মেস ভাড়া সংকট: যেসব পদক্ষেপ নিতে পারে নোবিপ্রবি প্রশাসন

এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান


কিছুদিন যাবৎ নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলো এই করোনা কালীন মেস ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়। এই বন্ধের সময় মেসের মালিকরা ফোন করে শিক্ষার্থীদের কাছে মেস ভাড়া চাচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নোয়াখালী স্থানীয় প্রশাসনও নাকি এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।কিন্তু এ পদক্ষেপ কতোটা কার্যকর করা হয়েছে সেটা বলতে পারছি না।

আমরা জানি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। আবার অনেকে আছে দিন আনে দিন খায়ে তাদের ছেলে-মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয় পড়াচ্ছেন। এসব পরিবারের ছেলে-মেয়েরা নিজে টিউশনি করে নিজে খরচ তো চালাতো বটেই এমনি পরিবারকে টাকা পাঠাতো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের একমাত্র আয়ের উৎসটাও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বিপাকে পড়ে গেছে এসব শিক্ষার্থীরা।

ইতিমধ্যে নোবিপ্রবির অধিকাংশ শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী এসব অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি মনেকরি নোবিপ্রবি প্রশাসনেরও উচিত তাদের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। এ ক্ষেত্রে আমার কিছু ব্যক্তিগত অভিমত আছে।

যেহেতু এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে সেহেতু….

১. যে সব শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে যাতায়াত করেন এ জন্য তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কে দিতে হয়েছে প্রতিমাসে ৪০০ টাকা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষকদের গাড়ি বন্ধ রয়েছে। গাড়ি বন্ধ থাকলেও গাড়ি ভাড়া প্রতিমাসে কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রায় ২০০ জন টিচার(কম বেশি হতে পারে) গাড়িতে যাতায়াত করে।প্রতিমাসে গাড়ি ভাড়া বাবদ আসে ২০০*৪০০=৮০০০০ টাকা।

২. বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন(কিছু পোস্ট বাদে)প্রায় ১০০ শিক্ষক (বেশিও হতে পারে)।এখন যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ এ জন্য তাদের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে না। দায়িত্ব পালনের জন্য প্রত্যেকে প্রতিমাসে অনারিয়াম দেওয়া হচ্ছে ৩৫০০ টাকা।তাতে মোট আসে ৩৫০০*১০০=৩৫০০০০ টাকা।

৩. নোবিপ্রবিতে ২৮ টি ডিপার্টমেন্ট ও ২ টি ইনস্টিটিউট কে প্রতিমাসে ইমপ্রেস মানি বাবদ দেওয়া হতো ৩০০০ টাকা করে।যদিও এর মধ্যে ভ্যাট রয়েছে। ভ্যাট ছাড়া থাকে ২৫০০ টাকার মতো।এ থেকে মোট আসে ২৫০০*৩০=৭৫০০০ টাকা।

মোটা টাকা হয় (৮০০০০+৩৫০০০০+৭৫০০০) =৫০৫০০০ টাকা।

এছাড়াও ছাত্রকল্যাণ তহবিলেও রয়েছে অনেক টাকা।প্রতিমাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাস ভাড়া বাবদও নিচ্ছে টাকা।

প্রতিমাসে এ টাকাটা নোবিপ্রবি প্রশাসন অসহায় শিক্ষার্থীদের পিছনে ব্যয় করতে পারে।এতে করে কিছুটা হলেও অসহায় শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।কারণ শিক্ষার্থীরাই আমাদের প্রাণ। নোবিপ্রবি প্রশাসন ভেবে দেখতে পারেন।

  • লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ এন্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

মেস ভাড়া প্রসঙ্গ: শিক্ষার্থীদের গরিবের বাচ্চা ও মিসকিন বললেন জবি উপাচার্য

জবি টুডে: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের বিতর্কিত মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। মেস ও বাড়ি ভাড়া নিয়ে যখন চরম বিপাকে সম্পূর্ণ অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা; তখন একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য করছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।

এদিকে উপাচার্যের মন্তব্যের এক ফোন রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি সমালোচিত বক্তব্য এর প্রতিবাদ জানিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়ার সমস্যা সমাধানের উপাচার্য মীজানুর রহমান উত্তেজিত হয়ে বলেছেন, “আমি মনে হয় সব থেকে গরিবের বাচ্চাদের নিয়ে এসে ভর্তি করেছি। তোমরা এত মিসকিন, নিজেদের আত্মমর্যাদা পর্যন্ত নেই। আমি কী বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম যে, দরিদ্রদের ভর্তি করা হয়। এটা কি দরিদ্রদের এতিমখানা, মাদ্রাসা? তোমাদের বিয়ে হবে না। বিয়ে করতে গেলে বলবে, গরিবের বাচ্চা সব তোমরা।”

উপাচার্য আরও বলেন, খাওয়ার টাকা লাগছে না, কেএফসি যাওয়া লাগছে না, ‘মোটরসাইকেলের খরচ লাগছে না, বিড়ি-সিগারেট লাগছে না, রিকশাভাড়া লাগছে না, বান্ধবীরে আইস্ক্রিম খাওয়ানো লাগতেছে না। এসব টাকা দিয়ে বাড়ি ভাড়া দিচ্ছ না কেন?’

জবি এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “একজন প্রকৃত শিক্ষক কখনও তাঁর শিক্ষার্থী সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারেন না। সকল শিক্ষককেও এগিয়ে আসতে হবে। যদি সম্মানিত শিক্ষকরা এগিয়ে আসেন তাহলে সহজেই এটি সফল হবে। আর না হলে জবির ছাত্রদের ঘাম ছড়াতে যেমন কষ্ট হয় না রক্ত ঝরতেও তেমন চোখে জল আসে না। অবিলম্বে উপাচার্যের পদত্যাগ চাই।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, “সম্পূর্ণ অনাবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জবির হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া সংকট চোখে দ্যাখেন না, অর্থবৃত্তির কথা বলায় তিনি ২০ হাজার জবি শিক্ষার্থীকে ‘মিসকিন’ বলেছেন। আমাদের যেখানে থাকার জায়গা নেই সেখানে তিনি টকশো নিয়ে ব্যস্ত। আমরা কী এমন ভিসি চাই?”

“যে ভিসি মিসকিন বলেন তিনি আমাদের অভিভাবক? আমরা বলতে চাই মহামান্য ভিসিকে তাঁর এই ন্যাক্কারজনক মন্তব্যের জন্য হয় ২০ হাজার জবিয়ানের কাছে জবাবদিহি করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। নয়তো পদত্যাগ করতে হবে।” ওই শিক্ষার্থী আরও যুক্ত করেন।

সূত্র: কালেরকন্ঠ।

বিশ্ববিদ্যালয় যত দিন ছুটি, তত দিন পর্যন্ত ৩ হলের সিট ভাড়া মওকুফ

বেরোবি টুডেঃ করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) তিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সিট ভাড়া মওকুফ করা হয়েছে।

আজ শনিবার (১৬ মে) প্রভোস্ট কমিটির সদস্য সচিব তাবিউর রহমান প্রধান এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানিয়েছে আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

তথ্য সূত্রে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সুপারিশের আলোকে করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গৃহিত বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, শহীদ মুখতার ইলাহী হল এই তিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সিট ভাড়া মওকুফের সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে।


আরো পড়ুনঃ বেরোবি: যতদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ততদিন মেসভাড়া মওকুফ


বেরোবি কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জুয়েল আহমেদ বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন উদ্যোগে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে কৃতজ্ঞ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা মধ্যবিত্ত পরিবারের। তাই এ সময় সিট ভাড়া মওকুফ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন বলে মনে করি।

প্রভোস্ট কমিটির সদস্য-সচিব ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল-এর প্রভোস্ট তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের এই সংকটকালে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে প্রভোস্ট কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ছুটির সময় সিট ভাড়া মওকুফের সুপারিশ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় যত দিন ছুটি থাকবে তত দিন পর্যন্ত সিট ভাড়া মওকুফ করা হয়েছে ।”

২৩ শিক্ষার্থীর বাড়ি ভাড়া মওকুফ করেছেন গোপালগঞ্জের হামিদ মুন্সী

বশেমুরবিপ্রবি টুডেঃ গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ২৩ শিক্ষার্থীর বাড়ি ভাড়া অর্ধেক মওকুফ করেছেন বাড়ির মালিক মোঃ হামিদ মুন্সী পলু।

লকডাউন শেষ হয় ততদিন পর্যন্ত আমার বাসার ভাড়া ৫০% মওকুফ ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে প্রায় সকলেই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের আয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে এই ভাইরাস।

আর এই আর্থিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করেই বাড়ি ভাড়া অর্ধেক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই বাড়ির মালিক। তার বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থী ভাড়া থাকেন।

বাড়ি ভাড়া মওকুফ প্রসঙ্গে বাড়ির মালিক মোঃ হামিদ মুন্সী বলেন, “দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সবার জন্যই হতাশজনক।আর এই পরিস্থিতি আরো বেশি হতাশ করছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের যাদের অধিকাংশই নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে।এমন অনেকে আছে টিউশনির টাকাই যাদের সম্বল।এসব কিছু বিবেচনা করে আমি আমার মেসে ভাড়া থাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভাড়া ৫০% মওকুফ করলাম।

তিনি আরও বলেন, “মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সিদ্ধান্তে আসলাম। যতদিন না লকডাউন শেষ হয় ততদিন পর্যন্ত আমার বাসার ভাড়া ৫০% মওকুফ ঘোষণা করলাম। আমার এই সিদ্ধান্তে আরো অনেক বাড়ির মালিক এগিয়ে আসবে বলে আমি মনে করি।”

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন যাবৎ বাড়িভাড়া মওকুফের জন্য সামজিক যোগাযোগ মাধ্যেম সহ নানাভাবে আবেদন করছেন বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয় নি।

মালিকরা মেস ভাড়া মওকুফ না করলে, পরিশোধ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

মাভাবিপ্রবি টুডেঃ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বাড়িতে অবস্থান করায় মেস-বাসা ভাড়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) অসহায় শিক্ষার্থীরা। দেশের এই পরিস্থিতিতে মেসে-বাসা না থাকলেও নিয়মিত মাসিক ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে তাদের।

তবে দুর্যোগকালে অসহায় ও দুস্থ শিক্ষার্থীদের মেস কিংবা বাসা ভাড়া মওকুফের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন। এছাড়াও যদি বাড়িওয়ালারা মেস-বাসা ভাড়া মওকুফ না করেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও প্রশাসনের অর্থ সহায়তায় ভাড়া পরিশোধ করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে মাভাবিপ্রবি প্রশাসন।

ঘরে থাকায় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দাবি জানায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী টিউশন বা কোচিংয়ে ক্লাস নিয়ে নিজেদের পড়ালেখার খরচ চালায়। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী নিজ বাসায় অবস্থান করছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে শিক্ষার্থীদের টিউশন নেই, যার ফলে বাড়ি ভাড়া দেয়া অসম্ভব।

মাভাবিপ্রবির এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা মানিক শীল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে আমরা কয়েক শিক্ষার্থী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে আমাদের। আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ও টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন সুপারিশ করবে ভাড়া মওকুফের জন্য। বাড়িওয়ালা মওকুফ না করলেও বিশ্ববিদ্যালয় ও টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন আর্থিকভাবে সহায়তা দেবে বলে জানানো হয়েছে।

ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনার সাইন্স বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নিবির পাল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী কোচিং বা টিউশনি করে টাকা উপার্জন করে শুধু নিজের খরচই নয়, বাড়িতেও পাঠাতে হয়। তাদের পক্ষে এই সময়ে মেস-বাসা ভাড়া দেয়া সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম বলেন, অসচ্ছল শিক্ষার্থী যদি বাসা বা মেস ভাড়া দিতে না পারে তাহলে নিজ বিভাগের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আবেদন করলে সেটার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থানীয় এমপিসহ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

প্রক্টর আরো বলেন, যেসব বাড়ির মালিক শিক্ষার্থীদের মেস বা বাসা ভাড়া দিয়েছেন তারা অনেকেই ভাড়ার টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। সুতরাং তাদের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। যদি বাসার মালিকরা ভাড়া মওকুফ না করেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও প্রশাসনের অর্থ সহায়তায় ভাড়া পরিশোধ করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন জানান, শিক্ষার্থীদের বাসা-মেস ভাড়ার বিষয়টি স্থানীয় এমপি ও প্রশাসনকে জানিয়েছি। এছাড়া মেস ও বাসার মালিকদের অনুরোধও করা হয়েছে যাতে তারা ভাড়া মওকুফ করেন। তারপরও অসহায় অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা যদি আবেদন করে তাহলে সেই আবেদন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে ভাড়ার বিষয়টি সমাধানের জন্য।

চার শর্তে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া অর্ধেক মওকুফ

হাবিপ্রবি টুডেঃ দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের জন্য মেসভাড়া অর্ধেক মওকুফ করা হয়েছে।

আজ রবিবার (১০ মে) বাঁশেরহাট মেস মালিক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়াও মিটিংয়ে আরো যেসব লিখিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

১) এপ্রিল ২০২০ থেকে যতো মাস করোনাভাইরাস জনিত দুর্যোগ চলবে ততমাস শিক্ষার্থীরা ৫০ শতাংশ মেস ভাড়া পরিশোধ করবে এবং যেই মাসে বিশ্ববিদ্যালয় চালু হবে সেই মাসে ১০০ শতাংশ ভাড়া দিতে হবে।

২) ৫০ শতাংশ মাসিক মেস ভাড়ার সঙ্গে বিদ্যুৎ বিল সাপেক্ষে শিক্ষার্থীরা প্রদান করবে।

৩) মানবিক কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজ নিজ মেসের বুয়া বিল প্রদান করবে।

৪) শিক্ষার্থীরা মেসভাড়া মেস মালিক বরাবর সংশ্লিষ্ট মেসের নিয়মানুযায়ী যথা সময়ে প্রদান করবে। কোন মাসে বকেয়া রাখা যাবে না।

এ দিন মেস মালিক ও প্রশাসনের মিটিংয়ের গৃহীত সিদ্ধান্তে মেস মালিক সমিতির সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বাকি সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে প্রক্টর প্রফেসর ড. খালেদ হোসেন এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. ইমরান পারভেজ স্বাক্ষর করেন।

মেস মালিকের এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পরিসংখ্যান তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী লিফাত আরা বলেন, এখানে শিক্ষার্থীদের কোন দিকটা দেখলো বুঝলাম না। মেসে না থেকে তাও ৫০% দিতে হচ্ছে। আবার বুয়া বিল কেনো দিব? মানবিক দিক বলে বুয়া বিল চাপানোর কোনো মানে হয় না।

শিক্ষার্থীদের অবস্থা খারাপ আর সবাই আছে আমাদেরকে লুটপাট করতে। আমরা বুয়াকে সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু দিতে পারি তবে বুয়া বিল দিবো না। বিদ্যুৎ ব্যবহার করতেছি না তাহলে বিদ্যুৎ বিল কোথা থেকে আসতেছে? আবার মাসের শুরুতে মাসের ভাড়া! যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে মানবিক হতে বলা হচ্ছে সেখানে কিনা ব্যবসা চলছে।

আপনারা এই ৫০% ভাড়া মালিকরা নিচ্ছেন ঠিক আছে কিন্তু আমরা এতদিন মেসে না থেকে বিদ্যুৎ বিল কেনো দিবো। যেখানে মেস আপনাদের যেগুলো আমরা ব্যবহার করছি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হাবিপ্রবি শাখা কিছুতেই এর দায় এরাতে পারে না।

বাঁশেরহাটের মেসগুলোতে এক বছরের চুক্তি, বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ বিল, সাধারণ ভাড়া থেকে ৩ গুণ ভাড়া বেশি নেয়া। মেস মালিকরা এগুলো নিয়ম নিজেরা তৈরি করে ব্যবসা চালাচ্ছে। ভুক্তভোগী হচ্ছি আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

হাবিপ্রবি প্রশাসন ও মেস মালিকদের পুনরায় বৈঠক

তানভির আহমেদ, হাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় সময় পার করছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে মেস ভাড়ার চাপ। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সিদ্ধান্তহীনতায় মেস মালিক সমিতি তাই দু-দফা বৈঠকের সুযোগ পেয়েও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে চিঠি দেওয়া হলেও প্রথম বারে বসতে অস্বীকৃতি জানায় তারা। এরপর প্রশাসনের দ্বিতীয় উদ্দোগে ৪ঠা মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ২০ শতাংশ মেস ভাড়া মৌকুফের ঘোষণা দিয়েছিলো মেস মালিকরা। তবে কিছু মেস মালিক এতেও দ্বিমত পোষণ করে। এই খবরে শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। শিক্ষার্থীবান্ধব না হওয়ায় সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি হাবিপ্রবি প্রশাসন।

আগামী রবিবার (১০ মে) পুনরায় মেস মালিকদের সাথে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এবিষয়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. ইমরান পারভেজ বলেন, “বিগত মিটিংয়ে মেস মালিকদের প্রস্তাব আমাদের কাছে ছাত্র বান্ধব মনে না হওয়ায় তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। আগামী রোববার তাদের সাথে আমাদের আবার বসার কথা রয়েছে। আশা করছি ভালো কিছু ফল বেরিয়ে আসবে। এর আগে শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগ পেলে কঠোর অবস্থানে যাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন”।

আলোচনায় কোন সিদ্ধান্ত এখনো না আসলেও কিছু কিছু মেস মালিকদের বিরুদ্ধে অনৈতিক চাপ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মেসে বুয়া বা রান্নার বিল, বিদ্যুতের পুরো টাকাও দাবী করেছেন কেউ কেউ।

এসব অভিযোগ স্বীকার করে মেস মালিক সমিতির সভাপতি রায়হান শরিফ বলেন, “কিছু মেয়েদের মেস থেকে এমন অভিযোগ পেয়েছি। রবিবারের মিটিংয়ে সব সমাধা হবে বলে আশা করি। এর আগে টাকা চেয়ে চাপ না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি মেস মালিকদের”।

যশোরে শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশ মেস-বাসা ভাড়া মওকুফ

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্কঃ করোনা পরিস্থিতিতে যশোরে শিক্ষার্থীদের মেস-বাসা ভাড়া ৬০ শতাংশ মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেস-বাসার মালিকরা। সোমবার দুপুরে সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসনের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এপ্রিল মাস থেকে ভাড়ার ৪০ শতাংশ দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। সেই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

যশোর শহর ও শহরতলীতে সহস্রাধিক মেস-বাসা রয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তবে কোনো মালিক চাইলে মানবিক বিবেচনায় শতভাগ ভাড়া মওকুফ করতে পারবেন। তাতে কোনো বাধা নেই।

সার্কিট হাউজে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানী শেখ, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন, ১৫ জন মেস মালিক, সরকারি এমএম কলেজ ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ছাত্র প্রতিনিধি।

এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান বলেন, গত ৩০ এপ্রিল যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন দেশজুড়ে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া শিক্ষার্থীদের মানবিক দিক বিবেচনা করে বাসা বাড়ির মালিকদেরকে মেসের সিটভাড়া মওকুফের আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান। তার চিঠির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় সোমবার দুপুরে মেস মালিকদের একাংশ, ছাত্র, শিক্ষক প্রতিনিধি, পুলিশ প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাব সভাপতির উপস্থিতিতে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত সভায় মেস-বাসা মালিকদের প্রস্তাবনার ভিত্তিতেই ৬০ শতাংশ ভাড়া মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এপ্রিল মাস থেকে করোনা সৃষ্ট উদ্ভুত পরিস্থিতি না কাটা পর্যন্ত অর্থাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাবদ ৪০ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। বিদ্যুৎ বিল, পানির বিলসহ অন্যান্য খরচের জন্য এই ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। তবে কোনো বাড়ির মালিক যদি মানবিক বিবেচনায় পুরো ভাড়া মওকুফ করেন, তাহলে তাকে ধন্যবাদ।

তিনি আরও বলেন, কোনো মালিক যদি সিদ্ধান্ত না মেনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেন, তবে আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ প্রশাসন।

শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন তাদের দরকারি জিনিসপত্র ঘরের বাইরে ফেলে দেয়া হয়েছে। এটা কোনোভাবেই করা যাবে না বলেও সর্তক করে দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।

১০ শিক্ষার্থীকে ভিক্ষা করে ভাড়া দিতে বললেন বাড়ির মালিক

চবি টুডেঃ দেশে করোনা ভাইরাসের তাণ্ডব। সেই সঙ্গে বন্ধ র‍য়েছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে মেস-বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা। এই সময়ে অনেক শিক্ষার্থীকে মেস-বাসা ভাড়া পরিশোধ করার জন্য চাপ দিচ্ছে অনেক মেস-বাসার মালিক।

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ১০ শিক্ষার্থীকে ভিক্ষা করে এপ্রিল মাসের বাসা ভাড়া দিতে বলার অভিযোগ উঠেছে এক বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। করোনা ভাইরাসের কারণে বাড়িতে চলে যাওয়ায় ওই শিক্ষার্থীরা এপ্রিল মাসের বাসা ভাড়া দিতে পারেনি ওই বাড়ির মালিককে। এতেই নাকি তাদের ওপর রেগে আছেন ওই বাড়ির মালিক শামসুন্নাহার বেগম।

ওই বাসার ভাড়াটিয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান জানান, খুলশী থানার আল ফালাহ গলির হাজী নূর আহমেদ সড়কের আলী ভিলার চতুর্থ তলায় তারা ভাড়া থাকেন। আড়াই বছর ধরে ১০ জন মিলে এ বাসায় আছেন তারা। সকলেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে পড়েন। প্রতিমাসে ১৯ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হয় তাদের। আমরা সবাই টিউশন করে নিজেদের খরচ যোগান দিই। আড়াই বছরে কোন মাসেই ভাড়া বকেয়া ছিল না। এখন করোনার কারণে সবাই যার যার বাড়ি চলে গেছে। টিউশনও নেই। এ জন্য এপ্রিল মাসের ভাড়া পরিশোধ করতে পারিনি।’

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, “আমি বাড়িওয়ালা আন্টিকে ফোন দিয়ে ওনার খোঁজ খবর নিয়ে বললাম, আমরা যারা মেসে থাকি সবাই নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। টিউশন করে চলি। এখন এই পরিস্থিতির কারণে টিউশনও নাই। পরিবারে সবার ভাল আয়ের কোন ব্যবস্থাও নেই। এখন আপনি যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত ভাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করতেন তাহলে আমরা উপকৃত হতাম। ওনি এই কথা শুনেই বলেন, আমি বাসা ভাড়া দিয়েছি। আমি ভাড়া চাই। তোমরা ভিক্ষা করে হলেও ভাড়া এনে দাও। আমার ভাড়ার টাকা না দিলে আমি কোন জিনিসপত্র বাসা থেকে নামাতে দিব না।”

বাড়ির মালিক শামছুন্নাহার বেগম বলেন, ‘এটা আমার আর মিজানের বিষয়। সে সাংবাদিককে কেন জানালো? মিজান কি আমাকে সোজা পেয়েছে? মিজান আমাকে হাইকোর্ট দেখাতে চাইলে আমি তাকে নাঙলকোট দেখাবো। তাকে চট্টগ্রাম শহরে আসতে বলিয়েন।’

করোনা দুর্যোগে মেস-বাসা ভাড়া, বিপাকে কুবি শিক্ষার্থীরা

মুহাম্মদ ইকবাল মুনাওয়ার, কুবি প্রতিনিধিঃ করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই। এমতাবস্থায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বিচলিত। সংকটের এই মুহুর্তে শিক্ষার্থীদের মেস ও বাসা ভাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য গলার কাঁটা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

জানা যায়, আবাসিক হলে সিট না থাকারর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে, শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী টিউশন করিয়ে বাসা ভাড়া ও নিজের খরচ বহন করে থাকে। লকডাউনের এই পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার ও টিউশন করিয়ে চলা শিক্ষার্থীদের বাসা ভাড়া দেওয়া অনেকটা কষ্টসাধ্য। এই মুহূর্তে বাসা ভাড়া শিথিল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লিখালিখি করে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জ্যোতি সাহা বলেন, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।আমার বাবা প্রাইভেট ফার্ম এ সামান্য বেতনে চাকরি করে। কিন্তু লকডাউনের কারণে ২ মাস যাবত বেতন পাচ্ছেন না যে কারণে উনার পক্ষে সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি বাসা ভাড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাসা ভাড়ার বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমন্বিত জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হেলাল উদ্দিন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের তিন-চতুর্থাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। যাদের অধিকাংশেরই টিউশন, কোচিং বা কোন খন্ডলীন চাকরিই মেস ভাড়া, খাবার বিল ও পড়ালেখার ব্যয় নির্বাহের একমাত্র উৎস। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল ভয়াবহ করোনার প্রভাবে সম্পূর্ণ রুপে বন্ধ হয়েছে তাদের এই একমাত্র পথ। সেই সাথে বন্ধ হয়েছে লক ডাউনে তাদের পরিবারের আয়ও। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা ৭ মাসের বাসা ভাড়া প্রদান করা দুরূহ হয়ে পড়বে। যা বাসা ভাড়া মওকুফ করা সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত বলে ইংগিত বহন করে। অতএব মানবিক বিবেচনায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।”

আরেক শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে। আমরা শিক্ষার্থীগণ বিগত ২০ মার্চ থেকে নিজ নিজ এলাকায় বাসায় অবস্থান করছি।এ অবস্থায় ভাড়া বাসায় থাকা শিক্ষার্থীদের আরো প্রায় পাঁচ মাসের মতো নিজ নিজ এলাকায় থাকতে হতে পারে। কিন্তু বাসার মালিকগণ ভাড়া পরিশোধ করতে চাপ দিচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে ওঠে আসা, এবং মফস্বল এলাকা থেকে আসা। শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছু শিক্ষার্থী শহরে এসে টিউশনি করে, দোকানে পার্ট টাইম জব করে, কিছু টা নিজের খরচ বহন করে,অনেকে নিজ পরিবারকে ও সাহায্য করা লাগে। দেশের এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ইনকাম করার কোন উৎস নেই । শিক্ষার্থীদের দুই মুঠো খাবার খাওয়া যেখানে অনেক কষ্টসাধ্য সেখানে ভাড়া প্রদান অসম্ভব হয়ে উঠে। এমত অবস্থায় উক্ত সমস্যা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান রাখছি কুমিল্লা জেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে মেস মালিকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে লকডাউন কালীন বাসা/ মেস ভাড়া মওকুফে উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী কামাল বলেন, “মেসের ভাড়ার বিষয়ে খুব শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা সিদ্ধান্ত নিবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাড়িওয়ালাদের প্রতি অনুরোধ করেছেন যাতে এখন কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বাসা ভাড়া নেওয়া না হয়। দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পরে সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নিবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রক্টর বলেন এখন ভাড়ার টাকা না দিয়ে সবকিছু ঠিক হওয়ার পরে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টাকা দিতে। আর বাড়িওয়ালাদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে।”

তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন থেকে নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবে। এবং একটা সুরাহা হওয়ার আশ্বাস দেন।”