করোনা: ৪ দিন ধরে ভাত খাননি বশির পাগলা

করোনা: ৪ দিন ধরে ভাত খাননি বশির পাগলা

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


নাম বশির। তবে শহরের মানুষগুলোর কাছে বশির পাগলা নামেই পরিচিত। ষাটোর্ধ্ব এই বশির পাগলা সিরাজগঞ্জে একজন পরিচিত মুখ। প্রায় ৪০ বছর ধরে তার এই শহুরে জীবন। বশিরের এখন সময় কাটে দিন গুনে গুনে।

প্রতিদিন সকালে শহরের দুই তিনটি দোকান থেকে তার নাস্তা হিসেবে বরাদ্দ মেলে পাওরুটি অথবা পরোটা। আর রাতে নির্ধারিত দুটি হোটেল থেকে পায় ভাত তরকারি।

বর্তমানে তার অখন্ড অবসরে সে সময় পার করছে শহরের কোন পথচারী, ওষুধের দোকান কিংবা খোলা কোন মুদি দোকানিকে প্রশ্ন করে।কয়দিন পরে এই ছুটি শেষ হবে? মাঝে মাঝে তিনি আশায় বুক বাঁধেন, বিড়বিড় করে বলেন আজ গেলে কাল তারপর পরশু এর পর আছে তিন দিন বাকি তখন সবকিছুই খোলা। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে সরকারি ছুটি আরো বাড়িয়ে দেওয়ায় কিছুটা মুষড়ে পড়েছেন তিনি।

করোনার আগে শহরের কোন বাড়িতে বিয়ে জন্মদিনসহ যেকোন সামাজিক অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি থাকে স্বাভাবিক। রাতে শহরের কোন ফুটপাতে অথবা রেলস্টেশনে তার নিশ্চিন্ত ঘুম। তার দীর্ঘ জীবনে প্রাত্যহিক এই নিয়মের খুব একটা ব্যত্যয় ঘটেনি।

সারাদেশ লকডাউন, বশির পাগলার জীবনে এসেছে উদ্বেগ। তবে এই উদ্বেগ তার করোনাভাইরাস নিয়ে নয়। তার উদ্বেগ কবে খুলবে হোটেল আর তার পরিচিত বেকারির দোকানগুলো। যে দোকানগুলো থেকে সে প্রতিদিন তার কাক্ষিত খাবার পায়। বশির পাগলার মতো সিরাজগঞ্জ শহরে রয়েছে আরো অন্তত পাঁচজন অপ্রকৃতস্থ মানুষ যাদের অনুভূতি ঠিক একই রকমের। সরকারি বেসরকারি সহায়তা পেলেও রান্না করে খাওয়ার অভিজ্ঞতা তাদের নেই।

এদিকে বাড়ির সাথেও তাদের যোগাযোগ নেই বললেই চলে। গুটি কয়েক হোটেল মালিক আর শুভাকাক্ষিরাই তাদের শেষ ভরসা ও ভালোবাসার স্থান।কারণ তারা হোটেল আর বেকারির উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়েই দিন পার করছেন। যা বন্ধ রযেছে পাঁচ দিন ধরে। মঙ্গলবার রাতে কথা হয় বশির পাগলার সাথে। প্রথম দেখাতেই তার প্রশ্ন এই বন্ধ আর কয়দিন থাইকপো? এর চেয়ে হরতাল ভালো কি কন? প্রশ্নের জবাবে জানালেন গত চারদিন ধরে তিনি ভাত খাননি। বিস্কুট আর কলা খেয়ে কাটিয়েছেন এই দিনগুলো।

করোনা নিয়ে তার ভয় করছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন, ভাইরাস ভালো, তবে হোটেল বন্ধ ভালো না। কয়েক মিনিটের আলাপ পরিচয় এই প্রৌর মানুষের মুখে করোনার মত প্রাণঘাতী / মহামারী দুর্যোগের চাইতে পেটের তাগিদে বড় হয় ফুটে ওঠে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *