মোঃ বিল্লাল হোসেন
আজ বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস। সারা বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে পথচারীদের নিরাপত্তা ও সাইকেল চালানোতে উৎসাহী করার লক্ষ্যে। বর্তমান বিশ্ব কভিড-১৯ মহামারীর ছোবলে অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছে। লকডাউনের ফলে গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
বাংলাদেশেও দিন দিন সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর হার দুটোই বেড়ে চলেছে সমানতালে। ঠিক এমন সময় লকডাউন শিথিল করে দেওয়া হয়েছে আমাদের দেশে। খুলে দেওয়া হয়েছে প্রায় সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ।
ফলে মানুষের কাজে যোগ-দেবার তাগিদও বেড়ে গেছে। কারণ বেশিরভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই কাজে যোগদান না করলে চাকরী থেকে ছাঁটাই করে দিচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষ কাজে চাকরি বাঁচানোর জন্য কাজে যোগদান করতে বাধ্য হচ্ছে। গত ৩১ মে থেকে লকডাউন শিথিল করা হয় এরপর থেকে দলে দলে কর্মজীবী মানুষ ছুটছে কর্মস্থলে।
কর্মস্থলে যোগদানের জন্য চাই বাহন কিন্তু পাবলিক পরিবহন ছাড়াতো আর কোন সুযোগ নেই। তাই একরকম বাধ্য হয়েই কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে। গত দুদিনের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বেশিরভাগ মানুষই সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই যাতায়াত করছেন। কেউ মাস্ক পরেছে তো কেউ পরেনি। কেউ বা আবার ভিড় ঠেলে বাসে উঠছেন। যাত্রীরা যেমন স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না তেমনি গাড়ির ড্রাইভাররাও মানছে না স্বাস্থ্যবিধি।
ফলে সবাই পড়ছেন করোন সংক্রমনের ঝুঁকিতে। আবার হয়তোবা আক্রান্ত হয়েও যাচ্ছেন অনেকে। এদিকে লকডাউন উঠানোর ফলে প্রতিদিন অফিসে যেতে হচ্ছে কিন্তু গণপরিবহনে অফিসে যেতে হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে কারন এখানে সামাজিক দূরত্ব কোনভাবেই নিশ্চিত করা যাচ্ছেনা। অর্থাৎ সংক্রমনের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। আমরা কেউই সুরক্ষিত থাকতে পারছিনা।
এই গুরুতর সমস্যাটির সমাধান হতে পারে বাইসাইকেল। বাইসাইকেল সহজলভ্য, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব পরিবহন মাধ্যম। এটি যেমন আপনার শরীরকে রাখবে ফিট তেমনি করোনা সংক্রমণ থেকেও বাঁচাবে বাইসাইকেল। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাইসাইকেল ব্যবহারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো-
১) সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
২) করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।
৩) যাতায়াতের সহজলভ্য ও টেকসই মাধ্যম বাইসাইকেল।
৪) প্রতিদিনের যাতায়াত ভাড়া সাশ্রয় করতে সাহায্য করে।
৫) এটি একটি নিরাপদ বাহন।
৬) বাইসাইকেল সম্পূর্ণরুপে পরিবেশ বান্ধব।
৭) ভিড় এড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করে।
এছাড়াও বাইসাইকেল চালানোর অনেকগুলো শারীরীক উপকারিতা রয়েছে। সেগুলো হলো-
১) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২) মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় যা করোনকালীন সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩) বাইসাইকেল চালানোর ফলে দেহে প্রচুর ক্যালরি বার্ন হয় যা অতিরিক্ত ওজন কমাতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
৪) বাইসাইকেল চালালে শরীরের পেশীগুলো সুগঠিত হয়।
৫) ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভাল রাখে যেটি করোনার সময়ে অত্যন্ত জরুরী।
৬) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে সাহায্য করে।
৭) দেহে এনজাইমের কার্যকলাপ বাড়ায়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেকে এবং অপরকে করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে হলে কর্মস্থলে যাবার সময় বাইসাইকেল ব্যবহারের বিকল্প নেই। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে ও সংক্রমণ রোধে বাইসাইকেল হওয়া উচিত একমাত্র বাহন। বাইসাইকেল যেমনি পরিবেশবান্ধব তেমনি এটি চালালে আপনার শরীর থাকবে সুস্থ ও রোগমুক্ত।
তাই এবছর করোনাকালীন ‘বিশ্ব বাইসাইকেল’ দিবসে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাইসাইকেল হোক আপনি নিত্যদিনের চলার পথের সঙ্গী। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করুন।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।