আমি পারমিতা বলছি | তাজমিন রহমান

আমি পারমিতা বলছি | তাজমিন রহমান

অবশেষে আমার দেহটা পচতে শুরু করেছে
আমি চারিদিকে মাটির গন্ধ পাই
দরজা জানালা বিহীন এ বদ্ধ ঘরে,
আমার বহুকাল ধরে বসবাস।
পৃথিবী থেকে চলে এসেছি বহুদিন হলো
বিশ্বাস করো-
আমি পচে যায়নি আজকের আগের দিন অব্দি ও নাহ।

আমি রোজ ছুটতাম
আমার বাবাও রোজ নিয়ম করে
হাজির হতো তোমাদের অন্ধ আদালতে,
মাকে দেখতাম অশ্রুসিক্ত নয়ন
আচলে লুকাতে।
আমার বাবার আকুতি ছিল
জর্জসাহেব আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিন।
টাকার দেয়াল ভেদ করতে পারেনি আমার বাবার আকুতি,
আমার মায়ের সন্তানহারা আত্মচিৎকার পৌছাইনি তোমাদের বিবেকহীন শহরে।

থেমে গেছে আমার বাবার কন্ঠ,
ঝরে গেছে মায়ের অশ্রু
আমিও আজ পচতে শুরু করলাম।
আজ থেকে আমার বাবাকে ধর্ষিতার বাবা বলো নাহ,
মাকে বলো নাহ ধর্ষিতার মা।
আমাকে বলো সুশীল সমাজের কলংক।
আমাকে সুশীল সমাজ মা ডেকেছিলো,
বোন ডেকেছিলো নারীবাদী সমাজ।
সচেতন নাগরিকরা করেছিল আনন্দোলন,
দফায় দফায় মিটিং-
অবশেষে আইন পাস হলো,
কিন্তু আমার বাবার কন্ঠ থামার পর।

ধিক তোমাদের!!
সু-স্বাধীনতা আনার নাম করে
এনেছো লজ্জাহীন স্বাধীনতা।
আমরা শুধু কলম ধরতে চেয়েছিলাম,
চেয়েছি সংসারটা সচ্ছল করার বায়না
চেয়েছি একটু নিরাপত্তা,
অথচ আমাদের মা বোন ডেকে,
মাথায় হাত বুলিয়ে
পন্য হিসাবে উপস্থাপন করেছো

বড় বড় টিপ,ছেলের স্টাইল হলে
সুশীল সমাজ,নারীবাদীরা বলতো-
বাংলাদেশ ধর্ষিত হয়েছে
কিন্তু আমি যে ছিলাম বাবার একমাত্র বাঙ্গালী মেয়ে।
বাবা ডুকরে মরেছিলো,
মায়ের আত্মচিৎকার ঘুম ভাঙ্গাতে পারিনী তোমাদের অন্ধ আদালতের।
নরপিশাচ রা ক্ষমতার জোরে দায় মুক্ত হলো,
শুধু কলংকিত হলো আমার বাবা,
বিচারের নামে যে নাটক চলেছিল
সুশীল সমাজ,নারীবাদীরা তার দর্শক ছিল।

যে দেশে টাকার জন্য ডাক্তার তার দায়িত্ব ভুলে যায়,
রক্ষক হয় যায়ে ভক্ষক।
যে দেশে নারীবাদী নামে খোলা হয় পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র।
যে দেশ নিজের স্বকীয়তা ভুলে গেছে
সেদেশে সোনার মানুষ হবে কি করে?
বিবেক বিকিয়েছো ক্ষমতার কাছে,
সেই বর্জিত বিবেক থেকে আমি পারমিতা বলছি।

তাজমিন রহমান
লোকসাহিত্য বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *