের শক্তিশালী ভিত্তিমূল। মেহেরপুর জেলায় গঠিত স্বাধীন দেশের প্রথম সরকার মুজিবনগর সরকারের (শপথ গ্রহণ, ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ সাল) প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের পক্ষে জাতিসংঘে শক্তিশালী অবস্থান সৃষ্টি করে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারতসহ আরও কিছু বন্ধু রাষ্ট্র।

২০ অক্টোবর ১৯৭১ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে পত্র লিখে বলেন, ‘আপনারা যদি বিশ্বাস করেন যে, আমার দফতর আপনাদের উপকারে আসবে তাহলে আমি আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবো।থ এই যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় অনিবার্য ও পশ্চিম পাকিস্তানের বিভক্তি ঠেকানো অসম্ভব, এই দুর্ভাবনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের মস্ত শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে ওঠে।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করে এবং ৪ ডিসেম্বর ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করে। উভয় দেশ জাতিসংঘের মহাসচিবের নিকট আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ এনে পত্র পাঠান। মহাসচিব ৪ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদে প্রতিবেদন পেশ করেন। নিরাপত্তা পরিষদের ৯ সদস্য রাষ্ট্রের অনুরোধে ৪ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদে জরুরী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

সোভিয়েত রাশিয়া ও পোল্যান্ড দাবি জানায় যে, বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে তাদের দেশের বক্তব্য প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে। আমেরিকা ও চীন এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। ফলে প্রস্তাব ভোটে দেওয়া হয় এবং যেকোনো উপায়ে যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ১১ ভোট এবং ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ভোটদানে বিরত থাকে। রাশিয়া ও পোল্যান্ড বিপক্ষে ভোট দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো প্রয়োগ করায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রক্ষা পায়। মুক্তিকামী জাতির নিকট এমন পরম বন্ধু আর কে হতে পারে। জাতিসংঘের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নের ˜ব্যর্থহীন সমর্থন মুক্তিযুদ্ধের বৈশ্বিক বিজয় অর্জন করা সম্ভবপর হয়। জাতিসংঘের তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থায়ী প্রতিনিধি ইয়াকফ মালিক ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধকে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন হিসেবে অবহিত করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের মধ্য দিয়ে ইয়াকফ মালিক ও সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন অকৃত্রিম বন্ধু। বর্তমান রাশিয়া বাংলাদেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। বন্ধুত্বের এমন বন্ধন চিরকালের। জাতিসংঘ সে বন্ধনের আতুর ঘর।

বিশ্ব শান্তি ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে জাতিসংঘের ইতিবাচক ভূমিকার পাশাপাশি বহু নেতিবাচক ভূমিকাও রয়েছে। অধিকিন্তু জাতিসংঘ বর্তমানে অনেকটা পুতুল সংগঠনে পরিণত হয়েছে। কয়েকটি দেশের ইচ্ছা আর অনিচ্ছার সংগঠনে পরিণত হয়েছে বিশ্ব সংগঠনটি। এছাড়াও বহু দেশের স্বাধীনতা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের ভূমিকা অত্যন্ত দুঃখজনক। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যার ইতিবাচক কোনো সমাধান আনতে জাতিসংঘ পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এছাড়াও, বহু বছর ধরে ফিলিস্তিনদের ওপর ইযরাইল রাষ্ট্রের নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, বাড়ি দখল, জমি দখল, গুম, অত্যাচার প্রভৃতি বন্ধে জাতিসংঘ পুরোপুরিই ব্যর্থ ও ক্ষমতা রাষ্ট্রের নিকট কুক্ষিগত।

মধ্য প্রাচ্যের অস্থিরতা এবং সংঘাত প্রশোমনে জাতি রাষ্ট্রসমূহের ভূমিকা বিতর্কিত ও হিংসাক্তক। ইউক্রেন, সিরিয়া, মিশর, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কাশ্মীর, লাদাখ, ফকল্যান্ড দ্বীপ, লেবানন, উপজাতি ও সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর সুরক্ষা, আর্মেনিয়া- আজারবাইজান সমস্যা, আফ্রিকার ক্ষুধা নিবারণ, জঙ্গি তৎপরতা, উগ্রবাদের উত্থান, মেক্সিকো, কিউবা, তিব্বত, পরিবেশ বিপর্যয়, কোরিয়া ও ইরান সমস্যা, পারমানবিক হুমকি, রাশিয়া- আমেরিকার মৌন সংঘাত প্রভৃতি বিষয় সমূহে জাতিসংঘের ভূমিকা অকার্যকর হিসেবে প্রমাণ মিলেছে বাস্তবে। এসব বিষয়ের যৌক্তিক সমাধান ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ক্ষেত্রসমূহে জাতিসংঘের ভূমিকা বিশ্ববাসী প্রত্যাশা করে।

মো. মজনুর রশিদ
চেয়ারম্যান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সম্পাদক, বাংলাদেশ স্কাউটস গোপালগঞ্জ জেলা রোভার।

খাদ্য সংকটের কবলে বিশ্ব, সতর্কবার্তা জাতিসংঘের

আন্তর্জাতিক টুডে


করোনাভাইরাস মহামারী বিশ্বকে দাঁড় করিয়েছে নতুন এক দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান খাদ্য সংকট এই মহামারীতে আরও প্রকট হয়েছে। নাজুক হয়ে পড়েছে ওইসব অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা। শিগগিরই সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা জাতিসংঘের।

জাতিসংঘের মানবকল্যাণবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা মার্ক লোকক এক চিঠিতে এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন বলে জানিয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।

নিরাপত্তা পরিষদে লেখা লোককের ওই চিঠি জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। সেই চিঠিরই একটি অনুলিপি পেয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে লেখা ওই চিঠিতে লোকক বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্যের চরম সংকটের কারণে ওইসব অঞ্চল দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার তীব্র ঝুঁকিতে পড়েছে। কভিড-১৯ মহামারী ওইসব সংকটের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। সেখানকার লাখ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশুর জীবন বিপন্ন করে তুলেছে।

গত এপ্রিলে ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম’-এর নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিইসলিও একই কথা বলেছিলেন। সে সময় তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেছিলেন, বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে তখন আমরা আরও একটি মহামারীর দ্বারপ্রান্তে আছি, সেটা হলো ক্ষুধা মহামারী।
মার্ক লোকক তার চিঠিতে বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে জরুরি ত্রাণ তহবিলে অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে।

এছাড়া আরও নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে বিশ্বের ওই অংশ যেখানে সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের বাস সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেছে।

উল্লিখিত দেশগুলোর খাদ্য সংকটের বিষয়ে লোকক আলাদা আলাদা ব্যাখা দিয়েছেন। তিনি খাদ্য সংকট কী পর্যায়ে রয়েছে তা পর্যবেক্ষণের জন্য আইপিসি (ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ক্লাসিফিকেশন) স্কেলের বরাত দিয়েছেন।
আইপিসি স্কেলের ‘ফেজ ৩’-এর অর্থ সংকট, ‘ফেজ ৪’-এর অর্থ জরুরি অবস্থা এবং সবচেয়ে খারাপ ‘ফেজ ৫’-এর অর্থ দুর্ভিক্ষ। বাসিন্দাদের মধ্যে অনাহার, মৃত্যু, চরম দারিদ্র্য এবং মারাত্মক অপুষ্টির বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে এই পর্যায় নির্ধারণ করা হয়।

ইয়েমেনের ক্ষেত্রে তিনি বলেছেন, দুই বছর আগে ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল, যেটাকে প্রতিহত করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে ধীরে ধীরে দুর্ভিক্ষ ফিরে আসার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তার ভাষ্য, আরব বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশ ইয়েমেন। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সেখানে গৃহযুদ্ধ চলছে। ইয়েমেন এখন ‘ফেজ ৪’-এ আছে বলে জানান লোকক। দুর্ভিক্ষ থেকে যা মাত্র এক পা দূরে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত আরেক দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ মানুষ ‘খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সংকটময় বা চরম সংকটময় অবস্থায়’ আছে বলে জানান লোকক। এ ছাড়া নাইজেরিয়ার ১ কোটি বাসিন্দার প্রতি পাঁচজনের চারজনেরই মানবিক সহায়তা এবং সুরক্ষা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন লোকক।

