ভালো ঘুমের জন্য ৬টি কার্যকরী টিপস

ভালো ঘুম রাতের প্রয়োজনীয়তা শুধু সুস্থ থাকার জন্য নয়, সারা দিন চনমনে এবং উদ্যমী থাকার জন্যও অপরিহার্য। তাই শরীরকে শিথিল করে গভীর ঘুমের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। এজন্য একটি ‘রাত্রি রুটিন’ তৈরি করা প্রয়োজন। নিউইয়র্ক সিটির স্লিপ ডিসঅর্ডার বিভাগের প্রধান গ্যারি জামিট বলেন, এই রুটিন মস্তিষ্ককে প্রতিদিন নির্দিষ্ট ঘুমের মুডে নিয়ে আসবে।

১. নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে এবং উঠতে চেষ্টা করুন, এমনকি সপ্তাহান্তেও। এটি আপনার শরীরের অভ্যস্ততার সাথে সাহায্য করবে এবং ঘুমের গুণগত মান উন্নত করবে।

২. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করলে ঘুমের গুণগত মান উন্নত হয়। তবে, ঘুমের সময়ের খুব কাছে ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

৩. সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন
রাতে ভারী খাবার এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় খাওয়া এড়িয়ে চলুন। রাতে হালকা খাবার যেমন ফল ও দুধ খাবেন। এছাড়া, জলপানও ভারসাম্যপূর্ণ রাখুন।

৪. ঘুমানোর পরিবেশ উপযুক্ত করুন
ঘুমানোর কক্ষ শান্ত, অন্ধকার এবং ঠান্ডা রাখুন। সঠিক Mattres, Pillow এবং বেড শীট ব্যবহার করুন। আপনি চাইলে সাদা শব্দ বা শান্তিপূর্ণ সঙ্গীত শুনতে পারেন।

৫. স্ক্রিনের ব্যবহার সীমিত করুন
ঘুমানোর আগে অন্তত এক ঘণ্টা ফোন, কম্পিউটার বা টেলিভিশনের স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন। স্ক্রিনের নীল আলো মস্তিষ্ককে সতর্ক রাখে এবং ঘুমে বাধা দেয়।

৬. শিথিলকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করুন
ঘুমানোর আগে ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস বা হালকা যোগা করতে পারেন। এসব পদ্ধতি আপনার মনকে শান্ত করবে এবং ঘুমে সহায়তা করবে।

এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনার ঘুমের গুণগত মান উন্নত হবে এবং আপনি আরও সুস্থ ও সতেজ বোধ করবেন।

চা নাকি কফি, কোনটি বেশি ভালো!

নাঈমুল হাসান দূর্জয়


বন্ধু মহল কিংবা বিকেলের নাস্তা, চা ছাড়া যেন জমেই না। অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতকালে এর চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়। রিক্সাওয়ালা, শ্রমিক কিংবা দিনমজুর, দিনের সকল ক্লান্তি যেন ভর করে থাকে এক কাপ চায়ে। দিন শেষে চায়ের কাপে চুমুক না বসালেই নয়। চায়ের দোকান’কে অঘোষিত পার্লামেন্ট বললেও বোধহয় ভুল হবেনা।

এই শীতের রাতে শহরে গলির মাথায়, পার্কে, রাস্তার লেনে, টংঘরে, ল্যাম্পপোস্টের নিচে, চায়ের আড্ডার জন্য অনাবদ্য। কপত-কপতি কিংবা বয়োবৃদ্ধ সকলের কাছেই চা খাওয়াটা বেশ আরামদায়ক নেশা। ‘কফি খায় বড়লোকে’গ্রম্য মানুষের মুখে এমন বুলি থাকলেও এখন কিন্তু নিম্ন-মধ্যবৃত্ত, মধ্যবৃত্ত কিংবা অত্যান্ত ধনাঢ্য পরিবার, মোটামুটি সকলের কাছেই কফির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক ‘চিকিৎসা বিদ্যা’ চা/কফি নিয়ে কী বলে…


চায়ের রাসায়নিক উপাদান

১. ক্যাফেইন (১-৪%)
২. এডিনিন
৩. থিওব্রোমিন
৪. থিওফাইলিন
৫. জ্যান্থিন
৬. গ্যালোট্যানিক এসিড
৭. ভোলাটাইল অয়েল


কফির রাসায়নিক উপাদান

১. ক্যাফেইন (১-২%)
২. ট্রাইগোনেলিন (০.২৫%)
৩. ট্যানিন (৩-৫%)
৪. সুগার (১৫%)
৫. ফ্যাটি এসিড (১০-১৩%)
৬. প্রোটন (১০-১৩%)


উপকারী দিকগুলো

চা এবং কফি দুটোই প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে কাজ করে। চা এবং কফি দুটি পানীয় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে আমাদের ইন্দ্রিয়কে জাগ্রত করে। মস্তিকের উপর বেশি কার্য়কারী হয় পরিমিত চা। চা এবং কফি দুটোই মানুষের উদ্দিপণা শক্তিকে ত্বরান্বিত করে। চা স্নায়ূতন্ত্র ঠান্ডা রাখে এবং মনে প্রশান্তি বাড়ায় অন্যদিকে কফি প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং বাড়তি প্রাণশক্তির উদয় হয়।

সমপরিমাণ চা এবং কফি পান করা মানুষদের ভিতরে কফি পান করা মানুষেরা রাতে নিদ্রাহীনতায় ভোগেন বেশি। দুটো পানীয় ডায়াবেটিকস্ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে তবে হৃদরোগে ভালো কাজ করে কফি এবং ক্যান্সার যেন না হয় সে কাজটি করেন চা। কারণ চায়ে রয়েছে এন্টঅক্সিডেন্ট। গবেষণা মতে চায়ে রয়েছে বেশি উপকারিতা। বাকিটা আপনার মর্জি…।


অপকারিতা

অতিরিক্ত চা পানের কারণে অনিদ্রা দেখা দিতে পারে। তবে কফিতে এর ভয়াবহতা আরো বেশি। চায়ে থাকা ক্যাফেইন অল্প মাত্রায় মূত্রবর্থক হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ এটি ডাই-ইউরেটিক। অনেকে মনে করেন সকালের চা ‘বড়’ কাজ সারতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত হলে উল্টো বিপরীত হবে। চায়ে থাকা ‘থিওফাইলিন’ নামক রাসায়নিক উপাদান হজমের সময় পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে, যার ফলাফল কোষ্ঠকাঠিন্য।

অতিরিক্ত ক্যাফেইন ঘুমের সমস্যা, অস্থিরতা, অস্বস্তি ও হৃদস্পন্দসন বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী। গর্ভবতী মায়েদের চা পুরোপুরি এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ চায়ের ক্যাফেইন ভ্রুণের বৃদ্ধি ব্যাহত করে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রোস্টেট ক্যান্সার, এসোফ্যাজিয়্যাল ক্যান্সারের ঝুঁকি হল অতিরিক্ত চা পানের সবচাইতে খারাপ দিক। ক্যাফেইন হৃদযন্ত্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। তাই যারা হৃদরোগে আক্রান্ত কিংবা যারা সেরে উঠেছেন তাদের চা যথাসম্ভব কম পান করাই শ্রেয়।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।