একই বিসিএস ক্যাডার হয়েছিলেন ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার স্বামী

একই বিসিএস ক্যাডার হয়েছিলেন ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার স্বামী

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজে’লা নির্বাহী কর্মক’র্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম। আ’হত এই কর্মক’র্তার ওপর হা’মলার দৃষ্টান্তমূলক শা’স্তি চেয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস আসোসিয়েশন সহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় থামছে না।প্রশাসন ক্যাডার সংশ্লিস্ট সহকর্মীরা স্ট্যাটাস দিচ্ছেন ফেসবুক যা তার প্রতি অবিচার নিষ্ঠুরতম হামলার প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে লেখনীতে।

কিন্তু কেন এই হা’মলার শিকার ওয়াহিদা খানম? বিষয়টি খুঁজতে পু’লিশ-র‌্যা’­বসহ একাধিক সংস্থা ত’দন্তে নেমেছে। পূর্বশত্রুতা, কারও সঙ্গে বিরোধ, ব্যক্তিগত ইস্যু, স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ষড়যন্ত্র, চু’রি-ডা’কাতি নাকি অন্য কোনো কারণে এ ঘটনা ঘটেছে- তা বের করতে চলছে নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ।

ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকে প্রচণ্ড মেধাবী ছিলেন ওয়াহিদা। প্রত্যাশিত ফলও পেয়েছেন জীবনের সব স্তরে। জানা যায়, উপজে’লার সর্বামঙ্গলা হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ওয়াহিদা। পরবর্তীতে এইচএসসির গণ্ডি পেরিয়ে ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ওয়াহিদা।

তার সহকর্মী ও বন্ধুদের সাথে কথা বলে জানা যায় , ৩১তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারভুক্ত হন ওয়াহিদা। তার স্বামী মেজবাউল হোসেনও একই ব্যাচ থেকে উপজে’লা নির্বাহী কর্মক’র্তা (ইউএনও) হিসেবে কর্ম’রত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি রংপুরের পীরগঞ্জে দায়িত্ব পালন করছে। তাদের চার বছরের এক ছে’লে রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওয়াহিদা খানমের বাবার বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুরে। তবে আদিবাড়ি রাজশাহীর বাঘমা’রা উপজে’লার গণিপুর ইউনিয়নে। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওম’র আলী শেখ মহাদেবপুর উপজে’লা বরেন্দ্র বহু’মুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অফিসে চাকরি করতেন। সে সুবাদে সেখানেই ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন তারা।

ওয়াহিদা ছাড়াও ওম’র আলী শেখের আরো চার সন্তান রয়েছে; এদের মধ্যে তৃতীয় সন্তান ওয়াহিদা।ব্যক্তিজীবনে ওয়াহিদা সবার সঙ্গে হাসিমাখা মুখে কথা বলতেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা জানা যায়, কারো ক্ষতি দেখতে পারতেন না ওয়াহিদা। যেখানেই অন্যায় দেখেছেন, সাধ্যমতো সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছেন, প্রতিবাদ করেছেন। এমনকি করো’নাকালে তার ভূমিকা ছিল সত্যিই প্রশংসনীয়।

জয়নুল আবেদিন নামে একজন লিখেছেন, ‘দিনাজপুরে এডিসি হিসেবে কাজ করেছি। ছোট্ট বোনটার সঙ্গে অনেক স্মৃ’তি। কোন এক সময় ১৩ জন ইউ এন ও এর মধ্যে একমাত্র লেডি অফিসার ছিল প্রিয় ওয়াহিদা। সাতভাই চ’ম্পার মতো ডিসি স্যারসহ আম’রা বলতাম ছোট্ট বোনটাকে তোম’রা দেখে রাখো। আম’রা দুঃখিত, লজ্জিত তোমাকে দেখে রাখতে পারলাম না। তুমি আমাদের ক্ষমা করো। তার বাসায় বেশ কয়েকবার গিয়েছে, অনেক স্মৃ’তি। মহান আল্লাহ উত্তম হেফাজতকারী। দয়াময় প্রভু প্রিয় বোনটাকে দ্রুত পুরোপুরি সুস্থতা দান করুন, আমীন।’

ওয়াহিদা খানমের ব্যাচ’ম্যাটরাও ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। ৩১তম বিসিএস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ধ’র্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আমিনুর রহমান বলেন, আম’রা এ ঘটনায় গভীরভাবে ম’র্মাহত। ঘটনায় যারাই জ’ড়িত তাদের চিহ্নিত করে শা’স্তি দিতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ওয়াহিদার দ্রুত সুস্থতাও কামনা করেন তারা।

প্রসঙ্গত, সফল অস্ত্র পাচারের পর আ’হত ওয়াহিদা খানমের জ্ঞান ফিরেছে। তিনি কথাও বলেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

গত শুক্রবার আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতা’লে চিকিৎসক জাহেদ হোসেন বলেন, অ’স্ত্রোপচারের সময় ওয়াহিদা খানমের মা’থায় ৯টি আ’ঘাতের ক্ষত দেখা গেছে। যে হাড়টি ভেঙে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল, তা বের করা হয়েছে। রাত দেড়টার দিকে জ্ঞান ফেরে তাঁর, কথাও বলেন। তবে তাঁর শরীরের ডান পাশ অবশ। এটি ঠিক হতে সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান।এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াহিদা খানমের অ’স্ত্রোপচার হয়। এতে অংশ নেন ছয়জন চিকিৎসক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *