কাফনের কাপড় পরে যবিপ্রবি ভিসির পদত্যাগ দাবি

কাফনের কাপড় পরে যবিপ্রবি ভিসির পদত্যাগ দাবি

ওয়াশিম আকরাম, যবিপ্রবি প্রতিনিধি


কাফনের কাপড় পরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছে আন্দোলনকারীরা।

আজ শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে এই আমরণ অনশন শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।

এর আগে গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনে বসেন আন্দোলনকারীরা। এদিন রাতে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।

এদিকে গত মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সভায় ডিসিপ্লিন কমিটির সুপারিশে বিভিন্ন মেয়াদে ৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিস্কৃত শিক্ষার্থী অন্তর দে শুভ বলেন, “জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ধ্বংস করার নীল নকশা এঁকেছে এই স্বৈরাচারী উপাচার্য আনোয়ার হোসেন। আমরা যতবারই প্রতিবাদ করতে গিয়েছি ততবারই আমাদের বহিষ্কার হতে হয়েছে, তবে আজ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তাই আমরা শহীদ মিনারে আমরণ অনশনে বসেছি।”

অন্তর দে শুভ আরও জানান, আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ে রিটেক ফি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে অনেক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া যারা অসামঞ্জস্যতা নিয়ে কথা বলছে তাদেরকে বিভিন্নভাবে বারেবারে বহিষ্কার করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি অবমাননা অভিযোগ তুলে আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এসএম ইকরামুল কবির দ্বীপ বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি অবমাননার ঘটনা ঘটেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইতিমধ্যে উচ্চ আদালতে তা প্রমাণিত হয়েছে। উচ্চ আদালত ছবি অবমাননার ঘটনায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ জড়িতদের রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।”

ইকরামুল কবিরকে কেন বহিষ্কার করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে প্রমাণিতদের পক্ষে মামলা পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয় অর্থ ব্যয় করতে পারে না। এমন দাবি করে আমি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছিলাম। এজন্য গত মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) আমাকেসহ দুইজনকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও আরও ছয় শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একজন উপাচার্যের এমন স্বৈরচারীতায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। আমরা এর প্রতিকার চাই।”

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- অনতিবিলম্বে অবৈধ বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে, প্রশাসনের সেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরচারী আচরণ বন্ধ করতে হবে, ল্যাব রিটেক ও কোর্স রিটেকের জরিমানা বাতিল করতে হবে, ইম্প্রুভিং সিস্টেম চালু করতে হবে, ক্লাসে উপস্থিতি (৬০-৭০)% হলে পাচ হাজার টাকা জরিমানা এবং (৫০-৬০)% হলে দশ হাজার টাকা জরিমানা বানিজ্য বন্ধ করতে হবে, রিটেক কোর্সের সিজিপিএ ৪ কাউন্ট করতে হবে, চাকুরীর নিয়োগের ক্ষেত্রে যবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে যে অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতা হয়েছে তার সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আনদোলনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর হাসান মোহাম্মাদ অাল ইমরান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তাকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করেছিল। সেই বিষয়টির বিচার প্রক্রিয়াধীন ছিল। সে সময় তারা কিছু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড ও ডিসিপ্লিন কমিটির সিদ্ধান্তে তাদেরকে বহিঃস্কার করা হয়। তারই প্রতিবাদে তারা আন্দোলন করছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা যে দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন করছে তার বেশিরভাগই অনেক আগেই মেনে নেয়া হয়েছে। রিটেক ফি ৭৫ শতাংশ মওকুফ করে দেয়া হয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে আমাদের গ্রাজুয়েটরা রয়েছেন। তারপরও যদি তাদের কোন দাবি দাওয়া থাকে, তারা যদি আমাকে জানাই আমি বিষয়গুলো বিবেচনায় নিবো, এবং আমি চাই আমার শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে আসুক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *