ভাষা কাকে বলে? বাংলা ভাষার কয়টি রূপ ও কী কী?

ভাষা কাকে বলে? বাংলা ভাষার কয়টি রূপ ও কী কী?

ভাষা : বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির মাধ্যমে মানুষের মনোভাব প্রকাশ করাকে ‘ভাষা’ বলে ৷

বাংলা ভাষার প্রকারভেদ-

প্রতিটি সচল ও শুদ্ধ ভাষার মতো বাংলা ভাষারও দুটো রূপ :
(ক) মৌখিক ও (খ) লৈখিক ৷

মৌখিক ভাষার আবার দুটো রূপ :
(ক) মান মৌখিক ভাষা ও (খ) আঞ্চলিক মৌখিক ভাষা।

লৈখিক ভাষারও দুটো রূপ :
(ক) সাধু ভাষা ও (খ) চলিত ভাষা ।

(ক) মান মৌখিক ভাষা : পরিমার্জিত ও সার্বজনীন মৌখিক ভাষাকে ‘মান মৌখিক ভাষা’ বলে ।
(খ) আঞ্চলিক মৌখিক ভাষা : বিভিন্ন অঞ্চলের কথ্যরীতির ভাষা আঞ্চলিক মৌখিক ভাষার অন্তর্ভুক্ত।

(ক) সাধু ভাষা : যে ভাষা প্রধানত তৎসম শব্দবহুল, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদসমূহ অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ অনেকটা গুরুগম্ভীর ও কৃত্রিম তাকেই সাধু ভাষা বলে ।
(খ) চলিত ভাষা : অ-তৎসম শব্দবহুলতা, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত রূপ তাকেই চলিত ভাষা বলে।

বাংলা ১ম পত্র এইচএসসি- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি

বাংলা সহপাঠের অন্তর্ভুক্ত সিকান্দার আবু জাফর রচিত ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক থেকে আজ নির্বাচিত কিছু প্রশ্ন দেয়া হলো। আমরা ধারাবাহিকভাবে এ আলোচনা ও অনুশীলনী তোমাদের জন্য প্রকাশ করবো।

1. সিরাজউদ্দৌলা নাটক কত অঙ্কে বিন্যস্ত?
A. তিন
B. চার
C. পাঁচ
D. এক

2. জগৎ শেঠের প্রকৃত নাম কী?
A. ফতেহ চাঁদ
B. কামাল লোহানী
C. দিগম্বর রায়
D. বীরচন্দ্র শেঠ

3. ‘আপনাকে আমরা মায়ের মতো ভালোবাসি।’ ঘসেটি বেগমকে উদ্দেশ করে এ কথা কে বলেছিল?
A. সিরাজ
B. রাইসুল জুহালা
C. লুত্ফা
D. আমিনা

4. কোথায় যেতে পারলে আবার প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাবে বলে নবাব প্রত্যয় ব্যক্ত করেন?
A. মুর্শিদাবাদ
B. কলকাতা
C. ঢাকা
D. পাটনা

5. সিরাজ তাঁর চারপাশে ‘দেয়াল’ বলেছেন কোনটিকে?
A. ইংরেজদের সহযোগিতাকে
B. অধীনদের ষড়যন্ত্রকে
C. আত্মীয়দের বিশ্বাসঘাতকতাকে
D. স্বপ্ন দেখার আকাঙ্ক্ষাকে

6. সততার চেয়ে অর্থকে অধিকতর মূল্যবান মনে করে কোন চরিত্র?
A. ঘসেটি বেগম
B. লুত্ফুন্নেসা
C. ক্লেটন
D. উমিচাঁদ

7. কার সংলাপের মাধ্যমে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটেছে?
A. ক্লাইভের
B. মিরনের
C. সিরাজের
D. মোহাম্মদি বেগের

8. ‘সে মসনদে বসতে হলে আপনার হাত ধরেই বসব, তা না হলে নয়।’ কে, কাকে এ কথা বলেছে?
A. মির জাফর, ক্লাইভকে
B. মির জাফর, ড্রেককে
C. মির জাফর, ওয়াসকে
D. মির জাফর, হলওয়েলকে

9. ‘আমাকে খুন করে ফেলো, আমাকে খুন করে ফেলো।’ এটি কার সংলাপ?
A. রাজবল্লভের
B. রায়দুর্লভের
C. জগৎ শেঠের
D. উমিচাঁদের
10. সিরাজউদ্দৌলাকে কোন কয়েদখানায় বন্দী করে নিয়ে আসা হয়?
A. জাফরাগঞ্জের
B. মুর্শিদাবাদের
C. আলিনগরের
D. লক্ষবাগের

11. উমিচাঁদকে ঠকানোর জন্য ক্লাইভ কোন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন?
A. মিথ্যা আশ্বাসের
B. নকল মোহরের
C. নকল মুদ্রার
D. নকল দলিলের

12. ওয়াটসনের সই জাল করে দিয়েছিল কে?
A. তেটন
B. লুসিংটন
C. ক্লাইভ
D. ড্রেক

13. মিরনের বাবা কে?
A. মির জাফর
B. মোহনলাল
C. মির মর্দন
D. উমিচাঁদ

14. লবণের ইজারাদার কে ছিল?
A. সেনাধ্যক্ষ
B. সামন্ত শ্রেণি
C. কুঠিয়াল ইংরেজ
D. সার্জন হলওয়েল

15. পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে কতজন সৈন্য ছিল?
A. ৪৫ হাজার
B. ৫০ হাজার
C. ৫৫ হাজার
D. ৬০ হাজার

16. পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের কামানসংখ্যা কত ছিল?
A. গোটা পাঁচেক
B. গোটা দশেক
C. গোটা পনেরো
D. গোটা বিশেক

17. ইংরেজ সৈন্যরা কোথায় আশ্রয় নিয়েছিল?
A. অগীরণীর নিকটবর্তী শিবিরে
B. পলাশীর ব্যারাকে
C. লক্ষবাগে
D. মিরবাগে

18. কে যুদ্ধ বন্ধ করতে চাননি?
A. মির মর্দন
B. মোহনলাল
C. মির জাফর
D. সাঁফ্রে

19. উপযুক্ত মর্যাদায় কার লাশ দাফন করতে হবে?
A. মির জাফরের
B. মির মর্দনের
C. মোহনলালের
D. মিরনের

20. মোহাম্মদি বেগ কত টাকার বিনিময়ে সিরাজকে হত্যা করতে রাজি হয়েছিল?
A. দশ হাজার
B. আট হাজার
C. ছয় হাজার
D. পাঁচ হাজার

সঠিক উত্তর

1| B. চার 2| A. ফতেহ চাঁদ 3| C. লুত্ফা 4| D. পাটনা 5| B. অধীনদের ষড়যন্ত্রকে 6| D. উমিচাঁদ 7| D. মোহাম্মদি বেগের 8| A. মির জাফর, ক্লাইভকে 9| D. উমিচাঁদের 10| A. জাফরাগঞ্জের 11| D. নকল দলিলের 12| B. লুসিংটন 13| A. মির জাফর 14| C. কুঠিয়াল ইংরেজ 15| B. ৫০ হাজার 16| B. গোটা দশেক 17| C. লক্ষবাগে 18 | B. মোহনলাল 19| B. মির মর্দনের 20| A. দশ হাজার।

বাংলা ২য় – পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি

বাংলা ২য় পত্রের ব্যাকরণ অংশের অন্তর্গত উচ্চারণ ও বানান থেকে আজ নির্বাচিত কিছু প্রশ্ন দেওয়া হলো। আমরা ধারাবাহিকভাবে এ আলোচনা ও অনুশীলনী তোমাদের জন্য প্রকাশ করব।

০১. ‘সুদৃষ্টি’ শব্দের প্রমিত উচ্চারণ কোনটি?
ক. সুদৃশিট খ. শুদৃস্টি
গ. শোদৃশিট ঘ. শুদৃশ্‌টি

০২. ‘আহ্বান’ শব্দের প্রমিত উচ্চারণ কোনটি?
ক. আহোব্বান্ খ. আহোভান
গ. আউভান্ ঘ. আওভান

০৩. ‘জিহ্বা’ শব্দের উচ্চারণ কোনটি?
ক. জিওবা খ. জিউভা
গ. জিব্বা ঘ. জিবহা

০৪. ‘অপ্রতুল’ শব্দের সঠিক উচ্চারণ কোনটি?
ক. ওপেপ্রাতুল খ. অপ্রোতুল
গ. অপ্‌প্রোতুল ঘ. অপোপরতুল

০৫. ‘অধ্যাপক’ শব্দের প্রমিত উচ্চারণ কোনটি?
ক. অদ্ধাপক খ. অদ্ধাপোক
গ. ওদ্ধাপোক্ ঘ. ওধ্ধাপোক্
০৬. ‘তীব্র’ শব্দটির সঠিক উচ্চারণ কোনটি?
ক. তীবেবা খ. তিব্‌ব্রো
গ. তিবেরা ঘ. তীব্রো
০৭. ‘অক্ষর’ শব্দের কোন উচ্চারণটি শুদ্ধ?
ক. ওক্‌খোর্ খ. অক্খোর
গ. ওক্খর ঘ. অক্খর

০৮. উচ্চারণের একককে কী বলা হয়?
ক. অক্ষর খ. অনুসর্গ
গ. উপসর্গ ঘ. ধ্বনি
০৯. ‘সন্ধ্যা’ শব্দের প্রমিত উচ্চারণ কোনটি?
ক. সন্ধা খ. শন্ধা
গ. শোন্ধা ঘ. সণ্ধা
১০. শুদ্ধ বানানে লেখা নয় কোনটি?
ক. ক্ষণজীবি খ. প্রণয়ন
গ. ধারণ ঘ. নিরীক্ষণ

১১. শুদ্ধ বানানে লিখিত শব্দগুচ্ছ কোনটি?
ক. সমীচীন, হরিতকি, বাল্মিকী

খ. সমীচীন, হরীতকী, বাল্মীকি

গ. সমীচীন, হরিতকি, বাল্মীকি

ঘ. সমীচীন, হরিতকী, বাল্মীকী

১২. কোনটি শুদ্ধ?
ক. পুননির্মান খ. পুননির্মাণ
গ. পুনঃনির্মান ঘ. পুনর্নির্মাণ
১৩. কোনটি শুদ্ধ?
ক. সৌজন্যতা খ. সৌজন্নতা
গ. সৌজন্য ঘ. সৌজন্যাতা
১৪. শুদ্ধ বানান কোনটি?
ক. মুহমহু খ. মুহুর্মুহু
গ. মূহর্মূহ ঘ. মুহর্মুহু
১৫. শুদ্ধ বানান কোনটি?
ক. পরজিবী খ. সহযোগীতা
গ. তৃর্ণভোজী ঘ. বুদ্ধিজীবী

১৬. নিচের কোন বানানটি শুদ্ধ?
ক. সৌজন্যতা খ. প্রতিযোগিতা
গ. মিতালী ঘ. সহযোগীতা
১৭. কোন বানানটি শুদ্ধ?
ক. শ্রদ্ধাঞ্জলী খ. দরিদ্রতা
গ. পরিস্কার ঘ. আবিস্কার
১৮. সঠিক বানান কোনটি?
ক. পিপিলিকা খ. পিপীলিকা
গ. পীপিলিকা ঘ. পিপীলীকা
১৯. নিচের কোন শব্দটি নির্ভুল?

ক. উপর্যুক্ত খ. উপরম্নক্ত
গ. উপরিক্ত ঘ. উপরিযুক্ত
২০. নিচের কোন গুচ্ছ অশুদ্ধ বানানের দৃষ্টান্ত?
ক. আকাঙ্ক্ষা, স্বায়ত্তশাসন খ. পরিপক্ব, মরূদ্যান গ. শ্রদ্ধাঞ্জলি, মুমূর্ষ ঘ. ভিখারিনী, ত্রিভূজ

উত্তরমালা
১| ঘ. শুদৃশ্‌টি ২| গ. আউভান্ ৩| খ. জিউভা ৪| গ. অপ্‌প্রোতুল ৫| গ. ওদ্ধাপোক্ ৬| খ. তিব্‌ব্রো ৭| ক. ওক্‌খোর্ ৮| ক. অক্ষর ৯| গ. শোন্ধা ১০| ক. ক্ষণজীবি ১১| খ. সমীচীন, হরীতকী, বাল্মীকি ১২| ঘ. পুনর্নির্মাণ ১৩| গ. সৌজন্য ১৪| খ. মুহুর্মুহু ১৫| ঘ. বুদ্ধিজীবী ১৬| খ. প্রতিযোগিতা ১৭| খ. দরিদ্রতা ১৮| খ. পিপীলিকা ১৯| ক. উপর্যুক্ত ২০| ঘ. ভিখারিনী, ত্রিভূজ

রূপমূলতত্ত্ব ধ্বনিতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্ব

রূপমূলতত্ত্ব কি? ধ্বনিতত্ত্ব কি? বাক্যতত্ত্ব কি? আজকের এই পোস্টে রূপমূলতত্ত্ব ধ্বনিতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্ব কি তা জানবো।

রূপমূলতত্ত্ব কি?

রূপমূলতত্ত্ব (ইংরেজি: Morphology) নামক ভাষাবিজ্ঞানের শাখায় শব্দের (word) গঠন নিয়ে আলোচনা করা হয়।

রূপমূলতত্ত্বে শব্দের রূপ (form) ও অর্থের (meaning) মধ্যকার সম্পর্ক আলোচিত হয়। রূপমূলতাত্ত্বিকেরা শব্দকে একাধিক অর্থপূর্ণ অবিভাজ্য এককে ভাঙার চেষ্টা করেন। শব্দ গঠনকারী এই ন্যূনতম অর্থপূর্ণ এককের নাম দেয়া হয়েছে রূপমূল।

শব্দ ভাষার একটি কেন্দ্রীয় ধারণা, ফলশ্রুতিতে রূপমূলতত্ত্বের সাথে ভাষাবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলির নিবিড় সম্পর্ক আছে। রূপমূলতত্ত্ব যেহেতু শব্দের বাহ্যিক ধ্বনিগত রূপের সাথে সম্পর্কিত, সেহেতু এটি ধ্বনিতত্ত্বের সাথেও সম্পর্কিত। এই দুই শাখার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বিষয়গুলি রূপধ্বনিতত্ত্ব নামের শাস্ত্রে আলোচিত হয়।

রূপমূলতত্ত্ব যেহেতু শব্দের অর্থ নিয়ে আলোচনা করে, তাই অর্থবিজ্ঞানের সাথেও এর সম্পর্ক আছে। আবার রূপমূলতত্ত্বে আলোচিত সংগঠনগুলির অনেকগুলিই বাক্যের পদগুলির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের সাথে জড়িত। এই হিসেবে বাক্যতত্ত্বের সাথেও রূপমূলতত্ত্বের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। আবার রূপমূলতত্ত্বের সূত্রগুলি মেনে ভাষায় নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি হয় বলে অভিধানবিজ্ঞানের সাথেও শাখাটির সম্পর্ক আছে।

রূপমূলতত্ত্বের প্রধান প্রধান ধারণাসমূহ

রূপমূলতত্ত্বের প্রধান প্রধান ধারণাগুলির একটি তালিকা নীচে দেওয়া হল।
শব্দ (word)
প্রত্যয় (affix)
পশ্চাদগঠন (back formation)
যৌগীকরণ (compounding)
রূপান্তর (conversion)
অবয়বীকরণ (incorporation)
অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন (internal modification)
রূপকৌশল (morphotactics)
দ্বিত্বকরণ (reduplication)
প্যারাডাইম (paradigm)
বিভক্তি প্রকরণ (inflection)
সাধিতকরণ (derivation)
আভিধানিকীকরণ (lexicalization)
রূপমূল (morpheme)
উৎপাদনশীলতা (productivity)
প্রতিস্থাপন (suppletion)
শূন্যীকরণ (syncretism)

ধ্বনিতত্ত্ব কি?

ধ্বনিতত্ত্ব (ইংরেজি: Phonology) ভাষাবিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে কোন নির্দিষ্ট ভাষার ধ্বনি-ব্যবস্থা আলোচিত হয় । এতে বাক ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সৃজিত ধ্বনির ভৌত উৎপাদন ও অনুধাবন নিয়ে আলোচনা করা হয় ।

ধ্বনিতত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল একটি ভাষার স্বলক্ষণযুক্ত (distinctive) পৃথক পৃথক ধ্বনি-এককগুলি বের করা । উদাহরণস্বরূপ, ইংরেজিতে /p/ এবং /b/ দুইটি পৃথক ধ্বনি-একক । “pin” ও “bin” ন্যূনতম জোড়ে এই ঘটনাটি পরিলক্ষিত হয় , যে শব্দজোড়ে কেবল একটি ধ্বনির ক্ষেত্রে পার্থক্য ঘটেছে ।

বাক্যতত্ত্ব কি?

বাক্যতত্ত্ব (ইংরেজি: Syntax) নামক ভাষাবিজ্ঞানের শাখায় বাক্যের গঠন নিয়ে আলোচনা করা হয়। আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে একাধিক শব্দ কী নিয়মে যুক্ত হয়ে বৃহত্তর এককসমূহ (যাদের মধ্যে বাক্য প্রধানতম একক) গঠন করে এবং এই বৃহত্তর এককগুলোর বৈশিষ্ট্য কী, সেটাই বাক্যতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।

বৃহত্তর খণ্ডবাক্য-সদৃশ (clause-like) এককে প্রদর্শিত আচরণের ওপর ভিত্তি করে শব্দসমূহের শ্রেণীবিভাগ, বাক্যের গঠনের ওপর শব্দের আভিধানিক (lexical) অর্থের প্রভাব, বিভিন্ন প্রকারের বাক্যের মধ্যকার বিধিবদ্ধ (formal) সম্পর্ক আবিষ্কার, ইত্যাদি বাক্যতাত্ত্বিকদের (syntactician) গবেষণার বিষয়।

আধুনিক বাক্যতত্ত্বে বিমূর্তায়ন (abstraction) গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা। ধারণা করা হয় প্রতিটি বাক্যের বহিঃস্থ ধ্বনিতাত্ত্বিক (phonetic) রূপ বা তলের (surface structure) বিপরীতে একটি গভীর সাংগঠনিক তল (deep structure) বিদ্যমান, এবং এই তলদ্বয় এক ধরনের “রূপান্তর” (transformation) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংযুক্ত।

বিশুদ্ধ তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাক্যতত্ত্বের কাজ মানুষের ভাষাবোধের একটি বিধিনির্ভর (formal) মডেল তৈরিতে সাহায্য করা। আবার শ্রেণীকরণবিদ্যার (typology) দৃষ্টিকোণ থেকে বাক্যতত্ত্বের লক্ষ্য বিভিন্ন ভাষার উপাত্ত সংগ্রহ করে তাদের মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খুঁজে বের করে কিছু বর্ণনামূলক (descriptive) সাধারণ বৈশিষ্ট্য সংগ্রহ করা।

বাক্যতত্ত্বের বিধিবদ্ধ মডেল হিসেবে নোম চম্‌স্কি-র প্রস্তাবিত ‘Principles and Parameters’ মডেলটি বর্তমান বাক্যতাত্ত্বিকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়।

রূপমূলতত্ত্ব কি

রূপমূলতত্ত্ব কি? রূপমূলতত্ত্ব হল ভাষাবিজ্ঞানের একটি শাখা যা শব্দের গঠন এবং অর্থের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। বাংলা রূপমূলতত্ত্বে, বাংলা ভাষার শব্দগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়:

মূল শব্দ: মূল শব্দগুলিকে আরও ছোট শব্দে বিভক্ত করা যায় না। যেমন: “পড়া”, “লেখ”, “ভালো”
সমাস শব্দ: সমাস শব্দগুলি দুটি বা ততোধিক শব্দের সংযোগে গঠিত হয়। যেমন: “পড়াশোনা”, “লেখাপড়া”, “ভালোবাসা”
উপসর্গ শব্দ: উপসর্গ শব্দগুলি মূল শব্দের আগে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থ প্রকাশ করে। যেমন: “অতি + বৃষ্টি = অতিবৃষ্টি”, “উপ + প্রচার = উপপ্রচার”

মূল শব্দ

মূল শব্দগুলি বাংলা ভাষার সবচেয়ে মৌলিক অংশ। এগুলিকে আরও ছোট শব্দে বিভক্ত করা যায় না। মূল শব্দগুলিকে তাদের অর্থের ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

নাম শব্দ: নাম শব্দগুলি কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, গুণ, অবস্থা ইত্যাদিকে নির্দেশ করে। যেমন: “ছাত্র”, “বই”, “ঘর”, “সুন্দর”, “হাস্য”
ক্রিয়া শব্দ: ক্রিয়া শব্দগুলি কোনো কাজ, অবস্থা বা ঘটনাকে বোঝায়। যেমন: “পড়া”, “লেখ”, “আসা”, “যাওয়া”, “হওয়া”
বিশেষণ শব্দ: বিশেষণ শব্দগুলি কোনো নাম শব্দের গুণ, অবস্থা বা পরিমাণকে বোঝায়। যেমন: “বড়”, “ছোট”, “সুন্দর”, “ভাল”, “খারাপ”
সর্বনাম শব্দ: সর্বনাম শব্দগুলি কোনো নাম শব্দের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। যেমন: “আমি”, “তুমি”, “সে”, “এটা”, “ওটা”
অব্যয় শব্দ: অব্যয় শব্দগুলি কোনো নাম, বিশেষণ বা ক্রিয়া শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে বাক্যের অর্থকে পরিবর্তন করে। যেমন: “এটা”, “সেটা”, “তাই”, “না”, “হ্যাঁ”

সমাস শব্দ

সমাস শব্দগুলি দুটি বা ততোধিক শব্দের সংযোগে গঠিত হয়। সমাস শব্দগুলিকে তাদের অর্থের ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

দ্বন্দ্ব সমাস: দ্বন্দ্ব সমাস হল দুটি সমপর্যায়ের শব্দের সংযোগে গঠিত সমাস। যেমন: “পড়া + শোনা = পড়াশোনা”, “লেখ + পড়া = লেখালেখি”
কর্মধারয় সমাস: কর্মধারয় সমাস হল একটি শব্দের দ্বারা অন্য একটি শব্দের কর্মের সম্পর্ক প্রকাশ করে গঠিত সমাস। যেমন: “পড়া + যায় = পড়াশোনা”, “লেখ + যায় = লেখালেখি”
অব্যয়ীভাব সমাস: অব্যয়ীভাব সমাস হল একটি শব্দের দ্বারা অন্য একটি শব্দের অবস্থা বা গুণের সম্পর্ক প্রকাশ করে গঠিত সমাস। যেমন: “অতি + বৃষ্টি = অতিবৃষ্টি”, “উপ + প্রচার = উপপ্রচার”
উপসর্গ শব্দ

উপসর্গ শব্দগুলি মূল শব্দের আগে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থ প্রকাশ করে। উপসর্গ শব্দগুলিকে তাদের অর্থের ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

অব্যয়ীভাব উপসর্গ: অব্যয়ীভাব উপসর্গগুলি মূল শব্দের অবস্থা বা গুণের সম্পর্ক প্রকাশ করে। যেমন: “অতি + বৃষ্টি = অতিবৃষ্টি”, “উপ + প্রচার = উপপ্রচার”
কারক উপসর্গ: কারক উপসর্গগুলি মূল শব্দের সাথে একটি নির্দিষ্ট কারকের সম্পর্ক প্রকাশ করে। যেমন: “অভি + লেখক = অভিলেখক”, “উপ + লেখক = উপলেখক”
অনুকারী উপসর্গ: অনুকারী উপসর্গগুলি মূল শব্দের সাথে একটি অনুকার প্রকাশ করে। যেমন: “অনু + বল = অনুবল”, “উপ + বল = উপবল”

বাংলা রূপমূলতত্ত্ব একটি জটিল বিষয়।

বাংলায় ১৩টি ও উদুর্তে ৯টি বই লিখেছেন আল্লামা শফী

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


হেফাজতে ইসলামের আমির ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আল-জামিয়াতুল তাহলিমা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার সাবেক মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী মারা গেছেন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় আজগর আলী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

শাহ আহমদ শফী দেশের আলেম সমাজের খ্যাতিমান ইসলামি ব্যক্তিত্ব, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আমীর ছিলেন। তিনি একইসাথে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও তিনি দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামের হাটহাজারীর মহাপরিচালক ছিলেন।

বর্ণাঢ্য জীবনে আল্লামা শফী লেখালেখিতেও ছিলেন বেশ পারদর্শী। শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ায়র আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, সেখানে চার বছর লেখাপড়া করেন।

১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন। দেশের আলেমদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র আহমদ শফী বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে নয়টি বইয়ের রচয়িতা। তবে নারীবিরোধী নানা বক্তব্যের জন্য বরাবরই সমালোচিত আহমদ শফী। আল্লামা শফীর গুরুত্বপূর্ণ ১০টি বই হলো-

উর্দু
১. ফয়জুল জারী (বুখারীর ব্যাখ্যা)।
২. আল-বায়ানুল ফাসিল বাইয়ানুল হক্ব ওয়াল বাতিল।
৩. ইসলাম ও ছিয়াছাত।
৪. ইজহারে হাকিকাত।
৫. বাংলা।

বাংলা
১. হক ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব।
২. ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা।
৩. ইসলাম ও রাজনীতি।
৪. সত্যের দিকে করুন আহবান।
৫. সুন্নাত ও বিদ’আতের সঠিক পরিচয়।

বাঙালি, বাংলা, বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ একসূত্রে গাঁথা

মোঃ মেজবাহুল ইসলাম


১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করার পর মাত্র ২২দিনের মাথায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জাকে ক্ষমতাচ্যুত করে একাধারে রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও নিজের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য কাউন্সিল মুসলিম লীগের নেতৃত্ব দেন।

একই ভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণ আইয়ুবীয় স্টাইলে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সায়েমকে অস্ত্রের মুখে পদত্যাগ করিয়ে নিজে রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক,এবং নিজের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য বি.এন.পি প্রতিষ্ঠা করেন।

একইভাবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন জাতীয় পার্টি।আরবের ক্যানসার হিসেবে খ্যাত ইসরাইলের মতো আমেরিকা তৈরি করে ১৯৪১ সালে জামায়াতে ইসলাম। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দলটি এর বিরোধিতা করলেও হালে পানি পায়নি।

১৯৪৭ সাল থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের তাবেদারি করার ফলে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঘৃণ্যভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেও জিয়াউর রহমানের বদ্যনতায় দলটি আজও বাংলাদেশে মোটামুটি সাংগঠনিক ভিত্তি নিয়ে টিকে আছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে যে সকল ক্রিয়াশীল দল টিকে আছে তার মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই একক এবং একমাত্র দল যেই দলটি জনগণের মাধ্যমে গড়ে উঠে এবং ৭১ বছর জনসাধারণকে নিয়ে দলটি উপমহাদেশের রাজনীতিতে সগৌরবে টিকে আছে।

