ইসরায়েল-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ঝুঁকিটা আসলে কোথায়?

ইসরায়েল-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ঝুঁকিটা আসলে কোথায়?

মোঃ আশরাফুল আলম আকাশ


বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর যে কয়েকটি দেশ দ্রুতগতিতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানায় তার মধ্যে ইসরায়েল অন্যতম। ১৯৭২ সাথে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব করেছিল। তবে তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর সরকার তা লিখিতভাবে নাখোশ করে। এর কারণ হিসাবে মুজিব সরকার আসলে বোঝাতে চেয়েছিল,নব্য স্বাধীন বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা পক্ষে।

অবশ্য এখন মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বিভিন্ন আরব দেশ সহ আফ্রিকা-এশিয়ার ১৬ টি মুসলিম দেশের সাথে ইসরায়েল এর কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এর আগেও আরব দেশ মিশর ও জর্ডান এর সাথে ইসরায়েল এর কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয়। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সংযুক্ত আরব-আমিরাত ও বাহরাইন এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন হয়।

যদিও আমিরাতের পক্ষ থেকে বলা হয় “ফিলিস্তিনদের জনগণের পক্ষে তারা অবিচল এবং এই চুক্তি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রাখবে”। যদিও এই যুক্তিকে মেনে নিতে নারাজ মুসলিম বিশ্ব। কারণ আমরা এর আগের দেখেছি মিসরের সাথে চুক্তি হওয়ার পরের ইসরায়েল তার দখলদারি মনোভাব থেকে এক পাও সরে আসেনি।

হঠাৎ সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর এতো নমনীয় ভাব কেন ইসরায়েল সম্পর্কে। তাহলে কি তারা ফিলিস্তিন জনগণের পাশে নয়? আসলে বেপারটি তা নয়। মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর শিয়া অনুসারী মুসলিম রাষ্ট্র ইরানের প্রভাবকে কমানোর জন্যই এই পরিকল্পনা। আর এতে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং পরোক্ষভাবে যে সৌদিআরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের ইরানবিরোধী দেশগুলো যুক্ত সেটা পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়। ফলে স্বাধীন ফিলিস্তিন গঠন শুধু স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। ইসরায়েল অবশ্য এতে সুবিধা পাচ্ছে। কারণ প্রযুক্তিক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা ইসরায়েল তার অর্থনীতিকে এগিয়ে রাখতে মুসলিম বিশ্বের স্বীকৃতি পেতে মরিয়া।

এখন আসি বাংলাদেশ-ইসরায়েল সম্পর্কের মুল জটিলতা টা কোথায় সেই বিষয়কে উপস্থাপন করতে। আমাদের দেশ মুসলিম প্রধান একটি দেশ। তাই বাংলাদেশের মত একটি গণতান্ত্রিক দেশের জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে টপকে ইসরায়েলকে সমর্থন করা সরকারের জন্য বেশ জটিল। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অধিকাংশ রাজতন্ত্র শাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। সেখানে জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করার সুযোগ করেছে কিন্তু বাংলাদেশের জন্য তা বিপদজনক বটে। বাংলাদেশের জনগণ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে। এমনকি বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে শুধুমাত্র ইসরায়েল এ যাওয়া যাবে না এবং এটি পাসপোর্টে ভালভাবেই লেখা আছে। বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দল জনগণের মতামতের বিপরীতে গিয়ে ইসরায়েল এর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবে না। ভোটের রাজনীতির এ খেলায় কোন দল এই বিপদে পরতে চাইবে না।

বাংলাদেশে মূলত দুই ধরনের রাজনৈতিক দল আছে। এক ডানপন্থী ও অন্যটি বামপন্থী। ডানপন্থীগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ইত্যাদি। ভোটের মাঠে টিকে থাকতে গেলে কখনই দেশের জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে যে আঘাত দেয়া যাবে না, এটা তারা ভালই জানে। এজন্য এই দলগুলো কখনোই ফিলিস্তিনকে পাশ কাটিয়ে ইসরায়েলকে সমর্থন দিবে না। আর বামপন্থী দলগুলো তো এক্কেবারেই ইসরায়েল এর আগ্রাসী দখলদারি মনোভাব এর বিরুদ্ধে। তাদের মতে এটি মানবতা-বিরোধী অপরাধ। সুতরাং তাদের সমর্থন করার প্রশ্নই আসেনা।

ইসরায়েল কিন্তু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। তাছাড়া বাংলাদেশ যে বর্তমানে বিনিয়োগ বান্ধব দেশ সেটা তারা ভালভাবেই জানে। সেজন্য বাংলাদেশের প্রতি তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় তারা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায়। এবারের বন্যায়ও তারা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অর্থ সরবরাহ করতে আগ্রহী ছিল। বাংলাদেশ তা প্রত্যাখ্যান করেছে অবশ্য।

মূলত বাংলাদেশে- ইসরায়েল কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হলে দুই দেশেই অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতো। তবে বাংলাদেশের জনগণ ফিলিস্তিনদের বুকে ছুরি মারতে নারাজ। ফিলিস্তিন এদেশের মানুষের কাছে পবিত্র এক নাম। আর রাজনৈতিক দলগুলো ইসরায়েলকে সমর্থন করে নিজের দলের ভোট খোয়ানোর মতো ভুল কখনই করবে না।

মোঃ আশরাফুল আলম আকাশ
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *