উত্তম পরিচর্যায় পথশিশুরাও দেশের সম্পদ

উত্তম পরিচর্যায় পথশিশুরাও দেশের সম্পদ

জিসান তাসফিক


জন্মের পরে একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হয় মায়ের কোলে। বড় হয় পরিবারের ভালোবাসায় আর মা হতে মাতৃভাষা ও মাতৃকথা শিখে। হাটি হাটি পা পা করে ওরাই হয় দেশের সম্পদ ও ভবিষ্যৎ । বলা হয় থাকে জীবনের সোনালী সময় শিশুকালই। কতগল্প, কত মজার ঘটনা, কত স্মৃতিচারণ হয়ে থাকে শিশুবয়সে। কিন্তু এই সোনালী সময় মুছে যায় তখনই যখন শিশু থেকে হয় পথশিশু। পথশিশুরা এমন শিশু যাদের নাই কোনো আশ্রয়, নাই কোনো মমতা, নাই ভালো আহার, আছে শুধু কেবলই অশ্রু আর হাহাকার।

পথশিশু বলতে সহজ ভাষায় ঐসকল শিশুদের বোঝানো হয় যাদের বাসস্থান নেই, পিতামাতাহীন, দারিদ্র শিশু, পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানো ভবঘুড়ে ইত্যাদি। ২০১৫ সালের ইউনিসেফের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখ। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় আড়াই লাখের বেশি। যদিও বর্তমান সময়ে এ সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ লাখ বলে দাবি করছে অনেক সংগঠন।

বাংলাদেশের শিশু আইন ২০১৩ এর চার ধারা অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সের সবাই শিশু। তাহলে আইনত ভাবে জন্মের পর থেকে ১৮ বছর আগ পর্যন্ত অভিভাবকহীন, দারিদ্র্য সকলেই পথশিশু । পথশিশুরা অভিভাবকহীন হবার কারণে সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ হতে বঞ্চিত হয়, কেননা তাদের সেখানে নেবার মত দায়িত্বশীল অভিভাবক থাকে না। শ্রম আইন অনুযায়ী ১৪ বছরের নিচে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ এবং ১৪-১৮ বছরের মধ্যে শিশুরা হালকা কাজ করার অনুমতি পেয়েছে। সুতরাং একদিকে শারীরিক ভাবে দূর্বল অন্যদিকে আইন নিষিদ্ধ, আবার অভিভাবকহীনতার ফলে পথ শিশুদের জীবন হয় দুর্বিষহ।

পথশিশুদের অনোপযুক্ত থাকাকে সামাজিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে এরা স্বাভাবিক জীবন যাত্রা থেকে বঞ্চিত থাকে এবং পথভ্রষ্ট হয় যার ফলে অনেকে অপরাধের সাথে জরিয়ে পরে। একসময় রাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে যায়। ইতিপূর্বেও এমন কিছু কুখ্যাত আসামীদের শিশু বয়সের কথা জানা গিয়েছে তারা একসময় পথ শিশু ছিল।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিমালাতে আছে যে রাষ্ট্রের অন্যতম যে সকল মৌলিক দায়িত্ব হবে তার মধ্যে মাতাপিতৃহীন অথবা অনুরূপদের ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার থাকবে । পরিকল্পিত অর্থনীতি বিকাশের জন্য দেশের সকল জনগণকে দক্ষ ও যোগ্য করে তোলা রাষ্ট্র তথা সরকারের দায়িত্ব। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে অনুচ্ছেদ ১৭ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল বালক-বালিকাকে আইন দ্বারা নির্ধারিত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । বর্তমানে শিক্ষা স্তরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

সরকারি শিশু সদন ও শিশু পরিবার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০২ ও শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী পথশিশু কিংবা এতিম শিশুদের জন্য রয়েছে সরকারি ভাবে সরকারি শিশু পরিবার যা সমাজসেবা অধিদপ্তর কতৃক পরিচালিত। যেখানে ১৮ বছর পর্যন্ত এতিম শিশুদের লালনপালন ও পড়াশুনা ব্যবস্থা করা হয়। তাছাড়া বেসরকারি ভাবে আছে মাদ্রাসা, আশ্রম ইত্যাদি। উক্ত বাস্তবায়নগুলো যথেষ্ট কার্যকরী ও প্রশংসনীয়। আইন অনুযায়ী ১৮ বছরে সাবালক ধরা হলেও বাস্তবতা হল ১৮ বছর হলেই স্বাবলম্বী হওয়া কঠিন হয়ে যায় তাই প্রয়োজন আরও দীর্ঘ সময়ের সহযোগিতা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মাথাপিছু বাস্বরিক আয় ২০০০ ডলারের বেশী। সরকারি তত্ত্বাবধানে পথশিশুদের কারিগরি কিংবা তত্ত্বীয় শিক্ষার মাধ্যমে দেশের উপযুক্ত নাগরিক গড়ে তোলা যায় তবে উক্ত আয় তাদের মধ্যে দিয়ে আসা সম্ভব যা আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞানে গুনে দক্ষতা করা হলে ওদের ভিতর দিয়েই বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বেড়িয়ে আসতে পারে। সংখ্যা দশ বিশ লাখ যাই থাকুক না কেন উপযুক্ত করাটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অভিভাবকহীন পথশিশুদের অভিভাবক সরকার হতে পারে এবং অর্থনৈতিক ভাবে হিসাব করলে দেখা যায় দশ লাখে অধিক পথ শিশুদের দক্ষ জনগোষ্ঠী করে কাজে লাগানো যায় তবে হাজার কোটি টাকার উপরে সরকার অর্থনৈতিক আয় বৃদ্ধি পাবে। পথ শিশুরা ও বাংলাদেশের নাগরিক সুতরাং পথশিশুদের সুনাগরিক গরে তোলা আমাদের দায়িত্ব।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ,
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *