অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম

অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম

তানভির আহমেদ
হাবিপ্রবি প্রতিনিধি


দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন আ’ক্রান্তের সাথে ক্রমশ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃ’তের সংখ্যা। সেই সাথে বাড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির সংখ্যা।

তাই অফলাইন থেকে অনলাইনে ইন্টারনেট নির্ভর বিভিন্ন সেবার সাথে মানুষকে সুপরিচিত করেছে তুলেছে করোনাকালীন ঘরব’ন্দী এই সময়।

টেলিপ্যাথি, ই-কমার্স এর পাশাপাশি ক্যারিয়ার আড্ডা, টকশো, বিভিন্ন সভা-সেমিনার, এমনকি নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স অনলাইনে করা থেকে ক্লাস পর্যন্ত করছে মানুষ।

অনলাইন ক্লাস ধারণার সাথে এদেশের শিক্ষার্থীরা সুপরিচিত না হলেও বেশ কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছেন। এমনকি অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে সেমিস্টার শেষ করার ঘটনাও ঘটছে সেখানে।

গত ২৬ মে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান এর সভাপতিত্বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে একটি অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সেশন জট কমিয়ে আনতে অনলাইন ক্লাসে চালুর বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ।

ইউজিসি জানিয়েছেন অনলাইনে ক্লাস হলেও হবেনা কোন পরীক্ষা। উক্ত সিদ্ধান্তের আলোকে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) সম্প্রতি অনলাইন ক্লাসে যাওয়ার জন্য অফিস আদেশ জারি করেছেন কর্তৃপক্ষ। এতে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম চালিয়ে যেতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্ব-স্ব অনুষদীয় ডীনগনকে বলা হয়েছে।

অফিস আদেশ জারি হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।

বিভিন্ন বিভাগ এবং অনুষদে খোঁজ নিয়েও অনলাইন ক্লাস চালুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিতির সংখ্যা তুলনামূলক কম বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান বলেন, “ক্লাস শুরু করা প্রয়োজন, চাকুরির দিক থেকেও বয়স বাড়ছে। অনেকের মোবাইলে থ্রি জি নেটওয়ার্ক সেবা ও ডেটার দাম বেশি হওয়ায় সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে রেকর্ড ক্লাস, ভিডিও, পিডিএফ পরে দেখে নেওয়া যায়! এছাড়া আমরা বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এখন সারাদিন অনলাইনেই থাকি। করোনা পরিস্থিতি কবে নাগাত স্বাভাবিক হবে তারও ঠিক নেই। যাদের সমস্যা তাদের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখা উচিত, যাতে শিক্ষা বৈষম্য সৃষ্টি না হয় “।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ ব্যাচের এফপিই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মিনহাজ আবিদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পর থেকে মেসে না থেকেও ৫০% মেস ভাড়া দিয়ে আসছি। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বেকার হয়ে বাড়িতে পরে আছে। এছাড়াও কিছু শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার কথা থাকলেও তা কবে করা হবে জানিনা। আমি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাবো, প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে ক্লাস শুরু করতে। যাদের সমস্যা আছে তাদের জন্য যেনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়”।

জনসংযোগ ও প্রকাশনা শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. শ্রীপতি সিকদার জানিয়েছেন, “অনলাইন ক্লাসের উপর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নিয়ে ইতোমধ্যে একটা প্রশিক্ষন কর্মশালা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশ কিছু বিভাগ অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের হাতে ছোট মোবাইল ফোন রয়েছে যার দ্বারা ক্লাস করা সম্ভব নয়।

এক্ষেত্রে মঞ্জুরী কমিশন বা সরকার ‘ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপটপ’ প্রকল্প যদি কোনভাবে শুরু করতে পারে তাহলে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে, তাহলে শিক্ষাটাকে আমরা একটা পর্যায়ে রাখতে পারবো”

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা.মো: ফজলুল হক (মুক্তিযোদ্ধা) বলেন, “মার্চের মাঝামাঝি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে। সীমিত আকারে অফিস গুলো চালু রাখা হয়েছে। হলগুলো ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শুধুমাত্র বিদেশি শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করছেন এ মুহুর্তে। এতো লম্বা ছুটিতে শিক্ষার্থীরা কিছুটা জটে পড়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। সেই জট কাটিয়ে উঠতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা আরম্ভ করেছি আমরা।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *