৪৭ তম বিসিএস সার্কুলার কবে হবে?

৪৭তম বিসিএস অথবা ৪৭তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষা বাংলাদেশের সরকারি পদসমূহে চাকরি পেতে স্থানীয় প্রশাসনিক পরীক্ষার একটি। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদের জন্য নিযুক্তি দেওয়া হয়। ৪৭ তম বিসিএস সার্কুলার কবে হবে?

এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য সরকারি পদসমূহে যোগ দেওয়ার জন্য যোগ্য ও যোগযোগ সাধারণ মানুষদের জন্য সহজ এবং প্রকৃত পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যা স্বাভাবিক এবং নিয়মিত পদক্ষেপের পরিণাম।

৪৬ তম বিসিএস সার্কুলার প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি)। অনলাইনে আবেদন শুরু ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে। সাধারণ প্রার্থীর আবেদন ফি ৭০০/= টাকা।

এবারের বিসিএস সার্কুলারে ৩ হাজার ১৪০ জন প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান করা হবে। আবেদন করা যাবে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত।

বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনকারী প্রার্থীদের বয়স (১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে)
মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা, প্রতিবন্ধী প্রার্থী এবং বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের প্রার্থী ছাড়া অন্যান্য সকল ক্যাডারের প্রার্থীর জন্য বয়স ২১ হতে ৩০ বছর (জন্ম তারিখ: ০২.১১.২০০২ থেকে ০২.১১.১৯৯৩ এর মধ্যে)।

মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা, প্রতিবন্ধী প্রার্থী এবং বি.সি.এস. (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের প্রার্থীর জন্য বয়স ২১ হতে ৩২ বছর (জন্ম তারিখ: ০২.১১.২০০২ থেকে ০২.১১.১৯৯১ এর মধ্যে)।

বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ও বিসিএস (কারিগরি শিক্ষা) ক্যাডারের জন্য শুধু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী প্রার্থীর বেলায় বয়স ২১ হতে ৩২ বছর (জন্ম তারিখ: ০২.১১.২০০২ থেকে ০২.১১.১৯৯১ এর মধ্যে)।

প্রার্থীর বয়স কম বা বেশি হলে আবেদনপত্র গ্রহণযোগ্য হবে না।

৪৬ তম বিসিএস সার্কুলার ২০২৩: অনলাইনে আবেদনপত্র করার নিয়ম

৪৬ তম বিবিএস পরীক্ষার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করা ঠিকানা-

http://bpsc.teletalk.com.bd

www.bpsc.gov.bd

উপরোক্ত ঠিকানায় গিয়ে অনলাইন আবেদনপত্র (BPSC Form-1) পূরণ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম এবং ফি জমাদান সম্পন্ন করতে হবে।

৪৬তম বিসিএস পরীক্ষা-২০২৩ এর বিজ্ঞপ্তি, অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণের বিস্তারিত নির্দেশনা এবং নির্ধারিত BPSC Form-1 দৃশ্যমান হবে।৪৭ তম বিসিএস সার্কুলার কবে হবে?

অনলাইন আবেদনপত্র (BPSC From-1) পূ রণের বিষয়ে ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষা-২০২৩ এর আবেদনপত্র (BPSC Form-1) অনলাইনে পূরণ, sms-এর মাধ্যমে ‘ফি’ জমাদান এবং Admit Card প্রাপ্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা শিরোনামে দেয়া থাকবে।

অনলাইন ফরম পূরণের পূর্বে প্রার্থীকে উক্ত নির্দেশনা অংশটি ডাউনলোড করে প্রতিটি নির্দেশনা ভালভাবে জেনে নিতে হবে। ক্যাডার পছন্দের ভিত্তিতে Application Form-এর ৩টি ক্যাটাগরি রয়েছে।

যেমন:

(I) Application Form for General Cadres

(II) Application Form for Technical/Professional Cadres

(III) Application Form for General and Technical / Professional (both) Cadres.

প্রার্থী শুধু General Cadre এর প্রার্থী হতে ইচ্ছুক হলে General Cadre এর Application form অংশে ক্লিক করলে General Cadre এর আবেদনপত্র দৃশ্যমান হবে।

অনুরূপভাবে, General and Technical/ Professional ক্যাডারের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক হলে তাকে Both Cadre এর জন্য নির্ধারিত অংশটি ক্লিক করলে Both Cadre এর আবেদনপত্র দৃশ্যমান হবে।

প্রার্থীর কাঙ্ক্ষিত BCS Application Form দৃশ্যমান হলে ফরমের প্রতিটি বিষয় প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী পূরণ করতে হবে।

BCS Application Form-এর ৩টি অংশ রয়েছে: (I) Part-1: Personal Information; (II) Part-2: Academic Qualification; (III) Part – 3: Cadre Option.

উল্লেখ্য, BCS Application Form পূরণ সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা এবং BCS Application Form এর প্রতিটি field এ প্রদত্ত তথ্য/নির্দেশনা অনুসরণ করে পূরণ করতে হবে।

অনলাইনে আবেদন যাচাই অন্তে দাখিল করার পর কোন পর্যায়েই প্রার্থীর কোন ভুল তথ্য সংশোধনের সুযোগ থাকবে না । ৪৭ তম বিসিএস সার্কুলার কবে হবে?

 

৪২তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা ২৩ মে শুরু

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্কঃ ৪২তম বিসিএস (বিশেষ) মৌখিক পরীক্ষা আগামী ২৩ মে থেকে শুরু হচ্ছে। এ নিয়ে সূচি প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। সূচি অনুযায়ী, আগামী ২৩ মে থেকে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হবে। চলবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত।

বুধবার (৫ মে) সরকারি কর্ম কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৪২তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে ছয় হাজার ২২ জন প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছে। ২৩ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এ মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে।

পিএসসির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মৌখিক পরীক্ষার প্রার্থীদের জন্য ডাকযোগে কোনো সাক্ষাৎকার পত্র পাঠানো হবে না। সাক্ষাৎকার পত্রটি কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করা থাকবে। সেখান থেকে মৌখিক পরীক্ষার প্রার্থীরা সাক্ষাৎকার পত্রটি ডাউনলোড করতে পারবেন।

দেশে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই দুই হাজার চিকিৎসককে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দিতে গত বছর ৪২তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় (লিখিত টাইপ) ৩১ হাজার চিকিৎসক অংশ নেন। পরীক্ষার একমাস পর ২৯ মার্চ এই বিসিএসের ফল প্রকাশ করে পিএসসি। এতে উর্ত্তীণ হয় ৬ হাজার ২২ জন।

 

বিসিএস সিলেবাস ও প্রশ্নের মান ! অনার্স শেষ করে জীবনে ২য় বারের মতো ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি?

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


উন্নত বিশ্বের লক্ষ্য যায় উচ্চ মাধ্যমিক তাদের বেসিক ডিগ্রি। তারা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে জব সেক্টরে প্রবেশ করে। জবের পাশাপাশি তারা জব সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিপ্লোমা করে কর্মক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা বাড়ান এবং তাদের মধ্যে মাত্র ২% থেকে ৩% বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।

মানবসম্পদ পরিকল্পনার অভাবে আমাদের দেশে দেখছি সকলকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে এরকম একটি অঘোষিত বিষয় হয়ে দাড়িঁয়েছে। যার ফলে দেশে সার্টিফিকেট সর্বস্ব ডিগ্রি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে বের হচ্ছে। প্রায় সকল শিক্ষার্থীরা জানে জব সেক্টরে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া কোন কাজে লাগবে না।

তাই ক্লাসের পিছনে বসে অনেক শিক্ষার্থীরা বিসিএস প্রস্তুতির জন্য ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীর সিলেবাস অনুযায়ী MP3 গাইডগুলো মুখস্থ করে। এ যেন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স শেষ করে জীবনে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ২য় বার পড়ার মতো। নীতি-নির্ধারকরা বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পড়াশুনার সাথে সমন্বয় করে আধুনিকায়ন ও সংস্কার করছেন না যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা শিক্ষার্থীদের কেবল গ্রেডের কাগজে থেকে যাচ্ছে ।

আমার কথা হলো বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস যদি সংস্কার করা না হয় তাহলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিলে তাদের জীবন থেকে সময় ও অর্থ বাচেঁ। আর যদি বিসিএস পরীক্ষারি সিলেবাস সংস্কার করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার মেজর বিষয়ের সাথে সংগতি রেখে যাতে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়।

অনেকদিন ধরে শুনছি বিসিএস পরীক্ষায় বর্তমান যে কারিকুলাম আছে, তা পরিবর্তনের জন্য শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন মহল থেকে পিএসসিকে পরামর্শে পরিবর্তন হবে। কিন্তু বাস্তবে তা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। তবে এটি সত্যি যে, উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আগের তুলনায় পিএসসি দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে কিভাবে স্বল্প সময়ে বিসিএস সমাপ্ত করছে, পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রশ্ন প্রণয়ন, পিএসসিতে শিক্ষকদের খাতা দেখার ব্যবস্থা করা, প্রযুক্তি নির্ভর পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রশ্ন ও লিখিত পরীক্ষায় নম্বর কমানো থাকাসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে কাজ করছে।

কিন্তু সিলেবাসের আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। সেই অতীত আমলের প্রিলিমিনারি প্রশ্নের সিলেবাস নিয়ে ব্যস্ত আমরা সবাই। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশুনাকে অনার্থক ভাবছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বিসিএস প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য – ৩৫, English Language and Literature – 35, বাংলাদেশ বিষয়াবলি – ৩০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি – ২০, ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব.) পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা – ১০, সাধারণ বিজ্ঞান – ১৫, কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি – ১৫, গাণিতিক যুক্তি – ১৫, মানসিক দক্ষতা – ১৫ ও নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন – ১০ সর্বমোট-২০০ নম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

লিখিত পরীক্ষায় সাধারন ক্যাডারে ৯০০ নম্বর এবং টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্য ১১০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, লিখিত পরীক্ষায় ৯০০ নম্বর থেকে যত কমানো যায় সেই চিন্তা-ভাবনা চলছে। ৯০০ নম্বর থেকে ৫০০ নম্বরে লিখিত পরীক্ষা করা হতে পারে। দীর্ঘসূত্রিতার পাশাপাশি বিদ্যমান ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় একটি নির্দিষ্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা লাভবান হচ্ছে। যে পরীক্ষা পদ্ধতি ও সিলেবাস আছে তাতে পরীক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ প্রথম শ্রেণির বেশকিছু ভালো ক্যাডার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ক্যাডার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

আমার এক পরিচিত গ্রাজুয়েট, এবার ৩৮-তম বিসিএস পরীক্ষায় ক্যাডার সার্ভিসে নিবার্চিত হয়েছে। সে বললো তোতাপাখির মতো মুখস্থ করলেই বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায়। শুধু ভাইভার জন্য ভাল উপস্থাপনা দরকার যা ক্লাসের প্রেজেন্টেশন তাকে সাহায্য করছে। অন্য আর একজন গ্রাজুয়েট বললো, বিসিএস দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির ব্যাপার এর সিলেবাস একাডেমিক সিলেবাস থেকে একেবারে ভিন্ন। এসব কারণে সে একাডেমিক পড়াশোনাকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রথম বর্ষ থেকেই বিসিএসের বই নিয়ে সারা দিন পড়ে থাকতেন।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেখলাম অনেকেই কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কতজন শিক্ষার্থী ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ সেটা সাফল্য হিসেবে দেখাচ্ছেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ক্যাডারসার্ভিসের কর্মকর্তা তৈরি করা নয় বরংচ গবেষনা করা। সে গবেষনাধর্মী পড়াশুনা থেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন কারনে বিচ্ছিন্ন। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়েও সৃজনশীল প্রশ্নের উপর গুরুত্ব দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাসকৃত গ্রাজুয়েটগন যখন বিসিএস পরীক্ষা দেন তাদেরকে মুখস্থবিদ্যার উপর নির্ভর করে পরীক্ষায় উত্তীর্ন হতে হয় যা দুঃখজনক বিষয়। অথচ আমাদের পাশের দেশ ভারত ও পাকিস্থানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সৃজনশীলপ্রশ্ন করে মেধাবৃত্তির চর্চা করা হয়।

আমরা Bloom Taxonomy অনুযায়ী জানি, প্রশ্ন করার জন্য ৬টি ধাপ রয়েছে যথাঃ Remembering, Understanding, Applying, Analyzing, Evaluating ও Creating. বাংলাদেশে বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারী প্রশ্ন পর্যালোচনা করে দেখা যায় বেশিরভাগ প্রশ্ন Remembering ও Understanding লেভেলের। অথচ আমাদের পাশের দেশ ভারত ও পাকিস্থানের প্রশ্ন পর্যালোচনা করে দেখেছি প্রায় ৮০% এর বেশি Analyzing, Evaluating ও Creating লেভেলের প্রশ্ন এবং পরীক্ষার সময়ও বেশি। উদহারণ স্বরুপ বলা যায়, বাংলাদেশে বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নঃ সাদা হাতির দেশ কোথায়? ক. থাইল্যান্ড খ. ইন্দোনেশিয়া গ. সিঙ্গাপুর ঘ. মালয়েশিয়া। অন্যদিকে ভারতের সিভিল সার্ভিসের প্রশ্নঃ হাতি সাদা হয় মূলত কোন রোগের কারনে? ক. অ্যালবিনিজম খ. লিউসিজম গ. ব্লাক কোয়াটার ঘ. ক+খ+গ। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলতে চাই, বাংলাদেশে বিসিএস পরীক্ষায় যে ধরনের প্রশ্ন করা হয় তা মাধ্যমিক লেভেলের এবং মুখস্থ নির্ভর।

আর পাশের দেশগুলোতে সিভিল সার্ভিসের প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের জন্য যথেষ্ট বাস্তবিক ও ইনোভেটিভ। তবে বাংলাদেশে বিসিএস পরীক্ষায় যে প্রশ্ন করা হয় ও সিলেবাস করা হয়েছে তা একজন উচ্চ মাধ্যমিক পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। তবে তা কোন মতে শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস বা পড়াশুনার সাথে কোন সংগতি নেই।

তবে এটি সত্যি যে, দক্ষ প্রশাসক তৈরিতে সকল সেক্টরে জ্ঞান ভিত্তিক জাতি গঠন করতে গবেষনা, ইনোভেশন ও সৃজনশীলতার কোন বিকল্প নেই। সকল সেক্টরে গবেষনার বাস্তবায়ন না থাকলে একটি জাতি ধ্বংস হতে পারে তা আমরা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারছি না।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিলেবাস ও প্রশ্নের ধরন বিষয়ে করণীয়ঃ

১। বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী যে বিষয়ে অনার্স করেছে যে বিষয়ে প্রিলিমিনারি ও লিখিত সিলেবাস অর্ন্তভুক্ত করা ।

২। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাসকৃত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কমপক্ষে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা অর্ন্তভুক্ত করা। যেমনঃ একজন শিক্ষার্থী যদি কৃষিতে অনার্স করে তাহলে কৃষির বিভিন্ন বেসিক বিষয়ের উপর ১০০ নম্বরের সৃজনশীল এমসিকিউ প্রশ্ন করে তার প্রয়োগিক জ্ঞান যাচাই করা।

৩। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীর অনার্সে পাসকৃত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যদি পরীক্ষা না নেওয়া হয়। তাহলে বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষাগত যোগ্যতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পাস চাওয়ার কোন অর্থই বহন করে না। সেক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিক পাসকৃত শিক্ষার্থীদের বিসিএস পরীক্ষায় সুযোগ প্রদান করা উচিত বলে আমি মনে করি ও পরর্তীতে যাতে তারা সামরিক বাহিনীর মতো উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারে সে নির্দেশনা প্রদান করা দরকার।

৪। দক্ষ প্রশাসক তৈরির লক্ষ্যে উপমহাদেশের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মতো বাংলাদেশে বিসিএস পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় ১০০% সৃজনশীল প্রশ্নকে গুরুত্ব দেওয়া ও পরীক্ষার সময় বৃদ্ধি করা ।

৫। বাংলাদেশে বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় সকল ক্যাডারের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অনলাইন আবেদনের পছন্দক্রম অনুযায়ী অনার্সের সংশ্লিষ্ট ৫টি বিষয়ে ১০০ নম্বর করে সর্বমোট ৫০০ নম্বরের পরীক্ষা গ্রহন করা। যেমনঃ একজন শিক্ষার্থী যদি কৃষির গ্রাজুয়েট হয় তাহলে ৫টি বিষয় যেমনঃ Fundamentals of Agronomy, Introductory Soil Science and Plant Pathology, Extension Communication and Innovation Management, Introduction to Floriculture and Landscaping ও Chemistry of fertilizer and Radio-trace Technique ইত্যাদি বিষয় তাঁর পছন্দক্রম অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।

৬। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে লিখিত পরীক্ষার প্রত্যেকটি বিষয় গুচ্ছ অনুযায়ী সাজানো দরকার। যাতে আবেদনের সময় একজন পরীক্ষার্থী তার লিখিত পরীক্ষার পছন্দক্রমগুলো টিক দিতে পারে।

৭। টেকনিক্যাল বা প্রফেশনাল ক্যাডারদের বিসিএস এ অর্ন্তভুক্ত না করে উপমহাদেশের দেশগুলোর মতো সরাসরি ভাইভার মাধ্যমে নিয়োগের ব্যবস্থা প্রয়োজন।

৮। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য Computer Science Engineering (CSE), Electrical and Electronics Engineering (EEE) ও Information Technology (IT) গ্রাজুয়েটদের জন্য সরকারি চাকুরিতে নতুন করে Information and communications technology (ICT) ক্যাডার এবং দক্ষ প্রশাসনের জন্য লোকপ্রশাসন বিষয়টি শিক্ষা ক্যাডারে অর্ন্তভুক্ত করা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লোকপ্রশাসনের এ বিষয়টি শিক্ষা ক্যাডারে অর্ন্তভুক্ত করা নিয়ে প্রফেসর ড. আবুল কাশেম মজুমদার ও বিভাগীয় প্রধান ড. জেবউননেছা, লোক প্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ‘বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন উন্নয়ন অধ্যয়ন কেন্দ্র’ নামে কাজ করছে যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

৯। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করে সকল ক্যাডারের সুযোগ-সবিধা সমান নিশ্চিত করে যে বিষয়ের গ্রাজুয়েট সে বিষয়ে কাজ করার নিশ্চয়তা প্রদান করা সংবিধান অনুযায়ী সকলের রাষ্ট্রীয় কর্তব্য বলে মনে করি।

১০। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিস একত্রে বসে ঠিক করতে হবে দেশের মানব সম্পদ পরিকল্পনা। আমাদের দেশের বেসিক মানসম্মত শিক্ষা কী অনার্স বা উচ্চ মাধ্যমিক হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের ছাত্ররা পড়বে? কারা প্রশাসক হবে এবং কারা শিক্ষক ও গবেষনায় যাবে? এগুলো নিয়ে সামগ্রিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আশা করি, বিশ্বয়ানের এ যুগে দক্ষ প্রশাসক এবং দক্ষ নেতৃত্বের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জনপ্রশাসন উপদেষ্টা মহোদয়, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মহোদয়, শিক্ষা মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী মহোদয় ও সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান উপরোক্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি ।

লেখকঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশ্লেষক, ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ এবং গবেষণায় প্রধানমন্ত্রীর ফেলোশীপ প্রাপ্ত।

৩৮তম বিসিএস: একসঙ্গে দুই বোন প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত

ডেস্ক রিপোর্ট: সাম্প্রতিককালে ৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

৩৮ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ফাতেমাতুজ জুহরা চাঁদনী ও সাদিয়া আফরিন তারিন নামের দুই সহোদর বোন।

জানা যায়, তাঁরা দুজনই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। চাঁদনী ইংরেজিতে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। অপর মেয়ে তারিন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেছেন।

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছোটদেশ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পরিবারের অবসারপ্রাপ্ত এমবিবিএস চিকিৎসক ডাঃ শামসুল ইসলাম চৌধুরীর দুই মেয়ে।

এদিকে, বর্তমানে চাঁদনী কানাইঘাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন। স্কুল জীবন থেকে অত্যন্ত মেধাবী এই দুই বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত থাকা অবস্থায় শিক্ষামূলক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সাফল্য বয়ে এনে কানাইঘাটবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেন।

কানাইঘাট উপজেলা থেকে ৩৮তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত চাঁদনী ও তারিন সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় এলাকার লোকজনের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের নাম।

এছাড়া তাদের ছোট বোন সামিয়া প্রীতিও শাবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত আছেন।

দুই মেয়ের প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় তাদের গর্বিত পিতা ডাঃ শামসুল ইসলাম চৌধুরী তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।