একটি অনুপ্রেরণার উৎস

একটি অনুপ্রেরণার উৎস

আরিফুজ্জামান রাজীবঃ আমি তখন সদ্য নতুন শিক্ষক। তখনো ঠিক মত শিক্ষক শব্দের আভিধানিক অর্থ বুঝিনা হয়তো, গা থেকে ছাত্রের পালক গিয়েছিলো বলে মনে হয় না।


ইসমাইল স্যার আর আতোয়ার স্যার শরীরে অামার একটা অসুখ ধরিয়ে দিয়েছিলেন, রিসার্চ সেই অসুখের নাম।


ইসমাইল স্যার আর আতোয়ার স্যার শরীরে অামার একটা অসুখ ধরিয়ে দিয়েছিলেন, রিসার্চ সেই অসুখের নাম। ৫টার সময় অফিস ছুটি হওয়ার পর সবাই যখন বাড়ি চলে যায়, আমার তখন এই অসুখটা উঠতো (এখন ঐ অসুখ আমার সারা দেহে)। সবাই চলে যাওয়ার পর আমার রিসার্চের কাজ শুরু হতো।

একদিন বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যায় কাজ করছি, হঠাৎ ৪র্থ তলা থেকে বেশ হট্টগোলের শব্দ আসছে। বলে নেয়া দরকার আমার অফিস ছিলো বশেমুরবিপ্রবির আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের ৩য় তলার দক্ষিণ পাশে। আমি উপর তলার এই হঠাৎ শব্দে কিছুটা বিরক্ত হয়ে ৪র্থ তলায় যাই। আমি ৪র্থ তলায় গিয়ে দেখতে পেলাম, বেশকিছু ছাত্র-ছাত্রী একটা জটলা তৈরি করছে।

আমি কেমন করে যেন জটলার মধ্যে ঢুকে পড়লাম। ওরাও খেয়াল করে নি (ঐ যে বললাম সদ্য শিক্ষক, অন্য বিভাগ, বয়সের তফাতও কম)। আমি জটলায় ঢুকতেই বুঝলাম ওরা কারো জন্মদিন পালন করছে। কেকের উপর লিখা “হ্যাপি বার্থডে স্যার”. আমি কিছুটা কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকালাম স্যারটা কে? আমি একটু পাশ থেকে খেয়াল করলাম ওরা বলছে “হ্যাপি বার্থডে হানিফ স্যার”।এরপর একটা ছেলে ঐ স্যার সম্পর্কে দুই একটা কথা বলে সবাই আনন্দ করে, স্যারের দীর্ঘায়ু কামনা করে চলে গেল। আমি আড়াল থেকে সব দেখলাম।

পরের দিন, আমি সাইফুল ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম হানিফ স্যার সম্পর্কে। সাইফুল ভাই তেমন কিছু বলতে পারলো না, শুধু বললো উনি এক সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেনন, এখন নেই।

এই ছোট ঘটনাটা আমাকে ভীষণ নাড়া দিয়েছিলো। একজন মানুষ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে গেছে এক বছরের ও বেশি সময় আগে, উনি এখানে শিক্ষকতা করেছেন ও অল্প সময়ের জন্য। তার ছাত্ররা আজও তাকে স্মরণ রেখেছে, স্যারের বিশেষ দিন পালন করেছে। একজন শিক্ষকের আর কী দরকার? উনি জানেও না হয়তো, তার ছাত্ররা তাকে এতটা ভালোবাসে, যেই ভালোবাসা অকারেণের যেখানে কোন স্বার্থ নেই।

প্রকৃত শিক্ষকরা হয়তো এই অকারণ ভালোবাসার পেছনে আমৃত্যু ছুটে চলে।। যেই সব শিক্ষকরা এই অকারণ ভালোবাসার বীজ বপন করতে পেরেছে তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের মননে, এই শিক্ষক দিবসে তাদের প্রতি রইলো শ্রদ্ধা, সালাম, অফুরন্ত ভালোবাসা।।

বি:দ্র: আমার অবশ্য হানিফ স্যারের সাথে কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। পরে অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ওনার লেখা পড়ে ওনাকে বুঝার চেষ্টা করেছি। স্যারের কাজের পরিধি নিয়ে শব্দ বলার মত সাহসী আমি নই। তবে স্যারের ফেসবুকে এর লেখা পড়ে স্যারকে আমার ভীষণ একমাতৃক মানুষ মনে হয়েছে!

লেখা ফেসবুক পাতা থেকে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *