এইচএসসি ২০২০ এর ফল প্রকাশ

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্কঃ চলমান বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব না হওয়া গত বছরের অর্থাৎ ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের ফলাফল প্রস্তুত, প্রকাশ ও সনদ বিতরণের ক্ষমতা শিক্ষা বোর্ডগুলোকে দিয়েছে সরকার।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে জারি করা তিনটি গেজেটের মাধ্যমে নয়টি সাধারণ বোর্ডের সঙ্গে মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়।

SSC New Short Syllabus 2021 PDF (Download Now)

গেজেটে বলা হয়েছে, চলমান বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব না হওয়ায় এ সংক্রান্ত আইনগুলো সংশোধন করা হয়েছে।

করোনা পরবর্তী সময়েও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে: শিক্ষামন্ত্রী

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, সঙ্কট অনেক সময় আমাদের জন্য সম্ভাবনা নিয়ে আসে। করোনাভাইরাসও আমাদের জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে। যেটা আমরা আজ থেকে পাঁচ বছর পরে করতাম সেটির সাথে আমরা এখন থেকেই অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। করোনা পরবর্তী সময়েও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে।

রোববার (৪ অক্টোবর) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির ক্লাস কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। জুম প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাসের উদ্বোধন করা হয়।

তিনি বলেন, আমারা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট এর কথা বলি। সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের ভবিষ্যতে অনলাইন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হতেই হতো। করোনা পরিস্থিতি আমাদের সেই সুযোগ এখনই করে দিয়েছে। করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়েও অনলাইনের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো: আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো: গোলাম ফারুক এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।

চা বাগান থেকে থেরেসা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


তারা খুবই দরিদ্র ছিল। কোনোরকম খেয়ে-পরে দিনাতিপাত করতো। সন্তানদের লেখাপড়া করানোর মতো আর্থিক অবস্থা তাদের ছিল না। আর মেয়েদের পড়াশোনা করার কথা তো ভাবেইনি তারা। নিজেদের আর্থিক দৈন্যদশা আর সামাজিক অবস্থানের কারণে তারা ধরে নিয়েছিল, লেখাপড়া তাদের জন্য না।

প্রায় ২০০ বছর আগে দক্ষিণ ভারত থেকে শ্রীলঙ্কায় আসে চা শ্রমিকরা। তবে তাদের সেই ভুল ধারণা ভেঙে দিয়েছেন থেরেসা নামের এক তরুণী। তার এলাকার চা শ্রমিক সম্পদ্রায়ের মধ্যে তিনি প্রথম কোনো মেয়ে, যিনি শ্রীলঙ্কার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।

থেরেসার মা একজন চা শ্রমিক। তার দাদিও চা শ্রমিক ছিলেন। বাবা কোম্পানিতে চাকরি করেন। খুব অল্প বেতন পান। তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। তবে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হতে চান থেরেসা।

আগে থেরেসাদের এলাকায় মাত্র একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০১৬ সালে। এরপর সেখানকার ছেলেমেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সুযোগ তৈরি হয়।

থেরেসা বলেন, ‘চা শ্রমিকদের জীবন খুব কঠিন। এখানে সবাইকে সংগ্রাম করতে হয়। তবে এখানে সবাই কাজ করে। কোনো কাজই অসম্মানের নয়। আর শিক্ষা আমাদের একমাত্র সুযোগ, যেটা দিয়ে আমরা একটি নতুন ভোর নিয়ে আসব। প্রাথমিকে পড়ার সময় একটি পুরনো ফ্যাক্টরির মধ্যে তাদের ক্লাস নেয়া হতো। মানুষ ভাবে, মেয়েদের লেখাপড়ার দরকার নেই। এর মধ্যে কয়েকজন স্কুলে গেলেও কয়েক বছরের মধ্যে ঝরে পড়ে। বাকিরা একেবারেই স্কুলে যায় না।’

থেরেসার মা পুশপামারি সাথিয়ামুথু বলেন, ‘থেরেসা যখন কিশোরী ছিল তখন সে স্কুল ছেড়ে গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করে। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকরা চাইলেন, সে পড়াশোনা করুক। পরে তারা তাকে অনেকটা জোর করে স্কুলে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে বাগান থেকে চায়ের পাতা তুলি। জোঁকের কামড় খেতে হয়। আমার মেয়ে যখন শিক্ষক হবে তখন সে আমাদের সম্প্রদায়কে পুনর্নির্মাণ করবে।’

ছুটির দিনগুলোতে নিজের পুরনো স্কুলে পড়ান থেরেসা। সম্প্রতি শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে তিনি একটি পথনাটকে অভিনয় করেছেন। এছাড়া ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করছেন তারা।

থেরেসা বলেন, ‘আমার মা লিখতে-পড়তে পারেন। তবে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমাদের শুধু নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে গেলে হবে না, অন্যকেও শেখাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কুল সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। কারণ সবকিছুর পরিবর্তন সম্ভব। আমাদের গ্রামের একটা পরিচয় তৈরি করে দিয়েছে এই স্কুল। সেই সঙ্গে আমাদের সামনে একটা নতুন পৃথিবীর দরজা খুলে দিয়েছে।’

সূত্র : বিবিসি বাংলা।

কেমন শিক্ষক চাই!

মোঃ মোজাহেদুর ইসলাম ইমন


গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার মূল উপাদান হলো- মানসম্মত শিক্ষক, মানসম্মত শিক্ষা উপকরণ ও মানসম্মত শিক্ষা পরিবেশ। এই তিনটি উপাদানের মধ্যে শিক্ষকই একমাত্র চলক যার উপর অন্যান্য উপাদানের ভালমন্দ নির্ভর করে। এই শিক্ষকই আমাদের সমাজের বিবেক। তাই সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা সবার উপরে।

কিন্তু কালে কালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও মানবসভ্যতার বিকাশের ধারায় পুঁজিকেন্দ্রিক সামাজিক কাঠামোর বিকাশ লাভের ফলে শিক্ষকদের মর্যাদা এখন আর আগের মতো নেই। বাস্তবে বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের শিক্ষক সমাজ আজ প্রশ্নে সম্মুখীন। কারণ পাস করা সার্টিফিকেটের জোরে যে কেউ শিক্ষকতা পেশায় ঢুকে পরছে কিন্তু সেই ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে কেমন তা যাচাই করার কোন উপায় নেই।

একজন শিক্ষক অবশ্যই সৎ ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হবেন। কিন্তু সার্টিফিকেট মেধার মূল্যায়ন করলেও মনুষ্যত্বের মূল্যায়নের ক্ষমতা রাখে না। ফলে শিক্ষকতা পেশায় থেকেও নানা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পরছে। এবং এজন্য শিক্ষক সমাজের প্রতি আঙুল উঠছে। শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন স্কেল দরকার কারণ শিক্ষকদের দায়িত্ব অন্য সব পেশা থেকে ভিন্ন। তাছাড়া শিক্ষকতা হলো সেই পেশা যেখান থেকে দেশের মেধা তৈরি হয়। ফলে আর সব পেশার সাথে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। তাই এই পেশার সাথে জড়িত মানুষগুলো আলাদা বেতনস্কেল দাবি করতেই পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষকতা পেশায় কারা আসে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় মেধার ভিত্তিতে যদি ভাগ করা হয় তাহলে উচ্চ মেধা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রীরা কমই শিক্ষকতা পেশার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। প্রথম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা তাদের স্বপ্নকে বেঁধে রাখে বিসিএস,ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা এরকম কোন পেশায়। যেখানে প্রচুর টাকা কামানো পাশাপাশি রয়েছে সামাজিক সম্মান। এরপরের মেধাবী রয়েছে তারা প্রথম শ্রেণিতে না পড়লেও দ্বিতীয় শ্রেণির মেধাবী। তারা নূন্যতম দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি খোঁজে। এরপর যারা থাকে তারা অন্য পেশার সাথে শিক্ষকতা পেশায় আসে।

এখন কথা হলো কেন রাষ্ট্রের সবথেকে মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক এমনকি কলেজে আসতে অনীহা। কেন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়াতে বেশি আগ্রহী। এর একটাই অর্থ যে প্রাথমিক বা বেসরকারি স্কুল কলেজের চাকরি প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির নয়। ফলে প্রথম শ্রেণি বা দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি খোঁজা একজন মেধাবী কেন শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবে?

অনেক উন্নত দেশেই প্রাথমিক শিক্ষকদের মানে শিক্ষকদেরই মর্যাদা সর্বাধিক। তাদের বেতন ও সুযোগ সুবিধাও বেশি। বড় বড় চাকরি ছেড়ে তাদের প্রধান লক্ষ্যই হয় শিক্ষকতা করা। এক্ষেত্রে চূড়ান্ত মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা ঘটছে না। বড় বড় ইঞ্জিয়াররা বড় বড় দালানকোঠা,বিল্ডিং তৈরি করেন। তবে এসবের থেকেও যা আজ বেশি দরকার তা হলো মানুষ। একমাত্র শিক্ষকরাই সে কাজটি করতে সক্ষম।

শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের জীবন ও যুগোপযোগী শিক্ষা দেবেন। তাদের জ্ঞান অর্জনের পথ দেখাবেন, আলোর পথের যাত্রী করবেন। শিক্ষার্থীদের ভেতর জ্ঞান লাভ,অজানাকে জানা,অদেখাকে দেখা এবং চেনা-জানা বিষয়গুলোকে নতুন করে চেনার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা দেবেন। উৎসাহ, প্রেরণা,শক্তি যোগাবেন। ভালো-মন্দ, ভুল-সঠিকের দৃষ্টিভঙ্গি শেখাবেন। সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবেন।

শুধু পুঁথিগত বিদ্যা বিতরণ নয়; মানুষ হয়ে উঠতে ছাত্রছাত্রীদের যা যা প্রয়োজন, সব শিক্ষা দেওয়া একজন শিক্ষকের কর্তব্য। তিনি ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্বজ্ঞান সম্পর্কে বলবেন, রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন করবেন, দেশপ্রেমের শিক্ষা দেবেন। তাই শিক্ষকদের বলা হয় জাতি গঠনের কারিগর। পাঠদানের বাইরে ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্কে খোঁজখবর রাখা, তাদের গাইড করাও শিক্ষকের দায়িত্ব।

সকালবেলা যাব, বিকেলে ফিরব, মাস শেষে বেতন নেব- এর নাম শিক্ষকতা নয়। এর বাইরেও শিক্ষকদের অনেক কিছু করতে হয়। যার জন্য চাওয়া-পাওয়ার প্রশ্ন থাকবে না। তাই শিক্ষকতা শুধু একটা পেশা নয়; একটি ব্রত। বর্তমান প্রজন্মের অনেক শিক্ষকের মধ্যে এই চিন্তাটা নেই। তারা ভাবেন, এটা করে আমার কি লাভ? আমি কেন করব? শিক্ষকতা করতে গিয়ে সব সময় অর্থের চিন্তা করলে এ পেশায় না আসাই ভালো।

লেখক: মোঃ মোজাহেদুর ইসলাম ইমন
শিক্ষার্থী, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

দেশে মাদ্রাসার শিশুদের অধিকার কি আলাদা?

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


দেশে মফস্বলে বসবাসরত মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারের অনেক শিশুরই পড়াশোনার শুরুটা হয় ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে ৷ সাধারণত মসজিদে বা মাদ্রাসায় দিনের একটা সময়ে আরবি শিখতে যায় তারা, যা পরিচিত মক্তব নামে৷

পরবর্তীতে এই শিশুদের এক অংশ চলে যায় স্কুলে, আরেক অংশের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার শুরু হয় মাদ্রাসাতে৷ নিজেদের নয়, অভিভাবকের আকঙ্খাতে বদলে যায় তাদের চাওয়া পাওয়া, সুযোগ সুবিধাগুলো৷ ঠিক যেমন বদলে গিয়েছিল সিয়ামের জীবনও৷

বন্দি জীবনে আটকে যায় তার উড়ন্ত শৈশব৷ যেই সময়টা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার, আনন্দে কাটানোর– সেই সময়টায় কঠিন এক জীবন আবদ্ধ করে ফেলে তাকে৷ অন্য কোনো বিনোদন তো দূরে থাক, তার দৈনন্দিন রুটিন থেকে ‘খেলাধুলা’ শব্দটিই নাই হয়ে যায়৷ ‘খেলতে ইচ্ছা করতো, তবে কেউ বলার সাহস পেতো না,’ বলছিলেন কওমি, আলিয়া মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তিনটি মাদ্রাসায় পড়া এই দাখিল শিক্ষার্থী৷ হাফেজি পড়া অবস্থায় মাদ্রাসার ভিতরে তাদের খেলার মতো কোনো মাঠ ছিল না৷ চার দেয়ালের বাইরে বের হওয়াও ছিল নিষিদ্ধ৷ ছুটিতেই কেবল বাহিরের পৃথিবীটা দেখার সুযোগ মিলতো৷

সিয়ামের বাড়ি ফেরার পরের সময়ের বর্ণনা দিলেন তার বড় বোন রুবাইয়া৷ ‘যখন ওকে বাসায় আনা হতো, তখন সে ঠিকমতো কথা বলতো না৷ বাইরের কারো সঙ্গে মিশতে পারতো না৷ এখন ধীরে ধীরে কিছুটা ঠিক হয়েছে৷’

রুবাইয়াও দুইটি কওমি মাদ্রাসায় পড়েছেন৷ সেই আট বছর বয়সে একটি ‘মহিলা হাফেজিয়া মাদ্রাসায়’ ভর্তি হয়েছেন৷ রুবাইয়ার কথা অনুযায়ী, মাদ্রাসার আয়তন ছোট ছিল, সারাদিন তাদের রুমের মধ্যেই থাকতে হতো৷ বিকেলের দিকে নীচে নামার সুযোগ ছিল, তবে সেটা ছিল বিল্ডিংয়ের গণ্ডির মধ্যেই৷ গেইটের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না৷ ‘‘বন্দিজীবন কাটিয়েছি ছোটবেলা থেকেই৷ মাঝে মাঝেই ইচ্ছা করতো খেলাধুলার, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর কিন্তু তার কোনো সুযোগ ছিল না৷’’ মেয়ে হওয়ায় এমনকি দৌড়াদৌড়ি, উচ্চ শব্দে হাসাহাসিতেও বারণ ছিল, বলছিলেন তিনি৷ পরবর্তীতে আরেকটি মাদ্রাসায় কিছুটা বৃহৎ গণ্ডি পেয়েছেন৷ তবে সেখানেও বিনোদন বলতে বড়জোর ভবনের ছাদে হাঁটাহাঁটির সুযোগ৷ বলেন, ‘‘ফজর থেকে রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত রুটিন মেনে চলতে হতো৷ মিনিট বা সেকেন্ড এদিক-সেদিক হতে পারবে না৷ কিন্তু সব সময় মানসিকাতো এক রকম থাকে না৷’’

তবে সিয়াম রুবাইয়া দুইজনই বললেন, কওমির তুলনায় আলিয়া মাদ্রাসাগুলোতে এতটা কড়াকড়ি নেই৷ সুযোগ স্বল্প হলেও খেলাধুলায় বাধা নেই৷

বাংলাদেশে সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার৷ আর ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’ বা বেফাক-এর হিসেবে, কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ১৩,৭১০টি৷ অবশ্য বছর তিনেক আগে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর সমমান মর্যাদা দেয়া হয়৷ দুই ধারা মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ৷

বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা মূলত দুই ধরনের৷‘‘যা প্রাথমিক পর্যায়ের পরে শিক্ষা দান করে; এগুলো হচ্ছে: আলিয়া মাদ্রাসা, যেগুলো কলকাতা মাদ্রাসাকে (পরবর্তী সময়ে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা) অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠিত সরকার-সমর্থিত প্রতিষ্ঠান এবং কওমি মাদ্রাসা, যেগুলো সাধারণত দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুকরণে তৈরি বেসরকারি ব্যবস্থাপনার মাদ্রাসা ৷

তবে আলিয়া এবং কওমি দুই ধরনের মাদ্রাসাতেই প্রাথমিক পর্যায়, অর্থাৎ ইবতেদায়ি শিক্ষা দেওয়া হয়৷ দুই ব্যবস্থার বাইরেও কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে৷’’ এই দুই ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ‘বাংলাদেশে মাদ্রাসাশিক্ষা: প্রতিযোগিতা, সমঝোতা ও আদর্শিক দ্বন্দ্ব’, শিরোনামে একটি প্রবন্ধে এভাবে বর্ণনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মাননীয় অধ্যাপক আলী রিয়াজ৷ (লেখাটি মূল ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে ছেপেছে প্রতিচিন্তা)

সরকারের মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে প্রায় সাড়ে নয় হাজার আলিয়া মাদ্রাসা রয়েছে৷ বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)-এর হিসাবে প্রাথমিক র্পযায়ে স্বাধীন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সংখ্যাই ২০১৯ সালে ছিল ৬,৩৭৮ টি৷ যেখানে নয় লাখ ৬১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে৷ এর ৫৩ ভাগই ছাত্রী৷

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের নীতিমালা অনুযায়ী, এই ধরনের মাদ্রাসা অনুমোদনে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য র্পযাপ্ত খেলার মাঠ থাকতে হবে৷ যদিও সেই নিয়ম কতটা মানা হয় বা কতটি মাদ্রাসা মানছে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে৷ আবার দাখিল, আলিম, ফাযিল, কামিল মিলিয়ে এই বোর্ডের অধীনে মোট মাদ্রাসা সংখ্যা ৯২৭৮ টি৷ যার মধ্যে মাত্র তিনটি সরকারি, বাকিগুলো বেসরকারি মালিকানায় পরিচালিত৷ তবে কাগজে-কলমে সবাই সরকারি কারিকুলাম মেনেই চলে৷

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এই মাদ্রাসাগুলোতে একজন করে শারীরিক শিক্ষক থাকার কথা, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন হওয়ার কথা৷ ‘‘শিক্ষার্থীরা যখন ভর্তি হয় বা ফরম পূরণ করে তখন ক্রীড়া ফির নামে একটা নির্দিষ্ট অর্থ নেওয়া হয়৷ এই অর্থ দিয়ে আমাদের অধিদফতরের নেতৃত্বে দুটো ক্রীড়া অনুষ্ঠান হয়৷ একটা শীতকালীন ও আরেকটা গ্রীষ্মকালীন৷ এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রতিষ্ঠান থেকে উপজেলা, জেলা ও বিভাগ হয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিযোগিতা হয়,’’ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষা র্বোডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ৷ বাস্তবতা হল অনেক মাদ্রাসাতেই শারীরিক শিক্ষক নেই, অভাব আছে খেলাধুলার পর্যাপ্ত অবকাঠামোর৷

তবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিটি কওমি মাদ্রাসাতে, যাদের উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷ সেগুলো চলছে তাদের তৈরি স্বাধীন নিয়মে৷ এমন মাদ্রাসার সঠিক পরিসংখ্যানও নেই কারো কাছে৷ তাদের একাধিক বোর্ডের একটি ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’, যাদের অধীনেই ১৩,৭১০ টি মাদ্রাসা রয়েছে৷ যেখানে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, বিনোদন বা সৃজনশীলতা বিকাশের কোন সুযোগ নেই৷

শৈশব আর শিক্ষাব্যবস্থা কী করে শিশুবয়স থেকেই বৈষম্যের সূচনা ঘটাচ্ছে এটি তারই একটি নমুনা৷ এইসব মাদ্রাসায় শত বা হাজার নয় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে৷ সিয়াম আর রুবাইয়াদের মতো তারা বড় হচ্ছে খেলাধুলাবিহীন নিরানন্দ এক পৃথিবীতে৷ ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র সবাই যেন ধরেই নিয়েছে মাদ্রাসায় পড়া শিশুরা এই পৃথিবীর আনন্দ উপভোগ করতে পারবে না৷ কালেভদ্রে পাঞ্জাবি, টুপি পরা মাদ্রাসার ছাত্র কিংবা বোরকা পরা মেয়েদের খেলার দৃশ্য দেখলেও তাই আমরা বিষ্মিত হই৷

অথচ প্রতিটি শিশুর জন্য সমঅধিকার নিশ্চিত করা কিন্তু রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব৷ জাতিসংঘের শিশু অধিকার চুক্তি ১৯৮৯-র ৩১ ধারাতেও স্পষ্ট বলা হয়েছে, বয়সের সাথে সঙ্গতি রেখে শিশুর বিশ্রাম, অবসর, খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম, সুকুমার শিল্পে অংশগ্রহণের অবাধ অধিকার অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ স্বীকার করবে৷ রাষ্ট্র শিল্প ও সাংস্কৃতিক জীবনে শিশুর পরিপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং সাংস্কৃতিক, সুকুমার শিল্প ও বিনোদনের জন্য উপযুক্ত ও সমানভাবে অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করবে ৷

এ সনদে স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ কি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য সেগুলো নিশ্চিতের কোনো তাগিদ বোধ করে? জাতি, লিঙ্গ, ধর্ম, ভাষা, সক্ষমতা অথবা অন্য কোনো সামাজিক মর্যাদা যাই হোক না কেন, প্রতিটি শিশুরই এই অধিকারগুলো যে আছে বাংলাদেশের মানুষও কি আদৌ তার প্রয়োজন অনুধাবন করতে পারে?

কেমন হওয়া উচিত আমাদের শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্র!

ড. মো. তরিকুল ইসলাম


অধিক জনসংখ্যা ও দরিদ্র এই দেশটিতে (বাংলাদেশ) হয়ত আমরা হার্ভাড বা ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মত কোনো দামী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারবো না। কেননা সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ছাড়াও মানসম্মত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নিয়েও রীতিমত ঘাটতির প্রশ্ন রয়ে যায়।

মূলত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান কেমন তা উক্ত বিষয়গুলির মানদন্ড ছাড়াও দেশীয় ও বৈদেশিক কর্মক্ষেত্রে তার থেকে প্রাপ্ত জনশক্তির কর্মদক্ষতা বা অবদানের উপরেও নির্ভরশীল।

একটি মানসম্মত শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অনুপাত নিশ্চিত করাটাও অত্যন্ত জরুরী। এদিক থেকে হয়ত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সার্বিক দিকে মানের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়- কিন্তু এই বিশাল জনশক্তিকে শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হলে নিশ্চয়ই একটি মানসম্মত পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে।

কেননা এত বড় একটি জনগোষ্ঠী থেকে মানসম্মত শিক্ষার্থী ও অভিজ্ঞ শিক্ষক গোষ্ঠী বের করা মোটেও অসম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে আমাদের শিক্ষার্থীদের মেধাভিত্তিক পরিচর্চা হতে পারে একটি ফলপ্রদ পদক্ষেপ।

শিক্ষাকার্যক্রমটি নাম্বারকেন্দ্রিক সনদে রূপান্তর কিংবা শুধুমাত্র স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে না নিয়ে বরং একে তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত করা যেতে পারে। যেমন- (১) আবশ্যিক বা মৌলিক অংশ: যেহেতু শিক্ষা একটি মৌলিক নাগরিক অধিকার সেহেতু ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় শিক্ষাব্যবস্থার এ পর্যায়টিকে নিশ্চিত করতে হবে।
এটিকে আবশ্যিক বলছি একারণেই- এখানে শিক্ষার্থীদেরকে প্রাথমিক জ্ঞান-শিক্ষা নিশ্চিত করা যেতে পারে, যেমন- ধর্মীয় বা নৈতিক শিক্ষা, মানবীয় গুণাবলীর বিকাশ, দেশীয় আইন বা নিয়ম-কানুন, অত্যাবশ্যকীয় সাধারণ জ্ঞান, ইত্যাদি। এককথায় একজন সাধারণ মানুষের জীবনধারনে অপরিহার্য বিদ্যাশিক্ষাদান করাই এ স্তরের মূল উদ্দেশ্য।

বিশাল এই জনগোষ্ঠীর একটি বিশেষ অংশ হয়ত এর আওতায় সরকারের পক্ষেও আনা সম্ভব না হতে পারে, তাই এই স্তরটির সময়সীমা নির্ধারনও করতে হবে সেভাবে যেন সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থাপনা থেকে একজন শিক্ষার্থী ঝরে পড়লেও অন্তত এই স্তরটি সমাপ্ত করার সুযোগ সে পায়। সেই সাথে এ স্তরেই ছড়িয়ে দিতে হবে পরবর্তী স্তরে পৌঁছাবার আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা।

(২) দক্ষতা অর্জন অংশ: দরিদ্র ও ঘনবসতির এই দেশটিতে কর্মদক্ষ জনশক্তি গড়া এবং শিক্ষাজীবনের পরবর্তী স্তরে মেধা স্থানান্তর করাই এ স্তরের মূল লক্ষ্য। এ স্তুরে শিক্ষার্থীদেরকে তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদান করা হবে যেন তারা দেশ বিদেশের কর্মক্ষেত্রে নিজেদের মেধা ও শ্রমকে সফলভাবে প্রয়োগ করতে পারে।

(৩) অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞতা অংশ: দ্বিতীয় স্তর থেকে একটি বিশেষ শ্রেণিকে বিশেষত যারা দক্ষ এবং অধিক দক্ষতা অর্জনে অর্থাৎ অভিজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ হতে ইচ্ছুক বা হওয়ার সক্ষমতা রাখে তাদেরকে ব্যক্তিগত, বিশেষ অনুদান (ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক) ও সরকারী ব্যবস্থাপনায় প্রতিপালন করা যেতে পারে। এটি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষাকার্যক্রম।

এখানে শিক্ষার্থীরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর (যেমন- অনার্স, মাস্টার্স, পিএইচডি, পোস্টডক্টরেট) বিষয়ক জ্ঞানচর্চা করবে। এতে করে দেশীয় সম্পদ ও শিক্ষার্থীদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন ও প্রয়োগবিধি নিশ্চিতকরণে সুবিধা হবে। তবে, এর জন্য আমাদের কর্মক্ষেত্রগুলিকেও সাজাতে হবে শিক্ষার বিভিন্ন স্তর অনুযায়ী।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য ইদানীং বহু চাকরীদাতা প্রতিষ্ঠান চাকরীর বিজ্ঞাপনে আবেদনকারীদের কাছ থেকে পদমর্যাদাতিরিক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা দাবি করেন; যা বেকারত্ব বৃদ্ধি ছাড়াও জন্ম দিচ্ছে নানারকম অনিয়ম ও দুর্নীতির। এতে শিক্ষা ও সনদের মান এবং মূল্যায়ন দুটোই কমে; বেড়ে যায় নাম্বারভিত্তিক সনদের শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রতিযোগিতা।

এছাড়াও বেড়ে যায় পদকেন্দ্রিক যোগ্যতা ও দক্ষতার অবদমন, কর্মক্ষেত্রে মেধা ও দক্ষতার অবমূল্যায়ন- তুদপরি অসম বা অকার্যকরি বণ্টন, আর্থিক (উপঢৌকন) ও ক্ষমতার (যেমন- ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক) প্রভাবশালিত্ব, এবং শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক খরচ- মতান্তরে দেশীয় সম্পদ ও মেধার অপচয়। আমাদের এটি ভুললে চলবে না যে – গুনমানে পরিমাণ প্রহারিত হয়। শিক্ষার্থীদের সামর্থ্য ও মন না চাইলেও যেন সবাইকে উচ্চশিক্ষার আসর পর্যন্ত জোরপূর্বক টেনে আনতে না হয় সে ব্যবস্থার সুরাহা প্রাথমিক পর্যায় থেকেই করতে হবে।

একজন রোগী যখন পরপর ১০ জন ডাক্তারের নিকট গিয়ে সঠিক চিকিৎসা পায় না তখন স্বভাবতই সে ধরে নেয় এদেশে উপযুক্ত ডাক্তার নেই এবং সে সঠিক চিকিৎসাও পাবে না; শরণাপন্ন হয় বিদেশের ডাক্তারের প্রতি। আমরা অধিকংশই আজ ঠিক এই অবস্থানেই দাঁড়িয়ে রয়েছি।

একজন শিক্ষার্থী ৮০ নাম্বার পেয়ে এ+ পেল আর অপরজন ১০০ পেয়ে পেল, দুজনের মধ্য পার্থক্য নিশ্চয়ই চোখে পড়ার মত! শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে পরিষ্কার করে দেয়া ও তদনুযায়ী ট্রিটমেন্ট দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে সহায়তা করা অর্থাৎ তাদেরকে দৃশ্যত জনশক্তিতে রূপান্তর করার গুরুদায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহকে। আর এ কাজে সার্বিক সহায়তা দেবে শিক্ষার্থীর পরিবার ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা।

শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞান বা দক্ষতাভিত্তিক কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি নিশ্চিত করা না গেলে শাখাভিত্তিক ও বিশেষায়ণ জ্ঞানচর্চায় ব্যাঘাত ঘটে। বিশেষায়িত বিষয়ের অন্তরালে শিক্ষার্থীরা মত্ত হয়ে পড়ে ভিন্নতর (চাকুরীর জন্য) জ্ঞানচর্চায় যা গুনগত ও সংখ্যাগত উভয় দিক দিয়েই বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার অন্তরায়। পারতপক্ষে, মানসম্মত দ্রব্য উৎপাদনেও বিশেষজ্ঞের প্রত্যক্ষ ছোঁয়ার বিকল্প নেই।

আমাদের শিক্ষা- ও কর্মক্ষেত্র-ব্যবস্থাপনায় যেথকটি শ্রেণি খুঁজে পাওয়া যায় তা হল- (১) পছন্দনীয় দক্ষতা অর্জন ও পছন্দ অনুযায়ী কর্মক্ষেত্র (অতি নগণ্য); (২) পছন্দনীয় দক্ষতা অর্জন অনুযায়ী কর্মক্ষেত্র নয় (অধিক); (৩) পছন্দ মোতাবেক দক্ষতা অর্জন নয় বরং কর্মক্ষেত্র (নগণ্য); এবং (৪) পছন্দ মোতাবেক দক্ষতা ও কর্মক্ষেত্র কোনটিই নয় (অধিক)।

এককথায়, শিক্ষার্জন ও জীবনধারনের সর্বস্তরে উপভোগ্য সময় অতিবাহিত করতে হলে মেধা ও দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রম ও কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা অত্যন্ত আবশ্যিক।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।

বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় গোড়ায় গলদ: নেই কারো মাথা ব্যথা

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় এর কতটুকু যথোপযুক্ত শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশা করা যায়? পিএসসি পরীক্ষার নামে প্রাথমিক শিক্ষায় চলছে জিপিএ পাওয়ার প্রতিযোগিতা। তাদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ডজনখানেক বই।

অথচ মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে, এই বয়সে এতগুলো বই সম্পর্কে ওরা বোঝে কি? তাদের মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টির গুণগুলো জোর করে চাপা দেয়া হচ্ছে। মূল্যবোধ ও নৈতিকতার বিপরীতে চর্চা করা হচ্ছে পাঠ্যপুস্তকের পড়া। প্রতিদিন ভোরবেলা দেখা যায়, ছোট ছেলেমেয়েরা কাঁধে বইয়ের ব্যাগ ঝুলিয়ে কোচিংয়ে যাচ্ছে।

তবে মজার বিষয় হলো, বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রস্তুতির পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে ওদের মা-বাবা অভিভাবকেরাও। প্রতিযোগিতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের চেয়ে মায়েদের ‘পড়ালেখার প্রস্তুতি’ই বেশি। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক শিক্ষায় রূপান্তরিত হলেও সেটার ভার সহ্য করার মতো ক্ষমতা যে কোমলমতি শিশুদের নেই, এ কথা সরকারি মহলের কেউ ভাবেন বলে মনে হয় না।

ওই মহলের চিন্তা কিভাবে শিক্ষাটাকে আপডেট করা যায়। শিক্ষার্থীদের শিষ্টাচার ব্যবস্থা ও মূল্যবোধ সৃষ্টিতে বর্তমান শিক্ষা কতটুকু যুগোপযোগী ভূমিকা পালন করছে পারিপার্শ্বিক অবস্থার দিকে নজর দিলেই এ ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যায়।

প্রাথমিক স্কুলগুলোতে চলছে ম্যানেজিং কমিটির অনিয়ম। রাজনৈতিক দলগুলোর আধিপত্যের বিস্তার ঘটাতে ঘটাতে ইউনিয়ন থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে ওয়ার্ড, এমনকি তৃণমূলপর্যায়ে রাজনীতিটা এমনভাবে প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, তার প্রভাব থেকে প্রাথমিক স্কুলগুলোও বাদ যাচ্ছে না। ম্যানেজিং কমিটিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী অভিভাবকেরা লড়ছেন রাস্তাতে আর তাদের ছেলেমেয়েরা এরই কুফল ভোগ করছে স্কুলে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে সঙ্ঘাত ও দ্বন্দ্ব।

বাড়ি থেকে শিখিয়ে দেয়া হয়, অমুকের ছেলে কিংবা মেয়ের সাথে মিশতে পারবে না। ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষাটা স্কুল থেকেই তার সহপাঠীকে কথিত দুশমনে পরিণত করে দিচ্ছে। এর ফল ভবিষ্যতে মনুষ্যত্ব বিকাশে অনুকূল হবে না।

বেশির ভাগ স্কুলে ম্যানেজিং কমিটির সমস্যা নিয়ে উপজেলা-জেলাকর্তা ব্যক্তিরা রয়েছেন মহাবিপাকে। সরকারি কারিকুলামের চাপিয়ে দেয়া শিক্ষা প্রদানের বিভিন্ন পদ্ধতি স্কুলে প্রয়োগের ফলে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর ম্যানেজিং কমিটি গঠনে হানাহানি রেষারেষি ইত্যাদি থেকেও বর্বরতার শিক্ষা পাচ্ছে এই ছোট ছেলেমেয়েরা। ফলে তাদের মূল্যবোধ সৃষ্টির বদলে জায়গা করে নিচ্ছে হিংসার বিষয়টি।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দেখা যাচ্ছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো থেকে তৈরি করে দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের বিষয়টি। এ পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থী নিজের সম্পর্কে কতটুকুই বা ধারণা নিতে পারে? সবেমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে না হতেই ওদের নিতে হচ্ছে ছাত্র সংসদের মতো নেতৃত্বের ভার।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা শুধু শিক্ষাঙ্গনেই পাওয়া যায় না। শিক্ষাঙ্গন হচ্ছে মূল্যবোধ সৃষ্টির চর্চাকেন্দ্র। এই শিক্ষাঙ্গনে সঠিক মূল্যবোধ পেতে দরকার শিক্ষকদের যথাযথ ভূমিকা।

পরিবেশ থেকে সৃষ্ট যেসব অনৈতিকতা শিশুকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, আজ সেই অনৈতিক প্রভাব যদি কোনো শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করে তাহলে সেই শিক্ষাঙ্গনে প্রদত্ত নৈতিকতা শিক্ষার্থীকে কখনো খুব ভালো উপহার দিতে পারে না।

ইউনিসেফ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেদারল্যান্ডসে প্রাথমিক স্কুলে শিশুদের কোনো বাড়ির কাজ দেয়া হয় না; হলেও খুব কম। লেখাপড়া করতে শিশুদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয় না। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের গুরুগম্ভীর কোনো পরীক্ষায় বসতে হয় না। দেশটির শিশুরা সবচেয়ে বেশি সুখী জীবন কাটায়।

শিশুদের জন্যে এই সুখী জীবন নিশ্চিত করাটাই সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রোজকার হোমওয়ার্ক নিয়ে মাথা ব্যথা নেই ফিনল্যান্ডের শিক্ষার্থীদের। ষোল বছর বয়সে গিয়ে তাদের মাত্র একটি বাধ্যতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। আর আমরা প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কী করছি? বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে।

ফ্রান্স যেমন স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি যোগ্য শিক্ষক বাছাই, শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করতে মনোযোগী। জাপানে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও বাছাই করার ক্ষেত্রে দেয়া হয় বিশেষ গুরুত্ব। ভুটান থেকে শুরু করে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে শতভাগ প্রশিক্ষিত শিক্ষক।

এ রাষ্ট্রগুলো দায়িত্ব নিয়ে তাদের শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করেছে। অথচ এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান অনেক দূরে। ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, মিয়ানমারে যেখানে ৮০-৯০ শতাংশেরও বেশি প্রশিক্ষিত শিক্ষক রয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশে এ হার মাত্র ৫০।

একটি বিষয় স্পষ্ট, একটি জাতি ধ্বংস হওয়ার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার গলদই যথেষ্ট। শিক্ষা ব্যবস্থা তখনই ভালো হবে যখন দেশের নীতি নির্ধারকের সন্তান থেকে শুরু করে দিন মজুরের সন্তান সরকারি স্কুল, সরকারি কলেজ ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ব্যবস্থায় পড়বে।

আর এখন এই ব্যবস্থার প্রতি কেউ সিরিয়াস না হলে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো ভঙ্গুর হয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু বেকার গ্রাজুয়েট তৈরি করবে।


লেখকঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশ্লেষক ও ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ ।

শিক্ষার মান: উচ্চ শিক্ষায় মানের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব আবশ্যক (পর্ব-১)

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার একটি অঙ্গীকার এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) একটি লক্ষ্য হলো-সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা। উচ্চ শিক্ষার মান নির্ধারন করতে পারে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পদ্ধতি এবং কোন দেশি বা বিদেশি সংস্থা। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকা জরুরি।

মান সম্মত উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ব্যক্তিক পর্যায়ে আয় বৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। তবে উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে গেলে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করাটাও জরুরি। তাদেরকে বাদ রেখে উচ্চ শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা কখনোই সম্ভব নয়।

আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা ও তার মান নিয়ে সবসময়ই পক্ষে ও বিপক্ষে আলোচনা ও সমালোচনা চলে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর দেশের মানুষ আশা করেছিল সুন্দর একটি শিক্ষানীতির মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি হবে, শিক্ষার মান বাড়বে। কিন্তু সঠিক শিক্ষানীতির অভাব ও রাজনীতির পালা বদলের মাধ্যমে বার বার নীতি পরিবর্তনের ফলে সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

উচ্চ শিক্ষার নামে আমাদের দেশে প্রচলিত যে শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে তা আসলে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার উদ্দেশে নয়, পেশাগত কাজের উপযোগী হওয়াটাই এক্ষেত্রে মুখ্য বিবেচিত হচ্ছে। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন নিয়েও আমাদের ভাবনা নেই। পাসের হার বাড়ানোই এখন গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। এ কারণে ভালো শিক্ষকও তৈরি হচ্ছে না। তাই মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা এখন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যে শিক্ষা দিচ্ছি সেটিকে উচ্চশিক্ষা বলা যাবে না।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাক্ষেত্রে নেতৃত্ব বড় ও প্রথম বিষয়। ভালো নেতৃত্ব থাকলে ছোট পরিসরে অনেক বড় কাজ করা সম্ভব। সত্যিই বলকে কী আমাদের নেতৃত্বের অভাব। আমরা ভালো গবেষক, ভালো শিক্ষক পাচ্ছি, তবে সবক্ষেত্রে সবাই যে ভালো নেতৃত্ব দেবে এমন নয়। আবার তারাই ভালো নেতা হতে পারেন যদি যথাযথ সমন্বয় হয়।

জবাবদিহিতার অভাব আরেকটি বিষয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এগুলোকেই আমি চ্যালেঞ্জ বলবো। যদি এগুলো কাটিয়ে ওঠা যায় তবে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব।

উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা কোনও ভিশন বা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারিনি। ভিশন যখন নেই, তখন মিশনও থাকছে না। তাই নীতি নির্ধারণী কোনও লক্ষ্যও নেই। আমরা চাকরির মার্কেট ও বিদেশে উচ্চ শিক্ষা যাচাই করে কাউকে শিক্ষা দিই না। একই সঙ্গে ছাত্র ও শিক্ষকদের শেখার আগ্রহ কমেছে। এটিও মানতে হবে। এসব নানাবিধ কারণে নেতৃত্বও আসেনি। যারা সত্যিকারার্থে যোগ্য তারা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে। এটি ভাবার বিষয়।

ইউজিসির দায়িত্ব হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিশ্চিত করা। অসঙ্গতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা। এই কাজে ইউজিসির যে অবকাঠামো দরকার তাতে ঘাটতি রয়েছে। মঞ্জুরি কমিশনের প্রধান জটিলতা শুরু হয় সদস্য নির্ধারণ নিয়ে। এখানে কোনও সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। আর এই কমিশনকে পারিপার্শ্বিক চাপ সামলাতে হয় অনেক বেশি।

এছাড়া আমাদের ইউজিসির লোকবলের অভাব। আবার যথাযথ লোক নিয়োগের ক্ষেত্রেও চাপের সম্মুখীন হতে হয়। এই হচ্ছে সার্বিক অবস্থা। এক্ষেত্রে ইউজিসির কাজ করা খুব কঠিন।

শিক্ষার প্রতি আমাদের গণমাধ্যমের আছে উদাসীনতা। আমাদের গণমাধ্যম ব্যস্ত থাকে রাজনীতি নিয়ে, শিক্ষাক্ষেত্রের জটিলতাগুলো আড়ালেই থেকে যায়। এগুলো সামনে আসা উচিত। উচ্চশিক্ষা ও উচ্চতর শিক্ষার পার্থক্য নির্ধারণ করতে হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীকে পেশাগত দিকে সফল হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছি, যাতে করে সে কাজ করে যেতে পারে। কিন্তু ব্যক্তি বিকাশ ভিন্ন। ব্যক্তি বিকাশ কোনও যন্ত্র দিয়ে হয় না।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যার গড় করলে আমরা দুটো সমস্যা খুঁজে পাই। একটি হচ্ছে সঠিক পরিচালনা সংকট, আরেকটি হচ্ছে শিক্ষকদের মান। শিক্ষাব্যবস্থা ও মান নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সরকারি কর্তৃপক্ষ। ফলে শিক্ষায় একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়েছে। ’৪৭-এর পর এটি আরও বেড়েছে। আলো ছড়ানো শিক্ষকদের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। উচ্চতর শিক্ষায় একজন ছাত্র নিজের জীবিকা নিয়েই ভাবছে। অন্যের জীবিকা দেওয়ার মতো প্রসারিত শিক্ষাজীবন তাকে আমরা দিতে পারছি না। উচ্চতর শিক্ষায় এই জায়গাটায় পৌঁছানোর ওপর জোর দিতে হবে।

এটিকে আমি কারিগরি শিক্ষা বলতে চাই। আমরা যে এমবিবিএস বা প্রকৌশল শিক্ষা দিচ্ছি এগুলো কারিগরি শিক্ষা। বাজার ধরার জন্য এইসব শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। যাতে শিক্ষার্থীরা পেশাগত স্থানে কাজ করে যেতে পারে। তবে এগুলো কোনওটাই উচ্চশিক্ষা নয়। কারণ উচ্চশিক্ষা হচ্ছে নির্মোহ শিক্ষা; কোনও চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে শিক্ষা দেওয়া।

সামাজিকভাবে আমরা জানি, শিক্ষা মানেই হচ্ছে অধিকার। কতটুকু অধিকার সেটি আগে আমাদের নির্ধারণ করতে হবে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ অধিকার, নাকি দশম শ্রেণি পর্যন্ত অধিকার। কার কতটুকু অধিকার সেটি জানতে হবে। জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকারেও উচ্চশিক্ষা অধিকার হিসেবে উল্লিখিত হয়নি। এখানে সাধারণ শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে বলা হয়েছে। সেটাও আবার দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উপর নির্ভর করবে। আমাদের সামাজিক গতিশীলতার কারণেই শিক্ষিত হচ্ছি। শিক্ষার কাজ গোটা জাতির জন্য যোগ্য লোক তৈরি করে তোলা। এখন মানুষ হিসেবে আমি দেশ ও জাতির সম্পদ। আমার পেছনে দেশ খরচ করে আর আমি বিদেশে চলে যাই।

বাংলাদেশে প্রতিবছর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ৯-১০ লাখ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর সবাইকে উচ্চশিক্ষা দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই, কিন্তু আবার উচ্চশিক্ষাকে অস্বীকার করার উপায়ও আমাদের নেই।

অনেক সময় মনে হয়, যারা বের হয়েছে তাদের সবার উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি আমরা সামাজিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করি, তাহলে আমাদের সবাইকে নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ এখন ডিজিটালাইজেশনের যুগ। আমরা যদি মনে করি, পঞ্চম শ্রেণি পাস করে কেউ এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে তা কিন্তু নয়। যদি আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই, উচ্চশিক্ষার পথ ধরে হাঁটতেই হবে।

উচ্চ মাধ্যমিকে ১০ লাখ পাস করা শিক্ষার্থীর মধ্যে যে এক লাখ উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে তারাই বা কী পাচ্ছে? আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোটাই তো মুখস্ত-নির্ভর। এগুলোর দিকে মনোযোগী হতে হবে আমাদের। উচ্চশিক্ষার মান যদি উচ্চতর না হয়, তবে আমরা সমাজের জন্য বোঝা তৈরি করছি বলেই মনে হয়। উচ্চশিক্ষার মান বা কোয়ালিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আশার জায়গাগুলোতে আশান্বিত হওয়ার কোনও কারণ আমি দেখি না। কেননা সবকিছুই শুধুমাত্র কাগজে-কলমে হচ্ছে। কিন্তু আসলে আমাদের যেটি প্রয়োজন, একজন ভালো শিক্ষক, সেটি কি কাগজে-কলমে মূল্যায়ন করে তৈরি করা সম্ভব? সম্ভব না। আমরা প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক সব স্তরেই ৯৯ শতাংশ পাস করাতে গিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করছি তাতে আপনি কাকে ভালো শিক্ষক হিসেবে তৈরি করবেন?

অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলতে চাই, বর্তমানে উচ্চ শিক্ষায় রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিমূলক নেতৃত্ব নির্বাচনে যে পদ্ধতি চলছে তা নিয়ে উচ্চ শিক্ষা মান উন্নয়নতো দূরের কথা, দেশে কোন স্তরে মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শিক্ষার মানোন্নয়নে ও শিক্ষা বিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে সরকার ও আমাদের সকলের কাজ করতে হবে।

তথ্যের উৎসঃ বিভিন্ন শিক্ষা বিষয়ক আলোচনা সভা।

লেখকঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশ্লেষক ও ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ ।

শিশুর বিকাশ এবং আমাদের শিক্ষা

ইসরাত জাহান ইতি


শিশুরাই জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। শিশুদের ভবিষ্যত ভাল করতে হলে তাদের শিক্ষিত ও সুখি মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তারাই হবে দেশের সমাজপতি, রাষ্ট্রনায়ক, বিশ্ব নিয়ন্ত্রতা ও আদর্শবান মহাপুরুষ। ভবিষ্যত জাতি গঠনে তারাই গ্রহণ করবে কঠিন কঠিন চ্যালেঞ্চ।

এই সম্ভাবনাকে অবশ্যম্ভাবী করার জন্য একান্ত প্রয়োজন শিশুর সঠিক বিকাশ ও প্রয়োজন শিশুবান্ধব শিক্ষা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক বৃদ্ধি হলো শারীরিক বিকাশ। আর মানসিক বিকাশ হলো আচার-ব্যবহার, চিন্তা-চেতনা, কথা বলা, অনুভূতি ও ভাবের আদান-প্রদানের ক্ষমতা অর্জন।

শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ছাড়া শিশু তথা মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ কখনই সম্ভব নয়।

শিশুর মনের আনন্দই তার দেহ ও মনের শক্তির মূল উৎস। আনন্দ ও শিশু বান্ধব পরিবেশ ছাড়া তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ কোন মতেই সম্ভব নয়। যে কোন শিক্ষাব্যবস্থা চারটি প্রধান স্তম্ভ নির্দেশ করে। যেমন জানতে শেখা, করতে শেখা, বাঁচতে শেখা ও মিলেমিশে বাস করতে শেখা। শিশুর গ্রহণ উপযোগী আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা দানই হলো তার প্রকৃত শিক্ষা।

প্রখ্যাত ফরাসী দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাঁক রুশো বলেছেন, “Education is the child’s development from with in ” অর্থাৎ শিক্ষা হলো শিশুর স্বতঃস্ফুর্ত আত্মবিকাশ।

পরিবার হলো শিশুর প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একজন শিশুর শারীরিক , মানসিক , প্রক্ষোভিক, সামাজিক প্রভৃতি বিকাশগুলো ঘটতে শুরু করে পরিবারের মধ্যেই। শিশুরা তার মা-বাবা, পরিবার, পরিজন, সমাজ ইত্যাদি লক্ষ্য করে । তাদের কথা শুনে শুনে শিখতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখেন মা। কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ, সাজ-পোশাক, চিন্তা-চেতনা, ভাবনাগুলো পর্যন্ত শিশু মায়ের কাছ থেকে শেখে।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, “তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো ”।

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে “One father is more than a hundred schoolmasters”।

বাবার সংস্পর্শে সন্তানের মস্তিষ্কে যৌক্তিক আচরণ, সামাজিক বিকাশ শেখার দক্ষতা তৈরি হয়। ফলে যে কোনো শিক্ষাদানে বাবা অনেক দ্রুত শিশুর আস্থা তৈরি করতে পারেন। বাবারা ছোটবেলা থেকেই বাইরের পরিবেশের সঙ্গে ভালোভাবে সম্পৃক্ত। তাই সন্তানের কোন কোন বিষয় ইতিবাচক ও নেতিবাচক সে সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে পারেন।

আবার পারিবারিক কলহের চাপে অনেক শিশুর স্বাভাবিক জীবনই অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনা শিশুদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেসব শিশু মা-বাবার মনোমালিন্য দেখতে দেখতে বড় হয়, তারা হতাশ, অসামাজিক ও সহিংস হয়ে বেড়ে ওঠে। তারা নানা অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকে। তাদের মনের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। ফলে মনঃসংযোগের ঘাটতি ,মানসিক রোগ ও ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিকতা ঘটতে পারে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১২ শীর্ষক এক জরিপে দেখা যায়, দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের ১৮.৩৫ শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত। এমন ঘটনা আবার মেয়ে শিশুর তুলনায় ছেলে শিশুর মধ্যে বেশি। মেয়ে শিশুর ১৭.৪৭ শতাংশের পাশাপাশি ১৯.২১ শতাংশ ছেলে শিশু মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

দেশের অধিকাংশ পরিবারের অভিভাবক সব সময় শিশুকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু কখনো বিবেচনা করে না একজন ভাল মানুষ হওয়া সমাজের জন্য তথা রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শিশু শিক্ষা ও আনন্দ একে অপরের সাথে গভীরভাবে জড়িত। আনন্দ ছাড়া কোমলমতি শিশুরা শিক্ষা লাভে উৎসাহ পায় না ।

শিশুরা শিখবে আনন্দের মাধ্যমে, নিজেদের ইচ্ছামতো, ঘুরে-ফিরে, কল্পনার ফানুস উড়িয়ে,খেলাধূলার মাধ্যমে, তাদের নিজেদের মনের অজান্তেই। এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ থমসন বলেন, শিক্ষা হলো শিশুর ওপর পরিবেশের প্রভাব, যে প্রভাবের দ্বারা শিশুর বাহ্যিক আচরণ, চিন্তাধারা এবং দৃষ্টিভঙ্গির স্থায়ী পরিবর্তন হয়।

একজন শিক্ষক সুশিক্ষিত জাতি গড়ার কারিগর। শিক্ষক হচ্ছেন শিশু শিক্ষার একজন সুনিপুন মিস্ত্রি, যিনি গঠন করবেন শিশুর মানবাত্মা। শিশুরা মা-বাবা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পেলেও, প্রাতিষ্ঠানিক সকল শিক্ষা, আদব-কায়দা, আচার-আচরণ, রীতিনীতি সবকিছুই একজন ভালো শিক্ষক থেকে শেখে। একটি শিশুর জীবনের প্রথম চার /পাঁচ বছরের মধ্যেই মোটামুটি তার ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র গঠিত হয়ে থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে একটি শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়।

শিশু যখন বেড়ে ওঠে, তখন তার মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য এবং উন্নত ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার জন্য তার সামনে ইতিবাচক আবেগ, অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরা আমাদের সবার কর্তব্য। উন্নত দেশগুলোতে এই কাজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই করে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সেটি তেমন করা হয় না। আমাদের দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শেখানোর চেয়ে পাঠ্যপুস্তকের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় । ফলে শিশুর ব্যক্তিত্বও ঠিকমতো গড়ে ওঠে না।

এই শিশুরা যখন বড় হয়, তখন তাদের মাঝে আদর্শ, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মতো বিষয়গুলো তৈরি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে সরকারিভাবে প্রাক প্রাথমিকে শিক্ষার স্তর একটি হলেও কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, সেগুলোতে নার্সারী, প্লে, কেজি ওয়ান, কেজি টু’সহ তিন থেকে চার বছর ধরে পড়ানো হয় শিশুদের। আবার এ সময় শিশুদের খেলায় খেলায় মাতৃভাষা, অক্ষর ও সংখ্যার ধারণা দেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে স্কুলগুলোতে শিশুদের গ্রামার এমনকি বিজ্ঞানও পড়ানো হয়, যা আসলেই কাম্য নয় ।

শিশুরাই আগামীর স্বপ্ন। তাই তাদেরকে ছোট থেকে ভাল মানুষ হিসেবে তৈরি করা স্কুল, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সর্বোপরি আমাদের সকলের দায়িত্ব। সুস্থ ও সুন্দর সামাজিক পরিবেশ শিশুর মেধা এবং মননশীলতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। শিশুকে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে বড় হয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে তারা অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে।

শিশুর বিদ্যালয়ে যাতায়াতসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদেরই। আসুন আমরা আমাদের শিশুদেরকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানোর পূর্বে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করি।


লেখকঃ তরুণ নারী উদ্যোক্তা।

পড়ার বিষয় যখন ফিন্যান্স এবং ব্যাংকিং

চন্দন কুমার পাল


উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করার পর ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের স্নাতক ডিগ্রীর জন্য। প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় ঊত্তীর্ণ হয়ে অনেকেই স্নাতক পড়ার বিষয় নির্ধারণ করতে দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের স্নাতক বিষয় নির্ধারণ সহজতর করার লক্ষ্যে এই লেখা।

ফিন্যান্স বিষয়টি মূলত বিভিন্ন বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সহায়তা করে। এই বিষয়টি বিভিন্ন গাণিতিক বিশ্লেষণ ও থিওরির সাহায্যে ব্যবহারিক জীবনে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

প্রতিটি কোর্সে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন থাকার দরুন আপনার উপস্থাপন করার জড়তা ও ভয় কাটবে। কোর্সের সমাপ্তিতে বাস্তব জীবনে থিওরির প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে পড়ার সুবাদে দেশের অর্থনীতি, শেয়ার বাজার, শিল্পায়ন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং আয়কর ইত্যাদি সম্পর্কে সুদৃঢ় জ্ঞান অর্জন হবে। গাণিতিক বিষয়গুলিতে দক্ষ হলেই কেবল ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে পড়ে মজা পাবেন।

ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে বি.বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করলে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়। বি.সি.এস. এ সকল ক্যাডারের পাশাপাশি বি.সি.এস. শিক্ষা – ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং (প্রভাষক) পদে শুধুমাত্র ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরাই আবেদন করতে পারে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সহকারী পরিচালক (অর্থ) পদে শুধুমাত্র ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরাই আবেদন করতে পারে।

দেশীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে (এম.এন.সি.) চাকুরির সুযোগ রয়েছে।

বিদেশে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রির ক্ষেত্রে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। শুধুমাত্র ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং- এ স্নাতক ডিগ্রীধারীরা প্রফেশনাল ডিগ্রি সি.এফ.এ. গ্রহণ করতে পারে। সি. এফ. এ. ছাড়াও সি. এ., এ. সি. সি.এ., এ্যাকচুয়ারী, সি. এস. প্রফেশনাল ডিগ্রি অর্জনের পথ সহজ হয় এবং রেয়াত (এ্যাকজিমশন) পাওয়া যায়।

শেয়ার বাজারের বোকারেজ হাউজে, মিউচুয়াল ফান্ডের অফিসে, ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠানে, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে, এ্যসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানিতে এ্যানালিস্ট হিসেবে শুধুমাত্র ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এর গ্রাজুয়েট রিক্রুয়েট করা হয়।

ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে পড়ার দরুন আপনি কম্পিউটারে দক্ষ হবেন বিশেষ করে স্পেডশিট (মাইক্রোসফট এক্সেল) ব্যবহারে দক্ষ হবেন।

সর্বোপরি, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে পড়লে আপনি নিজেকে এই প্রতিযোগিতামূলক চাকুরির বাজারে একজন দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।


লেখক: প্রভাষক,
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ,
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।