আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার অহংকার!

আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার অহংকার!

শাফিউল কায়েস


আমরা অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অহংকার করি। পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমসহ বাস্তবতায়ও একে অপরকে ছোট করে দেখি। পাবলিক-প্রাইভেটে সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়! জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাবলিক-প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা নানাভাবে ছোট করে দেখে।

প্রকৃত কথা হচ্ছে, একটি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কিছুই দিতে পারে নি, একটা সার্টিফিকেট দিয়েছে…? অবশ্যই, অস্বীকার করার কিছুই নেই।

একটি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছে, কিভাবে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে রাজনীতি করেন। শিক্ষকরা সকাল ৮ টার ক্লাস ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রেখে বিকেল ৪ কিংবা ৫ টার সময় নেন! উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছিলাম…কিন্তু দুঃখজনক আমাদের সিলেবাসের পড়ার বাহিরে একটি মানবিক গল্প বা ভালোবাসার গল্প শেখায় নি। আমি বলবো- একটি বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে একটি শিক্ষিত সার্টিফিকেট দিয়েছে কিন্তু সুশিক্ষিত হওয়ার সার্টিফিকেট দেয় নি।

একজন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে বলতে দেখেছি- “ক্লাসরুমে বসে ছাঁড়পোকার কামড় আর গণশৌচাগারে বসে হাগাকালীন (টয়লেট করার সময়) পশ্চাদদেশের উপর দিয়ে তেলাপোকা ভ্রমণের মনঃকষ্ট থেকে সমালোচনা করাই যায়!”

এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বলতে শুনেছি- “আরে, ওরা ত পড়ে প্রাইভেট-জাতীয়তে; আর আমরা পড়ি পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে। ওদের থেকে আমরা বেটা। পাবলিকে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাইতে হয়। আর ওরা ত পড়ে টাকা দিয়ে। পাবলিকে চান্স না পাওয়ারা পড়ে প্রাইভেট-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে।”

পাবলিক-প্রাইভেট-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের মূল্য নেই? আছে। তবে তা আমাদের সমাজে যে ধরনের ধারণা-ভাবনা প্রচলিত, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।

অপ্রিয় হলেও সত্য, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা সফল মানুষেরা নিজের চেষ্টাতেই সফল হয়েছেন। তাদের সফল হওয়ার কারণগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি যোগসূত্র নেই।

তবে- সার্টিফিকেট, ক্লাসরুম, টয়লেট নয় হল এবং ক্যাম্পাসের পরিবেশ শিক্ষার্থীর সামনে নতুন চিন্তার দুয়ার খুলে দেয়। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তৃতীয় বর্ষে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ক্যারিয়ার ঠিক করে ফেলে। নিজের আগামীর পথচলার জন্য প্রস্তুতি নেয়। তবে, হল-ক্যাম্পাসের আড্ডা তাতে সাহায্য করে।

নিজেদের পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তি আমাদের সফলতা দিতে পারে, অন্যথায় না!

যোগ্যতা আপনাকে নিজে তৈরি করতে হবে, কোন বিশ্ববিদ্যালয় দিবে না। হোক সেটা পবলিক-প্রাইভেট কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আর সেটা করতে জানলে গ্রামাঞ্চলের নাম অজানা ডিগ্রি কলেজ থেকেও করা সম্ভব। শত শত উদাহরণও আছে।

সবথেকে মজার বিষয় হচ্ছে আমরা এমন এক যুগে ধীরে ধীরে পদার্পণ করতেছি, যেখানে ‘আপনি কী জানেন ’ এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এখন ‘আপনি কী করতে পারেন’!!!

সবশেষে, আপনি যেখানেই পড়ুন না কেন; যেখান থেকে সার্টিফিকেট অর্জন করুন না কেন; আপনাকে সর্বোপরি ভালো মনের মানুষ হতে হবে, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো কর্তব্য ও দায়িত্ব। বাবা-মায়ের জন্য কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। নিজের জন্য কাজ করতে হবে।

ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *