রমজান ও তারাবী নিয়ে তাদের ভাবনা

ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের জন্য মহিমান্বিত ও পূর্ণ্যময় মাস হিসেবে পরিগনিত হয় রমজান মাস। বলা হয়ে থাকে এই মাস অন্য মাসের চেয়ে হাজারগুণ শ্রেষ্ঠ।

এ মাসে একটি ভাল কাজের বিনিময় সত্তরগুন বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। রমজান মাসের একটি বিশেষ আকর্ষণ তারাবীর নামাজ।

কুরআনের হাফেজগন তাদের সুললিত সূরের মূর্ছনায় কুরআন তেলওয়াত করে নামাজের সময়টা মুখরিত করে তোলেন। বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে এবারের করোনা প্রেক্ষাপট ও রমজান মাস নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাফেজ ও হাফেজাদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মাসুম মাহমুদ

“আলহামদুলিল্লাহ সকল প্রশংসা সেই মহান প্রতিপালকের প্রতি যিনি এই অধমের বক্ষে মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন ধারণ করার তাওফিক দিয়েছেন। মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া  সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করা এবং সারাজীবন বক্ষে ধারণ করা কারো পক্ষেই সম্ভব না।

নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের জন্য পবিত্র কুরআন মুখস্থ করা এবং বক্ষে ধারণ করার মত কঠিন কাজকে সহজ করে দিয়েছেন।  তাই আল্লাহ তায়ালার এই বিশেষ নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সম্মান দেখিয়ে নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা এবং আজীবন বক্ষে ধারণ করা প্রত্যেক হাফেজে কুরআনের জন্য বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য।

পবিত্র রমজান মাসে এই মহাগ্রন্থ আল-কুরআন আল্লাহ তায়া’লা তার প্রিয় রাসুল (সঃ) এর ওপর অবতীর্ণ করেছেন। রাসুল (সঃ) রমজান মাসে তারাবি এবং তাহাজ্জুদ নামাজে অসংখ্যবার কুরআন খতম করতেন। তাই প্রত্যেক হাফেজে কুরআনের জন্য পবিত্র রমজান মাসে তারাবি নামাজের মধ্যে কুরআন খতম করার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে ২০২০-২১ সালে করোনা মহামারীর কারনে খতমে তারাবি থেকে অধিকাংশ হাফেজরা বঞ্চিত হচ্ছে।

এটা হাফেজদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক এবং হুমকি স্বরূপ। তাই আমি মনে করি আমাদের দেশের মসজিদ গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খতমে তারাবি ব্যবস্থা করলে একদিকে আমরা পবিত্র মাহে রমজানের ফজিলত অর্জন করতে পারবো এবং অন্যদিকে আমাদের দেশের হাফেজদের জন্য কুরআন চর্চার একটা বিশেষ সুযোগ তৈরি হবে।  আল্লাহ তায়া’লা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।”

হাফেজ মোঃ হাবিবুল্লাহ
লোক-প্রশাসন বিভাগ।

”ইসলামী বারটি মাসের শ্রেষ্ঠ মাস হলো রমজানুল মোবারক। এর ফজিলত ও বরকত অতুলনীয় রমজান মাসে এক একটি নেক কাজের বিনিময় সত্তর গুন সওয়ার  বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। এই মাসের বিশেষ একটি আমল হলো তারাবি নামাজ।

বাংলাদেশর প্রায় মসজিদে খতমে তাবারির নামাজ আদায় করা  হয়। পবিত্র রমজান মাস ব্যাপী হাফেজদের সুমধুর কন্ঠে পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াতের মাধ্যমে এই নামাজের ইমামতি করানো হয়। তাই রমজান মাস আসার পূর্বেই হাফেজরা ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে তারাবি নামাজ পড়ানোর জন্য মসজিদ নির্ধারণ করেন।

আমি দীর্ঘ আট বছর যাবত খতমে তাবারি নামাজ বিভিন্ন মসজিদে পড়াচ্ছি।প্রতিদিনেই তারাবি নামাজে আমার পিছনে শত শত মুসল্লী পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত শুনেন তারাবীর এই অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করা যাবেনা। এই প্রশান্তি পৃথিবীর কোথাও খুজে পাওয়া যাবেনা।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পরও  তারাবি নামাজ  প্রতিবছর পড়িয়ে যাচ্ছি গত বছর করোনার কারনে মসজিদে খতমে তারাবির নামাজ পড়াতে পারিনি  পরিবারের সাথে বাসায় নামাজ পড়ানো হয়েছে। আর এই বছর মসজিদে  খতমে তারাবি নামাজ পড়ানোর জন্য সকল প্রস্ততি  গ্রহন করা হয়েছে।

করোনা ও লক ডাউন ইস্যুতে জানিনা শেষ পর্যন্ত কি হয়। আশা করি যতদিন  পৃথিবীতে বেঁচে থাকবো ততদিন তারাবি নামাজে পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত শুনিয়ে যাবো মুসল্লীদেরকে। ইনশাআল্লাহ।”

হাফেজ কামরুল হাসান
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ।

”অবশ্যই রমজানের মাসে মর্তবা অনেক বেশী। আল্লাহ তায়ালা বলছেন রোজার পুরস্কার সে নিজে দিবেন। এছাড়া আমরা জানি রমজান মাসে  সব ইবাদতে নেকি সত্তর গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আর তারাবিহ আল্লাহর পাকের পক্ষ থেকে রমজান মাসের অন্যতম নেয়ামত। এটি সুন্নত ইবাদত হলেও রোজাদারদের কাছে তারাবিহর মূল্য কম নয়।

বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর সকল মুসলিমের কাছে তারাবিহ পড়া সহ সেহরী ও ইফতার সব কিছুই  উৎসবের মত। গত বছর করোনাকালীন সময় হওয়ায় সামাজিক মেলামেশায় বিধিনিষেধ থাকায় জামায়াতে নামাজ পড়ায় বাধা প্রাপ্ত হলেও আমি মনে করি ইবাদত করার খুব ভালো সুযোগ হয়েছিল। বলতে পারি রমজানও একটি বিধি নিষেধের মাস। এই মাসে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পানাহার এবং বিভিন্ন অযথা ও অপরাধমূলক কাজ থেকে সংযত থাকার আদেশ করা হয়েছে ইসলাম ধর্মে।

এই রমজান মাসে সকলকে অভ্যাস করানো হয় সারা বছর কীভাবে জীবন যাপন করা উচিত। আর এবছর  লকডাউন থাকায়  মানুষ বাহিরে অবাধ মেলামেশা , অযথা সময় ব্যয় করা হতে বিরত থাকবে এবং ধর্মের ও দেশের সকল আইন মেনে রমজান উৎযাপন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।”

হাফেজা জান্নাতুল ফেরদৌস
মার্কেটিং বিভাগ।

“রমজান মাস বরকতময় মাস। কোরআন নাজিলের মাস। এ মাসে কোরআন খতম করা হবে এবং বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা হবে এটাই একজন মুমিনের আকাঙ্ক্ষা। অন্যান্য মাস গুলিতে কোরআন খতমের তেমন একটা সুযোগ পাওয়া যায় না বা সুযোগ করা যায় না কিন্তু রমজানে সবাই কোরআন খতম দেয়ার চেষ্টা করে।

রমজানের তারাবিতে কোরআন খতমের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ মাসে হাফেজ সাহেবগণ মধুর সুরে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে তারাবির নামাজ পড়িয়ে থাকেন। হাফেজ সাহেবগণ কোরআন খতম ও তারাবীর নামাজকে আনন্দের সাথেই উপভোগ করেন, সেইসাথে  কোরআন তেলাওয়াতের যে মজা, তা তারা উপলব্ধি করেন। যদি কোন কারনে  রমজানে  খতম তারাবি পড়ানোর সুযোগ না হয় তবে সে নিজের ভেতরটাকে শূন্যতা অনুভব করেন , নিজেকে পাপী মনে হয়। বৈশ্বিক করোনা মহামারী হলো আল্লাহ প্রদত্ত।

সুতরাং আমরা নিজেদের নেক আমল এবং ভালো কাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে মহামারী থেকে রক্ষা পেতে পারি। লকডাউন ও রমজানের তারাবি সম্পর্কে বলতে চাই,করোনা মহামারী থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে সরকার তাৎক্ষণিকভাবেই লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে করোনার শুরুর দিকের লকডাউন এবং এক বছরের অধিক সময় পরের লকডাউনের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ লকডাউন কে আগের মতো আর গুরুত্ব দিচ্ছে না। তবে সকলেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন যাপন করা উচিত।

সর্বোপরি আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণের মাধ্যমেই সম্ভাব্য আসন্ন সকল বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারি এবং দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণকামী হতে পারি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন।”

হাফেজ মোঃ সোলাইমান 
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলী বিভাগ।

“রমজান মাস রহমতের মাস, এ মাস আমাদের মনে এক অন্যরকম  অনুভূতি জাগ্রত করে। বিশেষ কিছু ইবাদতের দ্বারা সুসজ্জিত  মাহে রমজানের  অন্যতম  হলো তারাবীর সালাত। মাসজিদসমূহে তারাবীর সালাত অনুষ্ঠিত  হবে আর এ সময়টাতে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে সবাই একসাথে দীর্ঘ দিন সালাত আদায় করার মাধ্যমে। এটা এমন এক অনুভূতি যা আসলে লিখে বোঝানো যাবেনা। আমি মেয়ে তাই হয়তো মাসজিদে গিয়ে তারাবীর সালাত আদায় করা হয়না কিন্তু এ স্বর্গীয় অনুভূতি আমাকে উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত করে।

আসলে রমজান এমন এক মাস  যেটা রহমত, মাগফিরাত,ও নাজাত দিয়ে পরিপূর্ণ  তাই করোনার জন্য আমরা তেমন ক্ষতিগ্রস্ত  হবো না ইনশাআল্লাহ, কারন ভাল এবং মন্দ  সবই তো আল্লাহর পক্ষ  থেকে আসে তিনি আমাদের এর দ্বারা পরিক্ষা করে থাকেন করোনাকালিন সময়ে হয়তো পূর্বের তুলনায় তারাবীর সালাতে মুসল্লীর সংখ্যা  কম হবে এছাড়া আর কোন পরিবর্তন  আমার মনে হয় হবেনা।

আর আশাকরি আল্লাহর অশেষ  মেহেরবানিতে দ্রুতই এই করোনা নির্মূল  হবে এবং আবারো তারাবীর সালাত আদায় করার জন্য মুছল্লীদের ঢল নামবে মাসজিদসমূহে এমনটিই প্রত্যাশা ইনশাআল্লাহ্‌।
সকলের সুস্থতা ও সুন্দর জীবন কামনা করছি।”

আরজু আক্তার, মার্কেটিং বিভাগ,
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

Scroll to Top