বিসিএস প্রস্তুতি : শূন্য থেকে যেভাবে শুরু করবেন BCS Preparation

বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এবং প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা হল বিসিএস- বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা। প্রতিবছর লাখো প্রার্থী আবেদন করেন। ক্যাডার হওয়ার সুযোগ পান ২ হাজারের মত। ১টি ক্যাডারের বিপরীতে যুদ্ধ করেন ২৭০ জনের ও বেশি প্রার্থী! ভাবা যায়? পৃথিবীর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড, কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড এর চেয়ে ও প্রতিযোগিতা বেশি হয় বাংলাদেশের বিসিএস পরীক্ষায়। প্রার্থীদের সংখ্যাটা দিন দিন বাড়লে ও ক্যাডারের সংখ্যা বাড়ছে না। তাই প্রতিযোগিতার মাত্রা অকল্পনীয়। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে চাই প্রচুর পড়াশুনা। অধ্যবসায়, নিয়মমাফিক বিসিএস প্রস্তুতি ছাড়া বিসিএস ক্যাডার হওয়া অসম্ভব।

বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চাকরি বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য দৌড় ঝাপ শুরু করতে হয় অনেক আগে থেকেই। যে যত বেশি পড়বে তার টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।

আজকেল আর্টিকেলে বিসিএস প্রস্তুতির (BCS Preparation) আদ্যোপান্ত নিয়ে আলোচনা করব। (How to take BCS preparation?)

১। সিরিয়াস হওয়াঃ

প্রথমেই নিজের মাইন্ড সেট করে ফেলতে হবে। বিসিএস অন্য যেকোন একটি পরীক্ষার মতই একটি পরীক্ষা। তবে সেটা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন পরীক্ষা। তাই এই পরীক্ষায় পাশ করতে পড়াশুনা করতে হবে নিয়মিত। অনেক প্রার্থীর টেবিলে দিনের পর দিন বিসিএস এর বই পরে থাকে। কেউ খুলেও দেখেন না। আজকে পড়ব, কালকে পড়ব এভাবে করে মাসের পর মাস চলে যায়। বইয়ের উপর ধুলো পড়ে, কিন্তু পড়া আর হয় না। তাই শুধু বই কিনে জমা করলেই হবে না। সিরিয়াস হয়ে সেই বইগুলো প্রতিদিন পড়তে হবে।

২। বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে শুরু করব?

আপনার যদি ইচ্ছা থাকে বিসএস এ যোগ দেবার, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই পড়া শুরু করা উচিত। শুধুমাত্র বিসিএসকে টার্গেট রেখে সিলেবাস অনুযায়ী নিয়মিত পড়াশুনা করতে হবে। আসলে ধরা-বাধা বিসিএস পড়ার নিয়ম ঐভাবে নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন অবস্থায় বিসিএস সিলেবাস ও বিসিএস পরীক্ষার পদ্ধতির সকল তথ্যাবলী সম্পর্কে ভালোভাবে দেখে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করা উচিত।

৩। বিসিএস এর জন্য কত ঘন্টা পড়তে হবে?

কে কত সময় পড়বেন তা নির্ভর করবে কে কোন বিষয়ে পড়ছেন তার উপর। যদি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবজেক্ট এ সময় বেশি দিতে হয় তাহলে কম সময় পড়বেন। কোন ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা কম করে বিসিএস এর পড়াশুনা করা যাবে না। বিসিএস পরীক্ষার ৩ টি ধাপ আছে। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা। প্রিলিমিনারি শুধু টিকার পরীক্ষা। প্রার্থী কমানোর জন্য এই পরীক্ষার মাধ্যমে কিছু প্রার্থী বাছাই করা হয়। এই পরীক্ষায় নম্বর থাকে ২০০। এখানে ২০০ তে ২০০ পেলে ও কোন লাভ হবে না । শুধুমাত্র একটা পাশ মার্ক নিয়ে পাশ করতে পারলেই হল। এযাবত কালের ইতিহাসে ১২০ বা এর একটু কম-বেশি যারা পেয়েছেন তারা সবাই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পাশ করেছেন। অতএব প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বইয়ের পর বই না পড়ে দরকারি এক বই ই বারবার পড়া বুদ্ধিমানের কাজ।

৪। সিলেবাস দেখে নেয়াঃ (BCS Syllabus)

প্রস্তুতির পূর্বেই বিসিএস এর সিলেবাস প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া জরুরী। সিলেবাসের বাইরে সাধারনত কোন প্রশ্ন আসে না। সিলেবাস দেখে কোন বিষয়ে পারদর্শী আর কোন বিষয়ে দূর্বলতা বুঝা উচিত। ধরেন আপনি সিএসইতে পড়াশুনা করছেন। তাহলে আপনার জন্য কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয় অনেক সহজ। সুতরাংএই বিষয়ে অন্যদের থেকে আপনার কম পড়া লাগবে। এই সময়ে আপনি অন্য বিষয় পড়তে পারবেন।

৫। বিগত বছরের প্রশ্ন সলভ করাঃ

বিসিএস এর ইতিহাসে প্রতিবারই পূর্বের প্রশ্ন থেকে কিছু রিপিট হয়। তাছাড়া পূর্বের প্রশ্নগুলো সলভ করলে বিসিএস পরীক্ষা সম্পর্কে বাস্তবিক জানা যাবে। বাজারে প্রচলিত অনেক বই ই আছে। যেকোন একটা কিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বা ২য় বর্ষেই ফাঁকে ফাঁকে পড়ে ফেলা উচিত।

৬। প্রতিদিন একটি বাংলা ও ইংরেজী পত্রিকা পড়া উচিত।

পত্রিকার গুরুত্ব অপরিসীম। পত্রিকার লিখা পড়লে বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষায় অনেক কাজে দিবে। তাছাড়া বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থেকে প্রশ্ন আসে। এই ২ বিষয়ের প্রশ্নগুলো সাধারনত পত্রিকা থেকেই করেন প্রশ্ন কর্তারা। তাই নিয়মিত পত্রিকা পড়লে এগুলো থেকে সহজেই উত্তর করা যাবে।

৭। বিশ্ববিদালয়ের ৩য় বর্ষে কিছু বিখ্যাত বই পড়ে ফেললে ভাল হয়।

“অসমাপ্ত আত্মজীবনী”, “লালনীল দীপাবলি” এই বইগুলো থেকে বিসিএসে হামেশাই কিছু প্রশ্ন থাকে। তাছাড়া ভাইভা বোর্ডে এই রকমের বইগুলো থেকে প্রশ্ন করা হয়। এগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কিত বই, মুক্তিযুদ্ধের উপর বইগুলো পড়ে ফেলা উচিত।

৮। আপনি আপনার নিজ জেলা সম্পর্কে কতটুকু জানেন?

বিসিএস ভাইভা বোর্ডে সবাই কেই তাদের নিজ জেলা থেকে প্রশ্ন করা হয়। তাই নিজ জেলা, উপজেলা সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে রাখুন। উইকিপিডিয়া, বাংলা পিডিয়ায় এই তথ্য গুলো পেয়ে যাবেন।

৯। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষ থেকে বিসিএস এর সিলেবাস অনুযায়ী প্রতিটি বিষয়ের জন্য বিষয়ভিত্তিক বই পড়া উচিত।

নিয়মিত পড়াশুনা করলে প্রতিটি বিষয়ে খুব ভাল একটা প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব। পড়াশুনার সময় যে টপিক গুলো কঠিন লাগে সেগুলো খাতায় লিখে রাখলে ভাল হবে। সেগুলো কয়েক দিন পর পর রিভিশন দিলে মনে থাকবে।

১০। সর্বোপরি বিসিএস একটা পরীক্ষা। হ্যাঁ খুব কঠিন, কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়।

আপনি বিশ্ববিদ্যালয় বা এইচএসসির কোন পরীক্ষার আগের রাতে যেভাবে পড়াশুনা করেছিলেন তার ৪ ভাগের ১ ভাগ ও যদি প্রতিদিন বিসিএস পরীক্ষার জন্য পড়েন, তাহলে বিসিএস পরীক্ষায় আপনার দৌড় ১ম ১০০ জনের মধ্যেই থাকবে।

৪৭ তম বিসিএস সার্কুলার কবে হবে?

৪৭তম বিসিএস অথবা ৪৭তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষা বাংলাদেশের সরকারি পদসমূহে চাকরি পেতে স্থানীয় প্রশাসনিক পরীক্ষার একটি। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদের জন্য নিযুক্তি দেওয়া হয়। ৪৭ তম বিসিএস সার্কুলার কবে হবে?

এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য সরকারি পদসমূহে যোগ দেওয়ার জন্য যোগ্য ও যোগযোগ সাধারণ মানুষদের জন্য সহজ এবং প্রকৃত পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যা স্বাভাবিক এবং নিয়মিত পদক্ষেপের পরিণাম।

৪৬ তম বিসিএস সার্কুলার প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি)। অনলাইনে আবেদন শুরু ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে। সাধারণ প্রার্থীর আবেদন ফি ৭০০/= টাকা।

এবারের বিসিএস সার্কুলারে ৩ হাজার ১৪০ জন প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান করা হবে। আবেদন করা যাবে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত।

বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনকারী প্রার্থীদের বয়স (১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে)
মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা, প্রতিবন্ধী প্রার্থী এবং বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের প্রার্থী ছাড়া অন্যান্য সকল ক্যাডারের প্রার্থীর জন্য বয়স ২১ হতে ৩০ বছর (জন্ম তারিখ: ০২.১১.২০০২ থেকে ০২.১১.১৯৯৩ এর মধ্যে)।

মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা, প্রতিবন্ধী প্রার্থী এবং বি.সি.এস. (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের প্রার্থীর জন্য বয়স ২১ হতে ৩২ বছর (জন্ম তারিখ: ০২.১১.২০০২ থেকে ০২.১১.১৯৯১ এর মধ্যে)।

বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ও বিসিএস (কারিগরি শিক্ষা) ক্যাডারের জন্য শুধু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী প্রার্থীর বেলায় বয়স ২১ হতে ৩২ বছর (জন্ম তারিখ: ০২.১১.২০০২ থেকে ০২.১১.১৯৯১ এর মধ্যে)।

প্রার্থীর বয়স কম বা বেশি হলে আবেদনপত্র গ্রহণযোগ্য হবে না।

৪৬ তম বিসিএস সার্কুলার ২০২৩: অনলাইনে আবেদনপত্র করার নিয়ম

৪৬ তম বিবিএস পরীক্ষার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করা ঠিকানা-

http://bpsc.teletalk.com.bd

www.bpsc.gov.bd

উপরোক্ত ঠিকানায় গিয়ে অনলাইন আবেদনপত্র (BPSC Form-1) পূরণ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম এবং ফি জমাদান সম্পন্ন করতে হবে।

৪৬তম বিসিএস পরীক্ষা-২০২৩ এর বিজ্ঞপ্তি, অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণের বিস্তারিত নির্দেশনা এবং নির্ধারিত BPSC Form-1 দৃশ্যমান হবে।৪৭ তম বিসিএস সার্কুলার কবে হবে?

অনলাইন আবেদনপত্র (BPSC From-1) পূ রণের বিষয়ে ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষা-২০২৩ এর আবেদনপত্র (BPSC Form-1) অনলাইনে পূরণ, sms-এর মাধ্যমে ‘ফি’ জমাদান এবং Admit Card প্রাপ্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা শিরোনামে দেয়া থাকবে।

অনলাইন ফরম পূরণের পূর্বে প্রার্থীকে উক্ত নির্দেশনা অংশটি ডাউনলোড করে প্রতিটি নির্দেশনা ভালভাবে জেনে নিতে হবে। ক্যাডার পছন্দের ভিত্তিতে Application Form-এর ৩টি ক্যাটাগরি রয়েছে।

যেমন:

(I) Application Form for General Cadres

(II) Application Form for Technical/Professional Cadres

(III) Application Form for General and Technical / Professional (both) Cadres.

প্রার্থী শুধু General Cadre এর প্রার্থী হতে ইচ্ছুক হলে General Cadre এর Application form অংশে ক্লিক করলে General Cadre এর আবেদনপত্র দৃশ্যমান হবে।

অনুরূপভাবে, General and Technical/ Professional ক্যাডারের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক হলে তাকে Both Cadre এর জন্য নির্ধারিত অংশটি ক্লিক করলে Both Cadre এর আবেদনপত্র দৃশ্যমান হবে।

প্রার্থীর কাঙ্ক্ষিত BCS Application Form দৃশ্যমান হলে ফরমের প্রতিটি বিষয় প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী পূরণ করতে হবে।

BCS Application Form-এর ৩টি অংশ রয়েছে: (I) Part-1: Personal Information; (II) Part-2: Academic Qualification; (III) Part – 3: Cadre Option.

উল্লেখ্য, BCS Application Form পূরণ সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা এবং BCS Application Form এর প্রতিটি field এ প্রদত্ত তথ্য/নির্দেশনা অনুসরণ করে পূরণ করতে হবে।

অনলাইনে আবেদন যাচাই অন্তে দাখিল করার পর কোন পর্যায়েই প্রার্থীর কোন ভুল তথ্য সংশোধনের সুযোগ থাকবে না । ৪৭ তম বিসিএস সার্কুলার কবে হবে?