আবরার আমার বন্ধু

আবরার আমার বন্ধু

আবরার আমার বন্ধু। একই সেশনের (‘১৭) ছাত্র আমরা। একই জেলা জন্মস্থান আমাদের। ওকে খুন করা আর আমাকে খুন করার মধ্যে তত্ত্বগত কোনো ভিন্নতা নেই। আজ ও খুন হয়েছে, কাল আমি খুন হবো, পরশু আপনি খুন হবেন। গতপরশুও দ্বীপ খুন হয়েছিলো, গতকালও বিশ্বজিৎ খুন হয়েছিল।


কিন্তু আমি অনেক খুশি এটা দেখে যে, আমার বন্ধু আবরারের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে আমার দেশের মানুষগুলো চুপ নেই। নিঃসংকোচে প্রতিবাদ করছে সবাই। বিচার চাইছে দেশের কাছে। আজ ওদের এতো এতো প্রতিবাদের এই জোয়ারের কারণেই আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার-প্রক্রিয়া তীব্র গতিতে এগোচ্ছে। তবে এ এক লজ্জাজনক সত্য। বিচারের জন্য কেন হাজার হাজার মানুষ সমস্বরে চিৎকার করে বলবে, বিচার দাও, বিচার চাই? বিচার কেন আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের মতো স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক প্রবৃত্তি নয়? কেন অন্যায় করা মাত্রই বিচার কার্যক্রম শুরু হয় না?


যাক সেসব কথা। আমার দেশের মানুষ জেগে উঠেছে এটাই বড় কথা। তবে একটা প্রশ্ন, কাল যখন আমি মরবো তখনও কি আমার দেশের মানুষ একইভাবে প্রতিবাদ করবে? বিচার চাইবে?


বুয়েটেরই ছাত্র দ্বীপ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে নৃশংসভাবে কোপ খেয়ে মরেছিলো তখন তো আমার মানুষগুলো বিচার চায়নি। একের পর এক ব্রাহ্মণ যখন সিরিয়ালি খুন হতে থাকলো, তখন তো আমার মানুষগুলো বিচার চায়নি। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরও তো আমার মানুষগুলো হত্যাকারীদের উপর ক্রাশ খাওয়া ছাড়েনি৷


প্রিয়া সাহা ও ইসকন ইস্যুকে কেন্দ্র করে আমার মানুষগুলো তো হিন্দুদের দেশদ্রোহী বলতে থামেনি। একই সফরের মুহিবুল্লাহ যখন দেশে এসে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নিয়ে সমাবেশ করে বলে রোহিঙ্গারা না চাইলে বাংলাদেশের কেউ তাদের বের করে দিতে পারবে না। রোহিঙ্গারা এই দেশেই এই ভূখণ্ডেই অধিকার নিয়ে থাকবে। তখন তো আমার মানুষগুলো একটুও উদ্বেগ দেখায়নি। অথচ এখন আসাম থেকে নাগরিকত্ব হারানো বাঙালি আসতে না আসতেই আমারই মানুষগুলো বড্ড চিন্তায় পড়েছে।


স্বজাতি বাঙালির চেয়ে বিজাতি রোহিঙ্গা কেন বড়? আমাদের কাছে হিন্দু মারাঠির চেয়ে মুসলিম বাঙালি বেশি প্রিয় – বোধহয় এটাই হিন্দুদের ভুল। আমরা জয় শ্রী রাম বলে সারাবিশ্বের হিন্দু একত্রিত হই না এবং এক হিন্দুত্বের ছায়াতলে পুরো বিশ্বকে আনতে চাই না – বোধহয় এটাই হিন্দুদের ভুল।


কেন আবরার হত্যার দায় হিন্দুদের উপর চাপাতে চাওয়া হচ্ছে? কেন অনিক সরকারকে হিন্দু বলে প্রচার করা হচ্ছে? কেন প্রশাসনের কারণ দেখানোর পরও অমিত সাহাকে হত্যাকারীদের দলে ফেলা হয়নি বলে এতো প্রতিবাদ? প্রতিবাদটা আবরারের খুন হওয়ার জন্য নাকি অমিত সাহাকে খুনি সাব্যস্ত করার জন্য? কেন হঠাৎ খুনি হিসেবে দর্শায়িত মোঃ অনিক সরকারকে নিয়ে এখন আর খুনি বলে চিল্লানো হচ্ছে না?


নাদিয়া, আসিফ মহিউদ্দিন, নয়ন চট্টা আর পিনাকী ভট্টারাই আজ প্রতিবাদের উৎসস্থল। এরা উসকে না দিলে আমার মানুষগুলো বিচার চাইতে পারে না, কথা কইতে চায় না, প্রতিবাদ করতে জানে না৷ একটা হিন্দুকে খুনি বা জঙ্গি বানাতে এদের যেই নিরলস পরিশ্রম, তা হয়তো খুব তাড়াতাড়িই সফলতার সূর্য দেখবে। এরা খুব তাড়াতাড়িই হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাধিয়ে ওলটপালট করে খাবে।


সব খুনিকে আজ থেকে ধর্ম দিয়েই বিচার করা হোক। মোঃ অনিক সরকার একজন খুনি। শ্রী অমিত সাহা মেজরিটির বিচারে একজন নৃশংস খুনি। করো মূর্খের দল – করো এ বাণী প্রচার। ডাকিয়া আনো আঁধার। খুনির জয়ে অবিকার। আজ থেকে সব নষ্টদের অধিকার।



লিখেছেন শ্রী অর্পন কৃষ্ণ গোস্বামী, ফেসবুক পাতা থেকে।



সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *