যশোরের ৩৫ শতাংশ মানুষের শরীরে প্রাকৃতিক ‘অ্যান্টিবডি’: গবেষণা

যবিপ্রবি টুডেঃ যশোরের তিনটি উপজেলার ৬টি অঞ্চলের প্রায় ৪০০ মানুষের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনার প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ‘অ্যান্টিবডি’ পাওয়া গেছে। এর অর্থ হলো এ ৩৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত বা এ ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টার এ গবেষণা পরিচালনা করে। মানুষের শরীর থেকে রক্তের নমুনা নিয়ে র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি পরীক্ষা পদ্ধতিতে এই গবেষণা চালানো হয়। করোনার ডেল্টা ধরণের ঊর্ধ্বগতির ফলে মানুষের শরীরে করোনা প্রতিরোধের প্রকৃত হার জানতেই এ ধরনের গবেষণার উদ্যোগ নেয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল বাড়িতে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে পজিটিভ করোনা রোগী ছিল সেই সকল পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ৩৮ ভাগের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। আর করোনা পজিটিভ রোগী সংশ্লিষ্ট বাড়ির পাশের করোনা পজিটিভবিহীন বাড়ির ২৪ ভাগে মানুষের মধ্যে করোনার প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ‘অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।

বেরোবির স্থগিত পরীক্ষা অনলাইনে শুরু ১২ আগস্ট

১২ আগস্ট থেকে আলিম পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ শুরু

গ্রামের তুলনায় শহরে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি অ্যান্টিবডির শতকরা হার কম। এই গবেষণায় ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। অধিক জনসংখ্যা, মানুষের মাস্ক ব্যবহারের উদাসীনতাসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্য করোনা পজিটিভ মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

গবেষক দলটি গবেষণার বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, করোনায় আক্রান্ত বা সংস্পর্শে আসায় তাঁদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। তবে করোনা থেকে বাঁচতে বা ‘হার্ড-ইমিউনিটি’ তৈরির জন্য মানুষের শরীরে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ‘অ্যান্টিবডি’ থাকা আবশ্যক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও জিনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, টিকা না নিলে আরও দীর্ঘদিন আমাদের এই মহামারীতে ভুগতে হবে। তিনি মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি বৃদ্ধির জন্য সরকারের গণটিকা প্রদানের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং এ উদ্যোগ নেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীরের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘অ্যান্টিবডি’ শনাক্তকরণের গবেষক দলের সদস্যরা হলেন পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী পিপাসা সুলতানা, সুরাইয়া ইয়াসমিন, লক্ষ্মী সরকার এবং পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী নওশাদ মাহমুদ চয়ন।

করোনার কারণে যশোরের ৩৩৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম

ডেস্ক রিপোর্ট


করোনার কারণে যশোরের ৩৩৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর্যায়ে প্রায়।যশোরে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন, প্রি-ক্যাডেট ও প্রিপারেটরিসহ বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বড় দুর্দিন চলছে। সংসার চালাতেও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে স্কুলগুলো।

করোনার প্রাদুর্ভাবে জেলার স্বল্প বাজেট ও বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এসব স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এ কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন প্রায় তিন হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার।উদ্বিগ্ন ৭০ হাজারেরও বেশি অভিভাবক।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার আট উপজেলায় ৩৩৭টি কিন্ডারগাটের্ন, প্রি-ক্যাডেট ও প্রিপারেটরি রয়েছে।

এরমধ্যে অভয়নগরে ২৩টি, কেশবপুরে ১৮টি, চৌগাছায় ২৫টি, ঝিকরগাছায় ৪৮টি, বাঘারপাড়ায় ৩৩টি, মণিরামপুরে ৪২টি, শার্শায় ৫৩টি ও সদর উপজেলায় ৯৫টি রয়েছে। এসবের বাইরে আরও কিছু থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেসরকারি এসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতে গড়ে ২শ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে বলে একাধিক পরিচালক জানিয়েছেন।

সেই হিসাবে ৩৩৭টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ৬৭ হাজার ৪শ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর বাইরে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চার শতাধিক করে শিক্ষার্থী রয়েছে। ফলে সবমিলিয়ে ৭০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।

