করোনা দুর্যোগে নিজ গ্রামবাসীর পাশে প্রবাসীরা

করোনা দুর্যোগে নিজ গ্রামবাসীর পাশে প্রবাসীরা

এস জে আরাফাত


মুয়াজ্জিনের আযান। চারদিকে নিস্তব্ধ। ঘুটি ঘুটি অন্ধকার। একঝাঁক স্বপ্নবাজ তরুণ।চোখ মুখে একরাশ স্বপ্ন। হাসি ফুটানোর প্রবল ইচ্ছা। তাইত কাক ভোরে সবার জমায়েত।দিনরাত নিরলস প্ররিশ্রম। ক্লান্তির কোন চাপ নেই।

কারো কোন শব্দ নেই। ইশারায় কাজ করে যাচ্ছে। নিজেরা নিজের মধ্যে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে নিয়েছে। এবার উদ্দেশ্য পূরণের পালা৷ উদ্দীপনা উৎসাহ নিয়ে সবাই সামনে এগিয়ে চলছে। একেকটি গ্রুপ একেক পথে। তবে সবার উদ্দেশ্য এক, লক্ষ্য এক।

পথিমধ্যে বাঁশ-টিনের দো-চালা কুঁড়ে ঘর। নুয়ে পড়েছে সামনের খানিকটা। তখনও অন্ধকারের রেশ কাটেনি।ভিতর থেকে দরজা বন্ধ। কোন সাড়াশব্দ নেই। নিশ্চুপ চারিপাশ। এক মহৎ উদ্দেশ্য। সবার সহযোগিতা নিয়ে শুধু এই মহৎ উদ্দেশ্যটা সফল করা। একেবারে তাঁর কাছাকাছিও বটে। হাতে থেকে নামালো। ঠিক নুয়ে পড়া ঘরটির দরজা বরাবর রাখলো। হুম কাজ শেষ।

এবার সামনে এগিয়ে চলা যাক। হাতে থাকা তালিকা অনুযায়ী। যখন ঘরের মালিক দরজা খুলবে! তখন সামনে কিছু দেখতে পারবে। উৎসুক চিন্তা নিয়ে তা দেখবে,ভাববে। কী এটার ভিতরে? কী আছে? যখন চিন্তা দুঃশ্চিন্তা দূরে ঠেলে মোড়ক খুলবে। শুকনো মুখখানা ঝিলিক দিয়ে উঠবে।হয়ত মুচকি হেসে দুই হাত উপরে তুলবে। মহান রবের শুকরিয়া আদায় করবে। আর দোয়া করবে।এই ত চাওয়া। এইতো আসল পাওয়া।

রুপ কথার মতোই শুনালেও এমন ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে ফেনী জেলার খিলপাড়া নামক ছোট্ট একটি গ্রামে। বাণিজ্যের সুযোগে একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে নিম্ন আয়ের মানুষ গৃহবন্দী। দুর্বিপাকে পড়া গ্রামের সাধারণ মানুষ অনেকটাই অসহায়। আর এসব অসহায় মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নিজ গ্রামের প্রবাসীরা। আর গ্রামের একঝাঁক তরুণের নিরলস প্রচেষ্টা ফলেই এমনটি সম্ভব হয়েছে।

উদ্যোক্তারা বলেন, প্রবাসীরা এই দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছেন, মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ত্রাণ বা দান নয়, সামর্থ্যহীনদের পাশে দাঁড়ানোর সহযোগিতায় তারা দিচ্ছেন উপহার সামগ্রী। সবাই যদি এমন নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজেরা নিজের কমিউনিটির দেখভাল করেন। তাহলে কাছের আপনজন গুলোকে কষ্ট ও বিড়ম্বনার মাঝে পড়তে হবে নাহ।

তারা আরো বলেন, প্রাথমিকভাবে অন্তত ১০০ পরিবারের ৭ দিনের খাবার ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য হিসেবে চাল, ডাল, আলু, তেল, পেঁয়াজ ও ইফতার সামগ্রী প্রদান করি। সবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগ্রহণে অনেক বড় অংশ হয়। সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে আসুন সবাই এই মহৎ কাজে শরিক হই। প্রতিবেশী হয়ে আরেক প্রতিবেশীর দুর্দিনে দুঃখ লাগবের অংশীদার হই।

এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা যেমনটি করে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রেখেছে ঠিক তেমনিভাবে আনাচে কানাচে সমাজ উন্নয়নে সামাজিক কাজও অংশীদার। তাঁদের শ্রম-ঘাম শুধু এই দেশের তরে ব্যয়। প্রবাসে থাকলেও সব স্বপ্নগুলো দেশেই থাকে।দেশে থাকা স্বজনদের জন্য তাদের উৎকণ্ঠার শেষ নেই। তাঁরা দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ থেকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যায়,যাচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *