করোনা ও বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি
![করোনা ও বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি](https://thecampustoday.com/wp-content/uploads/2020/09/resize1599295277306.jpg)
সাইকি মিজান বৃষ্টি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল এই বছরের শুরুর দিকে, ছয় মাসের বেশি আগে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম চীনে ঘটলেও তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে। জানুয়ারির সেই সময় থেকে পুরো বিশ্ব এবং আমাদের সবার জীবনে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
মানবজাতির সাথে যেন এক ভাইরাসের লড়াই, তাতে প্রাণ হারাচ্ছে বহু মানুষ, শঙ্কায় সাধারণদের জীবন-যাপন, দৈনন্দিন জীবন-যাপনের ছকে ব্যাপক পরিবর্তন । পুরো পৃথিবীর কথা বিবেচনা করলে চিত্রটা আশঙ্কাজনক। এ পর্যন্ত পরীক্ষার মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের নিশ্চিত সংক্রমণ ধরা পড়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের। ইতিমধ্যে মারা গেছে প্রায় ৭ লাখ মানুষ।
সবথেকে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে শুরুর দিকে এক লাখ মানুষের করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হতে কয়েক সপ্তাহ লাগতো। আর এখন মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এক লাখ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মতে, প্রথম ধাপে ৬৭ দিনে ১ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়, তারপর দ্বিতীয় ধাপে ১১ দিনে ১ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয় আর এখন ৪ দিনে ১ লাখ আক্রান্ত হচ্ছে, যা রীতিমত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
বিশ্বের সব জায়গায় কোভিড-১৯ এর প্রভাব একরকম নয়। এই ভাইরাসের গতিবিধির ওপর নজর রাখা বেশ দুষ্কর। কারণ ভাইরাসে আক্রান্ত বহু মানুষের মধ্যে কোন লক্ষণ-ই দেখা যাচ্ছে না।অনেকের লক্ষণ একেবারেই মৃদু অথচ কারো কারো বেলায় এই ভাইরাস খুবই মারাত্মক। এই পরিস্থিতিতে আমরা ঠিক কোন দিকে যাচ্ছি বা আমাদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে তা অনেকটা ঝাপসা কারণ আমরা মহামারীর আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারছি না বরং তার বদলে এক ‘নিউ নর্মাল’ বা নতুন স্বাভাবিক অবস্থার সন্ধানে আছি।
করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে, নিউজিল্যান্ডের সাফল্য সবার নজর কেড়েছে এবং এইটা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছিলো ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করে অর্থাৎ এক দেহ থেকে অন্য দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করে। এক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড খুব দ্রুত ভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলো লকডাউন এবং সীমান্ত বন্ধ করে। নিউজিল্যান্ডে এখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নাই বললেই চলে।
অন্যদিকে, যেসব দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, সেখান থেকে দ্রুত লকডাউন অপসারণ করা ও সম্ভব হচ্ছে না। ডঃ হ্যারিস এর মত, ‘লকডাউন তুলে নেওয়া মানে এই নয় যে, আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবো। এইটা এক নতুন ধরনের স্বাভাবিক অবস্থা। মানুষ মনে হয় ব্যাপারটা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি।’
কখন এই অবস্থার অবসান ঘটবে?
ঔষধ: এই অবস্থার অবসান সম্পর্কে এখনো বিশ্ব কোনো সম্পূর্ণ আস্থামূলক তথ্য পায়নি। করোনা ভাইরাসের কিছু চিকিৎসা এখন ঔষধ দিয়ে করা হচ্ছে। ডেক্সামেথাসোন একটি সস্তা স্টেরয়েড যা খুব সংকটাপন্ন রোগীর বেলায় কাজ করছে বলে দেখা গেছে।কিন্তু সব মৃতপ্রায় রোগীকে বাঁচানোর মতো চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো নাই।
হার্ড-ইমিউনিটি: অন্যদিকে সুইডেন হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের কৌশল নিয়েছিলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুইডেনে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় মৃত্যুর হার অনেক বেশি।
টিকা: এই মূহুর্তে ৬ টি টিকা নিয়ে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। যেসব টিকা কে খুব সম্ভাবনাময় বলে মনে করা হচ্ছে।এই টিকা গুলা কতটা কার্যকরী তা জানা সম্ভব হবে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায়। এই চূড়ান্ত ধাপে এসেই আসলে আসলে আগের অনেক প্রতিষেধকের চেষ্টা বিফল হয়েছে।তাই ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করতে হবে চূড়ান্ত ধাপে সফলতার অপেক্ষায়।
অন্যদিকে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে, রাশিয়ায় ঔষধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কোভিড – ১৯ এর টিকা অনুমোদন দিয়েছে, যা নিয়ে মানবদেহের উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে দু মাসের কম সময়ে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টেলিভিশনে টিকার অনুমোদন নথিভুক্ত করার ঘোষণাকালে বলেন, ” এই টিকা সফলভাবে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী অ্যান্টিবডি তৈরি করতে এবং কোষের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পেরেছে এবং আমি এটা খুব ভালো করে জানি কারণ আমার এক মেয়েকে এই টিকার ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে।
মিস্টার পুতিন তার মেয়ের সুস্থতার ও দাবী করেছেন এবং বলেছেন,” এই টিকা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের প্রথম টিকা এবং সব ধরনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং তিনি চান যে খুব শীঘ্রই গণহারে এই টিকার উৎপাদন শুরু হোক।”
তাই বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে করোনা সংক্রমণ রোধ করতে সামাজিক দূরত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর অপেক্ষা করতে হবে কার্যকরী টিকার জন্য।
তবে সে দিকেও রয়েছে কিছু অনিশ্চয়তা, ঠিক কবে বা কতোদিনের মধ্যে পুরো বিশ্ব এই মহামারী থেকে মুক্তি পাবে বা টিকা পৌঁছে যাবে সর্বসাধারণের কাছে তা এখনও অনিশ্চিত। তাই ততোদিন পর্যন্ত নিজেদের ও বিশ্বের সুরক্ষা রক্ষার্থে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধির সামাজিক নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা।
সাইকি মিজান বৃষ্টি
শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ
ফার্মেসি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)।