ক্যাম্পাসে ফেরা হলো না সোহরাওয়ার্দীর

ক্যাম্পাসে ফেরা হলো না সোহরাওয়ার্দীর

আবু জাফর


আসা আর যাওয়ার নামই দুনিয়া! কতজন আসে আর কত জন যায়! কিন্তু কিছু কিছু যাওয়া সবার মনে দাগ কেটে যায়!

বলছিলাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহরাওয়ার্দী ভূঁইয়ার কথা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আজ সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে নিজ বাড়িতে মারা যান। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)

সোহরাওয়ার্দী ভূঁইয়া কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার রসূলপুর ইউনিয়নের গোলাপনগর গ্রামের কৃতি সন্তান! এসেছিলেন বুক ভরা আশা নিয়ে কুমিল্লার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠে ! পাদচারণা করেছেন তিন তিনটি বছর! কিন্তু শেষ করতে পারলেন না। গ্রাজুয়েটের কালো কোর্তা পড়ার আগেই পড়তে হলো কাফনের সাদা কাপড়!

বাড়িতে বিদ্যুতের কাজ করতে ছিলেন, তবে মেইন সুইচ বন্ধ করতে ভুলে যান তিনি। তখনি হঠাৎ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন । বাড়ির সবাই মাথায় পানি দিলে কিছুটা সুস্থবোধ করেন। কিছুক্ষণ পর আবার অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালেই তার শেষ নিষ্পাপ মুখের শেষ নিশ্বাস ছাড়েন।

মরহুম সোহরাওয়ার্দী ভাইয়ের সাথে একি হলে থাকার সুবাদে প্রায় দেখা হত। কখন ডাইনিং কখন সিঁড়ির গোড়ায় তার মায়া ভরা চেহারাটা দেখে মনটা ভরে যেত! তার সহপাঠীদের কিছু স্মৃতিচারণ তুলে ধরছি-

আবির হাসান প্রান্ত (বাংলা বিভাগ) ২০১৬-১৭ বর্ষ তিনি বলেন..প্রথম তার সাথে ভাইবা দেওয়ার সময় দেখা হয়। আমার পিছনে দাড়িয়ে ছিল। পরে আমার আব্বুকে দেখে সালাম দিলো,বলল স্যার আপনি এখানে! শিক্ষকের প্রতি এমন ভক্তি দেখে আমি অভিভূত হয়েছিলাম সেদিন!পরে মাঝেমধ্যে দেখা হইলে আব্বুর কথা জিজ্ঞাস করত!

তাছাড়া প্রায় ও ভিক্টোরিয়া কলেজে আসতো ওর ফ্রেন্ড এর সাথে,দেখা হইতো আড্ডা দিতাম। আসলে ও অনেক ভালো একটা ছেলে ছিল, হাসিখুশি ছিল, জীবনে কিছু করার একটা অদম্য মনোবল ওর ছিল!

তার তিন বছরের ক্লাস মেট এবিএস ফরহাদ (নৃবিজ্ঞান বিভাগ) ২০১৬-১৭ বর্ষ তিনি বলেন: ক্লাসের অমায়িক এক বন্ধু ছিলো সোহাওয়ার্দী। শুধু বন্ধু হিসাবে নয় একজন ভাল মনের মানুষ হিসাবে তার প্রশংসা না করে পারছিনা। করোনা’র মাঝে অনেকের মত তার সাথে আমার কথা হয়। সর্বশেষ সে বলেছিল বন্ধু ভাল থাকিস আর সাবধানে থাকিস।

বন্ধু আমাকে সাবধানে থাকতে বলে তুই কেন অসাবধানতাবশত চলে গেলি? বন্ধু তুই কি আর নেতা বলে ডাক দিবি না? সাংবাদিক বলে ডাকবি না? আমার জানালার পাশে দাড়িয়ে শিট চাইবি না? বন্ধু আমার সব শিট তুই নিয়ে নেয়! তোর রুমে আমি প্রতিদিন যাব, তারপরও ফিরে আয় আমাদের কাছে।

সোহাওয়ার্দী প্রতিদিন বলত একই হলে থাকি আমরা তোরা আমার রুমে যাস না কেন? বন্ধু এখন থেকে প্রতিদিন যাব। কিন্তু বন্ধু তুই তো আর ফিরে আসবি না। প্রচন্ড রকমের ভাল মানুষ আজ হারিয়েছি। বন্ধু রক্তক্ষরণ কাকে বলে আজ প্রচন্ড রকমের ফিল হচ্ছে। ওপারে ভাল থাকিস বন্ধু। প্রতিনিয়ত মিস করবো তোকে!

করোনার কালীন পর খুব শীঘ্রই হয়তো খুলবে ক্যাম্পাস! সবাই বসবে ক্লাসে! কিন্তু নৃবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষের ৪৬ সদস্যের পরিবারটা থাকবে মলিন! তার রোল টা আসলেই থমকে যাবে ক্লাস! স্তব্ধ হবে বাতাস! ক্যাম্পাসে না ফেরা হলেও ওপারে ভালো থাকবে সোহরাওয়ার্দী এই কামনা সবার!


লেখকঃ শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *