উপসর্গ কাকে বলে? উপসর্গ কত প্রকার ও কি কি?

বাংলা ভাষায় বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শব্দ থেকে নতুন শব্দ তৈরি হয়। উপসর্গ নতুন শব্দগঠনের একটি প্রক্রিয়া। উপসর্গগুলো বাংলাভাষার শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করেছে। বাংলা ব্যাকরণে কিছু শব্দাংশ ব্যবহৃত হয় যাদের কোনো নিজস্ব অর্থ নেই। কিন্তু নিজস্ব অর্থ না থাকলেও এদের অর্থদ্যোতকতা আছে। অর্থাৎ এই শব্দাংশগুলি অন্য শব্দের পূর্বে বসে শব্দগুলির অর্থের সংকোচন, প্রসারণ, পরিবর্ধন, পরিবর্তন সবই করতে পারে।উপসর্গ কাকে বলে? উপসর্গ কত প্রকার ও কি কি?

এভাবে এই শব্দগুলি বাংলা ভাষায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ তৈরিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। এই অর্থবিহীন শব্দাংশগুলোকে উপসর্গ বলা হয়। তবে কোন উপসর্গগুলি কোন শব্দের সঙ্গে যুক্ত হবে সে বিষয়ে বাংলা ব্যাকরণে রয়েছে সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও বিধিমালা। এই পোস্টে বাংলা ভাষায় প্রচলিত উপসর্গের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োগবিধি আলোচনা করা হয়েছে।

উপসর্গ কাকে বলে ?
উপসর্গ হলো কতগুলো বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি। যা স্বাধীন পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না, ধাতু বা শব্দের পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে, তাদের উপসর্গ বলা হয়। উপসর্গ কাকে বলে? উপসর্গ কত প্রকার ও কি কি?
অন্যভাবে বলা যায়, বাংলা ভাষায় যেসব অব্যয়সূচক শব্দাংশ ধাতুর পূর্বে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে বিভিন্ন অর্থের সৃষ্টি করে, তাকে উপসর্গ বলে।
বাংলা ব্যাকরণে কতগুলো অব্যয়বাচক শব্দাংশ আছে যার নিজস্ব কোন অর্থ নেই কিন্তু অন্য শব্দের পূর্বে বসে সেই শব্দটিকে নতুন শব্দে পরিণত করে, এগুলোকেই উপসর্গ বলে।

যেমন- উপ + হার = উপহার, বি + হার = বিহার, প্র+ হার = প্রহার ইত্যাদি; এখানে উপ, বি, এ হলো উপসর্গ।

উপসর্গ শব্দের পূর্বে বসে শব্দের অর্থকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে। ফলে বাংলা ভাষার শব্দগঠনে উপসর্গের ভূমিকা রয়েছে।

উপসর্গ ব্যবহারের ফলে শব্দে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয়।
১. নতুন শব্দ গঠন করে।
২. শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটায়।
৩. অর্থের বিশিষ্টতা দান করে।
৪. অর্থের সঙ্কোচন ঘটায়।
৫. অর্থের সম্প্রসারণ ঘটায়।

নিচের উদাহরণ দিয়ে দেখানো হল উপসর্গগুলো কিভাবে নতুন শব্দ তৈরি করে:
প্র + ভাত = প্রভাত > সম্পূর্ণ ভিন্নার্থক শব্দ
প্র + গাঢ় = প্রগাঢ় > অর্থের সম্প্রসারণ
অপ + মান = অপমান > সঙ্কোচন
কদ + বেল = কদবেল > বিশিষ্টতা
পরি + পূর্ণ = পরিপূর্ণ > পূর্ণতাজ্ঞাপক।

একই শব্দ ভিন্ন উপসর্গ ব্যবহারে কিভাবে নতুন শব্দ গঠন করে নিচে দেখুন :
প্র + হার = প্রহার
বি + হার = বিহার
উপ + হার = উপহার
পরি + হার = পরিহার
অনা + হার = অনাহার

উপসর্গের বৈশিষ্ট্য :-

উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে। অর্থাৎ কোনো শব্দ বা পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এরা সংযুক্ত শব্দ বা পদের অর্থের নানারকম পরিবর্তন ঘটায়। নিচে উপসর্গের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেয়া হলো
১. উপসর্গের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই।
২. এরা নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে।
৩. উপসর্গগুলো বদ্ধরূপমূল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৪. উপসর্গগুলো অর্থের সংকোচন, অর্থ পরিবর্তন, অর্থের প্রসার ঘটায়।
৫. এগুলো নামবাচক ও কৃদন্ত শব্দের পূর্বে বসে।

উপসর্গ কত প্রকার ও কি কি ?
তিন প্রকার উপসর্গ ব্যবহৃত হয়। এ তিন প্রকার উপসর্গ হলো
ক. তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ
খ. বাংলা উপসর্গ ও
গ. বিদেশি উপসর্গ।

সংস্কৃত উপসর্গ কাকে বলে?
যে সংস্কৃত অব্যয়বাচক শব্দাংশগুলো শব্দের পূর্বে বসে শব্দের অর্থের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করে এই শব্দাংশগুলোকেই সংস্কৃত উপসর্গ বলে।
বাংলা ভাষায় মোট কুড়িটি সংস্কৃত উপসর্গ রয়েছে। এগুলো হল: প্র, পরা, অপ, সম, নি, অব, অনু, নির, দূর, বি, অধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, অভি, অতি, অপি, উপ, আ।

বাংলা উপসর্গ কাকে বলে?
যে বাংলা অব্যয়বাচক শব্দাংশগুলো শব্দের পূর্বে বসে অর্থবোধক নতুন শব্দ গঠন করে তাকে বাংলা উপসর্গ বলে।
খাঁটি বাংলা উপসর্গ মোট ২১টি। উপসর্গগুলো হল: অ, অনা, অঘা, অজ, আ, আড়, আন, আব, ইতি, উন, কদ, কু, নি, পাতি, বি, ভর, রাম, স, সু, ব, হা।

বিদেশি উপসর্গ?
যে সব বিদেশী উপসর্গ শব্দের পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত এই উপসর্গসমূহকে বিদেশী উপসর্গ বলে।
বাংলা ভাষায় বহু বিদেশী উপসর্গ রয়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, উপসর্গগুলোর নিজস্ব কোন অর্থ বাংলা উপসর্গ কাকে বলে? বাংলা উপসর্গের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ? কিন্তু শব্দের পূর্বে বসে শব্দের অর্থের পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে। ফলে একই শব্দ থেকে বিভিন্ন শব্দ তৈরি হয়। ফলে ভিন্নার্থক এবং বিশিষ্টার্থক নতুন নতুন শব্দ তৈরি করে বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। এজন্যেই বলা হয়, “উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে।” উপসর্গ কাকে বলে? উপসর্গ কত প্রকার ও কি কি?

বাংলা উপসর্গ কাকে বলে? বাংলা উপসর্গের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ?

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *