নুর নওশাদ, চবি প্রতিনিধি
করোনা মহামারিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও সৌন্দর্যবর্ধন,অবকাঠামো উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ নানা অজুহাতে চবিতে মহাসমারোহে গাছ কাটা চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে,লকডাউনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস থেকেই বড় গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে।গত দুই দিনে প্রায় ৯টির মতো বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।এর মধ্যে ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের দক্ষিণে রেইনট্রি, কড়ই ও বাদাম গাছসহ তিনটি এবং চবি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের পূর্ব পাশের পাঁচটি মেহগনি গাছ কাটা হয়। চবির বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মাঝখানের গাছটিও কাটা হয়েছে।এছাড়াও আগে ওয়াকওয়ের নাম করে চবির জিরো পয়েন্টের মসজিদ সংলগ্ন গাছও কেটে ফেলা হয়েছে।
ক্যাম্পাসের গাছ কাটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
ক্যাম্পাসের গাছকাটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেও অনেকবার আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা।শিক্ষার্থীদের দাবি কিছুতেই কর্ণপাত না করে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন চলছে।ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চবিতে বৃক্ষ নিধনের প্রতিবাদ জানায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী দেওয়ান তাহমিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে বৃক্ষ নিধন চলেছে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনও হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়েও জনশূন্য ক্যাম্পাসে আমরা আবার এই নিধন দেখতে পাচ্ছি, যেখানে সম্পদ রক্ষা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে, যা অজুহাত হিসেবে খুবই দুর্বল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে এর প্রতিবাদে সরব হয়েছে। আমাদের সকলের দাবী, প্রশাসন যেন গাছকাটা থেকে বিরত থেকে প্রাণ প্রকৃতির সুরক্ষায় এগিয়ে আসে।
চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস ফেসবুকে লিখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কি টাকার অভাব এভাবে গাছ কেটে অর্থ যোগান দিতে হবে? বিশেষ কাউকে খুশী করার জন্যই কী এভাবে বৃক্ষ নিধন। তারা কি বেশী ক্ষমতাশালী মনে হয় জনশূন্য ক্যাম্পাসে গাছ খেকো শকুনগুলো কারা? মাননীয় প্রশাসন এখনই ব্যবস্থা নিন বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা চাই না। না হয় আমাদের ক্যাম্পাস রক্ষার জন্য আমরা বসে থাকবো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা প্রদিপ চক্রবর্তী দুর্জয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, এই গাছ গুলো কি অপরাধ করেছে?? গাছ ব্যবসায়ী অসাধু সিন্ডিকেটের হাত থেকে সবুজ ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
চবি ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফী নিতু বলেন, সৌন্দর্যবর্ধনের নাম করে অর্ধশত বছরের সাক্ষী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে থাকা গাছগুলো কেটে ফেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এভাবে গাছ কাটলে তাতে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বিনষ্ট হবে।বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গাছ কাটার জন্য যে কারণ গুলো দেখাচ্ছে তা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।এত পরিমাণ গাছকাটা পরিবেশের জন্য হুমকি।যত দ্রুত সম্ভব গাছকাটা বন্ধ করতে হবে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী লোকমান হাকিম আরাফাত বলেন, ২১০০ একরে সৌন্দর্যবর্ধন ও অবকাঠামো উন্নয়নের নামে প্রকৃতির প্রতি বারবার যে হচ্ছে তা মূলত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস,ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেই নিধন করে যাচ্ছে, গাছখেকো একটি মহল। প্রকৃতির উপাদানের ক্ষতি না ঘটিয়েও বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন করা যায়, তা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকে দেখিয়েছে। পৃথিবী যখন সবুজের জন্য কান্নায় চোখ ভাসাচ্ছে, এমন পরিবেশ বিপর্যয়ে চবি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের এরূপ কর্মকাণ্ড অত্যন্ত ঘৃণিত।আমরা চাই,বৃক্ষ নিধন বন্ধ করে এই ক্যাম্পাসকে সুষ্ঠু উপায়ে বাঁচতে দিন।সকল ধরণেরর বন ধ্বংসে জড়িতদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হোক।
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আল জুবায়ের নিলয় বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন খুব গরীব হয়ে পড়েছে কি? ব্যয় নির্বাহের উৎস হিসেবে আপনাদের এত প্রাচীন গাছগুলোও কাটতে হচ্ছে যে?গাছ চবিতে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে লাগানো হয় নাই। যখন তখন গাছ কেটে বাইরে চালান দেয়া হবে আর ছাত্ররা কিছু বলতে পারবে না তা হবে না। এর জবাবদিহি চাই৷বৃক্ষনিধনের বিচার চাই।
প্রশাসনের বক্তব্য
এবিষয়ে চবি রেজিস্ট্রার(ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. এস এম মনিরুল হাসান দ্য ক্যাম্পাস টুডে’কে বলেন, “গাছ যা কাটা হচ্ছে সেগুলো পারমিশন নিয়ে প্রপারওয়েতে কাটা হচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয় যে প্রক্রিয়ায় গাছ কাটে এগুলা সেভাবেই কাটা হচ্ছে।’’
হঠাৎ এই গাছকাটা কেন এই প্রশ্নের উত্তরে চবি রেজিস্ট্রার বলেন, “হঠাৎ না, যে গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণ,ঝড়ে পড়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে সেগুলোই কাটা হচ্ছে।ঝড়ের সিজন আসছে।’’
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও গার্ডেন ইনচার্জ ড. শেখ বগতিয়ার উদ্দীন বলেন, “দুদিনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৯টি গাছ কাটা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ, বাগান তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি এবং সৌন্দর্যহানির কারণে কিছু গাছ কাটতে ব্যবসাপ্রশাসন অনুষদ ও ল্যাবরেটরি কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে চিঠি দিয়েছেন। আমরা গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে তা কাটার অনুমতি দিয়েছি।’’