মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন

একজন ডিভোর্সীর গল্প

  • আপডেট টাইম সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১০.১৩ পিএম

একজন ডিভোর্সীর গল্প
আল বিনাতুন মাওলা চৈতী (চারু)



আমি ডিভোর্সী। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, আমি একজন ডিভোর্সী। পাশের বাসার আন্টিটাও আমাকে দেখে মুখ টিপে হাসে, এটা যে নতুন তা কিন্তু নয়। অনেক দিন ধরে এসব অত্যাচার সহ্য করে আসছি। কী করব? ডিভোর্সী বলে কী বেঁচে থাকাটা অন্যায়?

অনেকেই অবশ্য বলে, ‘অতি বড় সুন্দরী না পায় বর, অতি বড় ঘরনি না পায় ঘর।’ কেন ডিভোর্সী হলাম তাই ভাবছেন তো? তবে আজ আপনাদেরকে আমার গল্প বলি।

যখন অবিবাহিত ছিলাম, লোকে আমাকে দেখে অনেক সুন্দরী বলতো। সবাই তখন আমার প্রশংসা করে বলতো যে, ‘চারু এত সুন্দরী, ওর কপালে তো রাজকুমার লেখা আছে।’

ঠিক তাই হল। গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর আমাকে সুন্দর একটি ছেলে দেখতে এলো। ঘটকের মাধ্যমে প্রস্তাবটা পেয়েছিলাম। ছেলেদের বিরাট ব্যাবসা আছে। তাই আমার পরিবারের সবাই রাজী হয়ে গেল। পরিবারের উপর দিয়ে কথা বলার দুঃসাহস আমার নেই। তাই আমিও রাজী হয়ে গেলাম। বিয়ে হয়ে গেল আমার এবং সমস্যাটা তারপরেই হল।

আগেই বলে রাখি, আমার স্বামী বিরাট বড় ব্যাবসায়ী হলেও সে পড়াশোনা বেশীদূর করেনি। হৃদয় অত্যন্ত কলুষিত ছিল তার।
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী এর দৈহিক মিলন হবেই, এবং এটা অতিশয় স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এ কথাও বলা আছে, ‘স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে দৈহিক মিলন করলে, তা ধর্ষন বলে গন্য হয়।’ অথচ আমার স্বামীর সে ব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপই ছিল না।

প্রত্যহ রাতের বেলায় আমাকে শারিরীকভাবে গ্রহণ করা ছিল তার নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। আমার ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক, প্রতিদিন একই রকম অত্যাচারের সম্মুখীন হতাম আমি। প্রতি রাতে এসব অত্যাচার আমার অসহ্য লাগতে থাকে। আর কত সহ্য করব আমি?
একদিন তাই রাগ করে বলেই ফেললাম,
-প্রতি রাতে তোমার এই অত্যাচারগুলো আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব না?
-এখানে অত্যাচারের কী দেখলা তুমি? আমি তো তোমার স্বামী।
-স্বামী বলেই কী প্রতি রাতে এমন বর্বরতা করবে নাকি? আমিও মানুষ।
-মনে রাখিস তোর সবকিছু আমার। তুই বাধা দিতে পারবি না আমাকে।

মনে মনে খুব কান্না পেতো। এ কেমন নরপশুর সাথে সংসার করছি আমি? এ কী মানুষ?

আমি আবার বললাম,
-প্রতি রাতে এমন করলে আমি বাবার কাছে চলে যাব।
-কী এত বড় কথা! ঠিক আছে। তুই আমার খুদা মেটাবি নাতো? তাহলে এবার থেকে আমি নিষিদ্ধ পল্লীতে যাব।
-তাই যাও। এত অত্যাচার আমার আর ভালো লাগে না।

এই কথা শোনার পরে সে আমার গায়ে হাত তোলে। কী নির্মম। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই যে, আমি আর সংসার করব না। পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই বাবা বাড়ি চলে আসি।

আমাকে দেখে মা বলে উঠলো,
-কী রে চারু। কোন খোঁজ খবর না দিয়েই হঠাৎ করে চলে এলি যে?
আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে মা কে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম।
-কী হয়েছে রে চারু? খুলে বলতো আমাকে। (মা)
আমি মা কে এতদিন ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বললাম। সবকিছু শুনে মায়ের চোখেও পানি চলে এলো।
-মা রে, আমাদের জন্যই তোকে অাজ এ দিনটা দেখতে হল। কিন্তু তুই চিন্তা করিস না, শীঘ্রই তোকে ভালো জায়গায় বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব।

তারপর বাবা আর বড় ভাইয়ার প্রচেষ্টায় আমি উনাকে ডিভোর্স দিতে সক্ষম হই। উনিও তাতে সই করে দেন। শুনেছিলাম তারপর উনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল। বাবা- মা আমার বিয়ের জন্যও অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু পাত্রপক্ষ ডিভোর্সী শোনার পরই পিছিয়ে যায়। সবাই কানাঘুষা করে- নিশ্চয়ই মেয়ের কোন দোষ আছে, না হলে ডিভোর্স হবে কেন? বিধাতার দুনিয়ায় কি আমার মতো ডিভোর্সীরা খুব অন্যায় করে ফেলেছে?

[এ গল্পের ১৮+ কন্টেন্ট এর জন্য ক্ষমা চাইছি। একজন ডিভোর্সীর কষ্ট দেখাতে চেয়েছি বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে]

The Campus Today YouTube Channel

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazar_creativenews_II7
All rights reserved © 2019-20 The Campus Today