করোনাকাল: “ভাইরাস মোক আর কি করিবে মুই তো মরংছেন ভোকোতে”

করোনাকাল: “ভাইরাস মোক আর কি করিবে মুই তো মরংছেন ভোকোতে”

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


এমনিতে ম্যালা দিন ধরি অসুখত পড়ি আছং (অনেক দিন ধরে অসুখে ভুগতেছি)। ‘ভাইরাস মোক আর কি করিবে মুই তো মরংছেন ভোকোতে’। কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নবীনগর মাছুয়াটারী গ্রামের ৬৬ বছরের বৃদ্ধ শ্রী শরৎ দাস।

তিনি আরো বলছিলেন, বাড়িত নাই মোর ওষুধ। ম্যালা মানসি (অনেক মানুষ) আর সরকার নাকি খাবার দেয়ছেন সবায় পায়ছেন কিন্তু মুই (আমি) পাংছেন (পাচ্ছি) না। মোরতো ১ শতকো জমি নাই। তাহলে মুই না পাইলে পাইবে কায়।

বার্ধক্যের কারণে নানা রোগ বাসা বেধেছে তার শরীরে। অসুস্থ থাকলেও অভাবের কারণে ওষুধ কিনতে পারছেন না তিনি। এখন তাঁর বড় ছেলে জেলে (মাছ ধরে) খাকিলা দাস ও মেজো ছেলে বালিয়া দাসের দুজনের মাঝে থাকেন তিনি। এদিকে এই সময়ে নদীতে মাছ না থাকায় তাঁর ছেলেদের সংসার তেমন চলে না অভাব তাদের এখন নিত্যসঙ্গী।

জানা যায়, বৃদ্ধ শ্রী শরৎ দাসের নিজ্বস্ব কোনো জমি জমা নেই। অন্যের জমিতে বসবাস করছেন প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে। আগে তাঁর স্ত্রী দিনমজুরের কাজ করে ও তিনি সানিয়াজান নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতেন। তাঁর স্ত্রী-ও মারা গেছে অনেকদিন।

শুক্রবার (০৩ এপ্রিল) বিকালে সরেজমিনে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নবীনগর মাছুয়াটারী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বড় ছেলে বাড়িতে শুয়ে আছেন ওই বৃদ্ধ। বার্ধক্য এবং অসুস্থের কারণে ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না।

এসময় বৃদ্ধ শ্রী শরৎ দাস হতাশা কন্ঠে বলেন, ম্যালা দিন (অনেক দিন) ধরি বিছানাত পড়ি আছুং (আছি) ওষুধ কিনারো টাকা নাই। কয়েক বছর ধরি নেম্বার (মেম্বার) আর চেয়ারম্যানের পাছোত (পিছনে) বেড়ানুং (ঘুরতেছি) সিলিপ আর ভাতা কার্ডের জন্যে কিন্তু ওমা মোক (মেম্বার ও চেয়ারম্যান আমাকে) কোনো কিছু না  দিয়া খালি ঘুরাইছে। সংসারোত অভাবের কারণে চিন্তায় মোর মাথা ঘুরে। এ্যালা মুই কি খাইম (এখন আমি কি খাবো)। ভাইরাস মোক আর কি করিবে মুই তো মরংছেন ভোকোতে।

বাউরা ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মিজানুর রহমান বাবলু জানান, তাঁর নাম লিখে নিয়ে এসেছি কাল-পরশুর মধ্যে তিনি ত্রাণের খাদ্য পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *