ভার্চুয়াল ট্যুরিজম: আবদ্ধ জীবনে ভ্রমণের স্বাদ

সাজু সরদার


বাংলাদেশ! বর্তমান বিশ্বে একটি বিস্ময়কর নাম। এ বিস্ময় বালিশকাণ্ড, পর্দাকাণ্ড কিংবা স্বাস্থ্যখাতের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য নিয়ে নয় বরং বর্তমান সরকারের দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা নিয়ে, বাংলাদশের অপার সৌন্দর্য ও সম্ভাবনা নিয়ে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিস্ময় আর আমাদের অহংকার। এ অহংকার নেতিবাচক বা অমূলক নয়। এ অহংকার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি অর্জনের মনোবল।

আমাদের এ অহংকার তাদের জন্য শিক্ষা যারা এদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির সাথে তুলনা করেছিলো, যারা ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে দেশকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিলো। এ অহংকার থেকে তারা শিক্ষা পায় যারা একদিন “ডিজিটাল বাংলাদেশ” ধারণাকে কটাক্ষ করেছিলো। বর্তমান সরকার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত তথ্য-প্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাকে বাস্তবে রুপদানের মাধ্যমে সকল কটাক্ষের জবাব দিয়েছে। আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা সকল শ্রেণীর মানুষের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিয়েছে।

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির ২০২০ সালের জুলাই মাসের তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৬৪ মিলিয়নের বেশি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এবং তারমধ্যে ১০৬ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ও পোস্ট-ই সেন্টার থেকে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক সেবা পাচ্ছে, স্কুল-কলেজে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইন্টারনেট সুবিধা বৃদ্ধির ফলে দেশে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্যরও প্রসার ঘটেছে।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন বাংলাদেশের অগ্রগতিতে নতুন গতি সঞ্চর করেছে। যে গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল, এক অদৃশ্য শত্রু সেই গতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সেই শত্রুর নাম করোনা ভাইরাস। যার শক্তির কাছে পুরো বিশ্ব আজ দিশেহারা। করোনা ভাইরাসের কারণে মানবজীবন থেকে শুরু করে শিল্প, সেবাসহ সকল খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত হলো পর্যটন খাত বা পর্যটন শিল্প। করোনা পরিস্থিতির কারণে সবার আগে পর্যটন খাতকে লকডাউন বা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবার সবার শেষে উন্মুক্ত করা হয়েছে বা হবে।

পর্যটন শিল্পকে ছাতার সাথে তুলনা করা হয় (Umbrella Concept)। একটি ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে যেমন আমরা বৃষ্টি কিংবা রোদ থেকে নিজেদের বাঁচায় তেমনি পর্যটন নামক ছাতাকে আশ্রয় করেই হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, পরিবহনের মতো বিভিন্ন সহযোগী খাত বেঁচে থাকে। কারণ মানুষ ভ্রমণ বা পর্যটনে বের হলেই হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, পরিবহন ইত্যাদির প্রয়োজন পড়ে। করোনার পরিস্থিতির কারণে পর্যটনখাতের পাশাপাশি উল্লেখ্য সকল অংশীদারি বা সহযোগী খাত সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব খাতের সাথে জড়িত লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দুঃসহ জীবন যাপন করছে।

আপাতদৃষ্টিতে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা ভালো মনে হলেও পর্যটন খাতে এখনো স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই এখনো কোথাও ঘুরতে যাওয়ার বদলে ঘরে থাকতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। ঘরে বসেই মানুষ এখন স্বপ্ন দেখছে পরিবার পরিজন বন্ধু বান্ধব নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাবে, কোথায় থাকবে কিংবা কোন রেস্তোরাঁয় বসে একসাথে সকালের নাস্তা কিংবা দুপুরের এবং রাতের খাবার খাবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের উপস্থিতি, বিভিন্ন অভিব্যক্তি এবং ছবি প্রমান করে করোনার এই পরিস্থিতিতে তারা ভ্রমনকে কতটা অনুভব করে এবং এই আবদ্ধ জীবনে কতটা অস্বস্তিতে আছে। তবে ভার্চুয়াল ট্যুরিজম এই আবদ্ধ জীবনের সমাধান দিয়ে কিছুটা হলেও ভ্রমনের স্বাদ বা স্বস্তি এনে দিতে পারে।

ভার্চুয়াল ট্যুরিজম একটি ইলেকট্রনিক বা অনলাইন ভিত্তিক পর্যটন কৌশল যার মাধ্যমে পর্যটকরা অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে ভিডিও বা স্থিরচিত্রের মাধ্যমে ধারণ করা দর্শনীয় স্থানগুলির সৌন্দর্য ভার্চুয়ালি উপভোগ করতে পারে, ভ্রমণ সম্পর্কিত তথ্য অর্জন করতে পারে এবং বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, ভ্রমণ সংস্থার (Travel Agency and Tour Operator) সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং ভার্চুয়ালি অনলাইন ভিত্তিক পর্যটন সম্পর্কিত সেবা গ্রহণ করতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশেই পর্যটকদের জন্য এমন ভার্চুয়াল ট্যুরের ব্যবস্থা আছে যার মাধ্যমে পর্যটকরা ঘরে বসেই কোন দর্শনীয় স্থানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে কিংবা প্রত্যক্ষ ভ্রমনের পূর্বেই পর্যটকরা ভ্রমণ স্থান এবং থাকার স্থান (হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট) ঘুরে দেখতে পারে।

করোনাকালে ভ্রমনপ্রিয় মানুষেকে চীন মহা প্রাচীর, পেরু মাচুপিচু ও জর্ডান পেত্রার সৌন্দর্য ভার্চুয়ালি উপভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ হলেও বিস্ময়করভাবে বাংলাদেশে ভার্চুয়াল ট্যুরিজমের সকল উপাদান যেমন- ডিজিটাল ডিভাইস, ইন্টারনেট সংযোগ, ভ্রমণ এবং প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ বা উন্মাদনা বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ভার্চুয়াল ট্যুরিজমের তেমন কোন সুবিধা দেশে নেই বললেই চলে। ২০১৭ সালে তরুণ দম্পতি সফটওয়্যার প্রকৌশলী নাসির খান ও মুন রহমানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাঙালী জাতিসত্তা, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তির ঠিকানা, বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটিকে ভার্চুয়াল ট্যুরের (https://tour.bangabandhumuseum.org.bd/) আওতায় নিয়ে আসেন।

সরকারি পর্যায়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরকে প্রযুক্তি বান্ধব করার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের সহযোগিতায় ভার্চুয়াল ট্যুরের (https://vt.bnm.org.bd/) সুবিধা চালু করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ও বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরের ভার্চুয়াল ট্যুরের সুবিধা এখনো বিদ্যমান। যাদুঘর দুটির ভার্চুয়াল ট্যুর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে যে কেঊ যাদুঘরের যে কোনও গ্যালারী বা স্থান দেখতে পারবে। বাংলাদেশের কিছু তারকা মানের হোটেলেও ভার্চুয়াল ট্যুরের সুবিধা চালু আছে। যার মাধ্যমে অতিথিরা হোটেলের সেবা গ্রহনের পূর্বেই উক্ত হোটেলের সুযোগ সুবিধাগুলো সম্পর্কে অবগত হতে পারে। ভার্চুয়াল ট্যুরকে প্রচার-প্রসারের কৌশল হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। ভার্চুয়াল ট্যুরের মাধ্যমে কোন দর্শনীয় স্থান, হোটেল, মোটেল কিংবা রিসোর্টের সৌন্দর্য ও সুযোগ সুবিধা উপস্থাপন বা প্রচার করে পর্যটক কিংবা অতিথিদের আকৃষ্ট করা যায়। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের সেবার প্রতি পর্যটকদের বিশ্বাস জন্মে এবং তারা ভ্রমণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বৃদ্ধি বা প্রসারে ভূমিকা রাখে।

ভার্চুয়াল ট্যুরিজম সুবিধায় দর্শনীয় স্থানের উচ্চ রেজ্যুলেশনের ভিডিও বা স্থিরচিত্র ধারণ করা হয় যা দেখার জন্য পর্যটকদের উচ্চগতির মানসম্মত ইন্টারনেট সংযোগ ও স্মার্ট ডিভাইসের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে স্মার্ট ডিভাইসের স্বল্পতা বা সমস্যা না থাকলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক আছে। যে দেশে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য শিক্ষার্থীদের গাছে কিংবা পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে হয় (ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা) সে দেশে এমন বিতর্ক থাকা স্বাভাবিক। তবে মানসম্মত ইন্টারনেট সমস্যার সমাধান করে ভার্চুয়াল ট্যুরিজম সুবিধা চালুর মাধ্যমে পর্যটন খাতের নতুন দ্বার উন্মোচন করা যায়। এর ফলে পর্যটকরা যেমন আবদ্ধ জীবনে বা স্বাভাবিক সময়ে (New Normal) ভ্রমণের স্বাদ পাবে, তেমনি ভ্রমণের পূর্বেই কোন দর্শনীয় স্থানের সৌন্দর্য ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অবগত হয়ে উক্ত স্থান ভ্রমণ করতে পারবে।

যার মাধ্যমে পর্যটক ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্থাপিত হবে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক এবং পর্যটন শিল্প হবে আরো সমৃদ্ধ। পর্যটন শিল্পের সমৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যয়ে মুজিব বর্ষেই ভার্চুয়াল ট্যুরিজমের দ্বার উন্মচনের মাধ্যমে “মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, নতুন করে পর্যটনের খুলবো দ্বার” এবং “ডিজিটাল বাংলাদেশ” স্লোগান দুটি সার্থক ও সফল হয়ে উঠুক।

সাজু সরদার
শিক্ষক
ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

ইবি তারুণ্য’র আনন্দ ভ্রমণ

ফয়সাল মাহমুদ নয়ন, ইবি


সকাল ৭ টায় টুংটাং এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। উঠে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। সবাইকে ৮ টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। সবাই এক হয়ে সকালের নাস্তা সেরে বাসে উঠে রওনা দিলাম।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তারুণ্য’র আনন্দ ভ্রমণ। গন্তব্য যশোরের ঝাপা বাওর এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি ও মধুমেলা পরিদর্শন। বাস ছেড়ে দিয়েই সাউন্ড বক্সে বিভিন্ন গান শুরু হলো। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি খেজুর গাছকে অতিক্রম করে গানের তালে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলছে বাস।

দুপুর দেড়টার দিকে পৌঁছে গেলাম ঝাপা বাওরে। দুপুরের খাবার সেরে সবাই চললাম বাওর এর দিকে। নদীর মাঝখানে দিয়ে পানি ছুই ছুই এক সেতু, লোহার পাটাতন দিয়ে বানানো। জোরে হাটলে একটু হালকা দোলে। নদীর পাশ দিয়ে সারি সারি নারিকেল গাছ হাজার গুণে বাড়িয়ে তুলেছে নদীর সৌন্দর্য। নৌকা দিয়ে অনেক পর্যটক দুরে থেকে ঘুরে আসছে।

ঝাপা বাওর কে স্বাক্ষী রেখে ‘তারুণ্য’ টিম গ্রুপ ছবিতে আবদ্ধ হলাম। নির্দিষ্ট সময় বেধে দেওয়ার জন্য ঝাপা বাওর থেকে প্রস্থান করতে হলো। পথিমধ্যে হঠাৎ গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলো। অগত্যা সবাইকে নেমে অপেক্ষা করতে হলো। পাশে একটা বাড়ি ছিলো তারা আমাদের দেখে যথেষ্ট সমাদর করল এবং দুই জগ খেজুরের রস খেতে দিলো।এমনকি তারা রাতে আমাদের খাওয়ার ব্যাবস্থা করতে চাইল। অচেনা এতোগুলো মানুষকে কিছুটা সময়ের জন্য তারা এতোটা আপন করে নিতে পারে তা প্রত্যক্ষ না করে কাউকে ভালো বোঝানো সম্ভব না।

এই সুযোগে আমরা কুইজ পর্ব সেরে নিলাম এবং আমি সৌভাগ্যক্রমে ২য় স্থান অধিকার করলাম। পাশেই যশোরের মনিরামপুর বাজারে সবাই মিলে একটু ঘুরে আসলাম এবং নতুন এক অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম, কলা এখানে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে! এক কেজি ৪০ টাকা। কেজিতে ১৭-১৮ টা উঠছে। এর আগে কখনো এভাবে কলা কেনা হয়নি। প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টা পর রাত ৮ টার দিকে আমরা দ্বিতীয় গাড়ির ব্যাবস্থা করে মধুমেলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম।

ফিরতে দেরি হবে সেই কথা চিন্তা করে আব্দুল গফুর গাজী স্যার (তারুণ্যের উপদেষ্টা) আমাদের ৩০ মিনিট সময় দিলেন মেলা ঘুরে যেন বাসের কাছে থাকি সবাই। আমরা প্রথমে মধুসূদন জাদুঘরে প্রবেশ করে মধুসূদনের জীবন বৃত্তান্ত দেখলাম। তার স্ত্রীর ছবি, পত্র, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কে বিলেতে থাকা অবস্থায় পাঠানো পত্র সহ অনেক ঐতিহাসিক জিনিসপত্র অবলোকন করলাম।

পরে মেলায় কিছুক্ষণ ঘুরে দেখলাম, বড় বড় মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, কসমেটিকস, সার্কাস, গাড়ি খেলায় মগ্ন হয়ে গেলাম সবাই। দেরিতে যাওয়ায় গেট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মধুসূদন এর বাড়িতে ঢুকতে পারলাম না আমরা। মেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মধুসূদন দত্তের সেই চিরচেনা ‘কপোতাক্ষ নদ’। মনে পড়ে গেলো সেই বিখ্যাত লাইন, সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে!

ঠিক ১০ টায় আমরা মধুমেলা থেকে প্রস্থান করলাম ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে বাসের ভিতরেই লটারি হলো, অনেকেই পুরষ্কার পেলো। আমি তারুণ্য লাইব্রেরির বুক রিভিউয়ে একটি পুরষ্কার এবং কুইজে ২য় স্থান অধিকার করায় আরেকটি পুরষ্কার অর্জন করলাম। ততক্ষণে আমরা ক্যাম্পাসের কাছাকাছি চলে এসেছি। সারাটাদিন যেন স্বপ্নের মত কেটে গেলো, স্মৃতির পাতায় স্মরনীয় হয়ে থাকার মত একটি দিন!

ভ্রমণ কাহিনী লেখার গুরুত্বপূর্ণ ১০ টিপস

ভ্রমণ টুডেঃ ব্লগ, ফিচার ম্যাগাজিন বা অন্য কোথাও ছাপানো না হলেও নিজের ডায়েরিতে তুলে রাখতে পারেন। কিন্তু গৎবাঁধা গল্প লিখে গেলে পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। কিছু ধাপ মেনে লিখলেই ভ্রমণ কাহিনী হবে আকর্ষণীয় ও পাঠযোগ্য। জেনে নিন ভ্রমণ কাহিনী লেখার ১০ টিপস।

পরিষ্কার কাহিনীসূত্র: ভ্রমণ নিজেই একটি গল্প হতে পারে না। বরং ঘটনাবলীর ধারাবাহিকতা মাত্র। কোনো কোনো ঘটনা মজার আবার কোনোটা নাও হতে পারে। লেখার সময় সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন কোন ঘটনা আপনি বলতে চান এবং কোন ঘটনাবলী গল্পে তুলে ধরবেন। সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন ও ওয়েবসাইটে কোন ধরনের ভ্রমণ কাহিনী প্রকাশ হয় দেখে নিতে পারেন। প্রথমে নিজের মতো করেই লিখে ফেলুন। তারপর প্রয়োজনমতো সম্পাদনা ও সংক্ষিপ্ত করে নিন।

লক্ষ্য: কিছু ভ্রমণে আপনার শারীরিক উপস্থিতির বর্ণনা (কোনো পর্বতের চূড়ায় ওঠা, বিশাল নদী পার হওয়া ও বাঘ দেখা) থাকবে যেগুলো কাহিনীকে নির্দেশনা দেয় এবং একটি উদ্দেশ্য থাকে। এতে পাঠক গল্পের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকে। কারণ তারা জানতে চায় লক্ষ্য অর্জিত হবে কিনা।

অভিজ্ঞতার কাঁটছাঁট: কাহিনীর চরিত্রের কথোপকথন, গতি, উদ্বেগ ও নাটকীয়তা থাকে। এ উপকরণগুলো পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখার মতো করে আনতে হবে ও সাজাতে হবে। ভ্রমণ কাহিনী এক থেকে দুই হাজার শব্দের মধ্যে লিখুন। প্যারা থাকবে ১০-২০টি।

প্রথম প্যারা হবে আকর্ষণীয়: পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এমন কোনো ঘটনা দিয়ে শুরু করতে পারেন। কোনো নাটকীয় ঘটনা, কৌতুক, কথোপকথন বা এই তিনের সমন্বয়েও কাহিনী শুরু করা যায়। তবে প্রথম বাক্যে পাঠক ধরার ফাঁদ থাকতে হবে।

কথোপকথন: কথোপকথন ঘটনাস্থলকে জীবন্ত করে। ভ্রমণ সঙ্গীদের ব্যক্তিত্বকে গল্পে জায়গা দিন। কথোপথনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গল্পে তুলে ধরতে পারেন। যখন আপনি ঘুরতে যান সেখানকার লোকজন কী বলছে ও কীভাবে বলছে তার নোট নিতে পারেন।

দেখানো ও বলা: প্রত্যেক গল্পেই দেখানো ও বলা দুটো কৌশলই ব্যবহার করা হয়। কোনো চিন্তা না করেই আপনি এই কৌশল ব্যবহার করতে পারেন। যখন আপনার ঘটনার গতি কমিয়ে দেবেন এবং কোনো দৃশ্যের বিস্তর বর্ণনা দেবেন তখন তাকে দেখানো বলা হয়। আপনি কী দেখেছেন, শুনেছেন, অনুভব করেছেন- সেগুলো পাঠককে আপনার চোখ দিয়ে দেখাচ্ছেন। ঘটনার সঙ্গে বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে বলা।

আনন্দ দেওয়া, প্রভাবিত করা নয়: নতুন লেখকরা প্রায়ই সাহিত্যিক ভাষায় লেখার চেষ্টা করেন। ভালো লেখকরা সাধারণত আর্নেস্ট হেমিংওয়ের উক্তি অনুসরণ করে থাকেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি কী দেখেছি ও কী অনুভব করি সেটাই সেরা ও সহজ উপায়ে কাগজে লিখে ফেলি। ’ তার মানে এই নয় যে আপনি হাস্যরস ও পরীক্ষামূলক কিছু তুলে ধরতে পারবেন না। তবে পাঠকের অবোধ্য কিছু লিখবেন না।

স্পষ্ট ভাষা: ভ্রমণ কাহিনীতে সাধারণত অর্থপূর্ণ শব্দ ও বাক্যাংশ থাকে। সুনির্দিষ্ট কোনো ভাষা ব্যবহারের চেষ্টা করুন। যে ভাষায় আপনি বর্ণনা করছেন সেটা যেন পাঠকের মনের চোখে ছবির মতো ফুটে উঠে।

পথ নির্দেশ: নতুন কোনো জায়গা বা দেশে ঘুরতে গেলে গাইডবই না নিয়ে গেলে সাধারণত পথ নির্দেশক ফলক অনুসরণ করা হয়। আপনার গল্পের মাধ্যমে পাঠকও সেই জায়গা ভ্রমণ করেন। প্রত্যেক প্যারাতে তাদেরকে জানিয়ে রাখুন এরপর আপনি কোথায় যাচ্ছেন। আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্য তাদের মনে করিয়ে দিন।

অবশেষে লেখা শেষ করতে সময় নিন: অধিকাংশ ভ্রমণ কাহিনীই দ্রুতগতির ট্রেনে হঠাৎ ব্রেক কষার মতো করে শেষ হয়। পড়া শেষে পাঠক দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন। তাই শেষ প্যারাটি লেখার ক্ষেত্রে সময় নিন।

দ্য ক্যাম্পাস টুডে