একটি বিবর্ণ ঈদ

একটি বিবর্ণ ঈদ

তাজমিন নাহার


‘ঈদ মানে আনন্দ’ এ কথাটি ধ্রুবতারার মতো সত্যি। ঈদ আসলেই আনন্দে মেতে ওঠে বিশ্ববাসী। বাংলাদেশেও এর ব্যাতিক্রম নয়। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ইদ এসেছে ঠিকই কিন্তু নেই কোন আমেজ। রঙ হারিয়ে ফ্যাকাসে বর্ণ ধারন করেছে।

সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারনে অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফিরতে পারছেন না প্রিয়জনদের কাছে।আবার অনেকেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নাড়ির টানে ঘর অভিমুখে ছুটি চললেও তাদের মধ্যে কাজ করছে উদ্বেগ। এবার যেন ঘরে ফেরা আনন্দের নয় বিষাদের সুর তোলে। ঈদ উপলক্ষে সারাদেশে এভাবে অবাধ বিচরণের ফলে ঈদ পরবর্তী সময়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে যায়।

প্রতিবছর ঈদ-উল -আযহাকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশু ও চামড়া কেনা বিক্রিসহ যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সৃষ্টি হয় এবার সে জায়গাতে ধ্বস নেমে এসেছে। করোনা সংক্রমণের কারনে কেউ চাকরি হারিয়েছে, আয় কমেছে এবং কেউ কেউ সাধ্য থাকলেও স্বাস্থ্যগত বিষয় বিবেচনা করে পশু কোরবানি করছেন না। সব মিলিয়ে খামারি এবং গ্রাম বাংলার অনেক পরিবার পশু বিক্রি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে পোশাক শিল্পের যে রমরমা বানিজ্য হয় এবার সে জায়গাতেও নেমে এসেছে ধ্বস। বাহারি নকশার জামা পূর্বের মতো আর ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে না। করোনা সংক্রমণের মধ্যে বন্যা এ যেন মরার উপর খড়ার ঘা। দেশের ৩১ টি জেলায় বন্যা এবং করোনা ভাইরাস একসাথে মোকাবেলা করাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় প্রায় অর্ধকোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।

আবার ইদের নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রেও রয়েছে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা। ঈদগাহ ময়দানের বা খোলা মাঠে নামাজ আদায় করা যাবেনা এবং সামাজিক দুরত্ব মেনে নামাজ আদায় করতে হবে।নামাজ আদায়ের পর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কোলাকুলিও করা যাবে না।

সব মিলিয়ে এ যেন ঈদ নয় একটি বিবর্ণ ঈদ। যার ঘর বন্যার পানিতে বিলীন তার কাছে ঈদ যেন বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। রিকশাচালক বাবাটি টাকা জমিয়ে সন্তানের জামা কিনে দিতে পারেনা কারন তার রিকশায় ভাড়া নেই।

গার্মেন্টসকর্মী ছেলেটি আর মায়ের জন্য নতুন শাড়ি কিনতে পারেনা কারন তার চাকরিই আর নেই। কৃষক বাবার ঘরে খাদ্য নেই, সব ফসল বন্যায় নষ্ট। একমাত্র সম্বল গরুটি যখন বিক্রি হয় না তখন বাবাটি মেয়েকে দেওয়া কথা রাখতে পারে না।

আর যাদের সার্মথ্য আছে তারাও ঈদ আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবে না। ভার্চুয়ালি গল্প, শুভেচ্ছা ও উপহার দিয়ে একটা নিরানন্দময় ভার্চুয়াল ইদ উপভোগ করবে। এবার টিভিতেও থাকছে না বিশেষ ইদ আয়োজন। এ যেন অন্য রকম সময়ে এক ভিন্ন রকম ঈদ।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি ব্যাবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *