বৃদ্ধ বয়সে মা বাবা প্রতি সন্তানদের করণীয়

শফিকুল ইসলাম


ছেলে আমার মস্ত মানুষ,মস্ত অফিসার
মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার।
নানান রকম জিনিস, আর আসবাব দামী দামী
সবচেয়ে কম দামী ছিলাম একমাত্র আমি।
ছেলের আমার,আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম!

পৃথিবীতে প্রায় বেশিরভাগ পরিবারে শেষ বয়সে অবহেলার শিকার হন বাবা-মা। কিন্তু কেন এই অবহেলা, কেন তাদের হেয় করা? অতি স্নেহ-আদরে যাদের বড় করে তুলেন, তারাই কেন তাদের দুঃসময়ে বৃদ্ধাশ্রমের ঠিকানা দেখান।

নিজে কষ্ট করে যে বাবা তার ছেলের খরচ চালিয়ে যান দিনের পর দিন, সেটাই কি ছিল তার অপরাধ? বছরের পর বছর যে বাবা পুরনো শার্ট, প্যান্ট পরে অফিস করে ছেলের পরীক্ষার খরচ চালিয়ে যেতেন, নিজে না খেয়ে ছেলেকে টাকা পাঠাতেন, যাতে সে অন্য বন্ধুদের কাছে ছোট না হয়, সেটা হয়তো ছিল বাবার অপরাধ।

যে বাবা-মা এক সময় নিজে না খেয়েও সন্তানের মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন, তারা আজ কোথায় আছেন, কেমন আছেন, তাদের খোঁজখবর নেয়ার সময় আমাদের নেই। তার নিজের সন্তানও হয়তো একদিন তার সঙ্গে এমন আচরণই করবে। বিভিন্ন উৎসবে, যেমন ঈদের দিনেও যখন তারা তাদের সন্তানদের কাছে পান না, সন্তানের কাছ থেকে একটি ফোনও পান না, তখন অনেকেই নীরবে অশ্রুপাত করেন আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।

আজ আমরা চাকরি করি, ব্যবসা করি, প্রতিষ্ঠিত হচ্ছি, সুনাম কুড়াচ্ছি। তারপর বিয়ে করে নতুন সংসার নিয়ে আলাদাভাবে থাকছি। অন্যদিকে বৃদ্ধ মা-বাবা কী করছেন, কী খাচ্ছে, কোন জটিল ও কঠিন রোগে ভুগছেন সেদিকে বিন্দুমাত্র কোনো খেয়াল নেই আমাদের। শুধু নিজের স্ত্রী এবং সন্তান নিয়ে কীভাবে চলব সেটা ভেবে থাকি।

কোরআনের কথাও কি আমরা ভুলে গেছি, যেখানে আল্লাহতাআলা বলেছেন, ‘মা বাবার অবাধ্য সন্তান হাশরের ময়দানে আরশের নিচে জায়গা পাবে না। যেখানে সূর্য থাকবে অর্ধহাত উপরে।’

একদিন মাকে আমার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আজ মা বৃদ্ধ হয়ে গেছে তাই মায়ের কোন প্রয়োজন নেই। মনে রাখতে হবে আমি আজ যুবক, কারো হয়তো আমাকে প্রয়োজন আছে, কিন্তু আমিও একদিন বৃদ্ধ হব। তখন আমি কারো প্রয়োজনে নাও আসতে পারি, সেই দিন আমার অবস্থান কোথায় হবে…। হয় বৃদ্ধাশ্রম না হয় রাস্তার পাশে।

কিন্তু এ জীবন আমরা কেউই চাই না, তাই আমাদের উচিৎ মা দিবসে আমাদের এ শিক্ষা নেয়া যে, মা আমাদেরকে ভালোবাসা দিয়ে শিশু অবস্থায় লালন পালন করেছেন, আমরাও যেন মাকে সেইরূপ ভালোবাসা দিয়ে মায়ের মন জয় করতে পারি।

আমাদের কারো মা যেন আর বৃদ্ধাশ্রমে না যায়,পথে পথে ঘুরতে না হয় জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে। বৃদ্ধাশ্রমের একটি সিটও যেন আর আমার-আপনার মায়ের জন্য বরাদ্দ না হয়। মায়ের স্থান যেন হয় আমাদের হৃদয়ে।

প্রত্যেক সন্তানের উচিত মাতা-পিতার প্রতি তাদের যে কর্তব্য তা সঠিকভাবে পালন করা এবং সব সময় তাদের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা।পৃথিবীর সকল ধর্মেই পিতা-মাতা’কে সম্মানের সর্বোচ্চ জায়গায় আসীন করা হয়েছে। আমাদের সকলকেই মনে রাখতে হবে অকালমৃত্যু না হলে একদিন আমরাও বার্ধক্যে উপনীত হব। আমরা আমাদের পিতা-মাতার সাথে যেরূপ আচরণ করবো বার্ধক্যের সময় আমাদের সন্তানরাও সেরূপ আচরণ আমাদের সাথে করতে পারে।

প্রসঙ্গত, সালেমুন নেছা’দের মতো অসহায় মায়েদের প্রতি রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব রয়েছে। একজন সন্তান কৃতজ্ঞতা ও কর্তব্যের মাথা খেয়ে বৃদ্ধ পিতা-মাতা কে দূরে ঠেলে দিতে পারে। কিন্তু একটি দেশের নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্র তার মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে না। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা পাওয়া তাদের সাংবিধানিক অধিকার। রাষ্ট্রকে তাদের সেই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

প্রয়োজনে আইন করতে হবে কোনো সন্তান যেন পিতা-মাতা’কে অবজ্ঞা করতে না পারে এবং বৃদ্ধ বা অসহায় পিতা-মাতা’দের বাধ্যতামূলক ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা।আমরা যখন নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত, তখন এটা মাথায় রাখতে হবে যে, আমাদের বাবা-মাও আস্তে আস্তে বৃদ্ধ হচ্ছে। মানুষের বয়স যতই বাড়ে, সে মনের দিক থেকে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ে। আমাদের তো সময় কাটানোর জন্যে কতো বন্ধু বান্ধব, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি রয়েছে। তাঁদের আমরা ছাড়া কে আছে?

আমাদের প্রত্যেকটা বিষয় তাঁরা খেয়াল রাখে, আমাদেরও তো উচিত তাঁদের বিষয়গুলো খেয়াল রাখার পাশাপাশি তাদের একটু সময় দেয়া।
হ্যাঁ, আমরা অনেক বেশী ব্যস্ত, কিন্তু আমরা চাইলেই একটু সময় বের করতেই পারি তাদের জন্যে। মা- বাবাকে খুশি রাখা, তাদের সময় দেয়া, তাদের ইচ্ছার প্রাধান্য দেয়া এগুলো আমাদের দায়িত্ব।

দিনের শেষে বাসায় ফিরে আসার সময় মা-বাবার জন্য সামান্য কিছু নিয়ে আসুন, দেখবেন তারা কতটা খুশি হয়। পরিবারের সিদ্ধান্ত এবং ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করুন, তাদের পরামর্শ নিন। এতে তাঁরা আর নিজেদেরকে অসহায় মনে করবে না। তাঁরা ভাবতে পারবে, তাঁদের ইচ্ছা, পরামর্শকে আপনি এখনো কতো প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

ছুটির দিন সবারই থাকে। তাদের ছুটির দিনে তাদের একটু বেশী সময় দিন। তাদের পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াতে পারেন, তাদের নিয়ে বাইরে কোথাও ঘুরে আসতে পারেন।
বাবা – মা চান, তাঁদের সন্তান উচু কোনো পর্যায়ে যাক, তবে তাঁরা আপনাকে কখনো একেবারেও হারাতে চান না। আপনি প্রচুর টাকা উপার্জন করে বাবা-মাকে সব দিক দিয়ে খুশি রাখার চেষ্টা করলেন কিন্তু তাদের সময় দিলেন না, এতে তারা কখনোই খুশী থাকবে না। আপনার সান্নিধ্য তাদেরকে অন্যসব কিছু থেকে বেশী খুশী রাখতে পারবে। এতে আপনি নিজেও খুশী থাকতে পারবেন।

আপনি সারাদিন সময় দিতে না পারলেও মা-বাবাকে একা সময় কাটাতে দিবেন না। এতে তারা মানসিকভাবে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই তাদের ছোটখাটো কাজে উৎসাহিত করতে পারেন।
অনেক পরিবার আছে, যারা স্বামী-স্ত্রী দুইজনই চাকুরি করেন। তারা ভেবে পান না কীভাবে সময় দিবেন মা-বাবাকে। দিনের শেষে এসে হলেও একটু সময় দিবেন তাদের। একটু চা করে এনে, মা-বাবার সাথে গল্প করতে পারেন।
এছাড়া বাইরে থাকলেও দিনে ২/১ বার ফোন করে খোঁজখবর নিতে পারেন।

তাঁদের বিশেষ দিনগুলো মনে রাখুন এবং ছোটখাটো সারপ্রাইজ দেয়ার চেষ্টা করুন। এতে, তাঁরা যে আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তাঁরা বুঝতে পারবে। অনেকেই সময় থাকতে বুঝতে চায় না ব্যাপারগুলো। কিন্তু একটা সময় যখন তাদের খালি চেয়ারটা চোখের সামনে দেখতে হয়, তখন ঠিকই বুঝে যায় যে, তাঁরা কি ছিলো।

লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যলয়।

আমিও একদিন ঘুম থেকে উঠে শুনি, আমার বাবা-মা-ভাইসহ কেউ নেই

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতিমদের উদ্দেশে বলেছেন, আমিও একদিন ঘুম থেকে উঠে শুনি আমার বাবা-মা-ভাইসহ কেউ নেই। তোমরা যারা এতিম, তাদের ব্যথা আমরা বুঝি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট শহীদদের স্মরণে আজ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজ কল্যাণ অধিদফতর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এবং আমার ছোট বোন শেখ রেহানা সব সময় তোমাদের মতো এতিম এবং অসহায়দের কথা ভাবি। এজন্য তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কিভাবে দেয়া যায় আমরা সে চিন্তা করি। তাদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা বাস্তবায়ন করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের জীবনে তোমরাই সবচেয়ে আপনজন। এজন্য আমাদের পরিবারে যে কারো জন্মদিনে আমরা বাইরে বড় করে কোনো অনুষ্ঠান না করে তোমাদের মত এতিমদের কাছে আমরা মিষ্টি ও খাবার পাঠাই।

মা

মুহম্মদ সজীব প্রধান


মায়ের হাতের পরশ যেনো স্বর্গতুল্য সুখ,
দেখলে তার বদনখানি দূর হয় শত দুঃখ।
সুখে, দুঃখে কেবল তিনি সবার চেয়ে আপন,
রাতিদিনি খোকা নিয়ে তার কতনা স্বপন!

রাত্রি এলে মা যে থাকে দাঁড়িয়ে দ্বারে,
কখন আসবে খোকা মোর ঘরেতে ফিরে।
খোকার গায়ে কভু যদি একটু জ্বরও আসে,
সারারাত্র থাকে মা খোকারই পাশে।

শিক্ষা-দীক্ষায়, কাজে-কর্মে মা যে জীবনপ্রভা,
মায়ের স্নেহ পরশ ছাড়া জীবন প্রদীপ নেভা।
লেখাপড়া শেষে খোকা হলে মহামানব,
মায়ের মুখে ফোটে হাসি, চোখে স্বপ্নের অণর্ব।

ডাকবি কারে মা

অ্যাডভোকেট আশরাফুল ইসলাম


ডাকবি কারে মা ওরে মন,
আসবোনা সে তো আজীবন।
ওপারে তার ডাক পড়েছে,
মাতো আমার চলে গেছে।

আমি ছিলাম তার নয়ন মনি,
সেতো ছিল স্নেহের খনি।
কষ্টটা কি জানতাম না,
তাকে কভু ছাড়তাম না।

সারাদিন তার আঁচল ধরে,
ঘুরতাম শুধু ধারে ধারে।
একটু চোঁখের আড়াল হলে,
জবাব নিতো ‘কোথায় ছিলে’।

আজ আর কেউ নেয়না খবর,
আজ আর নেই দয়ার সাগর।
এই হাতে তারে করেছি দাফন,
পাবিনা মা আর আজীবন।


লেখকঃ অ্যাডভোকেট আশরাফুল ইসলাম, জজ কোর্ট, পঞ্চগড়।

“ভালোবাসা দিবস” হোক সকল মায়ের উদ্দেশ্যে

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


ভালবাসা দিবস মানে কি শুধুই প্রেমিক-প্রেমিকার একে অপরের প্রতি ভালবাসা প্রকাশের দিন? কিন্তু দুঃখের বিষয় ভালোবাসা দিবসের কথা এলে আমরা সকলে এক বাক্যে ধরেই নিই- দিনটি বুঝি কেবলই প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রী কিংবা ভালোবাসার মানুষটির জন্য বলা হয়েছে। অবশ্য এটা ঠিক, ভালোবাস বা ভালোবাসা দিবস ১৪ ফেব্রুয়ারির জন্যই নয়, শুধু স্বামী-স্ত্রী; কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকার জন্যও নয়, এটা সার্বজনীন, সেই সাথে সারা বছরের জন্যই।

১৪ ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে একটু আয়োজন করে জানানো ছাড়া আর কিছুই নয়। তাহলে সার্বজনীন হলে এ দিবস নিয়ে সকল আয়োজন বা প্রচার কেবল প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে কেন? এখানে তো বাবা-মা, ভাই-বোনও আসতে পারেন। বিশেষ করে মা’কে বাদ দিয়ে ভালোবাসা উদযাপন করাটাই বা কেমন হয়? তাছাড়া বাবা-রা কেন ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত থাকবে।

তবে এ নিয়ে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করতে পারেন যে, মা’র জন্য তো মা দিবস রয়েছে। থাকুক। তবুও আসুন এবারের ভালোবাসা দিবসের আয়োজনে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সঙ্গে উপহার দিতে পারেন বাবা-মাকেও। ভালোবাস দিবস উপলক্ষে মা-বাবকে নিয়ে বেড়াতে যেতে পারেন বা খেতে যেতে পারেন।

প্রিয় মা, এই সুন্দর পৃথিবীতে ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য একমাত্র মা। তিনি কত-রাত না ঘুমিয়ে আমাদের বুকে জড়িয়ে বসে ছিলেন। কত-দিন নিজে ক্ষুধার্থ থেকেও না খেয়ে আমাদের মুখের খাবার তুলে দিয়েছেন। সন্তান একটুখানি ব্যথা পেলে ভিজে উঠেছে তার চোখ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অভিনেতার মতো মুখ বুঝে সব সহ্য করেও কখনো যদি জিজ্ঞেস করা হয় কেমন আছো মা? তিনি উত্তর দিবেন ভালো আছি । পৃথিবীর সব ভালোবাসা তুচ্ছ হয়ে যায় মায়ের হৃদয় কেঁপে ওঠা এই ভালোবাসার কাছে। সেই মা কে ভালো রাখতে আমরা কিছু প্রয়াস করতে পারি। এই ভালোবাসা দিবসে প্রিয় মানুষ গুলোকে একসাথে করে তাকে সারপ্রাইজ দেয়া যেতে পারে। তার প্রিয় রং এর একটি শাড়ি কিনে আনতে পারেন। প্রিয় মা-এর জন্য আপনি যাই কিনে থাকেন আপনার দেয়া সব কিছুই মা-এর কাছে অনেক মূল্যবান ।

প্রতিটি “ভালোবাসা দিবস” হোক প্রিয় মা-দের ঘিরেই। পৃথিবীতে যদি কেউ বেশি ভালোবাসে তিনি হচ্ছেন মা। তাই, চলুন এবারের ভালোবাসা দিবসটি পালন হোক সব মায়ের উদ্দেশ্যে।