পাবজি ফ্রি ফায়ারে আসক্ত শিক্ষার্থীরা, দুঃশ্চিন্তায় অভিভাবকরা

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


করোনা সংকটের মধ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি থেকে হতাশায় ভুগছে। তাদের অনেকে আবার দিনের কিছু সময় বাইরে বের হয়ে অনলাইন গেমসহ নানা ধরনের আসক্তিতে জড়াচ্ছে।

নওগাঁর সাপাহারে কয়েকটি স্থানে এসব চিত্র দেখা গেছে। অনেক অভিভাবকও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

প্রতিনিয়ত কয়েকটি স্থানে দেখা গেছে, অনেক শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়া বা অন্য কোনো কাজের কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে নির্জন স্থানে বসে মোবাইল ফোনে পাবজি, ফ্রি ফায়ার এর মতো গেম খেলছে। এমনকি অন্যের স্মার্টফোন ভাড়া নিয়েও গেম খেলার ঘটনা জানা গেছে।

ভুক্তভোগী অভিভাবকরা জানান, গেম খেলার টাকা জোগাড়ের জন্য তাঁদের সন্তানরা নানা ধরনের বাহানা ধরছে। দামি খেলনা পিস্তল, দামি পোশাক, জুতা, ক্যাপসহ বিভিন্ন সামগ্রী কেনার কথা বলে টাকা নিচ্ছে। পরে আর সেগুলো কিনছে না। আবার কেউ কেউ বাবার পকেট বা মায়ের হাতব্যাগ থেকে টাকা চুরি করছে।

এ বিষয়ে সাপাহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান বলেন, শিক্ষার্থীদের বাসায় ব্যস্ত রাখতে হবে অভিভাবকদের। এ জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি নানা ধরনের বিনোদনমূলক কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তবে যেসব স্থানে বসে শিক্ষার্থীরা গেম খেলছে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দরকার।

সাপাহার থানার ওসি আব্দুল হাই বলেন, অভিভাবকরা সুনির্দিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে শিক্ষার্থীরা যেসব জায়গায় বসে গেম খেলছে সেখানে অভিযান চালানো হবে।

গেমসের বিষবাষ্পে জর্জরিত তারুণ্য

মোঃ রাইয়ান জিহাদ


‘ফ্রি ফায়ার এবং পাবজি”‘ বর্তমানে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন গেম। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেড়েছে এই গেমের জনপ্রিয়তা। মোবাইল এবং কম্পিউটার দুতোটেই খেলা যায় এই গেম। তবে উপমহাদেশে এই গেমের কম্পিউটার ভার্সনের থেকে মোবাইল ভার্সনটিই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা এবং হাতের নাগালে মধ্যে থাকা ইন্টারনেটের কারণে এই গেমটির জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। বর্তমানে এই গেমে অত্যাধিক আসক্ত হয়ে পড়েছে শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণিরাও।

“পাবজি গেম মার্চ ২০১৬-এ গেমটি স্টিম’এর আগাম অ্যাক্সেস বিটা প্রোগ্রামের মাধ্যমে মাইক্রোসফট উইন্ডোজের জন্য রিলিজ করা হয়, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬-এ সম্পূর্ণ রিলিজ হয়। সেই একই মাসে, গেমটি মাইক্রোসফট স্টুডিওস কর্তৃক এক্সবক্স ওয়ান এর জন্য রিলিজ হয় এর এক্সবক্স গেম প্রিভিউ কার্যক্রমের অধীনে।

কয়েক মাস পরে, চীনে টেনসেন্ট গেমস কর্তৃক স্থানীয়কৃত ও রিলিজ করা হয়, যেখান অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস এর জন্য গেমটির উপর ভিত্তি করে দুটি মোবাইল সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সমস্ত প্ল্যাটফর্মে প্রায় ৫০ মিলিয়ন বিক্রির মাধ্যমে এটি সর্বকালের সেরা বিক্রিত গেমগুলোর অন্যতম।

এছাড়াও, উইন্ডোজ সংস্করণটি স্টিমের একই সময়ে খেলা গেইমের খেলোয়াড়ের সংখ্যা অনুযায়ী শীর্ষস্থানে রয়েছে, যা এই প্ল্যাটফর্মের সর্বকালের সর্বোচ্চ।

ফ্রি ফায়ার একটি মোবাইল যুদ্ধের গেম, ভিয়েতনাম ১১১ডট স্টুডিও দ্বারা বিকাশিত এবং দ্বারা প্রকাশিত। গেমটি বেটা ২০ নভেম্বর ২০১৭ এ প্রকাশিত হয়েছিল এবং ৪ ডিসেম্বর ২০১৭ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস এর জন্য পুরোপুরি প্রকাশ হয়েছিল।

ফ্রি ফায়ার অক্টোবর২০১৮এ অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ৭.৫ মিলিয়ন ডাউনলোড পৌঁছেছে, যা ২০১৮ সালের সর্বাধিক ডাউনলোড হওয়া অ্যান্ড্রয়েড গেমগুলির মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে জনপ্রিয়তার কারণে, গেমটি “সেরা জনপ্রিয় ভোট গেম” এর জন্য পুরস্কার পেয়েছে ২০১৮ এ গুগল প্লে স্টোর দ্বারা, পেশাদার প্রতিযোগিতা তৈরি ছাড়াও। এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত, ফ্রি ফায়ার এর ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছে।

এ ধরনের আসক্তি বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব গেমে আসক্তির কারণে কিশোররা পারিবারিক, সামাজিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। খেলার এক পর্যায়ে এসে তারা ভায়োলেন্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি এটি আলোচিত আরেক ‘ব্লু হোয়েল’ গেমের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

কেবল শারীরিক ক্ষতির কারণই নয় এই দুটি গেম। সেই সাথে মানসিক রোগের কারণও হতে পারে এই গেমটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এক গবেষণার পর জানিয়েছে ভিডিও গেমে আসক্তি এক ধরণের মানসিক রোগ। ভিডিও গেমগুলো একজন খেলোয়াড়ের ডিপ্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

শারীরিক মানসিক রোগের সাথে সাথে পাবজি গেমটি একজন শিশু কিংবা কিশোরে- কিশোরীর উপর সামাজিক মূল্যবোধের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। গেমটি যেহেতু একটি জায়গাতেই আটকে থেকে খেলতে হয় সেহেতু এই গেম খেলা মানুষটি সামাজিকভাবে খুব বেশি সংযুক্ত থাকতে পারে না। আর এই কারণে সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সমাজের আচার ব্যবহার থেকেও ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে হয় সেই মানুষটিকে। সর্বোপরি একটা সময় একাকীত্ব বরণ করতে হয় তাদেরকে।

এই দুটি গেম খেলার জন্য তাদের পরিবারের আনেক সমেস্যা পরতে হয়। কারণ তারা এই দুটি গেমের সরঞ্জাম কেণার জন্য কয়েক দিন পর পর তারা পরিবার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়। তাদের পরিবার তাদেরকে টাকা দিতে না চাইলে বিভিন্ন ছলছাতরি করে তারা টাকা নিয়ে থাকে। এদুটি গেম যেন নেশার মতো।

এই গেমটি অতিরিক্ত খেলার কারণে চোখের সমস্যাও হতে পারে। আর সেই সাথে দেখা দেয় ঘুমের ঘাটতিও। কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনে বেশি সময় ধরে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের ক্ষতি হতে পারে। আর চোখের সমস্যার সাথে সাথে ঘুমেরও ঘাটতিতে পড়ে এই গেম খেলা মানুষজন। তাই গেমের আসক্তি থেকে বের হয়ে সুস্থ্য সুন্দর জীবন যাপন করার চেষ্টা করতে হবে নাহয় গেমের নেশার বিষবাষ্প জীবনকে বিষাক্ত করে দিবে।

শিক্ষার্থীঃ মোল্লাকান্দি লালমিয়া পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজ, কুমিল্লা।