ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ(ডাকসু) বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক এবং স্বাধিকার আন্দোলনের সূতিকাগার।
বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন,উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান বা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ডাকসুর হাত ধরে পার হয়ে জন্ম হয়েছে সোনার বাংলাদেশের।
যুগে যুগে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অনেক আন্দোলনের অন্যতম রাজসাক্ষী দেশের এই মিনি পার্লামেন্ট, ডাকসু।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর প্রায় তিন দশক অচলাবস্থার পর গত বছরের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন হয়।।অনেক বিতর্ক, চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ২৩ মার্চ ডাকসুর প্রতিনিধিরা দায়িত্ব গ্রহন করেন।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রের ৬-এর (গ) ধারায় বলা হয়েছে, “সংসদে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পদাধিকারীরা ৩৬৫ দিনের জন্য কার্যালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন না করা যায়, তাহলে কার্যনির্বাহী পদাধিকারীরা অতিরিক্ত ৯০ দিন দায়িত্ব পালন করবেন।
ওই ৯০ দিনের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া মাত্র পূর্বতন সংসদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেঙে যাবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্ধিত ৯০ দিন সময় পার হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই সংসদ ভেঙে যাবে।”
সেই অতরিক্ত ৯০ দিন পেরিয়ে আজ ২২ জুন, সোমবার শেষ হচ্ছে ডাকসুর কমিটির মেয়াদ। তবে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো তৎপরতা চোখে পরেনি।।
এ বিষয়ে ডাকসু সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী হবে এবং নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে প্রশাসন কী ভাবছে- জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, “উপাচার্যের একক সিদ্ধান্তে ডাকসু নির্বাচন হয় না। এটি একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এতে অনেক স্টেকহোল্ডার জড়িত। তাদের সাথে কথা বলা প্রয়োজন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, “করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় গত তিন মাস ধরে আমরা কোনো কাজ করতে পারিনি। এখন সবকিছুই স্থবির হয়ে আছে। আমরা চাই পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের সুযোগ দেওয়া হোক এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ডাকসুর পরবর্তী নির্বাচন দিয়ে ধারাবাহিতা বজায় রাখা হোক।”
অন্যদিকে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগ্রহী নয় বলে অভিযোগ করেন নুর। তিনি বলেন, “গত ১৪ জুন সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে আমি পরবর্তী ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। উপাচার্য কোনো উত্তর দেননি। ডাকসুর নির্বাচন নিয়ে বরাবরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিষ্ক্রিয় থাকছে।”
এ সময় তিনি পরবর্তী নির্বাচন সঠিক সময়ে দেওয়ার বিষয়ে সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, “করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আমাদের অনেক কাজই অসম্পূর্ণ রয়েছে। এখনও আমাদের খরচের অডিট বাকি। মাত্র ছয় মাসের অডিট সম্পন্ন হয়েছে। ডাকসুর ফান্ডে ৯০ লাখ টাকা অব্যবহৃত রয়েছে। এই টাকাটা আমরা শিক্ষার্থীদের সহায়তায় খরচ করতে চাই।”
ডাকসুর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘দুর্যোগকালীন সহায়তা ফান্ড’ গঠনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা ফান্ড কালেকশন করে অনেক শিক্ষার্থীকে সহায়তা করেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তাই পরিস্থতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত আমাদের সুযোগ দেওয়া উচিত। এটা নিয়ে আমরা উপাচার্য স্যারের সাথে বসব।”
যদিও মেয়াদ শেষে পদে থাকাকে অনৈতিক মনে করছেন ডাকসুর সহ সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন।
তাহলে কি আবার সেই ২৮ বছরের পুনরাবৃত্তি ঘটবে নাকি ডাকসু নির্বাচন অতি শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হবে!!তা দেখার জন্য উন্মুখ পুরো বাংলাদেশ।