করোনা ভাইরাস ও বাংলাদেশ

করোনা ভাইরাস ও বাংলাদেশ

মোঃ সাদেক


পৃথিবীতে আজ লাশের মিছিল। রাজা থেকে শুরু করে দিন আনে দিন খায় মানুষ কেউ করোনার তাণ্ডব থেকে বাদ পড়ছে না। চীন থেকে শুরু আর মধ্যসময় টা সম্ভবত ইউরোপ আর আমেরিকায় কাটাচ্ছে। শেষটা কবে আর কোন দেশের ওপর দিয়ে যায় আল্লাহই ভাল জানেন।


আমরা কি পদক্ষেপ নিচ্ছি এই ভাইরাস কে পাশ কাটাতে। সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
সময় এখন যাবতীয় প্রশ্ন কে পাশ কাটিয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া। দক্ষিণ কোরিয়া আর তাইওয়ান সেক্ষেত্রে আমাদের রোল মডেল হতে পারে। আমরা কথায় কথায় দেশ কে সিংগাপুর সহ অন্য দেশের সাথে তুলনা করে বসি।

আসুন এবার কাজে তা প্রমাণ করি। চীন এর পর সম্ভবত দক্ষিণ কোরিয়া কেই ধরা হত করোনার পরবর্তী হটস্পট। কেন হল না? তার পিছনে কিসের সাফল্য তা আমাদের খুঁজে দেখা উচিত। সাউথ কোরিয়া, আমাদের বা অন্যান্য দেশের মত অপেক্ষা করে নাই কবে মাত্রাতিরিক্ত আক্রমণ হবে আর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সাথে সাথে তারা আক্রান্ত এরিয়া গুলো চিহ্নিত করে গণ হারে যাদের সামান্যতম লক্ষন এবং ডাক্তার রেফার করেছেন করোনা টেস্ট করিয়েছেন।

এয়ারপোর্ট সহ অন্যান্য জনবহুল স্থানে বিশেষ বুথ করে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। কোন রকম লকডাউন ছাড়াই আলহামদুলিল্লাহ তারা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছেন।

তাহলে আমরা কেন পারব না? প্রথম বাধা টাই আসবে আমরা তাদের মত এত টা সচ্ছল দেশ নয়। কেন এতটা সচ্ছল হতে হবে? তারা কি এমন করেছেন। খুব কি স্পেশালিষ্ট ডাক্তার এর প্রয়োজন?

না। কারণ এই ভাইরাসের কোন নির্দিষ্ট ভেকসিন বা ঔষধ এখনো আবিষ্কার হয় নাই। সুতরাং আমাদের কোন বিশেষ ডাক্তারের দরকার নাই। দরকার আন্তরিকতা আর মানবিকতা সম্পন্ন কিছু বিবেকবান ডাক্তার। যারা রোগের ভয়ে রোগী ছেড়ে না পালাই।

৬৪ জেলায়, ৯০ জন ডাক্তার নিয়ে (তিন শিফট, প্রতি শিফট এ ৩০ জন) করোনা প্রতিরোধ কমিটি করেন। প্রতি ৩০ জন কে প্রত্যেক উপজেলা অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন।

প্রতি জেলায় একটা করে করোনা টেস্ট এবং আইসোলেশন বুথ এর ব্যবস্থা করা হোক। (সেটা হতে পারে কোন সরকারী অথবা বেসরকারী হাসপাতাল)।প্রতি উপজেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত ডাক্তার গণ যেসব রোগীকে করোনা টেস্ট করানোর উপযোগী মনে করবেন দ্রুত সময় এর মধ্যে তাদের টেস্ট ও টেস্ট পজিটিভ হলে আইসোলেশন এর ব্যবস্থা করা হোক।

গণ হারে পরীক্ষা করে বাছাই করে আলাদা করার চেয়ে ভাল কোন সলিউশন নাই। হ্যা, বলতে পারেন লকডাউন! কিন্তু এইভাবে কতদিন! একদিনের লকডাউন এর ক্ষতির টাকা কম করে হলেও ধরে নিলাম ১০০ কোটি টাকা। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যে কিটের কথা বলছে, সেখানে প্রতি টেস্ট এ খরচ পরবে ২৫০-৩০০। ধরে নিলাম ৫০০ টাকা।

১০০ কোটি টাকা দিয়ে পরীক্ষা হবে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের! যদি তা নাও হয় এখন যে পদ্ধতিতে টেস্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা প্রনোদেনা ঘোষনা না করে টাকা গুলো টেস্টিং আর অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যয় করুন। মনে রাখবেন, দেশ আর মানুষ বাঁচলে প্রনোদনার স্বাদ নিতে পারবে কিন্তু এই গজবে শেষ হয়ে গেলে কার জন্য দিবেন প্রনোদনা!

সরকার যদি এই টাকা নাও খরচ করে শুধু আনুষ্ঠানিক কাজ গুলো করে দেই ( বুথ, ডাক্তার সুবিধা, টেস্ট কিট) আর প্রতি মানুষ কে একটা নুন্যতম হার বলে দেই তারপর ও আমার মনে হয় সবাই নিজের টাকা খরচ করে এই পরীক্ষা টা করে একটু সস্তির নিশ্বাস ফেলতে চাইবে আলহামদুলিল্লাহ বলে! শুধুমাত্র ঘরে বসে থেকে আমাদের মত দেশ এই মহামারী থেকে আপাত বেচে গেলেও দুর্ভিক্ষ যেন চেপে না বসে।

সাহায্য-সহযোগিতা, প্রনোদেনা কত দিন? যেখানে আপনার দেশের ৮০% মানুষ এখন ও নিম্মবিত্ত আর মধ্যবিত্তের শ্রেণির মধ্যে পড়ে , সেখানে একজন লোক কে কতদিন বসাইয়া খাওয়াতে পারবেন? কোটি কোটি টাকা সাহায্য-সহযোগিতা আর ঘোষনায় সব চেয়ে বেশি লাভবান আমাদের উপরের শ্রেণির মানুষ গুলো ই।

সুতরাং লকডাউনের পাশাপাশি দ্রুত টেস্টিং কিট সাপ্লাই বাড়িয়ে উপজেলা পর্যায়ে সেবা ছড়িয়ে দেন। আজ একজন আক্রান্ত তো কাল ঔ এলাকা লকডাউন! কিন্তু ঔ লোক টা বিগত দিন গুলো তে যে এই মৃত্যুবীজ আশে পাশের কত জন কে দিয়ে বেড়িয়ে গেলেন তার কি হবে?

দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপাতত করোনা আক্রান্ত জেলা গুলো(ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ সহ বেশ কিছু) কে কার্যত লকডাউন করে উপজেলা পর্যায় থেকে রোগী বের করে আইসোলেশন এর ব্যবস্থা করুন। আক্রান্ত হলে লকডাউন এই পদ্ধতি দয়া করে বাদ দিন।


লেখকঃ সাবেক শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *