দু’দিন না খেয়ে থাকার পর গাছের পাতা খেতে শুরু করেন বৃদ্ধ

আন্তর্জাতিক টুডেঃ  করোনা সংক্রমণের বিস্তার রোধে ভারতে ঘোষণা করা হয় লকডাউন। এতে চরম বিপাকে পড়ে খেটে খাওয়া মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষ। করোনা আক্রান্ত হওয়ার আগে না খেয়ে মরার অবস্থা হয়েছে অনেকের। তবে এবার ব্যাতিক্রম ঘটনা, দু’দিন না খেয়ে থাকার পর গাছের পাতা খেতে শুরু করেন এক বৃদ্ধ। এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা।

 

 

লকডাউনের শুরুর দিকে টানা দুদিন অভুক্ত থাকার পর বাসার আঙিনার গাছের পাতা খাওয়া শুরু করেন এক বৃদ্ধ। পরে ত্রাণ সহায়তাকারীদের নজরে পড়ে শেষ রক্ষা হয় এই প্রবীণের।

 

ভারতীয় পত্রিকা সংবাদ প্রতিদিন জানায়, কলকাতা স্টেশনের ঠিক বাইরে রেলিং ঘেরা বাগানের ঝোপ থেকে কচি পাতা ছিঁড়ে মুখে পুড়ছিলেন বৃদ্ধ। দু’দিন অভুক্ত থাকার পরও যখন এতটুকু খাবারও জোটেনি, তখন উপায় কী? গাছের পাতা চিবিয়ে, পানি দিয়ে গিলে কোনোরকম টিকে থাকার চেষ্টা। লকডাউনে কলকাতায় আটকে পড়ে এভাবেই কয়েকটা দিন কাটিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের নাকাপুরা গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ গোরক্ষ সিং। না খেতে পাওয়ার কথা কাউকে বলতেও পারেননি। এই শহরও বুঝতে চায়নি তার অভুক্ত থাকার যন্ত্রণা। তবে সবাই তো আর মুখ ফিরিয়ে থাকেন না। থাকেননি রাজারহাটের আসাদুল আর ফারুক। ঘটনাচক্রে তারা দেখেছিলেন বৃদ্ধ গোরক্ষের পাতা খাওয়ার দৃশ্য। এরপর থেকে গত একমাস ধরে গোরক্ষসহ কলকাতা স্টেশনে আটকে পড়া বিভিন্ন রাজ্য ও অন্য জেলার ২৬ মানুষের জন্য ডাল-ভাতের সংস্থান করে যাচ্ছেন এই দুই যুবক। সকালে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। রাতে রাজারহাটের ওই যুবক গিয়ে ২৬ জনকে খাইয়ে আসছেন নিয়মিত।

 

 

জানা গেছে, প্রায় আশি বছর বয়সী গোরক্ষ সিং উত্তরপ্রদেশ থেকে এসেছিলেন এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিতে। সাত বছর আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করেছিলেন সেই বাড়িতে, টাকা বাকি ছিল। লকডাউনের আগে ট্রেনে কলকাতায় নামেন। বিধান নগর স্টেশন লাগোয়া ওই ব্যক্তির বাড়িতে যান। কিন্তু টাকা মেলেনি। এরপরই লকডাউনে শহরে আটকে পড়েন বৃদ্ধ। ঠাঁই হয় কলকাতা স্টেশনে।

 

 

অশীতিপর গোরক্ষ সিংয়ের সঙ্গী বলতে দুটো লাঠি। এর সাহায্যেই হেঁটে-চলে বেড়ান। অশক্ত শরীর, পকেটে এক কানাকড়িও নেই। পাতা খাওয়া ছাড়া তিনি আর কী করতে পারতেন?

Scroll to Top