এগিয়ে অনলাইন ক্লাস পিছিয়ে শিক্ষার্থী

এগিয়ে অনলাইন ক্লাস পিছিয়ে শিক্ষার্থী

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


বর্তমান সময়ে বহুল প্রচারিত অনলাইন শিক্ষা। বিশেষ করে করোনার এই সঙ্কটের সময়ে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় খুদে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সবাই অনলাইন শিক্ষার বিষয়ে বেশ সচেতন। তবে দেশের শীর্ষ এক পত্রিকার অনুসন্ধানেও বলছে, প্রচারে এগিয়ে থাকলেও অনলাইন শিক্ষায় বিশেষ কোনো সুবিধাই পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষাবিদরা জানান, অনলাইন শিক্ষা বা প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট ডিভাইস, বিদ্যুৎবিভ্রাট এবং ইন্টারনেটের উচ্চমূল্যের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ এই অনলাইন শিক্ষার সুবিধা নিতে পারছে। বাদবাকি ৮৫ শতাংশ অনলাইন শিক্ষা সম্পর্কিত এই টার্মের সাথে ব্যাপকভাবে পরিচিত হলেও তারা এখনো অনলাইন সুবিধার পুরোপুরিই বাইরেই রয়ে গেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এক ওয়েবিনারে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যেও অনলাইন শিক্ষা নিয়ে নানা সীমাবদ্ধতার বিষয়টি উঠে আসে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পাঠদানের মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার কথা বলা হলেও মোটের ওপরে প্রায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনলাইনে অর্থাৎ দূরশিক্ষণে কোনো আগ্রহ নেই। প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়ের বিপুল শিক্ষার্থী যেখানে অনলাইন থেকে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছে না সেখানে আরো নিচের দিকে অর্থাৎ কলেজ বা স্কুলপর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তো নিঃসন্দেহে আরো বঞ্চিত হচ্ছে।

যদিও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফলাও করে অনলাইনে পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে; কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের অভ্যন্তরীণ অবস্থা খুবই নাজুক। সম্প্রতি একটি জরিপেও বিষয়টি উঠে এসেছে।

দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমের ওপর পরীক্ষামূলক একটি জরিপ চালানো হয়। সেখানে দেখা গেছে, মাত্র ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে তাদের পাঠ গ্রহণ করতে পারছেন। বাকি ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী নানা সীমাবদ্ধতার কারণে অনলাইনে পাঠকার্যক্রম গ্রহণ করতে পারছেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, শিক্ষার্থীরা অনলাইনে কতটুকু শিক্ষা লাভের সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে তার একটি প্রাথমিক জরিপ আমরা করেছি। সেখানে আমরা আশাব্যঞ্জক কোনো সাড়া পাইনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে শিক্ষায় আগ্রহী নন।

করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ছুটির এই সময়ে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় আর কলেজপর্যায়েই নয়, স্কুলপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমেছে। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণনায় দেখা গেছে, করোনার সময়ে সব শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ৮০ শতাংশ কমেছে।

এক দিকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ, অন্য দিকে কোচিং, প্রাইভেট এবং গৃহশিক্ষকদের মাধ্যমে পাঠদানও বন্ধ রয়েছে। ফলে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকা শিক্ষার্থীরা এখন বাসাবাড়িতেই অলস সময় কাটাচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত গবেষণার ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

অন্য দিকে শিক্ষা খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাব্যবস্থা ভয়ানক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এটা টিকিয়ে রাখা এই সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষাব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে টেলিভিশন ও অনলাইনে শ্রেণী কার্যক্রম চলছে; কিন্তু মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেক বর্তমানে টেলিভিশনে আর ১৭ শতাংশ অনলাইনে লেখাপড়ায় যুক্ত হচ্ছে। দারিদ্র্য, ইন্টারনেটের ধীরগতি এবং বিদ্যুৎবিভ্রাটসহ অন্যান্য কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়পক্ষকে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিআইজিডি’র নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন জানান, আমাদের দেশের মূল শক্তি হলো কমিউনিটি-ভিত্তিক উদ্ভাবনী পদক্ষেপ। করোনায় আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে সে জন্য তাদেরকে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত রাখতে হবে। আর এই কাজটি সুচারুভাবে করতে পারলেই আমাদের নতুন প্রজন্ম অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *