আটকানো যাচ্ছে না সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ

আটকানো যাচ্ছে না সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ 

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রীর বিরক্তি প্রকাশ, নির্দেশনা প্রদান, অর্থমন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারি- কোনো কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ। প্রায় প্রতিটি একনেক প্রকল্পেই থাকছে দেশের বাইরে সফরের সুযোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে জনগণের টাকায় প্রমোদ ভ্রমণের আয়োজন করছেন সরকারি চাকুরেরা। কর্মকর্তাদের বিদেশভ্রমণ প্রীতির কথা স্বীকার করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রীও।

এক তলা থেকে আরেক তলা যেতে অতিগুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম লিফট। তাই এই সরঞ্জামটি হওয়া চাই সবচেয়ে ভালো। লিফটটি কোন কারখানায় তৈরি হচ্ছে আর কিভাবে, তা জানাও খুব জরুরি। আর এই অতি প্রয়োজনীয় লিফটের গুরুত্ব সবচেয়ে ভালো বুঝেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালযের শিক্ষক-কর্মকর্তারা। লিফট কেনার প্রক্রিয়ায় ছিলো ৮ শিক্ষক কর্মকর্তার সুইজারল্যান্ড ও স্পেন ভ্রমণও।

নাসার স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ জিতে যুক্তরাষ্ট্র যাওযার কথা ছিলো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীর। কিন্তু ভিসা জটিলতায় যাওয়া হয়নি। কিন্তু তাই বলে দেশের প্রতিনিধি থাকবে না, এমনটা মানতে পারেননি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। প্রতিযোগীদের ছাড়াই ৮ জন কর্মকর্তা ঠিকই গেছেন যুক্তরাষ্ট্র।

এতগুলো বছরেও বাংলাদেশের মানুষ পুকুর খনন শিখতে পারেনি। আর তাই গতবছর, রাজশাহীর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ঠিক করলো, বিদেশ থেকে দক্ষতা ধার করতে হবে। বানানো হলো প্রকল্প। বিদেশ যাবেন ১৬ জন। খরচ ১ কোটি ২৮ লাখ।

এগুলো সবই গণমাধ্যমে খবর হয়েছিলো। ডিসেম্বরে একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীও বিরক্ত হয়েছিলেন। বলেছিলেন, অহেতুক ভ্রমণ বন্ধ করতে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। এমনকি, বাজেটের পর, অর্থমন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্রও জারি হয়েছে। তবু দক্ষতা আর প্রশিক্ষণের উদ্যমে মরিচা পড়তে দেননি সরকারি কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “জ্ঞান অর্জন বা আদান প্রদানের একটা বিষয় আছে। আপনারা যদি এখই আবদ্ধ জলাশয়ে সারা জীবন বাস করেন তাহলে আপনি কিন্তু আরো আবদ্ধ হয়ে যেতে পারেন।”

এবছরও উন্নয়ন প্রকল্পে অতি প্রয়োজনীয় কিছু বিদেশ সফরের কথা এসেছে গণমাধ্যমে। যেমন, টেংরা-পাবদার মতো দেশি মাছ চাষের বিদেশী প্রশিক্ষণ নিতে যাবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালযের ১৪ জন। আর সৌর বিদ্যুতের জন্য সারা বিশ্বেই সুপরিচিত বাংলাদেশ। সেই সোলার প্যানেল নিয়েই জ্ঞান নিতে বিদেশ যাবেন ১২ কর্মকর্তা।

বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের (ঢাকা অফিস) সাবেক লিড ইকোনমিস্ট, ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মাইক্রো ফাইনান্স এ বাংলাদেশ পায়োনিয়ারের ভূমিকা পালন করেছে। তবে এটা একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে যেখানে প্রযেক্ট করলেই বিদেশে যাওয়া যাবে। এজন্য প্রজেক্টের ওপর আগ্রহটা বেশি। একটা প্রজেক্ট হলেই তো বিদেশ যাওয়া যায়। ট্রেনিং বা দক্ষতা শেষে বিদেশ থেকে ফিরে সেই প্রজেক্টের অপর আর নজর থাকে না। কারণ আরেকটা প্রজেক্ট হলে তো আবার বিদেশ যাওয়া যাবে।

সরকারও চাইছে, সরকারি চাকুরিজীবিদের জ্ঞান অর্জনের নামে বিদেশ ভ্রমণের রাশ টানতে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, অপচয় মোটেও গ্রহণ যোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী অনেকবার বলেছেন। আমি নিজেও লক্ষ্য করেছি দল গঠন করা হয়। এটা নিয়ে টু প্লাস টু ইকুয়াল টু ফোর বোঝানোর জন্য খুব বেশি বুদ্ধির প্রয়োজন হয় না।

বেশকিছু প্রকল্পে যে অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ রাখা হয় তার প্রমাণ মেলে জার্মানি, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও কানাডায় গরুর প্রজনন দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিলের মধ্য দিয়ে। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সূত্র: ডিবিসি নিউজ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *