করোনায় অনলাইন ক্লাস ও শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ

করোনায় অনলাইন ক্লাস ও শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ

মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম


করোনায় অনলাইন ক্লাস ব্যাপক আলোচ্য একটা টপিক। পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা হচ্ছে। অনেকেই (বিভিন্ন পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে) নানা তাল-বাহানা দেখাচ্ছেন অনলাইনে ক্লাসে নেয়ার ক্ষেত্রে।

কিন্তু চ্যালেঞ্জটা কেউ নিতে চাচ্ছেন না।মনে হয় করোনা আমাদের সাথে চুক্তি করে আসছে যে এইতো ক’দিন তারপর আমিও চলে যাবো।

আপনারা মহাসমারোহে আবার আগের মত ক্লাস নিবেন!
আসলে প্রাতিষ্ঠানিক আচরণ (Organisational Behaviour) কোর্সে একটা টপিক পড়েছিলাম ‘Resistance to Change’! আমাদের সমাজ পরিবর্তনটা সহজে কেউ মানতে পারে না,সবাই স্রোতের অনুকূলে থাকতে চায়।এই পলিসি দরকার, কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার, ভাই বেতন নিতে কোন পলিসি লাগে না?

যেকোন পরিস্থিতিতে ক্লাস পরিক্ষা নেয়া শিক্ষক হিসেবে উপভোগের হওয়া উচিত। যে আপনি সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারেন না, আপনি ছাত্রছাত্রীদের কি পরিবর্তন শেখাবেন?যে আপনি একবিংশ শতাব্দীর এই যুগে ইনফরমেশন টেকনোলজি ব্যবহার করে উপভোগ্য করার চেষ্টা করেন না,আপনি এই যুগের জন্য উপযুক্ত না! আপনি প্রস্তর যুগের!

আমাদের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতে উচিত ক্লাস যতটা সম্ভব উপভোগ্য অনলাইন ক্লাস কন্টেন্ট বানানো, একটু ভিন্ন আংগিকে যাতে স্টুডেন্টরা অনলাইনেও ক্লাস করেও এংগেইজড অনুভব করে।অনলাইনে প্রচুর টিপস আছে কিভাবে ক্লাস বানাতে পারবেন, অনলাইন প্লাটফর্মগুলো ব্যবহার করতে পারবেন।

আমাদের সবার নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে আরো সচেতন হওয়া উচিত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানতগুলো প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও। আর যখন মানুষের বিচার-মীমাংসা করবে, তখন ন্যায়ভিত্তিক মীমাংসা করো। আল্লাহ তোমাদের সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)।

আসল ব্যবধান হলো কষ্ট করাটা,এইটাই করতে চান না।শিক্ষক হয়ে ক্লাসের কাজে কষ্ট না করা,পড়াশোনা না করা দুঃখজনক।নিজের সমস্যাগুলো দেখেন,দেখবেন প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যাগুলো কি রকম মনে হয়?আপনি ছাত্রছাত্রীদের ইন্টারনেট নাই,টাকা নাই,খেয়ে পায় না বিবেচনা করেন,নিজের সমস্যাগুলো এড়িয়ে যান সুকৌশলে!

নবীজি (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যককে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৮৪৪; তিরমিজি, হাদিস: ১২৪)।

মেধা-মনন, বুদ্ধি, দক্ষতা ও কায়িক শ্রমের বিনিময়ে জীবিকা নির্বাহ করা বৈধ। দায়িত্বশীল ও কর্মক্ষমদের কাজে উৎসাহিত করেছে ইসলাম।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সর্বোত্তম কর্মী সেই ব্যক্তি, যে শক্তিমান ও দায়িত্বশীল।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ২৬)।

কোনো প্রতিষ্ঠানে মাসিক বেতনের বিনিময়ে চাকরিতে যোগদানের মানে সে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুসারে মেধা ও শ্রম দিতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা, তোমরা তোমাদের চুক্তিগুলো পূর্ণ করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ০১)।

শ্রমের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হালাল হওয়া ও এর বিনিময়ে পরকালীন সফলতার প্রতি লক্ষ রাখা জরুরি। সেবার মানসিকতা নিয়ে আন্তরিকতা ও আনন্দের সঙ্গে কাজ করলে পার্থিব-পারলৌকিক সাফল্য অর্জন সম্ভব।

লেখক: শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষক ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *