অনলাইন ক্লাস: মফস্বলের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা
![অনলাইন ক্লাস: মফস্বলের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা](https://thecampustoday.com/wp-content/uploads/2020/07/resize1594658848711.jpg)
মুহম্মদ সজীব প্রধান
শিক্ষা ব্যবস্থাও রেহাই পায়নি করোনার সংক্রমণ থেকে বরং শিক্ষা ব্যবস্থা আজ লণ্ডভণ্ড এবং শিক্ষার্থীরা হতাশাগ্রস্ত।
বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থীর সুরক্ষার জন্য গত ১৮ মার্চ দেশের সকল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
কিন্তু করোনার নিষ্ঠুর আক্রমণ থেকে গোটা পৃথিবী কবে মুক্তি পাবে এবং ক্লাস-পরীক্ষা পুনরায় কবে চালু হবে সে বিষয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। আর তাই শিক্ষক অধ্যাপক থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় একরাশ উদ্বেগ।
এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সেমিস্টার পদ্ধতিতে সিলেবাস শেষ করার একটি নির্দিষ্ট সময় থাকায় সেখানে দীর্ঘদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলে পরবর্তীকালে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়েও কোর্স শেষ করা জটিল হয়ে যায়।
এমনকি এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট সৃষ্টি হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে আর সেশনজট বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এক অভিশাপের নাম যার ফলে ক্যারিয়ার গড়ায় অনেক শিক্ষার্থীকে বেগ পেতে হয় এবং চাকরির বাজারে হিমশিম পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম শুরু হয়েছে যা একটি শিক্ষার্থীবান্ধব উদ্যোগ।
কিন্তু এ উদ্যোগ সর্বস্তরের শিক্ষার্থীর জন্য সুফল বয়ে আনতে পারবে কিনা সে বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট। কেননা, যেসব শিক্ষার্থীদের বাড়ি শহরাঞ্চলে এবং অনলাইন ক্লাস করার জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস রয়েছে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারলেও যেসব শিক্ষার্থী বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করে তারা চাইলেও অনলাইন ক্লাসের সু্বিধা ভোগ করতে পারবেনা আর এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি।
বস্তুত, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থীই গ্রামে অবস্থান করছে আর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ইন্টারনেটের বেহাল দশার কারণে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটবে সে কথা নিঃসন্দেহে বলা হয়।
বর্তমানে ইন্টারনেট প্যাকেজ অত্যন্ত ব্যয়বহুল যা অনেক মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীর সামর্থ্যরে বাইরে। শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অসংখ্য শিক্ষার্থী রয়েছে যারা দারিদ্রতার কারণে স্মার্ট ফোন সেবার বাহিরে রয়েছে।
ইতোমধ্যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কথাও ভাবছে কিন্তু এসব শিক্ষার্থী কিভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে সে বিষয়ে রয়ে যায় শঙ্কা।ফলশ্রুতিতে, মফস্বলের একঝাক মেধাবি শিক্ষার্থী অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়বে।
তাই তাদের জীবনাকাশ হতাশার ঘনঘটা কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। কেননা, এদের কাঁধে থাকে পরিবারের হাল ধরার বিশাল দায়িত্ব। একাডেমিক পড়া শেষ করে কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়াই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
এমন করুণ পরিস্থিতিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেধাবি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাকে গতিশীল রাখতে এবং স্বপ্ন পূরণের পথকে মসৃণ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে এমনটাই প্রত্যাশা।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।