মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
করোনাভাইরাসের ভয়ানক প্রভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার দরূন ঘর বন্দি হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও।
ছুটিজনিত অবস্থায় ‘কেমন কাটছে জবি শিক্ষার্থীদের জীবন ‘ মতামতের ভিত্তিতে জানাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী নেয়ামত উল্লাহ বলেন, বদ্ধঘরে বদ্ধ জীবন ভাবতেই পরাজয়। সময় কখনো কখনো পরাজয়ের সন্তুষ্টিতে জয়ী হতে, আত্নকেন্দ্রিকও হয়। আগে কখনও কথাগুলোর ব্যবহারিক সত্যতা খুঁজে পাই নি।ভাবতাম নিয়মের ভেতর কেঁটে যাবে এই ক্ষুদ্র জীবন। তবে অনিয়মও নিয়ম হয়ে উঠতে পারে যখন তখন। যেমনটা আজ বদ্ধ কেবিনে সবাই জমাচ্ছি দীর্ঘশ্বাস,এক অচেনা তবে কাঙ্ক্ষিত বিশুদ্ধতার অপেক্ষায়।
আমার কাছে এই দিনগুলো অনেকটা ভেঙ্গে যাওয়া দূষিত প্রেমের মত।জানি এটাই শ্রেয় তবে মানতে গেলে ফিরে দেখি পুরনো সব মোহ। সময়ের ক্ষেত্রে আসলে দুঃসময় থাকলেও অসময় বলতে কিছু নেই। এই দীর্ঘবিরতি তাই আমার চোখে একটি সুযোগ নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার। সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলো গুছিয়ে নিজেকে মুক্ত করা জমে থাকা দায় কিংবা স্বপ্ন থেকে।
স্বপ্ন নিয়ে বলতে গেলে বলবো,মানুষের স্বপ্নগুলো অধরা থাকার সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে সময় নিয়ে তার উপর একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে না পারা।আমিও প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠা বা একটা কিছু করে উঠার ইচ্ছা লালন করে চলছি বহুদিন।তার বিধিবাম ও বলা যায় সময়ের স্বল্পতা আর যান্ত্রিক বাস্তব জীবন। তবে এখনতো সময়ের পর সময় তারপরেও সময় তাই কোয়ারেন্টাইনকে ইচ্ছে পূর্ণের প্রথমস্তরে পরিণত করতে দৃঢ়প্রত্যয় নিলাম। বই পড়ার জন্য একটা নিদিষ্ট সময় আর নিদিষ্ট চেয়ার করে নিয়েছি।
বই আপনাকে চিন্তাধারা প্রসারণে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে তাই এর বিকল্প আর কিছু খুঁজে পাই নি। স্রষ্টার সাথে আত্মার দূরত্বটা মানুষের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলার মতো তাই সেই বিশ্বাস বা দূরত্বে একটা সমীকরণ করে নিচ্ছি ইদানীং। ভাবতে বসি এখন প্রতিদিনই। ভাবনার বিষয়গুলো হয়, স্বপ্নের সিঁড়িতে তৈরি হতে পারে এমন সব প্রতিকূলতা। আর সেই থেকে নিজেকে সামলে সামনের দিকে অগ্রসর হবার রাস্তা ঘিরে।
মানুষকে নিয়েও ভাবি তাদের সমস্যা এবং দায়িত্বে কতটা করবার পথ খোলা সেই অব্ধি হেঁটে যাবার চেষ্টাও করেছি বহুবার এই কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলোতে। আসলে কোয়ারেন্টাইনের সময়টা দুইটা ভাবে ভাগ করতে চাই। প্রথমটা হবে নিজেকে গুছিয়ে নেবার অধ্যায় আর শেষেরটা হবে একাকীত্বের নিজস্ব ভাষা এবং দর্শন থাকে তা উপলব্ধি করে জীবনের বাকিটা পথ চলা। আর হে “কোয়ারেন্টাইন”
তুমি যদি হও পৃথিবীর প্রয়োজনে, মাঝে মাঝে ফিরো মহাজগতের নেক্রপলিসে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহপরান জানান, বাড়িতে অযথা বসে থাকতে কারোরই ভালো লাগছে না, আমার ও না।তারপর ও নিয়তির পরিহাস যেহেতু যতদিন করোনা পরিস্থিতি ঠিক না হয় ততদিন বাড়িতেই থাকতে হবে। শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনা করাটাই আমাদের মুখ্য কাজ। তাই যত প্রতিকূলতা আসুক না কেনো পড়াশোনা তো চালিয়ে যেতে হবে। তাই করছি।
তবে গতানুগতিক ক্লাসের পড়া নয়, জ্ঞান বিজ্ঞান, সাহিত্য সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে লিখে যাওয়া বিভিন্ন মনীষীদের বইগুলো পড়ার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি স্পিকিং ইংলিশ নিয়ে কাজ করছি যাতে অনর্গল ইংরেজি বলতে পারি। ছোট ভাই, বোনকে পড়াচ্ছি। তাছাড়া আম্মুকে তার কাজে সহযোগিতা করছি। জবি শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগকেই মেসে থাকতে হয়, আমি ও তার ব্যাতিক্রম নই।
মেসে বুয়া না আসলে প্রায়ই আমাদের রান্না না করতে পারার সমস্যাটা ফেস করতে হয় তাই আম্মুর কাছ থেকে রান্না করা শিখছি টুকটাক। বেশিরভাগ সময় কাটে টেলিভিশন দেখে। বিনোদনমূলক নাটক, সিনেমা দেখছি অনেক। দেশ বিদেশের নানান সংবাদ ও দেখা হচ্ছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি ফরহাদ বলেন, বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সংক্রমিত হওয়ায় পৃথিবী একরকম স্তব্ধ হয়ে আছে এবং মানুষগুলো হয়ে আছে লকডাউন বা ঘরবন্দী। যদিও অনেক দেশেই এখন স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরতে শুরু করেছে আর সবার প্রত্যাশাও তাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয় নি যার জন্য আমাদের আরও কিছুদিন থাকতে হবে এই লকডাউন জীবনে। যার জন্য শিক্ষার্থীদের ছুটিও বৃদ্ধি পাচ্ছে অবিরত।
একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বলবো আমার এই ছুটির জীবন সম্পর্কে। প্রতিবারের বিশ্ববিদ্যালয় ছুটিতে আনন্দ কাজ করলেও এবারের ছুটি তেমন আনন্দদায়ক না কেননা এখন সবটা সময় কাটে ভয় আর উৎকণ্ঠায়। তবুও বাস্তবতা তো মেনে নিতেই হবে। আমার পুরো এই শিক্ষাজীবনের বেশী সময়টা আমার গ্রামেই কেটেছিল। কিন্তু শিক্ষার তাগিদে যেদিন থেকে বাহিরে ছিলাম তারপর থেকে কখনো এত লম্বা ছুটি নিয়ে পরিবারের সাথে কাটাতে পারি নি।
তাই, এই ছুটির সময়টা পরিবারের সাথে বেশ আনন্দের সাথেই উপভোগ করছি। মা-বাবাও অনেকদিন পর এতদিনের জন্য সন্তানকে পেয়ে অনেক খুশি। তবুও আশা করি, পৃথিবী সুস্থ হোক আর সবাই ফিরুক তাদের আপন কর্মে। তাছাড়া, অনেকদিন থেকে পছন্দের কিছু সাহিত্য পড়বো বলেও ঢাকা শহরের ব্যস্ততার কারণে আর পড়া হয়ে উঠে নি। এই ছুটির সময়টাকে বেশ কাজে লাগিয়ে সেই ইচ্ছেটা পূরণ করছি আর আরো অনেকগুলো সাহিত্য পড়ে যাচ্ছি।
বাকী যতদিন এই ছুটিটা পাবো এভাবেই কাজে লাগিয়ে দিবো। বই পড়াতে আমার একটানা এত অভ্যাস কখনোই ছিলো না, কিন্তু এই ছুটিটা আমাকে সেই অভ্যাস টা করে দিয়েছে। সবমিলিয়ে সময়টা ভালোই কাটছে। যদিও বড্ড মিস করছি আমার প্রিয় ক্যাম্পাসটাকে আর ক্যাম্পাসের মানুষগুলোকে। কেননা সেই জীবনটাও এখন আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ।
তবুও বলবো এইরকম পরিস্থিতি কভু কাম্য নয়, সুস্থ হোক এই পৃথিবী। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরুক পৃথিবীর মানুষগুলো। আবারো জমজমাট হয়ে উঠুক আমাদের দিনগুলো।