নারী | তাজমিন রহমান

নারী,
দু শব্দের উচ্চারণ
অথচ তাকে বার বার পরীক্ষা দিতে হয়েছে দশভুজার মতো।
পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্রে নারীকে হতে হয়েছে অগ্নির মতো পবিত্র
কিন্তু পুরুষ রা সবকিছুর বাহিরে থেকে যায় ।

নারীর জন্য কত নিয়ম তৈরী হয়েছে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে
পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ বলে এতেই নারীর মুক্তি,
কিন্তু নিয়মের পরে নিয়মের যে শিকল নারীর হাতে পায়ে পরিয়েছে
তাতে মুক্তি হয়নি বরং হয়েছে মৃত্যু
একঝাঁক স্বপ্নের মৃত্যু, এক রাশ ইচ্ছের মৃত্যু।

মনে পড়ে পাড়া গায়ের শ্যামলা মেয়েটির কথা! !
বিকেল হলেই ছুটে আসতো নদীর ধারে
এলো চুল এলিয়ে দিয়ে মন ভরে শরৎ এর আকাশ দেখতো।
যে বয়সে মেয়েটির স্কুলে যাবার কথা ছিল
সেই বয়সেই বসতে হলো বিয়ের পিড়িতে,
যে বয়সে সাথীদের নিয়ে ছুটোছুটি করবার কথা ছিল,
সেই বয়সেই ১২ হাত কাপড় পড়ে রান্না ঘর থেকে উঠোন অব্দি তার কি ছুটোছুটি!

সবার মন যোগাতে তবুও মন পেয়েছিল কি সবার ?
মেয়েটির অবশ্য মুক্তি হয়েছিল
কিন্তু তার পিছনের গল্পটি বেশ কঠিন।

মনে আছে!! ওই মেয়েটির কথা
যার বিয়ের দু’মাসের মাথায় এক্সিডেন্ট এ মারা যায়,
একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সদ্য বিধবা মেয়েটিকে শুনতে হলো
আঃ মরন,কি অলক্ষুণে মেয়ে আনলাম ঘরে।
দুর,দুর মেয়েটির সেদিন অধিকার কেড়ে নেওয়া হলো।

মনে পড়ে পারমিতার কথা
যার পর পর বিয়ের সমন্ধ ভেঙে যাচ্ছে
কারণ সমাজের চোখে সে নষ্টা,
অথচ যে পুরুষ তাকে নষ্ট করলো
সে কি দম্ভে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ এর সামনে।
অপমান আর অপবাদে পারমিতা আত্মহত্যা করলো
পুরুষ তান্ত্রিক-সমাজ বলে উঠলো পাপ মুক্ত হলাম।

যে মেয়েটি পরিবারকে
একটু সুখের আলো দেবার জন্য বাড়তি
রোজগারের পিছনে ছুটেছিল
কিন্তু একা পেয়ে হিংস্র হায়েনারা
তাকে চিরদিনের মতো অন্ধকারে বিলীন করে দিল।
যে পরিবারে একটু সুখের আলো আসবার কথা ছিল,
আজ সেখানে অন্ধকার আরো জেকে বসেছে।

পুরুষ তান্ত্রিক-সমাজ বলে উঠলো ধর্ষণের জন্য মেয়েটি দায়ী
দায়ী তার পোশাক।
কিন্তু বিকৃত মতিষ্ক নিয়ে যে পুরুষের জন্ম,
তার সামনে কোন আইন, পোশাক বাধা হয়ে দাড়াতে পারে না।

আপনাদের মনে আছে সেই মেয়েটির কথা
একটুখানি চঞ্চল, খানিকটা উড়নচন্ডী
গলির মোড় দিয়ে কলেজে যেতে আপনারা রোজ তাকে দেখেছেন
স্বপ্ন ছিল বড় পাইলট হবার
কিন্তু আজ শুধু ভালো ভাবে বেচে থাকার স্বপ্ন দেখছে ।

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হয়নি বলে
পুরুষ নামের পাষাণ রা তার স্বপ্নটুকু ঝলসে দিল।
আজ সে উড়নচণ্ডী মেয়েটি আর নেই
খুব শান্ত আর চুপচাপ।
এখন সে আর বাহিরে আসে নাহ,
আয়না দেখেনা কত কাল।
কত বৈশাখ, ফাল্গুন,বসন্ত যায় আসে
শুধু মেয়েটির মনে রং লাগে নাহ
আর টিপ দেয় নাহ কপালে।

অনেক পুরুষ আজ অসুরের মতো দাপিয়ে যাচ্ছে,
যার কাছে মাথা নত করেছে সভ্য সমাজ,
অনেকেই আমাকে নারীবাদী বলে।

কিন্তু এমন পুরুষ কমই দেখেছি
যে লোকাল বাসে ভিড়ের মাঝে গায়ে হাত না দিয়ে সিট ছেড়ে বলেছে মা বসো।
এমন পুরুষ কমই দেখেছি যে রাস্তার মোড়ে
শিস না বাজিয়ে বলেছে বোন ভয় কি আমি তো আছি।

এমন পুরুষ কমই দেখেছি যে
তার পুরুষত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে নারীকে সন্মানের দৃষ্টিতে তাকিয়েছে।

পুরুষ তুমি ভুলে যাও কেন?
এই নারীর গর্ভে তোমার জন্ম,
১০ মাস ১০ দিন নারীর গর্ভে তোমার বেড়ে ওঠা
অথচ পৃথিবীতে পা রাখার পর নারীকে বন্দী করতে
তুমি কত নিয়ম তৈরী কর।

আমরা বীরাঙ্গনা
আমরা হারতে শিখিনী,
সময় খুব সন্নিকটে
নারীরা জাগবে আবার,
নারী জাগরনের এই উত্তাল
সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেঙে চুরে যাবে পুরুষ তান্ত্রিক সমাজের তৈরি
এক একটি নিয়ম,
মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে এক একটি কাঠামো।।


তাজমিন রহমান
শিক্ষার্থী, লোক সাহিত্য বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

Scroll to Top