করোনাকালে কাউন্টার মেসেজ তৈরিতে যুবসমাজের ভূমিকা

করোনাকালে কাউন্টার মেসেজ তৈরিতে যুবসমাজের ভূমিকা

মারিয়া তানজিম


বাংলাদেশে করোনা বা কোভিড-১৯ হানা দেয় মার্চ মাসে। মার্চের ৮ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা জানতে পারি বাংলাদেশে প্রথম করোনা পজিটিভ রোগীর উপস্থিতি।

যথারীতি ১৫ মার্চ থেকে ১৮ মার্চের মধ্যেই সকল বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে কোভিড-১৯ সনাক্তের সংখ্যা ১লক্ষ ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে এবং একইসাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে মৃতের হার।

এমতাবস্থায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাথা চারা দিয়েছে গুজব, ভুল তথ্য বা বিকৃত তথ্য। এসব তথ্যকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা অপ্রীতিকর এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। দুঃখজনক হলেও অধিকাংশ ঘটনা অনলাইন নেটওয়ার্ককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে।

এসব ঘটনার সিংহভাগ আমাদের মত সাধারণ শিক্ষার্থীদের দ্বারা ঘটেছে। আমারা প্রায়শই না বুঝে, সত্যতা যাচাই ছাড়াই বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করে থাকি। ফলে বিভিন্ন গুজব সময়ে সময়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সৃষ্ট গুজব নিয়ে সাধারণ মানুষকে অবগত করার বদলে আমরা অনলাইনে হাসি তামাশা এবং ট্রলে জড়িয়ে পড়ি। যা তরুণ সমাজের কাছে মোটেও কাম্য নয়।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের নেটওয়ার্কিং টা অন্যান্যদের চাইতে বেশ শক্ত। চাইলেই আমরা নিজেদের জায়গা থেকে সচেতনতামূলক কাউন্টার মেসেজ তৈরি করে বিশৃঙ্খলা নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারি।

করোনা সংকট মোকাবিলায় আমাদের তরুণদের ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমরা চাইলেই সামাজিক সহিংসতা প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারি।

আসুন দেখে নিই কিভাবে-
১. আমরা গুজব ও বিকৃত তথ্যের বিরূদ্ধে বিভিন্ন ফিল্টার, কার্টুন ও ফেস্টুন বানিয়ে ছড়িয়ে দিতে পারি সোশাল মিডিয়াতে।

২. বিভিন্ন ভুল ও বিকৃত তথ্যের বিপরীতে সংশোধিত তথ্যনির্ভর ছোট ছোট ভিডিও বার্তা তৈরি করে প্রচার করতে পারি।

৩. শুধুমাত্র ভেরিফাইড এবং নির্ভরযোগ্য সোর্স এর তথ্য আমরা শেয়ার করতে পারি এবং অন্য কেউ যাতে গুজব না ছড়ায় এব্যপারে সচেতন করতে পারি।

৪. আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা অনলাইনে সম্পৃক্ত নয়। তাদের জন্য পোস্টার বা ব্যনারের মাধ্যমে সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে পারি।

৫. এছাড়া যখন আমরা আশেপাশে কাওকে ভুল তথ্য নিয়ে আতঙ্কিত হতে বা করতে দেখব নিজের দায়িত্ববোধ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের ভুল ভাঙিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করব এবং যারা এমন তথ্য ছড়াচ্ছে তাদেরকে হুঁশিয়ার করতে পারি।

এসকল ক্ষেত্রে একটি বিষয় সবসময় মনে রাখতে হবে আমাদের সমাজে বিভিন্ন মূল্যবোধ এবং চেতনার মানুষের বসবাস। যেমন- ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাজনৈতিক মূল্যবোধ, সামাজিক মূল্যবোধ, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ইত্যাদি।

অবশ্যই আমাদের তরুণদের এটা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে যে, আমাদের কর্মকান্ড যেন তাদের মূল্যবোধে আঘাত না হানে। তাদের মূল্যবোধ ও চেতনার আলোকেই যদি আমরা বোঝানোর চেষ্টা করি তাহলেই আমরা সফল হবো সামাজিক বিশৃঙ্খলা এবং সহিংসতা নির্মূল করতে।

লেখকঃ প্রমিস ফেলো ও রিসার্চার
সেইভ ইউথ বাংলাদেশ এবং
শিক্ষার্থী, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *