ভাষা কাকে বলে? বাংলা ভাষার কয়টি রূপ ও কী কী?

ভাষা কাকে বলে? বাংলা ভাষার কয়টি রূপ ও কী কী?

ভাষা : বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির মাধ্যমে মানুষের মনোভাব প্রকাশ করাকে ‘ভাষা’ বলে ৷

বাংলা ভাষার প্রকারভেদ-

প্রতিটি সচল ও শুদ্ধ ভাষার মতো বাংলা ভাষারও দুটো রূপ :
(ক) মৌখিক ও (খ) লৈখিক ৷

মৌখিক ভাষার আবার দুটো রূপ :
(ক) মান মৌখিক ভাষা ও (খ) আঞ্চলিক মৌখিক ভাষা।

লৈখিক ভাষারও দুটো রূপ :
(ক) সাধু ভাষা ও (খ) চলিত ভাষা ।

(ক) মান মৌখিক ভাষা : পরিমার্জিত ও সার্বজনীন মৌখিক ভাষাকে ‘মান মৌখিক ভাষা’ বলে ।
(খ) আঞ্চলিক মৌখিক ভাষা : বিভিন্ন অঞ্চলের কথ্যরীতির ভাষা আঞ্চলিক মৌখিক ভাষার অন্তর্ভুক্ত।

(ক) সাধু ভাষা : যে ভাষা প্রধানত তৎসম শব্দবহুল, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদসমূহ অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ অনেকটা গুরুগম্ভীর ও কৃত্রিম তাকেই সাধু ভাষা বলে ।
(খ) চলিত ভাষা : অ-তৎসম শব্দবহুলতা, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত রূপ তাকেই চলিত ভাষা বলে।

উচ্চারণরীতি কাকে বলে? বাংলা উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখো।

উচ্চারণরীতি : শব্দের যথাযথ উচ্চারণের জন্য নিয়ম বা সূত্রের সমষ্টিকে উচ্চারণরীতি বলে। ভাষাতত্ত্ববিদ ও ব্যাকরণবিদগণ বাংলা ভাষার প্রতিটি শব্দের যথাযথ সঠিক উচ্চারণের জন্য কতকগুলো নিয়ম বা সূত্র প্রণয়ন করেছেন। এই নিয়ম বা সূত্রের সমষ্টিকে বলা হয় বাংলা ভাষার উচ্চারণরীতি।

বাংলা উচ্চারণের দশটি নিয়ম

১) শব্দের আদ্য ‘অ’ এর পরে ‘য’ ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সেক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’ কারের মতো হয়। যেমন— অদ্য (ওদদো), কন্যা (কোননা) ইত্যাদি ।
২) শব্দের গোড়ায় ব-ফলার কোনো উচ্চারণ নেই; যেমন—শ্বাস, শ্বাপদ, দ্বাপর, দ্বিজ, দ্বার। শব্দের মধ্যে ব-ফলা ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব ঘটায়—বিদ্বান (বিদ্‌দান্), স্বত্ব (শৎতো)।
৩) যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সংযুক্ত ম-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন—সূক্ষ্ম (শুকখোঁ), যক্ষ্মা (জক্খা) ইত্যাদি।
৪) পদের মধ্যে কিংবা অন্তে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা যুক্ত হলে সাধারণত তার উচ্চারণ হয় না। যেমন—সন্ধ্যা (শোনধা), স্বাস্থ্য (শাসথো) ইত্যাদি।

৫) শব্দের মাঝে বা শেষে ‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ ‘খ’ হয়ে থাকে। যেমন—দক্ষতা (দোকখোতা), পক্ষ (পোক্‌খো) ইত্যাদি ।
৬) জ্ঞ অর্থাৎ জ + ঞ শব্দের গোড়ায় গঁ উচ্চারিত হয়—জ্ঞান, জ্ঞাপন। শব্দের মধ্যে গ্‌গ উচ্চারিত হয়-বিজ্ঞান, সজ্ঞান ।

৭) শব্দের দ্বিতীয় শব্দাংশে ই বা উ ধ্বনি থাকলে প্রথম শব্দাংশের এ বা এ-কার এ উচ্চারিত হয়। ফেন ফেনিল = ফেনিল, পেঁচানো = প্যাচানো, কিন্তু পেঁচিয়ে = পেঁচিয়ে।
৮) রেফ এবং র্-ফলার বৈশিষ্ট্য এই যে শব্দের মধ্যে বা শেষে এরা ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব ঘটায়। গর্ব, দর্প, সর্ব প্রভৃতি শব্দের উচ্চারণ ঠিক গর্বো, দরূপো, শরবো নয়। লিখতে হয় গর্ব্‌বো দরপো শবো। তবে প্রথম ব্যঞ্জটি খণ্ডিত । অর্থাৎ দ্বিত্ব আংশিক।

৯) ‘হ-য়ের সঙ্গে মূর্ধন্য-ণ, দন্ত্য-ন ও ম-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণে হ পরে চলে যায় । অপরাহ্ণ – অপোরাহো/অপোরাহো, ব্রাহ্মণ-ব্রাম্‌হোন ।
১০) বাংলায় বিসর্গের উচ্চারণ সম্পর্কে একটি কথাই স্মরণীয়। বিসর্গের উচ্চারণ নেই। কেবল তার প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনটির দ্বিত্ব হয়। দুঃখ = দুকখো, অধঃপতন = অধোপপতন ।

সমাস নবম শ্রেণি – বাংলা ২য় পত্র

সমাস ক. দ্বন্দ্ব সমাসের খ. কর্মধারয় সমাসের গ. তৎপুরুষ সমাসের ঘ. বহুব্রীহি সমাসের

১১. দ্বিগু সমাসকে কোন সমাসের অন্তর্ভুক্ত বলে মন্তব্য করা হয়?
ক. দ্বন্দ্ব সমাসের
খ. কর্মধারয় সমাসের
গ. তৎপুরুষ সমাসের
ঘ. বহুব্রীহি সমাসের

১২. দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাকরণবিদ কোন সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন?
ক. তৎপুরুষ খ. দ্বন্দ্ব
গ. কর্মধারয় ঘ. অব্যয়ীভাব

১৩. প্রতিটি পদের অর্থ প্রাধান্য পায় কোন সমাসে?
ক. নিত্য সমাস খ. দ্বন্দ্ব সমাস
গ. বহুব্রীহি সমাস ঘ. তৎপুরুষ সমাস

১৪. ‘জমা-খরচ’ সমস্তপদটির সঠিক ব্যাসবাক্য কোনটি?
ক. জমা খরচ খ. জমাকে খরচ
গ. জমা হতে খরচ ঘ. জমা ও খরচ

১৫. কোন সমাসে সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ পায় না?
ক. অলুক খ. নিত্য
গ. প্রাদি ঘ. উপপদ

১৬. বিশেষণের সঙ্গে বিশেষ্যের যে সমাস হয়, তাকে কী বলে?
ক. দ্বন্দ্ব খ. বহুব্রীহি
গ. তৎপুরুষ ঘ. কর্মধারয়

১৭. কর্মধারয় সমাসের কোন পদ প্রধান?
ক. অন্যপদ খ. উভয় পদ
গ. পূর্বপদ ঘ. পরপদ

১৮. দুটি বিশেষণ পদে একটি বিশেষ্যকে বোঝালে কোন সমাস হয়?
ক. দ্বিগু খ. কর্মধারয়
গ. দ্বন্দ্ব ঘ. তৎপুরুষ

১৯. ‘নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম’ কোন সমাস?
ক. দ্বিগু সমাস খ. প্রাদি সমাস
গ. বহুব্রীহি সমাস ঘ. কর্মধারয় সমাস

২০. মহাকীর্তির সঠিক ব্যাসবাক্য কোনটি?
ক. মহান কীর্তি যার খ. মহা যে কীর্তি
গ. মহতী যে কীর্তি ঘ. মহান যে কীর্তি

সঠিক উত্তর
সমাস: ১১.খ ১২.গ ১৩.খ ১৪.ঘ ১৫.ক ১৬.ঘ ১৭.ঘ ১৮.খ ১৯.ঘ ২০.গ

মোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা

 

বাংলা ১ম পত্র এইচএসসি- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি

বাংলা ২য় পত্র – পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি

বাংলা ২য় পত্রের ব্যাকরণ অংশের অন্তর্গত ধ্বনিতত্ত্ব, ধ্বনির পরিবর্তন ও সন্ধি থেকে আজ নির্বাচিত কিছু প্রশ্ন দেওয়া হলো। আমরা ধারাবাহিকভাবে এ আলোচনা ও অনুশীলনী প্রকাশ করব।

১. বাংলা বর্ণমালায় মাত্রাহীন বর্ণ কয়টি?
A. ৮টি
B. ১০টি
C. ৯টি
D. ১১টি

২. কোনগুলো বর্গীয় বর্ণ নয়?
A. চ, ছ, জ,ঝ,ঞ
B. ত, থ, দ, ধ, ন
C. ট, ঠ, ড, ঢ, ণ
D. য, র, ল, শ, ষ

৩. বাক্যতত্ত্বের অপর নাম কী?
A. শব্দক্রম
B. ধ্বনিক্রম
C. পদক্রম
D. অর্থক্রম

৪. বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি কয়টি?
A. ৭টি
B. ৮টি
C. ৯টি
D. ১০টি

৫. বাংলা বর্ণমালার ‘পরাশ্রয়ী’ বর্ণ কয়টি?
A. ২টি
B. ৩টি
C. ৪টি
D. ৫টি

৬. কোনটি যুগ্ম স্বরধ্বনি?
A. উ
B. ঋ
C. এ
D. ঐ

৭. ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে কী বলে?
A. ফলা
B. কার
C. অক্ষর
D. ধ্বনিমূল

৮. তালব্য ও নাসিক্য বর্ণ কোনটি?
A. ঙ
B. ঞ
C. গ
D. ম

৯. কোনটি মৌলিক স্বরধ্বনি?
A. ঔ
B. ই
C. ঐ
D. সব কটি

১০. কোনটি ‘বিষমীভবন’-এর উদাহরণ?
A. লাফ>ফাল
B. লাল > নাল
C. কবাট>কপাট
D. লগ্ন>লগ্গ

বাংলা ২য় – পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি

বাংলা ২য় পত্রের ব্যাকরণ অংশের অন্তর্গত উচ্চারণ ও বানান থেকে আজ নির্বাচিত কিছু প্রশ্ন দেওয়া হলো। আমরা ধারাবাহিকভাবে এ আলোচনা ও অনুশীলনী তোমাদের জন্য প্রকাশ করব।

০১. ‘সুদৃষ্টি’ শব্দের প্রমিত উচ্চারণ কোনটি?
ক. সুদৃশিট খ. শুদৃস্টি
গ. শোদৃশিট ঘ. শুদৃশ্‌টি

০২. ‘আহ্বান’ শব্দের প্রমিত উচ্চারণ কোনটি?
ক. আহোব্বান্ খ. আহোভান
গ. আউভান্ ঘ. আওভান

০৩. ‘জিহ্বা’ শব্দের উচ্চারণ কোনটি?
ক. জিওবা খ. জিউভা
গ. জিব্বা ঘ. জিবহা

০৪. ‘অপ্রতুল’ শব্দের সঠিক উচ্চারণ কোনটি?
ক. ওপেপ্রাতুল খ. অপ্রোতুল
গ. অপ্‌প্রোতুল ঘ. অপোপরতুল

০৫. ‘অধ্যাপক’ শব্দের প্রমিত উচ্চারণ কোনটি?
ক. অদ্ধাপক খ. অদ্ধাপোক
গ. ওদ্ধাপোক্ ঘ. ওধ্ধাপোক্
০৬. ‘তীব্র’ শব্দটির সঠিক উচ্চারণ কোনটি?
ক. তীবেবা খ. তিব্‌ব্রো
গ. তিবেরা ঘ. তীব্রো
০৭. ‘অক্ষর’ শব্দের কোন উচ্চারণটি শুদ্ধ?
ক. ওক্‌খোর্ খ. অক্খোর
গ. ওক্খর ঘ. অক্খর

০৮. উচ্চারণের একককে কী বলা হয়?
ক. অক্ষর খ. অনুসর্গ
গ. উপসর্গ ঘ. ধ্বনি
০৯. ‘সন্ধ্যা’ শব্দের প্রমিত উচ্চারণ কোনটি?
ক. সন্ধা খ. শন্ধা
গ. শোন্ধা ঘ. সণ্ধা
১০. শুদ্ধ বানানে লেখা নয় কোনটি?
ক. ক্ষণজীবি খ. প্রণয়ন
গ. ধারণ ঘ. নিরীক্ষণ

১১. শুদ্ধ বানানে লিখিত শব্দগুচ্ছ কোনটি?
ক. সমীচীন, হরিতকি, বাল্মিকী

খ. সমীচীন, হরীতকী, বাল্মীকি

গ. সমীচীন, হরিতকি, বাল্মীকি

ঘ. সমীচীন, হরিতকী, বাল্মীকী

১২. কোনটি শুদ্ধ?
ক. পুননির্মান খ. পুননির্মাণ
গ. পুনঃনির্মান ঘ. পুনর্নির্মাণ
১৩. কোনটি শুদ্ধ?
ক. সৌজন্যতা খ. সৌজন্নতা
গ. সৌজন্য ঘ. সৌজন্যাতা
১৪. শুদ্ধ বানান কোনটি?
ক. মুহমহু খ. মুহুর্মুহু
গ. মূহর্মূহ ঘ. মুহর্মুহু
১৫. শুদ্ধ বানান কোনটি?
ক. পরজিবী খ. সহযোগীতা
গ. তৃর্ণভোজী ঘ. বুদ্ধিজীবী

১৬. নিচের কোন বানানটি শুদ্ধ?
ক. সৌজন্যতা খ. প্রতিযোগিতা
গ. মিতালী ঘ. সহযোগীতা
১৭. কোন বানানটি শুদ্ধ?
ক. শ্রদ্ধাঞ্জলী খ. দরিদ্রতা
গ. পরিস্কার ঘ. আবিস্কার
১৮. সঠিক বানান কোনটি?
ক. পিপিলিকা খ. পিপীলিকা
গ. পীপিলিকা ঘ. পিপীলীকা
১৯. নিচের কোন শব্দটি নির্ভুল?

ক. উপর্যুক্ত খ. উপরম্নক্ত
গ. উপরিক্ত ঘ. উপরিযুক্ত
২০. নিচের কোন গুচ্ছ অশুদ্ধ বানানের দৃষ্টান্ত?
ক. আকাঙ্ক্ষা, স্বায়ত্তশাসন খ. পরিপক্ব, মরূদ্যান গ. শ্রদ্ধাঞ্জলি, মুমূর্ষ ঘ. ভিখারিনী, ত্রিভূজ

উত্তরমালা
১| ঘ. শুদৃশ্‌টি ২| গ. আউভান্ ৩| খ. জিউভা ৪| গ. অপ্‌প্রোতুল ৫| গ. ওদ্ধাপোক্ ৬| খ. তিব্‌ব্রো ৭| ক. ওক্‌খোর্ ৮| ক. অক্ষর ৯| গ. শোন্ধা ১০| ক. ক্ষণজীবি ১১| খ. সমীচীন, হরীতকী, বাল্মীকি ১২| ঘ. পুনর্নির্মাণ ১৩| গ. সৌজন্য ১৪| খ. মুহুর্মুহু ১৫| ঘ. বুদ্ধিজীবী ১৬| খ. প্রতিযোগিতা ১৭| খ. দরিদ্রতা ১৮| খ. পিপীলিকা ১৯| ক. উপর্যুক্ত ২০| ঘ. ভিখারিনী, ত্রিভূজ

রূপমূলতত্ত্ব ধ্বনিতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্ব

রূপমূলতত্ত্ব কি? ধ্বনিতত্ত্ব কি? বাক্যতত্ত্ব কি? আজকের এই পোস্টে রূপমূলতত্ত্ব ধ্বনিতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্ব কি তা জানবো।

রূপমূলতত্ত্ব কি?

রূপমূলতত্ত্ব (ইংরেজি: Morphology) নামক ভাষাবিজ্ঞানের শাখায় শব্দের (word) গঠন নিয়ে আলোচনা করা হয়।

রূপমূলতত্ত্বে শব্দের রূপ (form) ও অর্থের (meaning) মধ্যকার সম্পর্ক আলোচিত হয়। রূপমূলতাত্ত্বিকেরা শব্দকে একাধিক অর্থপূর্ণ অবিভাজ্য এককে ভাঙার চেষ্টা করেন। শব্দ গঠনকারী এই ন্যূনতম অর্থপূর্ণ এককের নাম দেয়া হয়েছে রূপমূল।

শব্দ ভাষার একটি কেন্দ্রীয় ধারণা, ফলশ্রুতিতে রূপমূলতত্ত্বের সাথে ভাষাবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলির নিবিড় সম্পর্ক আছে। রূপমূলতত্ত্ব যেহেতু শব্দের বাহ্যিক ধ্বনিগত রূপের সাথে সম্পর্কিত, সেহেতু এটি ধ্বনিতত্ত্বের সাথেও সম্পর্কিত। এই দুই শাখার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বিষয়গুলি রূপধ্বনিতত্ত্ব নামের শাস্ত্রে আলোচিত হয়।

রূপমূলতত্ত্ব যেহেতু শব্দের অর্থ নিয়ে আলোচনা করে, তাই অর্থবিজ্ঞানের সাথেও এর সম্পর্ক আছে। আবার রূপমূলতত্ত্বে আলোচিত সংগঠনগুলির অনেকগুলিই বাক্যের পদগুলির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের সাথে জড়িত। এই হিসেবে বাক্যতত্ত্বের সাথেও রূপমূলতত্ত্বের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। আবার রূপমূলতত্ত্বের সূত্রগুলি মেনে ভাষায় নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি হয় বলে অভিধানবিজ্ঞানের সাথেও শাখাটির সম্পর্ক আছে।

রূপমূলতত্ত্বের প্রধান প্রধান ধারণাসমূহ

রূপমূলতত্ত্বের প্রধান প্রধান ধারণাগুলির একটি তালিকা নীচে দেওয়া হল।
শব্দ (word)
প্রত্যয় (affix)
পশ্চাদগঠন (back formation)
যৌগীকরণ (compounding)
রূপান্তর (conversion)
অবয়বীকরণ (incorporation)
অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন (internal modification)
রূপকৌশল (morphotactics)
দ্বিত্বকরণ (reduplication)
প্যারাডাইম (paradigm)
বিভক্তি প্রকরণ (inflection)
সাধিতকরণ (derivation)
আভিধানিকীকরণ (lexicalization)
রূপমূল (morpheme)
উৎপাদনশীলতা (productivity)
প্রতিস্থাপন (suppletion)
শূন্যীকরণ (syncretism)

ধ্বনিতত্ত্ব কি?

ধ্বনিতত্ত্ব (ইংরেজি: Phonology) ভাষাবিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে কোন নির্দিষ্ট ভাষার ধ্বনি-ব্যবস্থা আলোচিত হয় । এতে বাক ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সৃজিত ধ্বনির ভৌত উৎপাদন ও অনুধাবন নিয়ে আলোচনা করা হয় ।

ধ্বনিতত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল একটি ভাষার স্বলক্ষণযুক্ত (distinctive) পৃথক পৃথক ধ্বনি-এককগুলি বের করা । উদাহরণস্বরূপ, ইংরেজিতে /p/ এবং /b/ দুইটি পৃথক ধ্বনি-একক । “pin” ও “bin” ন্যূনতম জোড়ে এই ঘটনাটি পরিলক্ষিত হয় , যে শব্দজোড়ে কেবল একটি ধ্বনির ক্ষেত্রে পার্থক্য ঘটেছে ।

বাক্যতত্ত্ব কি?

বাক্যতত্ত্ব (ইংরেজি: Syntax) নামক ভাষাবিজ্ঞানের শাখায় বাক্যের গঠন নিয়ে আলোচনা করা হয়। আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে একাধিক শব্দ কী নিয়মে যুক্ত হয়ে বৃহত্তর এককসমূহ (যাদের মধ্যে বাক্য প্রধানতম একক) গঠন করে এবং এই বৃহত্তর এককগুলোর বৈশিষ্ট্য কী, সেটাই বাক্যতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।

বৃহত্তর খণ্ডবাক্য-সদৃশ (clause-like) এককে প্রদর্শিত আচরণের ওপর ভিত্তি করে শব্দসমূহের শ্রেণীবিভাগ, বাক্যের গঠনের ওপর শব্দের আভিধানিক (lexical) অর্থের প্রভাব, বিভিন্ন প্রকারের বাক্যের মধ্যকার বিধিবদ্ধ (formal) সম্পর্ক আবিষ্কার, ইত্যাদি বাক্যতাত্ত্বিকদের (syntactician) গবেষণার বিষয়।

আধুনিক বাক্যতত্ত্বে বিমূর্তায়ন (abstraction) গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা। ধারণা করা হয় প্রতিটি বাক্যের বহিঃস্থ ধ্বনিতাত্ত্বিক (phonetic) রূপ বা তলের (surface structure) বিপরীতে একটি গভীর সাংগঠনিক তল (deep structure) বিদ্যমান, এবং এই তলদ্বয় এক ধরনের “রূপান্তর” (transformation) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংযুক্ত।

বিশুদ্ধ তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাক্যতত্ত্বের কাজ মানুষের ভাষাবোধের একটি বিধিনির্ভর (formal) মডেল তৈরিতে সাহায্য করা। আবার শ্রেণীকরণবিদ্যার (typology) দৃষ্টিকোণ থেকে বাক্যতত্ত্বের লক্ষ্য বিভিন্ন ভাষার উপাত্ত সংগ্রহ করে তাদের মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খুঁজে বের করে কিছু বর্ণনামূলক (descriptive) সাধারণ বৈশিষ্ট্য সংগ্রহ করা।

বাক্যতত্ত্বের বিধিবদ্ধ মডেল হিসেবে নোম চম্‌স্কি-র প্রস্তাবিত ‘Principles and Parameters’ মডেলটি বর্তমান বাক্যতাত্ত্বিকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়।

রূপমূলতত্ত্ব কি

রূপমূলতত্ত্ব কি? রূপমূলতত্ত্ব হল ভাষাবিজ্ঞানের একটি শাখা যা শব্দের গঠন এবং অর্থের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। বাংলা রূপমূলতত্ত্বে, বাংলা ভাষার শব্দগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়:

মূল শব্দ: মূল শব্দগুলিকে আরও ছোট শব্দে বিভক্ত করা যায় না। যেমন: “পড়া”, “লেখ”, “ভালো”
সমাস শব্দ: সমাস শব্দগুলি দুটি বা ততোধিক শব্দের সংযোগে গঠিত হয়। যেমন: “পড়াশোনা”, “লেখাপড়া”, “ভালোবাসা”
উপসর্গ শব্দ: উপসর্গ শব্দগুলি মূল শব্দের আগে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থ প্রকাশ করে। যেমন: “অতি + বৃষ্টি = অতিবৃষ্টি”, “উপ + প্রচার = উপপ্রচার”

মূল শব্দ

মূল শব্দগুলি বাংলা ভাষার সবচেয়ে মৌলিক অংশ। এগুলিকে আরও ছোট শব্দে বিভক্ত করা যায় না। মূল শব্দগুলিকে তাদের অর্থের ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

নাম শব্দ: নাম শব্দগুলি কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, গুণ, অবস্থা ইত্যাদিকে নির্দেশ করে। যেমন: “ছাত্র”, “বই”, “ঘর”, “সুন্দর”, “হাস্য”
ক্রিয়া শব্দ: ক্রিয়া শব্দগুলি কোনো কাজ, অবস্থা বা ঘটনাকে বোঝায়। যেমন: “পড়া”, “লেখ”, “আসা”, “যাওয়া”, “হওয়া”
বিশেষণ শব্দ: বিশেষণ শব্দগুলি কোনো নাম শব্দের গুণ, অবস্থা বা পরিমাণকে বোঝায়। যেমন: “বড়”, “ছোট”, “সুন্দর”, “ভাল”, “খারাপ”
সর্বনাম শব্দ: সর্বনাম শব্দগুলি কোনো নাম শব্দের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। যেমন: “আমি”, “তুমি”, “সে”, “এটা”, “ওটা”
অব্যয় শব্দ: অব্যয় শব্দগুলি কোনো নাম, বিশেষণ বা ক্রিয়া শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে বাক্যের অর্থকে পরিবর্তন করে। যেমন: “এটা”, “সেটা”, “তাই”, “না”, “হ্যাঁ”

সমাস শব্দ

সমাস শব্দগুলি দুটি বা ততোধিক শব্দের সংযোগে গঠিত হয়। সমাস শব্দগুলিকে তাদের অর্থের ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

দ্বন্দ্ব সমাস: দ্বন্দ্ব সমাস হল দুটি সমপর্যায়ের শব্দের সংযোগে গঠিত সমাস। যেমন: “পড়া + শোনা = পড়াশোনা”, “লেখ + পড়া = লেখালেখি”
কর্মধারয় সমাস: কর্মধারয় সমাস হল একটি শব্দের দ্বারা অন্য একটি শব্দের কর্মের সম্পর্ক প্রকাশ করে গঠিত সমাস। যেমন: “পড়া + যায় = পড়াশোনা”, “লেখ + যায় = লেখালেখি”
অব্যয়ীভাব সমাস: অব্যয়ীভাব সমাস হল একটি শব্দের দ্বারা অন্য একটি শব্দের অবস্থা বা গুণের সম্পর্ক প্রকাশ করে গঠিত সমাস। যেমন: “অতি + বৃষ্টি = অতিবৃষ্টি”, “উপ + প্রচার = উপপ্রচার”
উপসর্গ শব্দ

উপসর্গ শব্দগুলি মূল শব্দের আগে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থ প্রকাশ করে। উপসর্গ শব্দগুলিকে তাদের অর্থের ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

অব্যয়ীভাব উপসর্গ: অব্যয়ীভাব উপসর্গগুলি মূল শব্দের অবস্থা বা গুণের সম্পর্ক প্রকাশ করে। যেমন: “অতি + বৃষ্টি = অতিবৃষ্টি”, “উপ + প্রচার = উপপ্রচার”
কারক উপসর্গ: কারক উপসর্গগুলি মূল শব্দের সাথে একটি নির্দিষ্ট কারকের সম্পর্ক প্রকাশ করে। যেমন: “অভি + লেখক = অভিলেখক”, “উপ + লেখক = উপলেখক”
অনুকারী উপসর্গ: অনুকারী উপসর্গগুলি মূল শব্দের সাথে একটি অনুকার প্রকাশ করে। যেমন: “অনু + বল = অনুবল”, “উপ + বল = উপবল”

বাংলা রূপমূলতত্ত্ব একটি জটিল বিষয়।