ওয়াসিফ রিয়াদ
রাবি প্রতিনিধি
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সাথে গত ২৫ জুন ভাচুার্য়াল বৈঠকে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করার শর্তে এই সিদ্ধান্তে মত দেন উপাচার্যরা। এদিকে শিক্ষা-কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় এজন্য বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাসের আওতায় আনার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তবে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে নি। কর্তৃপক্ষ বলছে- ‘এই অবস্থায় অনলাইন ক্লান শিক্ষা বৈষম্যের সৃষ্টি করবে’। এদিকে ক্লাস যথারীতি বন্ধ থাকলে বড় ধরণের জটের সম্মুখীন হতে পারে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী লাইনুন লিজা বলেন, “আমরা ডিজিটাল যুগে বসবাস করছি, এমতাবস্থায় যদি আমরা বৈশ্বিক সমস্যা রোধে অনলাইনে ক্লাস করতে ব্যর্থ হই এটা আমাদের জাতীর ব্যর্থতা। সকল শিক্ষার্থীর অর্থনৈতিক অবস্থা এক হবে না এটাই স্বাভাবিক।
এক জরিপে দেখা গেছে দেশের ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করার উপযোগী অবস্থায় নেই। এ কারণে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা থেমে থাকবে এমনটা নয়। কর্তৃপক্ষের উচিত প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রী নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অব্যাহত রাখা।”
ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম বলেন, “করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার অনলাইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাস নেওয়ার কথা ভাবছে। অনলাইনে ক্লাস শুরু করার চিন্তা ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণ এর নতুন ধাপ সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু সরকারকে আগে চিন্তা করতে হবে আমরা বাস্তবিক অর্থে কতটা ডিজিটাল হতে পেরেছি বা আমাদের গ্রামীন অর্থনীতি কতটা সক্ষম।
বাস্তবতা হলো- এখনো অনেক শিক্ষার্থীর ডিজিটাল ডিভাইস নেই। শুধু তাই নয় গ্রামীণ পর্যায়ে এখনো ইন্টারনেট সুবিধা পর্যপ্ত নয়। তাছাড়া ইন্টারনেট বিল পরিচালনা করতেও অনেক শিক্ষার্থীর সমস্যায় পড়তে হয়। মেনে নিলাম বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাসে অংশগ্রহণে প্রস্তুত, কিন্তু বাকি শিক্ষার্থীদের তাহলে কি হবে? এমন পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ যেন ফুটো পাত্রে পানি ভর্তি করার প্রতিযোগিতার মতই।”
ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল বাদশা বলেন, “সেশনজট রোধে অনলাইনে ক্লাস শুরু করা জরুরী হয়ে পরেছে। অনলাইনে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হলে দেশের সকল শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসের পক্ষে থাকবে বলে মনে করছি। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস চালু করা প্রয়োজন। বর্তমানে সারা দেশে স্বায়ত্ত্বশাসিত ও সরকারি ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় আট লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।
এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন আরও অনেক শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে আছেন আরও বিপুল শিক্ষার্থী। করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পরবর্তীতে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়েও সেশনজট দূর করা যাবে না। এ জন্যই সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।”
প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় অনলাইন ক্লাস ফলপ্রসূ হবেনা বলে মন্তব্য করেছেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহানা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে অনলাইনে ক্লাস করতে পারবো না এটা হতে পারে না। কিন্তু গ্রামে উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা নেই। আমরা যদি কনভারসেশনে যুক্তই হতে না পারি তাহলে ক্লাস করবো কি করে? এছাড়াও যে সকল শিক্ষার্থীর পরিবার অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল নয় তাদের পক্ষে ইন্টারনেট খরচ দেয়া কষ্টসাধ্য হবে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক লুৎফর রহমান দ্য ক্যাম্পাস টুডেকে বলেন, ‘অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রাম চালানো সম্ভব হলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হতো। অনলাইনে ক্লাস চলছে এমন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কথা হয়েছে। জানতে পারি উপস্থিতির হার অনেক কম। এ ধরণের ক্লাস কতটুকু ফলপ্রসু হবে সেটা চিন্তার বিষয়।
আমাদের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত পরিবারের। তাদের প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। এছাড়া নিয়মিত ইন্টারনেট খরচ বহন করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইউজিসিকে কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। আশা করি আমরা ফলপ্রসু কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা দ্য ক্যাম্পাস টুডেকে বলেন, “এই সংকটের প্রভাব যেমন শিক্ষাব্যবস্থায় পড়েছে তেমনি দীর্ঘদিন অবসরে শিক্ষার্থীরা একরকম ক্লান্ত হয়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “সরেজমিনে ক্লাস এবং অনলাইনে ক্লাসের বেশ পার্থক্য রয়েছে। সকল শিক্ষার্থী এই ব্যবস্থার সাথে যুক্ত হতে পারবে না। এতে শিক্ষা বৈষম্যের সম্ভাবনা রয়েছে। রেগুলার ক্লাসের অল্টারনেটিভ হিসেবে অনলাইনে ক্লাস খুব বেশি ফলপ্রসূ হবে না।”
‘তারপরেও ইউজিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয় নিয়ে ভেবেছে। আশা করছি এই সংকট থেকে কাটিয়ে উঠতে পারবো’ তিনি যোগ করেন।