প্রাণঘাতি করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। সেই থেকে এখনও বন্ধ রয়েছে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো। দীর্ঘ কয়েক মাস বন্ধ থাকায় বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো বেতন আদায় করতে পারছে না। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত দিতে পারছে না বেশিরভাগ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান।

কেবল শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনই বন্ধ হয়নি। ঘরভাড়াও বাকি পড়েছে অনেকের। আবার কেউ কেউ ঋণ করে ঘরভাড়া পরিশোধ করেছে। আবার কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধানশিক্ষক কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে বিক্রি করতে হয়েছে বিদ্যালয়। ছাড়তেও হয়েছে বিদ্যালয়ের ভবন। এ অবস্থার মধ্যে হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের কমবেশি বেতন অব্যাহত রেখেছেন।

সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মচারী ও পরিচালকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কয়েকটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা কমবেশি বেতন এখনও পর্যন্ত দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নবকিশলয় ও যশোর ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না শিক্ষক-কর্মচারীরা। অর্ধেক বেতন দেওয়ায় ইতোমধ্যে ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে ১২জন শিক্ষক চাকরি ছেড়েছেন।

নবকিশলয় স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের বেতন বাড়ার দাবি অব্যাহত রেখেছেন। বেতন কমানোর কারণে ক্ষুব্ধ তারা। অর্ধেক বেতন দেওয়ার কারণে যশোর ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ১২ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগ করা শিক্ষকদের বক্তব্য, দুই পরিচালক লাখ লাখ টাকা আয় করলেও তাদের পুরোপুরি বেতন দিচ্ছেন না।তাদের আরও অভিযোগ, বেসরকারি এই স্কুলটি পরিচালকরা ইচ্ছেমতো পরিচালনা করেন।

শিক্ষকদের এ অভিযোগের বিষয়ে ল্যাবরেটরি স্কুলের দু’পরিচালক সামছুজ্জামান ও গাজী মুকিতুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘মার্চ মাসে স্কুল বন্ধ হলেও ওইমাস পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পুরোপুরি বেতন দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া বেতনে প্রতিষ্ঠানটি চলে।

এপ্রিল মাস থেকে বেতন আদায় বন্ধ হলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করা হয়নি। বরং ঋণ করে তাদেরকে অর্ধেক বেতন দেওয়া হচ্ছে। স্কুল স্বাভাবিক হলে বাকিটা সমন্বয় করার চিন্তা রয়েছে। কিন্তু তার আগেই গত ২৪ জুন হঠাৎ ১২ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন।

তারা পদত্যাগপত্রে কেবলমাত্র পরিচালকদের ‘অমানবিক’ আচরণের কথা লিখেছেন। যা গ্রহণযোগ্য না। ’করোনা দুর্যোগের কবলে পড়ে শহরের পালবাড়ি ও পুলিশ লাইন এলাকার দুইটি কিন্ডারগার্টেন ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

শহরের লিটল অ্যাঞ্জেল কিন্ডারগার্টেনের অধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন বলেন, অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান তাদের আসবাবপত্র এক জায়গায় করে অল্প ভাড়ার দুই-একটি কক্ষে রেখেছে। তারা এখনো পর্যন্ত টিকে থাকার চেষ্টা করছে। সরকার স্বল্প সুদে ঋণ দিলেও কিন্ডারগার্টেনগুলো টিকতে পারবে বলেও জানান ইকবাল হোসেন।

বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে কিন্ডারগার্টেন দেখভালের বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার এএসএম আব্দুল খালেক বলেন, এটি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কাজ।

যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম বলেন, আমরা কেবলমাত্র বই দেওয়ার বিষয়টি দেখাশোনা করি। এর বাইরে আমরা তেমন কিছু করতে পারি না। কারণ কোনো ধরনের নির্দেশনা আমাদের কাছে নেই। কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হলেও শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্যে বিনা টিসিতে যে কোনো সময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হবে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ নিশ্চিত করে অনলাইন ক্লাসে যাওয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের

ওয়াশিম আকরাম
যবিপ্রবি


নোভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রার্দুভাবে দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা থমকে গিয়েছে, বন্ধ রয়েছে শিক্ষাকার্যক্রম। বাংলাদেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে গত ১৭ মার্চ হতে প্রায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হবার দরুন সেশনজটের আশঙ্কা তৈরী হয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে সংসদ টিভির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম সাময়িকভাবে চললেও বিপাকে পড়েছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা।

ইতোমধ্যে কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সহ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমের দিকে ধাবিত হয়েছে। অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালু হওয়ায় বেশ কিছু জটিলতাও দেখা দিয়েছে।

অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম চালানোর উদ্দেশ্যে শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে শিক্ষার্থীদের কমমূল্যে ইন্টারনেট প্রদান সহ সকল সেবা নিশ্চিত করার চিন্তাভাবনা করলেও তার বাস্তব রূপরেখা মেলেনি।

এ অবস্থায় কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস চালু হলেও তা নিয়ে রয়েছে জটিলতা, ভোগান্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।

অনুজীববিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন উদ্ভুত করোনা মহামারী পরিস্থিতি খুব দ্রুত নিঃশেষ হবার নয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে লেগে যেতে পারে দীর্ঘ সময়। এমতাবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম একেবারে বন্ধও রাখা সম্ভব নয়।

অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম কেমন হতে পারে আর কিভাবে শিক্ষার্থীরা সুফল পেতে পারে এ নিয়ে দ্য ক্যাম্পাস টুডেকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার দরুন অনলাইন ক্লাসের জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে যবিপ্রবি। অনলাইন ক্লাসের জন্য যে সকল উপকরণ প্রয়োজন তার সবগুলোই বিশ্ববিদ্যযালয়ের রয়েছে। অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালুর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সভা রিজেন্ট বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় অনলাইন ক্লাসের জন্য সুপারিশ করা হয় এবং এজন্য একটি নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে। চলতি সেমিস্টারের শিক্ষা উপকরণ প্রত্যেক শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন যাতে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার তিন সপ্তাহের মধ্যে চলতি সেমিস্টারের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়।”

উপাচার্য বলেন, “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার দরুন প্রতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক কোর্স রয়েছে। ল্যাবগুলো অনলাইনে নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয় তাই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর তত্বীয় ক্লাসের সমস্যা সমাধান ও ল্যাব ক্লাস করার জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে এবং ৭ দিন সময় দেওয়া হবে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য।”

তিনি আরও বলেন, “অনলাইন ক্লাস সম্পন্ন হবার পরপরই ক্লাসটি ইউটিউব, গুগল ড্রাইভ, গুগল ক্লাসরুম বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে যেন ক্লাসে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে ক্লাসটি ডাউনলোড করে দেখতে পারে, এতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিতির সম্পূর্ণ নম্বরও পাবে। করোনা পরিস্থিতি যদি আরও অনেক বেশী স্থায়ী হয় তাহলে পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করার চিন্তাভাবনা রয়েছে তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।”

অন্যদিকে অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। অনলাইন ক্লাসের জন্য জন্য প্রয়োজনীয় যে সকল উপকরণ দরকার শিক্ষার্থীদের তা অনেকেরই নেই। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো নিশ্চিত করে তারপরই অনলাইন ক্লাসে যাওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইমা ইসলাম বলেন, “আমার মতে এই করোনাকালীন সময়ে অনলাইন ক্লাসই এক মাত্র উপায়, যার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে শিক্ষা ব্যাবস্থা সচল রাখা সম্ভব। কারন করোনার প্রভাব আরও কতদিন আমাদের মাঝে থাকবে, তার নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। তাই করোনার শেষ না হওয়া পর্যন্ত যদি আমরা আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থামিয়ে রাখি, তবে তা নিজেদের পায়ে নিজেদেরই কুড়াল মারা বৈকি আর কিছুই নয়। তাই আমার মতে অনলাইন ক্লাস শুরু করার এখনো যুগোপযোগী সময়। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই অনলাইন ক্লাস ব্যাবস্থার কিছু সমস্যা আছে।”

সাইমা আরও বলেন, “অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের জন্য দরকারি ডিজিটাল ডিভাইস আর ইন্টারনেট সুবিধা এখনো দেশের সব জায়গায় সমানভাবে বিস্তার পায়নি। যার ফলে এই সময়ে বাসায় থাকা অনেকেরই অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহন করা অসুবিধার কারন হয়ে দাড়াতে পারে। এছাড়াও এই করোনাকালীন সময়ে অর্থনীতির অবস্থা খুব একটা দৃঢ় নয়। এমন অবস্থায় অতিরিক্ত অর্থ ব্যায় করে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়াও অনেকের জন্য বোঝা হয়ে দাড়াতে পারে। এর সাথে সামনাসামনি ক্লাসে শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে যে পরিবেশ গড়ে উঠে, অনলাইন ক্লাসে সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।”

শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জহুরুল ইসলাম বলেন, “করোনা থেকে কতদিন পর দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে এটা আমরা কেউই বলতে পারিনা। আমাদের অনেকের কাছে অনলাইন ক্লাসে যাওয়া এখন সময়ের দাবি মনে হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই নিজের যোগ্যতা প্রমান করেই ভর্তি হয়। অনলাইনে ক্লাস হলে সবার ক্লাস সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিন্মবিত্ত পরিবার আর গ্রাম থেকে উঠে আশা। হ্যা, অনেকের স্মার্টফোন থাকলেও সবার নেই। আর নেটওয়ার্কের দুরাবস্থার কথা আমরা সবাই জানি। তারপরও অনলাইনে ক্লাস করতে অনেক ইন্টারনেট প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় আগে এগুলো নিশ্চিত করুক।

“যদি এমন করা হয়; যাদের স্মার্টফোন নেই তাদের জন্য যদি দীর্ঘমেয়াদী কিস্তিতে স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ সরবারহ করা হয় এবং যে অ্যাপ গুলোর মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হবে সে অ্যাপ গুলোতে যদি শিক্ষার্থীদের ডাটা ছাড়া একসেস দেওয়া হয় তাহলে আমাদের প্রতিবন্ধকতা গুলো অনেকটাই কেটে যাবে। এমনটাই জানিয়েছেন জহুরুল ইসলাম।”

এ বিষয়ে যবিপ্রবির ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, “অনলাইন ক্লাস শব্দটি নিয়ে এখনও তর্ক বিতর্কের শেষ নেই। আমি এ নিয়ে পূর্বেও মতামত দিয়েছি তবে তখন আমরা সারা দেশ লকডাউনে ছিলাম অনেক পরিবার আর্থিক সংকট ও খাদ্য সংকটের মধ্যে জীবন পার করছিলো তাই তখন সকলের পক্ষে এসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে অনলাইন ক্লাস করা সম্ভব ছিলো না।”

মেহেদী বলেন, “কিন্তু এখন যেহেতু জোন ভিত্তিক লকডাউন চলছে তাই মেজরিটি লকডাউনের বাইরে সুতরাং অনলাইন ক্লাস করা যেতে পারে কিন্তু অনলাইন ক্লাস এর বিকল্প একটি ব্যবস্থাও করা যেতে পারে সেটি শেষে বলছি। কারন, অনলাইন ক্লাস নিয়ে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। যেমন, সকলের ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে হবে তা নাহলে কেউ গাছের মগডালে উঠেও নেট পাবে না আবার কেউ ঘরে বসে ক্লাস করবে এমনটি হলে ভেদাভেদ সৃষ্টি হবে।

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন “আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটুকু নিশ্চয়তা দিতে হবে যাদের প্রয়োজনীয় ডিভাইস নেই তাদের যেন একটা কোন উপায় করে দেয়া হয়। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরাই বেশি।হঠাৎ করে কোন মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের একটি ল্যাপটপ বা ফোন কেনা কষ্টসাধ্য তাই সে বিষয়টি মাথায় রেখেই এবং সমস্যা শতভাগ সমাধান করেই অনলাইন ক্লাস চালু করতে হবে। তা নাহলে কেউ ক্লাস করবে আর কেউ করবে না এমনটি হবে।

অনলাইন নিয়ে মেহেদী হাসান আরও বলেন, “এর বাইরে বিকল্প ব্যবস্থাটি হলো আমাদের শিক্ষকগণ অনলাইন ক্লাসের পরিবর্তে যদি ক্লাস গুলো ভিডিও আকারে ইউটিউবে আপলোড করেন এবং এর পাশাপাশি স্লাইড বা পিডিএফ আকারে লেকচার গুলো প্রকাশ করেন এবং পরে সকলের সমস্যাগুলো শুনে সেগুলো নিয়ে অন্য এক দিন আলোচনা করেন তাহলে সকল শিক্ষার্থীরাই সেগুলো কপি করে বা ডাউনলোড করে সুবিধামত ক্লাসগুলো করতে পারবে। এতে একদিকে ইন্টারনেটের বৃহৎ সমস্যাটির সমাধান হবে এবং অন্যদিকে নেট না চললেও ভিডিও দেখার মত ফোন সকলের কাছেই আছে এবং শিক্ষকগণের সমস্যা সমাধানের ভিডিও থেকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রশ্নগুলোর উত্তরও পেয়ে যাবেন।”

মেহেদী আরও বলেন, “তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় পরীক্ষা নিয়ে এটি ওপেন বুক এক্সাম হিসেবে এসাইনমেন্ট আকারে সাবমিট করা যেতে পারে এবং এসবের বাইরে যদি সকলের শতভাগ নেট ও ভিভাইস এর সমস্যাটি সমাধান করা যায় আমার মনে হয় অনলাইন ক্লাসে কারও কোন আপত্তি থাকার কথা নয়।”

যবিপ্রবি ল্যাব: করোনায় আক্রান্ত ১৭ জন

যবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে গত ২৪ ঘন্টায় ১৭ জনের করোনা ভাইরাস পজিটিভ এসেছে।

আজ ১৯ জুন ঘোষিত করোনার টেস্টের ফলাফলে মোট ১৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ জনের করোনা পজিটিভ এবং ১৭২ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে।

যবিপ্রবি জিনোম সেন্টারের পরীক্ষণ দলের সদস্য ও অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন

এর মধ্যে যশোরের ১৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১ জনের, নড়াইলের ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২ জনের, মাগুরার ১৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২ জনের, বাগেরহাটের ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২ জনের ও সাতক্ষীরার ১০৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০ জনের নমুনাতে কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া গেছে।

পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে।

যবিপ্রবি স্কুলে অনলাইনে ক্লাস শুরু

যবিপ্রবি প্রতিনিধি


যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) স্কুলে অনলাইনে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়েছে।যশোর সদর উপজেলার ভিতরে সর্বপ্রথম এই স্কুলেই অনলাইনে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়।

প্রাথমিক ভাবে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে অনলাইন ক্লাস অনুষ্ঠিত হলেও পরবর্তীতে নবম ও দশম শ্রেণিও এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্কুল কতৃপক্ষ।

চলমান করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ধারাবাহিকতা রাখতেই এই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবির মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান ও যবিপ্রবি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মেহেদী হাসান বলেন, “শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ধারবাহিকতা বজায় রাখতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এবং আমরা আমাদের ক্লাসগুলো ভিডিওতে ধারণ করে প্রত্যেক অভিভাবকের নিকট পৌঁছে দিচ্ছি এবং শিক্ষার্থীদের কোন বিষয় বুঝতে অসুবিধা হলে তাৎক্ষণিক ফোন করে শিক্ষকদের থেকে জেনে নিতে পারছেন।

“অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছেন বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ” যোগ করেন তিনি।

এসএসসি: দুই স্কুলে দুই শিক্ষার্থী, দুজনই ফেল

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্কঃ চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় যশোর শিক্ষা বোর্ডে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেনি।

প্রতিষ্ঠান দুটি হলো- সাতক্ষীরার কলারোয়া শহীদ স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয় ও দেবহাটার বাবুরাবাদ ধাপুখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

এই তথ্য নিশ্চিত করেন শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব জানান, প্রতিষ্ঠান দুটি থেকে একজন করে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। দুজনই ফেল করেছে। গত বছর এ তালিকায় বোর্ডের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল সাড়াতলা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়