১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামক আলাদা দুটি রাষ্টের অভ্যুদয় হয়। পাকিস্তানের দুটি অংশ পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান। জনসাধারণের মতামত না নিয়েই পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্টভাষা হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলে মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তানে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তিবর্গ এর বিরোধিতা করে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দাবি দাওয়া পূরণের জন্য ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ইয়ার মুহম্মদ খানের রোজ গার্ডেনে ২০০/৩০০ কর্মী নিয়ে গঠন করে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ।মওলানা হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবুর রহমান ও খন্দকার মোশতাক আহমেদকে যুগ্ম সাধারণ করে ৪০ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। ১৯৫০ সালের দুর্ভিক্ষে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ খাদ্য বিতরণ করে ও ভুখা মিছিল বের করেছিল।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব শেখ মুজিবুর রহমান ২১শে ফেব্রুয়ারিতে গুলিবর্ষণ ও হত্যাকান্ডের জন্য ৩দিন টানা অনশন করেন।১৯৫২ সালের ২৬শে এপ্রিল দীর্ঘ বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েই বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের জন্য সারাদেশ চষে বেরাতে শুরু করেন।এসময় জনাব শামসুল হক অসুস্থ হয়ে পড়লে শেখ মুজিব ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

১৯৫৩ সালের ১৬ই নভেম্বরের কাউন্সিলে শেখ মুজিব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ এককভাবে ১৪৩ আসনে জয় লাভ করে। ১৯৫৫ সালের ২১শে অক্টোবর বিশেষ অধিবেশনে ধর্মনিরপেক্ষতা অংশ হিসেবে “মুসলিম” শব্দটি প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ নামকরণ করা হয়।এর প্রতিবাদে খন্দকার মোশতাক আহমেদ দল থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগের বিদেশ নীতি নিয়ে দ্বন্দ্বে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করে এবং তাঁর সাথে অনেকেই দল ত্যাগ করে ন্যাপ গঠন করে।সে সময় মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশকে সভাপতি করা হয়।

১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করে ও সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করে এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে।১৯৫৮ সাল থেকে ৬ দফার দেয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত আওয়ামী লীগ জনগণের ও ছাত্রদের ন্যায্য দাবি নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসছিল।১৯৬৬ সালে বাঙ্গালির মুক্তির সনদ ৬ দফা শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করলে এর প্রতিবাদে মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশসহ অনেকেই আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন।

১৯৬৬ সালের ১৮ই মার্চ কাউন্সিলে শেখ মুজিব সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।৬ দফাকে আওয়ামী লীগের মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ৬ দফার ব্যাখ্যা নিয়ে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধু গ্রেফতারের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত ৩০দিনে ৩২ টি জনসভা করে।৬ দফায় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পড়ে ফলে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে। তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ৬ দফা নিয়ে কাজ করতেই থাকে।

১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু জেলে থাকা অবস্থাতেই তাঁর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হয় এবং ক্যান্টনমেন্টে তাঁর বিচার কার্য শুরু করলে সারাদেশে তীব্র আন্দোলন ছড়িয়ে পরে ফলে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ২২শে ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান। ২৩শে ফেব্রুয়ারি জনাব শেখ মুজিবুর রহমানকে তৎকালীন ডাকসু ভি.পি তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন।১৯৭০ সালের ১লা জানুয়ারি রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা নিয়ে সারাদেশে প্রচারণা শুরু।

৭০ সালের ৪ জুন আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলে এককভাবে নির্বাচন অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন।১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে ও ঝড়ে ১০/১২ লাখ মানুষ মারা যায়। বঙ্গবন্ধু তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত রেখে ত্রাণ কার্যে ঝাপিয়ে পড়ে।৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানে একক সংখ্যাগটিষ্ঠতা পায়। পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগের এ বিশাল জয় মেনে নিতে পারেনি ফলে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ৭১ সালের ২৫শে মার্চ তারা নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতারের পূর্বে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৯ মাসে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা- বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে।আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু সরকার পরিচালনা করতে থাকেন।১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয় এবং ৩রা নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেলের ভিতরে নির্মম ভাবে হত্যা করার ফলে আওয়ামী লীগে দলটির উপর ঘোর অমানিশা নেমে আসে।দলটি চরম নেতৃত্ব সংকটে পড়ে।

সেসময় সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে জিয়া প্রশাসনের চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে সারাদেশ চষে বেড়ান।১৯৮১ সালের ১৫-১৬ ফেব্রুয়ারী আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সংহতি ও আওয়ামী লীগ রক্ষার জন্য শেখ হাসিনাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং সে বছরের ১৭ই মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে পিতার মত সারাদেশে চষে বেড়াতে শুরু করেন।

সেসময় শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বেশ কয়েকটি সশস্ত্র হামলা করে স্বাধীনতা বিরোধীরা।১৯৯০ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল এবং ৯১ সালে নির্বাচনে ৮৫টি আসন নিয়ে বিরোধী দল হয়।নির্বাচনে ব্যর্থতার জন্য শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন কিন্তু জনতার ক্রমাগত চাপে পুনরায় স্বপদে বহাল থাকে। ৯১ সালেই প্রলংয়কারী ঝড়ে উপকূলীয় মানুষের পাশে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নিয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ান।

বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করলে এর প্রতিবাদে আবার রাজপথে গণ আন্দোলন গড়ে তুলেন আওয়ামী লীগ। ফলে ৯৬ এর ১২ই জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬ টি আসন পেয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে।সে সরকারের সময়ই বাংলাদেশ অনেক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিসহ পার্বত্য শান্তি চুক্তি করে। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোটবদ্ধ ভাবে নির্বাচন করে পুনরায় সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘুদের উপর নজীরবিহীন নির্যাতন করে।

পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ১/১১ সরকার গঠন করে এবং ২০০৮ সালে ২৯শে ডিসেম্বর নির্বাচন দেয়। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পায়।২০০৮ সালের পর থেকে আজও আওয়ামী লীগের সরকার প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যার নেতৃত্ব বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও দেশের বড় বড় মেগা প্রকল্প আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে। মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত।

লেখকঃ মোঃ মেজবাহুল ইসলাম
সহ-সভাপতি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

নক্ষত্র হয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে আলো ছড়াবেন আনিসুজ্জামান স্যার

মুহম্মদ সজীব প্রধান


সব নক্ষত্র মহাকাশে থাকেনা কিছু কিছু নক্ষত্র মানুষরূপে মানব সমাজেও বিচরণ করে। তাঁঁরা চিরকাল সমাজ, দেশ এবং জাতিকে আলোকিত করতে কাজ করে। জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান স্যার এর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষক এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর। এছাড়াও তিনি দেশ বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক ছিলের। বস্তুত তিনি ছিলেন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল অর্থাৎ তিনি জাতির নৈতিক ও সামাজিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।

আনিসুজ্জামান স্যার পাকিস্তান আমলে বাংলার উজ্জ্বলতম দিকপাল হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ছিলেন পাকিস্তানি শাসকদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকা জ্বলন্ত শিখা। ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত সর্বত্র তাঁর বিচরণ স্পষ্ট । মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি বিদেশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করেছেন।

আনিসুজ্জামান স্যার ছিলেন সাম্প্রদায়িক চিন্তার বিরুদ্ধে। তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সর্ব স্তরের মানুষের জন্য কাজ করেছে নিরন্তর। ধনী-দরিদ্র, শাসক ও শোষিতের বৈষম্যে তিনি ছিলেন সোচ্চার। এছাড়াও তিনি ছিলেন তরুণ প্রেমী তিনি তরুণদের আশা আকাঙ্ক্ষা বুঝতেন এবং তাদের স্বপ্ন পূরণে নিবেদিত প্রাণের অধিকারী ছিলেন।

সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে তিনি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সত্যি বলতে বাংলা সংস্কৃতিতে তিনি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। ১৯৬৭ সালে রবীন্দ্রসঙ্গীত পাকিস্তানের জাতীয় ভাবাদর্শের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে বেতার ও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রচার বন্ধ করতে বলা হলে তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। প্রকৃতপক্ষে, তিনি ছিলেন মধ্যবিত্ত বাঙালির সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্ণধার।

শিক্ষা, সাহিত্য ও গবেষণা ক্ষেত্রেও তাঁর বিচরণ চির অম্লান। তিনি অধ্যাপনাকে পেশা হিসেবে বেছে নিলেও তাঁঁর নেশা ছিল লেখালেখি। তাঁঁর প্রবন্ধ-গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য, আঠারো শতকের বাংলা চিঠি, আমার একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর, পূর্বগামী, কাল নিরবধি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য বিদেশি সাহিত্য অনুবাদ এবং নানা বিষয়ে বই সম্পাদনা করেছেন তিনি।

শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আনিসুজ্জামান স্যার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ভারত রাষ্ট্রের সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি. লিট লাভ করেন।

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান স্যার ৮০ বছর অতিক্রম করার পর তিনি একটি পত্রিকাকে বলেছিলেন, ‘অনেক দিন বাঁচলাম। এখন বাড়তি সময় জীবনযাপন করছি। এই বাড়তি সময় যেন অর্থপূর্ণ হয়।” হ্যাঁ, তিনি তাঁর পুরো জীবন কর্মের মাধ্যমে অর্থপূর্ণ করেছিলেন যা বাংলার কোটি মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

সত্যি বলতে তিনি চিরকাল বাংলার আকাশে নক্ষত্র হয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে আলো বিলাবেন।


শিক্ষার্থীঃ আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।