দক্ষিণ সুদানে প্রায় সাত বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। এই দেশটির বিষয়ে লোকক বলেন, ‘দুই বছর আগে দক্ষিণ সুদানে দুর্ভিক্ষের হুমকি কিছুটা প্রতিহত করা গেলেও দেশটির কিছু কিছু এলাকায় আবারও পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হচ্ছে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

শাকিল মাহমুদ


বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার মহান ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতিসংঘ। পর পর দুটি বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা মানব সমাজকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে অনুপ্রাণিত করে। এই অনুপ্রেরণা থেকেই উদ্ভব হয় জাতিসংঘের।

জাতিসংঘের ৬টি মূল অঙ্গ সংস্থা এবং অনেকগুলি সহযোগী সংস্থা বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে শান্তি স্থাপনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের এই কার্যক্রমের এক গর্বিত অংশীদার।

বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা জাতিসংঘের প্রধান কাজ। এক দেশের সাথে অন্য দেশের বিরোধ নিরসন ও মধ্যস্থতায় জতিসংঘ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু অনেক দেশের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং জাতিগত দাঙ্গা মোকাবিলায় এরূপ পদ্ধতি পুরোপুরি কার্যকরী নয়। সেখানে নিরাপত্তার প্রশ্নে সামরিক শক্তি প্রয়োজন। এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন গঠিত হয়েছে।

জাতিসংঘের নিজস্ব কোনো বাহিনী নেই। সদস্য দেশগুলোর প্রেরিত সামরিক সদস্যরাই এর প্রধান শক্তি। নিরাপত্তা পরিষদের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন দেশের সামরিক, বেসামরিক ও আধা-সামরিক লোকজন নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্য সংকটকে (ইসরাইল-ফিলিস্তিন) কেন্দ্র করে প্রথম শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠন করা হয়। এর পর থেকে যেখানে প্রয়োজন হয়েছে সেখানেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ করেছে।

অভাবক্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর নিকট ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষকে সহায়তা করা এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিভিন্ন দেশের পুনর্গঠনে শান্তিরক্ষী বাহিনী জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে জাতিসংঘ এ পর্যন্ত ৬৫ টি মিশন পরিচালনা করেছে এবং এর মধ্যে চলমান আছে ১৫টি মিশন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী ১৯৮৮ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন যে কাজ করে তার মধ্যে প্রধান হলো- বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি তদারকি ও কার্যকর করা, স্থিতাবস্থা বজায় রাখা ও গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচন পরিচালনা করা, বিবাদমান গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সমঝোতা ও চুক্তি স্বাক্ষরে রাজি করানো, ভূমি আইন অপসারণ করা, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের অবকাঠামো পুনর্গঠনে সহায়তা করা, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, শরণার্থী ও উদ্বাস্তুদের মানবিক সাহায্য প্রদান ইত্যাদি।

শান্তিরক্ষা মিশন ও বাংলাদেশ: জাতিসংঘের বিশ্বশান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ বরাবরই সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। শান্তিরক্ষা মিশনে জাতিসংঘের আহবানে বাংলাদেশ প্রথম অংশগ্রহণ করে ১৯৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধে। সে যুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল প্রশংসাযোগ্য। এর পর দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে (২০১৩ সাল পর্যন্ত) বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনী যেমন-সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ প্রভৃতি কৃতিত্বের সাথে এই মহতী দায়িত্ব পালন করে আসছে।

বাংলাদেশি এসব বাহিনী দৃঢ় মনোবল, উন্নত শৃঙ্খলা, কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশ বর্তমানে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ১৫টি মিশনের মধ্যে ১২টিতে কাজ করছে। সব মিলে ৫৪টি মিশনে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনী অংশগ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকা:
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনী অংশগ্রহণ করলেও সেনাবাহিনীর ভূমিকাই প্রধান। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মূলমন্ত্র হলো ‘শান্তিতে আমরা, সমরে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে’। কিন্তু আন্তর্জাতিক মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অবদান দেখলে মনে হয় সারা বিশ্বের সব দেশই যেন বাঙালি সেনাবাহিনীর নিজ দেশ। সকল দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষাই যেন তাদের কাজ। আর তাইতো বাংলাদেশ বর্তমানে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সর্বোচ্চ সংখ্যক সেনা প্রেরণকারী দেশ।

জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উল্লেখযেগ্য কার্যক্রমসমূহের বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো-

নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দেশের ভিআইপি, ভিভিআইপি, সরকারি মালামাল রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিবহন এবং সাধারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কাজ। বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই কাজটি দক্ষতার সাথে পালন করছে।

সামরিক পর্যবেক্ষক: বিবাদমান পক্ষসমূহের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি-না, কোথাও শান্তি ভঙ্গ হচ্ছে কি-না, অথবা শান্তির প্রতি হুমকি স্বরূপ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করে শান্তিরক্ষী বাহিনী। লাইবেরিয়া, লেবানন, কঙ্গো, সুদান, আইভরি কোস্ট প্রভৃতি দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অত্যন্ত সুনামের সাথে এ দায়িত্ব পালন করেছে এবং করছে।

অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাইন উদ্ধার: যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোতে শান্তির প্রতি হুমকি সৃষ্টি করে দেশে ছড়িয়ে থাকা অস্ত্র ও ভূমিতে পেতে রাখা মাইনসমূহ। ভূমিতে পেতে রাখা মাইনে অসংখ্য নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ল্যান্ড মাইন উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা: প্রধানত দ্বন্দ্ববিক্ষুব্ধ অঞ্চলের অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা দূর করতে মিশন কাজ করে। এ বাহিনীর অন্যতম কাজ হলো দ্বন্দ্ব বিক্ষুব্ধ, বিশৃঙ্খল অঞ্চলে শৃঙ্খলা আনয়ন করা। সংশ্লিষ্ট দেশের বাহিনীকে এ কাজে সহায়তা করা। বাংলাদেশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা পূর্ব তিমুর, কঙ্গো, সুদান, লাইবেরিয়া, হাইতি প্রভৃতি দেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।

শান্তি প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করা: জাতিসংঘ বাহিনী যুদ্ধরত অঞ্চলে শান্তি আনয়নে কাজ করে। এক্ষেত্রে বিবাদমান সকল গ্রুপ, দল, উপদলের স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষা করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেয় মিশন। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এক্ষেত্রে উদ্ভাবনী কৌশল প্রয়োগ করে সফলতা অর্জন করেছে। লাইব্রেরিয়ার কাউন্টির ডানকাপানসু গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী বড় ভূমিকা পালন করে।

নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করা:
বিভিন্ন দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শান্তিরক্ষী বাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্বাচন পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।

মানবিক সহায়তা প্রদান: যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, শরণার্থী ও উদ্বাস্তুদের মানবিক সহায়তা প্রদান, চিকিৎসা সেবা প্রদান ইত্যাদি কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বেশ সুনাম অর্জন করেছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিটগুলো কর্মরত প্রতিটি দেশের মানুষের জন্যই প্রচুর পরিমাণ ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে যায়। এছাড়াও স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল কন্টিনজেন্ট।

স্থানীয় যুব সমাজকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান: মিশনে কর্মরত বাঙালি সেনারা বিভিন্ন দেশের স্থানীয় যুব সমাজকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়। শান্তিরক্ষার পাশাপাশি এরূপ কার্যক্রম স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। রাজমিস্ত্রি, ইট তৈরি, টেইলারিং, অ্যাম্রয়ডরি, কাঠমিস্তি, ইলেকট্রিক কাজ, কম্পিউটার, উন্নত কৃষি চাষাবাদ পদ্ধতি প্রভৃতি বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষিত দল হাত কলমে শিক্ষা দেয় স্থানীয় যুব সমাজকে।

অবকাঠামো উন্নয়ন: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন দেশের মৌলিক অবকাঠামো সংস্কার ও উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে থাকে।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকতিস্বরূপ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সিয়েরা লিওন বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিয়েছে, লাইবেরিয়া একটি সড়কের নাম রেখেছে বাংলাদেশ স্ট্রীট। এর থেকেও বড় স্বীকৃতি ও প্রাপ্তি হলো যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশসমূহের সাধারণ মানুষের মুখে ফুটিয়ে তোলা হাসি ও তাদের ভালোবাসা।

বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন যে অবদান রেখে চলছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর ভূমিকা এবং সাফল্য আমাদেরকে গর্বিত করেছে। এর মধ্যে আবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকাই মুখ্য। এ পর্যন্ত শতাধিক বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মৃত্যু হয়েছে। তারপরও বাঙালিদের শৃঙ্খলাবোধ, পেশাদারীত্ব এবং দক্ষতা স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এটি দেশ ও জাতির নিকট অত্যন্ত গৌরবের বিষয় বলে বিবেচিত।

লেখকঃ শিক্ষার্থী , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

করোনা ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত লকডাউন চলুক: জাতিসংঘ মহাসচিব

আন্তর্জাতিক টুডে: করোনা তাণ্ডবে কাঁপছে সারাবিশ্ব। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। করোনা ভাইরাসের এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ লকডাউন অবস্থায় রয়েছে।

করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত লকডাউন তোলা উচিত নয় বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, করোনার উত্তর না মেলা পর্যন্ত লকডাউন চলুক। একমাত্র কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনই পারে বিশ্বকে স্বাবাবিক জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করুক।

এই বছরের মধ্যেই করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বের করে ফেলতে পারবেন বিজ্ঞানীরা বলেও জাতিসংঘের মহাসচিব আশাপ্রকাশ করেছেন।

গতকাল বুধবার (১৫ এপ্রিল) আফ্রিকান দেশগুলোর সাথে করোনা সংক্রান্ত এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।

ওই ভিডিও বৈঠকে আফ্রিকার প্রায় ৫০টি দেশ অংশ নেয়। আতঙ্ক রুখতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে বলে পরামর্শ দেন গুতেরেস।

আবরার হত্যাকাণ্ড, বিচার চায় জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক টুডেঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ নির্মমভাবে হত্যার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচার চায় জাতিসংঘ।

বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস-বিস) মিলনায়তনে ডিক্যাব টকে এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো। এ বিষয়ে জাতিসংঘ থেকে একটি বিবৃতিও দেয়া হয়েছে বলেও জানান মিয়া সেপ্পো।



“এটি একটি দুঃস্বপ্ন। কোনো অভিভাবক চান না, তার সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে এভাবে মারা যাক।”



আবরার ফাহাদ হত্যা সম্পর্কে মিয়া সেপ্পো বলেন, “এটি একটি দুঃস্বপ্ন। কোনো অভিভাবক চান না, তার সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে এভাবে মারা যাক। এ মৃত্যুর পর মানুষের ক্ষোভ দেখেছি আমরা। এ হত্যার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচার চায় জাতিসংঘ।’

এ হত্যাকাণ্ডে এর আগে বিস্মিত ও মর্মাহত হওয়ার কথা জানিয়ে বিবৃতি দেয় যুক্তরাজ্য।

ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দফতর থেকে বুধবার (০৯ অক্টোবর) দুপুরে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অবাধ মতপ্রকাশের অভিযোগে বুয়েটের এক তরুণ শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় জাতিসংঘ নিন্দা জানাচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে অভিযুক্তদের বিচার না করায় বাংলাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে সহিংসতায় অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। জাতিসংঘের বাংলাদেশ দফতর লক্ষ্য করছে, অভিযুক্তদের ধরার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। এর ফলে স্বাধীন তদন্তকারীরা একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছ বিচারের পথে যাবেন, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সহায়ক হবে।

অপরদিকে আবরার ফাহাদ হত্যায় শোক জানিয়েছে জার্মানি। পাশাপাশি মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেও মনে করেছে দেশটি। ঢাকায় অবস্থিত দেশটির দূতাবাস নিজেদের ফেসবুজ পেজে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

প্রসঙ্গত, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৩ টার দিকে বুয়েটের শেরে বাংলা হল থেকে আবরারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর রুমে থাকতেন। কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামের বরকত উল্লাহ ছেলে ফাহাদ বাড়ি থেকে রবিবারই হলে ফেরেন।

দ্য ক্যাম্পাস টুডে।