আমি একজন বেকারের প্রেমিকা

আমি একজন বেকারের প্রেমিকা

সত্যব্রত বিশ্বাস বাপ্পি

আমি একজন বেকারের প্রেমিকা। আর দশটা প্রেমিকাদের চেয়ে আমার অনেক ভিন্ন ভাবে থাকতে হয়। আমি চাইলেই পারিনা কিছু আবদার করতে,পারিনা অভিমান করতে,পারিনা ফোনটা বন্ধ করে দিনের পর দিন রাগ দেখাতে।

ভুলে গিয়েছি শেষ কবে রেস্টুরেন্টে বসে দামী খাবারের ভিতর হাত চুবিয়ে গল্প করেছি ওর সাথে।তবে এ নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই। অনিরুদ্ধের চাকুরী টা হয়ে গেলেই সপ্তাহে একদিন করে বাইরে খেতে যাব, এই সান্ত্বনায় দিব্যি বেঁচে আছি।জীবনের সহজ সময়ে যে তুমুল ভালবাসা দিয়েছিল তার কঠিন সময়ে ইচ্ছাগুলোকে গলাটিপে মেরে ফেলা কি শ্রেয় নয়?

প্রতিদিন আমাদের দেখা হয়না। ঢাকায় পরীক্ষার ডেট পড়ার পনের দিন আগে থেকে আমিই ওর কাছে যাওয়া বন্ধ করে দেই।ওকে কাছে না পাই, ক্ষতি কি? একটু বেশি সময় পড়ুক।টিউশনে করে এসে তো পড়বে। এর ভিতর কি করে ওর হাতটা ধরে বসে থাকি?

মাঝেমধ্যে ও প্রচন্ড ভাবে রেগে যায়। বিশ্রি ভাষায় আমাকে কিসব বলে। আমি একটি কথাও না বলে নিরবে অশ্রুপাত করি। আমি জানি এই রাগটা আমার উপর নয়- আজও কোন চাকুরির পরীক্ষার রেজাল্টে ও অকৃতকার্য হয়েছে।ও রাগ করুক, আমার এই সামান্য সহিষ্ণুতার চাদরে ওর ব্যর্থতা কে আড়াল করুক।ভালোবাসি তো…….।

আমার এবার তৃতীয় বর্ষ শেষ হল। এ দেশে চতুর্থ বর্ষ মানে মেয়েদের বিয়ের বয়স অতিক্রম হয়ে যাওয়া। প্রতিদিন কোন কোন ভাবে বাবা-মা বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কখনোবা ওর আড়লেই মনের বিরুদ্ধে সেজে অন্যকোন পুরুষদের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতে হয়। এর একটা কথাও অনিরুদ্ধ জানে না। আমি জানি এসব জানালে ওর মাথায় নতুন চাপ পড়বে,শান্তিতে একবিন্দু পড়তে পারবে না,পিছিয়ে পড়বে।প্রেমিকা হলে যে কতকিছু লুকাতে হয় প্রেমিকের চোখ থেকে ইদানীং বুঝছি।

অনিরুদ্ধের প্রায় দু’মাস হল বডি স্প্রে শেষ হয়েছে। প্রচন্ড গরমে ঘামে ভিজে যখন ও দেখা করতে আসে ওর শরীর থেকে একটা গন্ধ বের হয়। প্রথম দিকে এই গন্ধ অসহ্য লাগলেও ইদানীং অভিযোজিত হয়ে গেছি। যে মনটা আমার, যে শরীর টা আমার সেই শরীরের গন্ধদের সাথে সখ্যতা গড়ে না তুলতে পারলে কিসের প্রেমিকা হলাম।একদিন অনিরুদ্ধের সাফল্যের কার্পেটে রানী হয়ে হাটার প্রত্যাশায় নিদারুণ ভাবে সয়ে চলছি হাজার ও বিষাদ, বেদনা।

মুখ লুকিয়ে নয় বরং মাথা উচু করে বলতে পারি, আমি একজন বেকারের প্রেমিকা।

লেখা: সত্যব্রত বিশ্বাস বাপ্পি, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

ছবি: তারামন

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *