“সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে” মহান আল্লাহ তালা পৃথিবীর মধ্যে যতকিছু সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে সৃষ্টির সেরা জীব হলো মানুষ । মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই সংগ্রামের সাথে একত্রে বাস করে আসছে। এরা কখনো একা বাস করতে পারে না ।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সকলের পারস্পরিক দেওয়া নেওয়া , সহযোগিতা ও সহানুভূতিশীলের মাধ্যমে সুন্দর একটি সমাজ গড়ে তোলে। এর জন্য সমাজের সহযোগিতা ছাড়া কেউ বেড়ে উঠতে পারে না।
তাই মানুষেরা সমাজের মাধ্যমে সকলকে নিয়ে বেড়ে ওঠে।অর্থাৎ সকলকে নিয়ে মানুষ বাঁচে । তাই সকলের উচিত একে অপরকে সহযোগিতা করা। সকলের প্রয়োজনে পাশা দাঁড়ানো। এর মাধ্যমেই সমাজের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।
সমাজের মহান ব্যক্তিরাই মানুষের সবসময় পাশে দাঁড়ায়, সহযোগিতা করে। তাই যারা সবসময় সমাজের কথা চিন্তা করে, মানুষের প্রয়োজনে পাশে থাকে তারাই তো মহান ব্যক্তি। মহান ব্যক্তি হতে হলে টাকা পয়সার প্রয়োজন হয় না।
প্রয়োজন একটি কমল হৃদয় ও একটু সহানুভূতি। তারই মধ্যে একটি মহৎ কর্ম হলো রক্তদান। কেননা রক্তদানের মাধ্যমে বাঁচে একটি জীবন। মানে রক্তদান হলো একটা জীবনদান।
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ২০২০ সালের ৮ইং মার্চ সর্বপ্রথম ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয় । এরপর থেকে এ দেশটির সকলে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে থমকে যায় ।
করোনা ভাইরাসে ‘মা’ মারা যায় ছেলে ভয়ে লাশটি পর্যন্ত দাফন করে নাই। অর্থাৎ যার রোগ তারই বহন করতে হয়। এই ভয়েও কেউ ঠিকমত ঘর থেকেও বের হতো না। তখনই রক্ত যোদ্ধারা ভয়হীন ভাবে মানুষের প্রয়োজনে রক্তদান করে যাচ্ছে ।
তারা রোগীদের জরুরি প্রয়োজনে নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে হাসপাতালে, ক্লিনিকে রক্ত দিয়ে সাহায্য করছে। যাতে কোনো মানুষই যেন রক্তের অভাবে মারা না যায়। অর্থাৎ রক্ত দিয়ে মানুষের প্রয়োজনে পাশে থাকাই মূল লক্ষ্য ।
করোনার মধ্যে রক্তযোদ্ধারা রক্ত দেওয়ার পাশাপাশি রোগীদের সহ সকলকে সচেতন করে যাচ্ছে । কিভাবে রক্ত দান করতে হবে, রক্তের গ্রুপ জানতে হবে। তাছাড়া করোনা নিয়েও এলাকা ভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছে যাতে করোনা ভাইরাসের বিষয়েও যেন সর্তক থাকতে পারে, এ ভাইরাস থেকে যেভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে সেই বিষয়ে বিভিন্ন সেমিনার, আলোচনা করে যাচ্ছে ।
অর্থাৎ করোনার ভয়ও রক্তযোদ্ধারের থামিয়ে রাখা যায় না। এরা অদম্য ভাবে সমাজের দায়বদ্ধ থেকে কাজ করে যাচ্ছে ।
করোনার মধ্যে রক্ত দিয়েছে, মানুষের ধারে ধারে গিয়েছেন এমন কয়েকজন এর সাথে কথা বলে জানতে পারি তাদের অনভূতি।
গাজী হাদীউজ্জামান ( যুগ্ন আহবায়ক, বরিশাল জোন, বাঁধন): একজন মানবিক মানুষ । মানুষের প্রয়োজনে যাকে সবসময় পাওয়া যায় তিনি হলেন গাজী হাদীউজ্জামান। তিনি এ পর্যন্ত ১২ বার ও নেগেটিভ (O-) রক্ত দান করেছেন। তিনি বলেন মানুষ হিসেবে মানুষের প্রয়োজনে পাশে থাকাই আমার ধর্ম। যাতে কোনো মানুষ রক্তের অভাবে মারা যায় । তিনি বলেন মানুষের পাশে থেকে কাজ করার অনুভূতি কথা দিয়ে প্রকাশ করা যাবে না।এ অনুভূতি অসাধারণ । তাই বলেন যখনই রক্তের প্রয়োজন হবে আমি নিজেই তো দেবোই পাশাপাশি অন্যদেরও দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করব।যাতে রক্তদানের মাধ্যমে একটি জীবন আবার যেন হেসে উঠতে পারে। শেষে বলেন মানুষ মানুষের জন্য , জীবন জীবনের জন্য ।
সাকিব হোসেন হৃদয় (আহবায়ক, খুলনা জোন , বাঁধন): করোনার মধ্যে মানুষের কাছে গিয়েছেন তাদের মধ্যে সাকিব হোসেন হৃদয় একজন। তিনি এ পর্যন্ত মানুষের প্রয়োজনে ১৫ বার A+ রক্ত দান করেছেন। তার কাছ থেকে জানতে পারি পৃথিবীতে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা চারিদিকে মুখরিত। কিন্তু এই বিজ্ঞান কিন্তু এখনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মানুষের শরীর ব্যতীত অন্য কোনো উপায়ে রক্ত তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। আমি মনে করি, এর প্রয়োজনও হবে না। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বর্তমান এই প্রেক্ষাপট।
করোনা ভাইরাস এর ভয়াবহ তান্ডব হয়ত থামিয়ে দিয়েছে অনেক কিছু; কিন্তু থামাতে পারিনি রক্তযোদ্ধাদের রক্তদান। শুধু রক্তদানের কথা বললে ভুল হবে, করোনা ভাইরাসে মৃত্যু সজ্জায় থাকা অসহায় মানুষকে প্লাজমা সরবরাহ করে এন্টিবডি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা যেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
হামজাহ্ মোঃ বাকী বিল্লাহ (সভাপতি , বাঁধন, ববি ইউনিট): করোনার মধ্যে অন্যতম একজন স্বেচ্ছাসেবী মানুষ। তিনি এ পর্যন্ত মানুষের প্রয়োজনে ১৩ বার এ পজেটিভ (A+) রক্ত দান করেছেন। করোনার মধ্যে কাজ করে তার অনূভুতিতে বলেন রক্তদান করলে হয় না ক্ষতি , রক্ত দিব চারমাস প্রতি। কেননা যার রক্ত প্রয়োজন তিনিই বুঝেন মুমূর্ষু সময়ে রক্ত কতটা জীবনে গুরুত্বপূর্ণ।
তাই তিনি বলেন করোনাকালেও আমি আমার সাধ্যমতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গিয়েছি যাতে কেও রক্তের অভাবে ছটফট না করে। এরজন্য সকলের উদ্দেশ্যে বলি আমরা রক্ত দিতে ভয় পাবো না।কেননা রক্তের মাধ্যমে আত্মার বন্ধন হয়, নতুন জীবন ফিরে পায়। ভয়কে কাটিয়ে মানুষের প্রয়োজনে পাশে থেকে জয় করব এটাই মানুষের মূলনীতি হওয়া উচিত।
মোঃ রাশেদুল ইসলাম (সভাপতি, বাঁধন, বশেমুরবিপ্রবি ইউনিট): মানুষের প্রয়োজনে ১৩ বার ও পজেটিভ(O+) রক্ত দান করেছেন। তিনি বলেন মানুষের সংকটের মুহূর্তে পাশে থাকা যে কতটা আনন্দের তার ভাব ভাষা প্রকাশ করতে পারব না। করোনার মধ্যে রক্ত দেওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরকে রক্ত দেওয়ার বিষয় নিয়ে উৎসাহিত করছি।যাতে কেও করোনাকে ভয় না পেয়ে রক্ত দেওয়া বন্ধ না করে।পাশাপাশি এলাকায় করোনা বিষয় নিয়ে মানুষকে সতর্ক করতে পেরেছি যাতে সকলে করোনা থেকে মুক্তি পায়। তিনি আরো বলেন একজন রক্ত দাতা হতে পেরে আমি খুবই সৌভাগ্যবান কেননা এর মাধ্যমে মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারছি, মানুষের ভালোবাসা দেখছি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের প্রয়োজনে পাশে থেকে সাহায্য করে যাব ইনশা আল্লাহ যাতে কোনো মানুষের বিনারক্তে মৃত্যু না হয়।
সর্বোপরি মানুষের প্রয়োজনে পাশে থাকাই জীবনে হয়ে উঠুক প্রধান মন্ত্র। মানুষ মানুষের জন্য আত্মনিয়োগে নিয়োজিত থাকুক। আমরা সবসময় মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াবো।যাতে সবাইকে সবাই নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। তাই আমরা একের রক্ত দিয়ে অন্যের জীবনে শান্তি ফুটিয়ে তুলব। যার মাধ্যমে সমাজের মধ্যে একটা বন্ধন গড়ে উঠবে।
প্রতিবেদনটি সাজিয়েছেন, মোঃ পারভেজ হাসান, শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।