বশেমুরবিপ্রবি: অনলাইন ক্লাস নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের ৭ দফা দাবি

প্রেস বিজ্ঞপ্তি: অনলাইন ক্লাস শুরু বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাত দফা শর্ত বেঁধে দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন।

এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বশেমুরবিপ্রবি সংসদের সভাপতি রথীন্দ্র নাথ বাপ্পী ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল মিলন বলেন, “সারাদেশ করোনা মহামারীতে যখন বিপর্যস্ত তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম শুরু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করায় নেটওয়ার্ক সমস্যা সহ নানাবিধ সংকটের মধ্যে থাকার পরেও সেইসব সংকট সমাধান না করেই অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করাকে একটি বৈষম্যমুলক প্রক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বশেমুরবিপ্রবি সংসদ।”

দাবিসমূহ:

১. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাস করার যাবতীয় ডেটা খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করতে হবে।আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।

২. যে সকল শিক্ষার্থীদের ডিভাইস নেই, তাদের চিহ্নিত করে ডিভাইস কেনার জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. রাষ্ট্র ও টেলিকম অপারেটরদের সহযোগিতা নিয়ে সব শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে।

৫. প্রত্যেকটি ক্লাস যেকোনো সময় যেন যেকোনো শিক্ষার্থী ডাউনলোড করতে পারে তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট সহ, ডিপার্টমেন্টের ফেসবুক গ্রুপ, ইউটিউব ও গুগল ড্রাইভে আপলোড করে মুক্ত অবস্থায় রাখতে হবে। শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

৬. ক্লাসে উপস্থিতির ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা বা মার্কস রাখা যাবে না। এ সকল ক্লাসকে অফিসিয়াল ক্লাস হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।

৭. শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাউন্সিলিং কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে।

এ বিষয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, “সারাদেশে করোনা ভাইরাস ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রত্যেক পরিবারেই কেউ না কেউ বা প্রায় সবাই প্রতিনিয়ত অসুস্থ হচ্ছেন। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। আর্থিক অনটন তৈরি হয়েছে প্রত্যেকটি পরিবারের ক্ষেত্রেই।

অন্যদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, যাদের যথেষ্ট টাকা আছে, তারাই স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে, যারা স্থানীয় প্রভাবশালী, তারাই সরকারি রেশন-আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে। যারা ক্ষমতাকাঠামোর সাথে যুক্ত বা তার আশপাশে অবস্থান করে, তারাই নানাবিধ অন্যায়ের বিচার পাচ্ছে। যারা ভিন্ন মত -দর্শনের চর্চা করে তাদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। এসবের ফলে ইতোমধ্যে সমাজে একটি চরম বৈষম্যমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ঠিক এমন অবস্থায়, যখন দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে অনলাইন ক্লাস শুরু করে, তখন সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াই চূড়ান্ত ভাবে বাধাগ্রস্ত হয় বলেই আমরা মনে করি।

সব ছাত্রের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করে অনলাইন ক্লাস শুরু করা হলে তা হবে ছাত্রদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের চরম বৈষম্যমূলক আচরণ। যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্পষ্টতই শ্রেণিবৈষম্য তৈরি করে।একটি প্রগতিশীল ছাত্র-গণ সংগঠন হিসেবে ছাত্র ইউনিয়ন যা কোনোভাবেই সহ্য করবে না।”

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো জরিপ না করেই দায়সারা ভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের আর্থ-সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাকে উপেক্ষা করে, শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত না করেই, যখন একজন শিক্ষার্থী চূড়ান্ত আর্থিক সংকটে ভুগছে,চিকিৎসা সংকটে ভুগছে, মানসিক দ্বন্দ্বে ভুগছে, খাদ্য সংকটে ভুগছে তখন অতিরিক্ত বোঝা হিসেবেই এই অনলাইন ক্লাস কার্যক্রমকে শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।”

তারা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হচ্ছে জ্ঞান উৎপাদন করা এবং মানবিক ও সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সেই জ্ঞান সমাজে ছড়িয়ে দেয়া। সেই উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়তই ছাত্র -শিক্ষকের সম্মিলন ঘটা প্রয়োজনীয়। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ক্লাসরুমে সেই সম্মিলন ঘটা সম্ভব হচ্ছে না।

দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলা এখং অদক্ষতার ফলে আরো দীর্ঘদিন এ সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যেই তিন মাস সকল প্রকার শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত হয়ে আছে, যা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটি বিকল্প শিক্ষা দান পদ্ধতি যখন শুরু হতে যাচ্ছে তখন বিদ্যমান সংকটগুলোকে উপেক্ষা না করে মোকাবেলার দাবি জানাচ্ছি আমরা।

উক্ত পরিস্থিতিতে পাঠদানের প্রয়োজনীয়তা এবং শিক্ষার্থীদের অধিকারের কথা আমলে নিয়ে অনলাইন ক্লাস শুরুর পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিম্নোক্ত শর্তসমূহ যথাযথভাবে পূরণের দাবি জানাচ্ছি।

উপরোক্ত দাবিসমূহ কেবল মাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আমরা মনে করি অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সংকটসমূহ বিদ্যমান।

তাই যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে উক্ত দাবিসমূহ আমলে নিলে ছাত্র -শিক্ষক তথা পরিবর্তিত শিক্ষা পরিস্থিতির জন্যই ভালো হবে।

অন্যথায় এইসব দাবি না মেনে ক্ষমতা প্রদর্শন করে চাপিয়ে দেয়া হলে তা ফলপ্রসূ হবে না এবং দেশের আপামর ছাত্র সমাজ তা মেনে নেবে না।”

Scroll to Top