করোনার মহামারিতে আতঙ্কে পুরো বিশ্ব। গত ৩ মাসের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্যাম্পাসে শিগগিরই ফেরা হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। তাই বলে এত দীর্ঘ সময় পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা ঠিক হবে না বলে মনে করেন শিক্ষাবিদেরা।
এই সংকট দূরীকরণে শিক্ষা মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
অনলাইন ক্লাস নিয়ে কী ভাবছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা-তা তুলে ধরেছেন দ্য ক্যাম্পাস টুডের সরকারি তিতুমীর কলেজের প্রতিনিধি আরাফাত হোসেন।
আহমেদ ইসতিয়াক ফারদিন
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং, চতুর্থ বর্ষ।
“করোনাভাইরাস যেহেতু খুব দ্রুতই পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে না, তাই এই সময়ে অবশ্যই অনলাইন ক্লাস যথেষ্ট কার্যকরী এবং যুগোপযোগী একটি পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি। যেহেতু ২০১৫-১৬ সেশন এবং তার পূর্ববর্তী সেশনগুলো ইতোমধ্যে সেশনজটে জর্জরিত। অপরদিকে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী ঢাকার বাইরে অবস্থান করছে সেহেতু ইন্টারনেট ব্যবহার তাদের জন্য অনেক ব্যয়সাপেক্ষ।
এমতাবস্থায় বিভিন্ন মোবাইল অপেরেটরের যেমন বিভিন্ন সোশাল অ্যাপ এর বান্ডেল আছে, সেরকম অনলাইন ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অ্যাপ এর “ডাটা বান্ডেল” প্যাক ঘোষণা করা উচিৎ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকেও এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ যেন সেখানে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।”
ইসরাত জাহান লাজুকী
গণিত বিভাগ, তৃতীয় বর্ষ।
বর্তমান সময়ে অনলাইন ক্লাস একটি পরিচিত নাম। এই করোনা মহামারীতে গৃহবন্দী জীবনে পড়াশোনা চালু রাখার একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে এই অনলাইন ক্লাস। তিতুমীরে অনলাইন ক্লাস হবে এটা ভাবিনি কারণ অনলাইন ক্লাসগুলো প্রথমে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিতে দেখেছি। পরে অনেকটা সময় গড়ানোর সাথে আমাদের সরকারি তিতুমীর কলেজেও অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। এখন প্রায় নিয়মিতই অনলাইন ক্লাস নিচ্ছেন ডিপার্টমেন্টের স্যার ও ম্যাডামরা।
তারা আমাদের যন্ত সহকারে যেমন ক্লাসে পড়া বুঝানোর চেষ্টা করতে ঠিক একইভাবে অনলাইন ক্লাসেও আমাদের বুঝানোর চেষ্টা করেন। ম্যাডাম ও স্যারদের চেষ্টায় পড়াশোনা চাকা এখন এইসময়েও চলমান আছে এই অনলাইন ক্লাস এর সুবাদে।”
সাঈদ হাসান রাফি
গনিত বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ।
“বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ‘অনলাইন ক্লাস’ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত পরিচিত প্লাটফর্ম। আমাদের তিতুমীর কলেজও এর বাহিরে নয়। ইতোমধ্যে আমাদের শিক্ষকরা অনলাইন ক্লাসের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং ক্লাস শুরু করে দিয়েছেন। দেশের সংকটকালীন সময়ে অনলাইন ক্লাসের গুরুত্বারোপের পাশাপাশি বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
অধিকাংশ শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন জায়গায় গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে।বাস্তবিকভাবে যে সমস্যাগুলো অনুভব করছি তার সাথে সকলের কিছু সমস্যা তুলে ধরতে চাই। প্রথমত, অনলাইন ক্লাসে মনোনিবেশ করা সরাসরি ক্লাস থেকে কষ্টসাধ্য। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাটা থাকা প্রয়োজন। কারণ ইতিমধ্যেই সরকার ফোন কোম্পানিগুলোর ওপর অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করছেন। আবার অনেকে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে সরাসরি অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। এ বিষয়গুলোর জন্য একটি সঠিক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
দীর্ঘ তিন মাস সময় ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই সময়টা শিক্ষার্থীদের কথা যদি বিবেচনা করি তাহলে অনলাইন ক্লাস একান্ত জরুরী এবং এটি দ্রুততার সাথে কার্যকর করা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে পরিকল্পিতভাবে কার্যক্রমগুলো পরিচালনার অভাব বোধ করছি। আমাদের প্রত্যাশা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধানগণ শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে একটি সময়সূচী নির্ধারণ করে দিবেন এবং আমরা সেখানে অনলাইন ক্লাস এ জয়েন করব। এবং যারা সরাসরি অনলাইন ক্লাসে জয়েন করতে পারছে না তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
নুর মোহাম্মদ সুমন
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ।
দীর্ঘদিন দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা পড়াশোনায় বেশ পিছিয়ে আছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কবে খুলবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাহলে আমরা কি শিক্ষাক্ষেত্রে অনিশ্চিত পথে হাটবো! ইতোমধ্যে প্রযুক্তির সহায়তায় অনলাইনে ক্লাস নেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটা শিক্ষার্থীদের জন্য বড়ই আনন্দের। তবে দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরিবার নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত এবং অজয়পাড়া গ্রামের। যার ফলে অনলাইনে ক্লাসে অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি হয়।
গ্রাম অঞ্চলগুলোতে নেটওয়ার্ক স্পিড কম থাকায় গ্রামে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। ফলে তারা পিছিয়ে পড়ছে। বর্তমান সময়ে কলরেট বৃদ্ধি করায় এমবি কিনে নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ করা মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য বামন হয়ে চাঁদ ধরতে যাওয়ার মত। আর নিম্নবিত্তদের কথা নাই বললাম।
দেশের অধিকাংশ শিক্ষকগণ ভার্চুয়াল শিক্ষাব্যবস্থায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। অনলাইনে ক্লাস নিতে গিয়ে অনেকসময় শিক্ষকদের ট্রোলের স্বীকার হতে হয়। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের হট্টগোল তো আছেই!”
জান্নাতুল ফেরদৌস হিমি
গণিত বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ।
আমরা এখন খুবই কঠিন সময় পার করছি। এমতাবস্থায় নিজেদের মনোবল ধরে রাখাটা বেশ কঠিন। লকডাউনের দীর্ঘ সময় ঘরবন্দি থেকে একাকীত্ব বোধ করছিলাম। নিজেকে পড়াশোনায় ব্যস্ত রাখলে আমাদের সময়টা কাজে লাগাতে পারব। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকদের দেখে মনে হয় পুনরায় পাঠ কেন্দ্রে ফিরে গিয়েছি। অনেকেই গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করায় তাদের নেটওয়ার্ক সমস্যা হয়। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও অনলাইন ক্লাস শিক্ষার্থীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
মনিষা
ভূগোল ও পরিবেশ, দ্বিতীয় বর্ষ।
সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও উন্নত ইন্টারনেট ব্যবস্থা ছাড়া অনলাইন ক্লাস পরিচালনা বেশ অবাস্তব চিন্তা। বহু শিক্ষার্থী এখন এমন স্থানে আছেন, যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ খুব দুর্বল। সবাই যদি একই রকম সুযোগ-সুবিধা না পায়, তাহলে ক্লাস চালিয়ে নেওয়া কি ঠিক হবে?
এমনিতেই আমরা একটা দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে আছি। এমন সময়ে কাউকে পেছনে রেখে বাকিরা তো সামনে এগোতে পারে না। দীর্ঘদিন একাডেমিক পড়ালেখা থেকে দূরে থাকলে আমরা একটা সংকটে পড়ব, সেটাও সত্যি। এ ক্ষেত্রে গ্রুপভিত্তিক অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কেউ সময়মতো ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারলেও পরে যেন দেখে নিতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার মধ্যেই থাকবে এবং সংকট কেটে গেলে সেশনজট এড়াতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”