যবিপ্রবিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মাতৃভাষা দিবস পালিত

ওয়াশিম আকরাম, যবিপ্রবি প্রতিনিধি


বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একুশের প্রথম প্রহরে পুস্পস্তবক অর্পণ, দ্বীপ-শিখা প্রজ্জ্বালন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রভাতফেরিসহ নানা কর্মসূচিতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়েছে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের কর্মসূচি শুরু হয় রাত নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দ্বীপ-শিখা প্রজ্জ্বালনের মাধ্যমে। এরপর একুশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কবিতা, গান ও নাটক পরিবেশন করেন।

পরে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের সকল বড় ঘটনার অনুপ্রেরণা ছিল ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট। তাই এ দিনটি আমাদের কাছে এতো গুরুত্বপূর্ণ।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ আব্দুল মজিদ, ডিনস কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোঃ আনিছুর রহমান, যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: ইকবাল কবীর জাহিদ, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারি, কর্মচারী সমিতির সভাপতি এস এম সাজেদুর রহমান, যবিপ্রবির ছাত্রলীগ নেতা আফিকুর রহমান অয়ন, সোহেল রানা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো: মীর মোশাররফ হোসেন। ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দপ্তরটির সহকারী পরিচালক এস এম সামিউল আলম ও ফারহানা ইয়াসমিন।

আলোচনা সভা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান শেষে একুশের প্রথম প্রহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগসমূহ, দপ্তরসমূহ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, যবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

এদিকে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার প্রত্যুষে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধনমিতকরণ করা হয়। এরপরে সকাল সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে প্রভাতফেরি বের করে। এতে নেতৃত্ব দেন যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন।

বাদ জুমা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে ভাষা শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মো: আকরামুল ইসলাম।

মর্যাদার সহিত তিতুমীর কলেজে ভাষা দিবস পালিত

আরাফাত হোসেন, জিটিসি


একুশ মানে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শপথ, একুশ মানে অহংকার, একুশ মানে তারুণ্যের জয়গান। হেলায় খেলায় মাতৃভাষা বাংলাকে প্রায়শই অবজ্ঞা করা হচ্ছে। বাংলাকে যত্রতত্রভাবে ব্যবহার করে মায়ের ভাষার অমর্যাদা করা হচ্ছে। এজন্য মাতৃভাষা ও ভাষা শহীদদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।

২১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এদিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে তিতুমীর কলেজের শহীদ বরকত মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় বক্তব্য আরও জানান, শুধু শহীদদের বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেই দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। ৫২’ এর শহীদের রক্তের মূল্যায়ন করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষার কদর ও মর্ম উপলব্ধি করতে হবে।

ভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ সভায় অনুষ্ঠানের আহবায়ক অধ্যাপক কামরুন নাহার মায়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আশরাফ হোসেন বলেন, শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে আমাদের পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হলেও সংস্কৃতি, ভৌগোলিক অবস্থানসহ সকল দিক থেকে আমরা ছিলাম আলাদা। তার সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানিরা আমাদের শুধু শোষন করে চেয়ছিলো। তারা চেয়েছিলো তাদের সংস্কৃতি, ভাষা আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে। কিন্তু এদেশে ছাত্র সমাজ, এদেশে সাধারণ মানুষ তা হতে দেয় নি। রক্ত দিয়ে তাদের সেই আগ্রাসনে জবাব দিয়েছি আমরা।

আলোচনা সভায় ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান স্মরণ করে উপাধ্যক্ষ মোসা. আবেদা সুলতানা বলেন, রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সব সময় পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের নজরদারিতে থাকায় এবং জেলে বন্দি থাকায় ভাষা আন্দোলনে তার অবদানকে সেভাবে তুলে ধরা হয় না। কিন্তু তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ।

এদিন অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিপন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়ল।

ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কলেজের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শিক্ষক শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীরা।

মায়ের ভাষার অবক্ষয় নিয়ে তারুণ্য ভাবনা

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারসহ ভাষা শহীদদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ফিরে পেয়েছি। যার মাধ্যমে সাবলীল ভাবে আমরা মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি। এমনি হাজারো ভাবনা ও অনুভুতি থাকে বাংলা ভাষা-ভাষীদের মনে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের কিছু ভাবনা তুলে ধরেছেন আজাহার ইসলাম,ইবি।



কালের পরিক্রমায় শৈশবে বলা আমার সেই বাংলা ভাষার বর্ণমালা আজ কেমন আছে? তা আজ ভাববার সময় এসেছে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বাংলা ভাষার ব্যবহার যেন জগা-খিচুড়ির ভাষায় রূপ নিয়েছে। বাংলার সঙ্গে ইংরেজি মিশিয়ে না বলা নিত্য অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ ভাষা আজ হুমকির মুখে। তাই ভাষার ভবিষ্যতের শঙ্কা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। এই শঙ্কার অন্যতম কারণ সাহিত্যের প্রতি বিমুখতা। যে সময় তরুণ প্রজন্মের কবিতা, প্রবন্ধ পড়ার কথা, তখন তারা ইংরেজি সিনেমা, হিন্দি সিরিয়ালে মত্ত। বাংলা ভাষার মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হলে বর্তমান প্রজন্মকে সাহিত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নচেৎ কালের পরিক্রমায় আমাদের ভাষা হারিয়ে যাবে।


ওয়াহিদা খানম আশা, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ইবি।



মাতৃভাষা দিবসে আবদুল গাফফার চৌধুরীর রচনায় একুশের গান (আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো….) শুনে আমরা ভাষা শহীদদের এবং মাতৃভাষাকে সম্মান দিতে শিখিয়েছে। ভালোবাসতে শিখিয়েছে। ভাষা একটি জাতির পরিচয় বহন করে। কিন্তু আজ মাতৃভাষা অর্জনের ৬৮ বছর পেরিয়েও ভাষা ব্যবহারে বিপন্নতা দেখে হতাশায় ডুবে যাই।

বর্তমান সময়ে অভিভাবকেরা পশ্চিমা সংস্কৃতিকে অনুসরণ করে নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষাকে তুচ্ছ হিসেবে তুলে ধরছে। ভাষার মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রাখতে অভিভাবকদের ভূমিকা অপরিসীম। তাই সর্বপ্রথম অভিবাবকদের বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে ছেলেমেয়েদের মাতৃভাষার প্রতি অনুপ্রণিত করে শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করাতে হবে। তবেই আমাদের ভাষা তার যথাযোগ্য মর্যাদা পাবে।


শৈবাল নন্দী হিমু, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ইবি



ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির আত্মত্যাগের মাস। শ্রদ্ধার আর অহংকারের মাস। পৃথিবীর বুকে একমাত্র বাঙালিরাই মাতৃভাষার জন্য রক্তে রঞ্জিত করেছিল রাজপথ। ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলো দামাল ছেলেরা। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা মায়ের ভাষায় প্রাণ খুলে অনুভুতি প্রকাশ করতে পারি। ভাষা সভ্যতা সংস্কৃতি আত্নপরিচয় বহন করে। কিন্তু আজকের তরুণ প্রজন্মের পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে বাংলা ভাষা তার যথাযথ মর্যাদা হারাতে বসেছে। বায়ান্নর চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজন তরুন প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা।


ফারহানা আফরিন অন্তি, শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ইবি



প্রত্যেক জাতির যেমন নিজস্ব একটি ভাষা থাকে। তেমনি বাঙালি জাতির ও একটি নিজস্ব একটি ভাষা আছে। হাজারো ত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা ছিনিয়ে এনেছে বাংলা ভাষা। একুশ শতকের এই সময়ে এসে আমরা ভাষার সঠিক মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ। দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিকৃত করে ব্যবহার করা হচ্ছে আমাদের মায়ের মুখের বুলি। বাংলা ভাষাকে সবোর্চ্চ গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবহার করা ও মনে লালন করাই হোক আমাদের ভাষা দিবসের অঙ্গীকার।


বায়েজিদ আহমেদ, শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ইবি



কবির ভাষায় ‘আমার ছেলে খুব সিরিয়াস, কথায় কথায় হাসেনা,
জানেন দাদা আমার ছেলের বাংলা টা ঠিক আসেনা।’

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে যেমন স্বাধীনতা অর্জন করা কঠিন। ঠিক তেমনি আমাদের ভাষার অবস্থা দাঁড়িয়েছে। আমরা ভুলে গিয়েছি বাংলার দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগ। মাতৃভাষা সকলেই জন্মসূত্রে পেলেও আমরা পেয়েছি সংগ্রামের মাধ্যমে। নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলার মত স্বর্গীয় সুখ পৃথিবীর কোথাও নেই। কিন্তু আমরা বাংলা গান শুনতে অভ্যস্ত নয়। আমরা অভ্যস্ত হিন্দি, ইংলিশ গানে। ভাষার গুরুত্ব ও ইতিহাসকে ছড়িয়ে দিতে সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। যেন শহীদের রক্তে পাওয়া এই ভাষার ইতিহাস কালের গর্ভে হারিয়ে না যায়।


জান্নাতুল ইসবা বিথী, শিক্ষার্থী, আরবি ভাষা সাহিত্য বিভাগ, ইবি



 

বাংলা ভাষা হত্যার বিচার কার কাছে দিব?

মো: রিয়াদ হোসেনঃ ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার পর থেকে পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণের কথা আমরা সবাই হয়ত জানি। প্রথম বৈষম্য শুরু হয় ভাষাকে কেন্দ্র করে, যেখানে শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষের মুখের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার বদলে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার প্রচেষ্টা চলে। সাহসী বাঙালি সেদিন রক্তের বিনিময়ে সেদিন বাংলা ভাষার মান রাখে।

এসব সম্ভব হয়েছে বাংলাকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবোধের তাড়না থেকেই।১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়। সৃষ্টি হয় নতুন ভূখণ্ডের নতুন পতাকার, সেই সাথে বাংলা ও পাই রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বর্তমান বাংলাদেশের শতকরা ১০০ ভাগ মানষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। তবে এদেশে বাংলা চর্চা কি সত্যিই হচ্ছে! নাকি পাশ্চাত্যরীতি অনুসরণ করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলছি বাংলাকে!



যেভাবে ভাষার বিকৃতি আর বাংলাকে অগ্রাহ্য করার সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আগামীর বাংলাদেশ শুদ্ধ বাংলাকে হারিয়ে ফেলবে এটা শতভাগ নিশ্চিত! তবে, সেটির জন্য দ্বায়ী থাকব আমি, আপনি আমরা সবাই।



দেশের উচ্চ শিক্ষার প্রায় সবই ইংরেজি মাধ্যমের, হোক সেটা সরকারি কিংবা বেসরকারি কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের নামকরা শিশুবিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় কিংবা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সবগুলো বর্তমানে ইংরেজির দখলে। অভিভাবকের দোষ দিয়ে কি লাভ বলুন যেভানে স্বয়ং দেশের আদালত ব্যবস্থা ইংরেজি নির্ভর।

কি লাভ বলুন তো দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর ভাষাকে অপমান করে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে! না জুটছে নিজের মধ্যে দেশপ্রেম না জুটছে মূল্যবোধ! দেশকে উন্নত দেশের কাতারে দাঁড় করতে চান, তবে উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকান, দেখবেন তারা তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর ভাষাকে প্রাধান্য দিয়েই তাদের দেশকে উন্নত করেছে। মালেয়শিয়া যেতে হলে আপনাকে তাদের ভাষা শিখতে হবে, জার্মানিতে যাবেন তাদের ভাষা শিখতে হবে তবে বাংলাদেশের জন্য বাংলাটা বাধ্যতামূলক নয় কেন!

দেশের নিজস্ব ঐতিহ্যকে বাদ দিয়ে অন্য সংস্কৃতিচর্চা প্রধান কারণ হলো বাংলাকে অগ্রাহ্য করা। এটি আপনি স্বীকার করুন আর না করুণ এটাই সত্য। বর্তমান বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের বেশির ভাগই শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারে না। ইংরেজিতে কথার বলার মাঝেই তারা আধুনিকতাকে খুজে পায়। সরকারি হোক আর বেসরকারি হোক সকল চাকরির ক্ষেত্রে ইংরেজিতে ভাল কথা বলতে পারলেই আপনি সেরা, শুদ্ধ বাংলা বলতে পারেন কিনা সেটা বড় কথা হয়। একটা জাতির জন্য এর থেকে লজ্জার বিষয় আর কি হতে পারে! অপ্রিয় হলেও সত্য, যে জাতির পূর্ব পুরুষেরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, সে জাতির ভাষার মেরুদণ্ড আজ ভঙ্গুর।

যেভাবে ভাষার বিকৃতি আর বাংলাকে অগ্রাহ্য করার সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আগামীর বাংলাদেশ শুদ্ধ বাংলাকে হারিয়ে ফেলবে এটা শতভাগ নিশ্চিত! তবে, সেটির জন্য দ্বায়ী থাকব আমি, আপনি আমরা সবাই।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ এন্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগ,
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।